Banner
মানুষের কাছে জীবনের দাবী — শামসুজ্জোহা মানিক

লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ March 23, 2021, 12:00 AM, Hits: 961

 

বৃক্ষচারী আর দশটা বানর জাতীয় প্রাণী থেকে মাটিতে নেমে এসে লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরে বিবর্তিত হতে হতে ক্রমশ মানুষ হয়ে উঠতে থাকার এবং সভ্যতার পথ ধরে পৃথিবীর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার ইতিহাসের টুকরা টুকরা চিত্র যখন মনের ভিতরে ছায়াপাত করে তখন মাঝে মাঝে মন বেদনায় ভরে উঠে। জীবন বড় নির্দয়। আমি বুদ্ধের মত করে বলব না, ‘সব্বং দুক্খং’ — সবকিছুই দুঃময় কিংবা জীবন শুধুই দুঃখময়। তবু এ কথা বলব, সুখ-আনন্দের পাশে জীবনে অনেক দুঃখও আছে। কখনো কখনো কিংবা কারো কারো জীবনে আমৃত্যু শুধু দুঃখই যেন আসন পেতে বসে থাকে। তাদের অনেকের কান্না কিংবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস অজ্ঞাত বা অশ্রুত অথবা উপেক্ষিত রয়ে যায়। আবার কখনও বা সেগুলি যুগ যুগ পার হয়ে অচেনা-অজানা-অসম্পর্কিত মানুষদের মনকে ব্যথিত করে তুলে। এমনই কত কালের কত মানুষের দীর্ঘ নিঃশ্বাস একদিন হঠাৎ ঝড় হয়ে গৃহী বুদ্ধের সুস্থির সংসার-গৃহকে উড়িয়ে নিয়ে তাকে অন্তহীন পথের পথিক করেছিল। আমি বুদ্ধের ধর্মে বিশ্বাস করি না। কিন্তু তার বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীর দুঃখভারাক্রান্ত অগণন মানুষের দুঃখ হতে মুক্তির জন্য তার আত্মনিবেদনের সম্মুখে আমি শ্রদ্ধায় নত হই। বুদ্ধের মত মানুষদের কাছে আমরা শিখি সুখ শুধু ভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বৃহত্তর মানুষের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য দুঃখের পথের যাত্রায়ও সুখ থাকে। এদের ভূমিকাটা অনেকটা মায়ের মত। এরা যেন জগৎ-সংসারের মা। মায়েরা যেমন সন্তানকে দু’হাত দিয়ে পৃথিবীর সকল বিপদ থেকে আগলে রাখতে গিয়ে নিজেরা অনেক কষ্ট সহ্য করে এমনকি সন্তানের জন্য অনেক সময়ই প্রাণও বিসর্জন দেয় এরাও অনেকটা তেমন। কিন্তু এই মানুষরা তো সব নয়। বরং বেশীর ভাগ মানুষ তো খুব বেশী স্বার্থপর এবং অনেক সময় নির্বিবেকও হতে পারে। অনেক সময় তারা শুধু নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে অন্যের সুখ, সম্পদ, মর্যাদা এমনকি জীবনও হিংস্র পশুর মতই কেড়ে নিতে পারে।

আমরা যে যা-ই ভাবি আর যে যা-ই বলি মানুষও একটা পশু। পশুদের সব গুণ আর দোষ অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বেশী পরিমাণে ধারণ করা পশু। ইংরাজীতে বলা হয় Man is a rational animal. বাংলায় মানে করলে এই রকম দাঁড়ায় যে, মানুষ হচ্ছে বিচার-বুদ্ধিশীল পশু। এই পশুকে মানবিক করার চেষ্টা জারি রাখা সভ্য ও মানবিক মানুষ ও সমাজ গড়ার এক অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এর জন্য তৈরী হয় নানান সামাজিক নিয়ম এবং রাষ্ট্রের আইন। সমাজ ও রাষ্ট্রের চরিত্র আবার প্রভাব ফেলে এসব নিয়ম বা আইন তৈরী অথবা তার চেয়েও বেশী প্রয়োগে। তবে মানুষ যেহেতু নিখাদ বা বিশুদ্ধ কোনও প্রাণী নয় সুতরাং তার সমাজ ও রাষ্ট্র এবং এগুলির নিয়ম ও আইন এবং সেগুলির প্রয়োগও ত্রুটিমুক্ত বা বিশুদ্ধ হতে পারে না। তবু অধিক থেকে অধিকতর ত্রুটিমুক্তি বা অধিকতর শুদ্ধতা অর্জনের দিকে আমরা আমাদের যাত্রাকে এগিয়ে নিবার চেষ্টা করে যেতে পারি। হ্যাঁ, চড়াই-উৎরাই সমাকীর্ণ জীবনের আঁকাবাঁকা পথ ধরে তুলনামূলকভাবে অধিকতর সহজ ও সরল সত্য ও সুন্দরের দিকে এগিয়ে যাওয়াই মানুষের কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় দাবী।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ