Banner
ক্ষমতার ইসলাম - মোহাম্মদ মোস্তফা

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ মোস্তফা, আপডেটঃ May 18, 2009, 12:00 AM, Hits: 6587

পৃথিবীতে যত মানুষ তত মতবাদ। কারো মতবাদ সবল, কারো মতবাদ দুর্বল, কেউ তার মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য অকাট্য যুক্তি প্রমাণ দাঁড় করায়, কেউ ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয়। যুগে যুগে বিভিন্ন মতবাদকে অবলম্বন করেই সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে। ভাল ও মন্দ বহু কিছুরই সূত্রপাত বিভিন্ন মতবাদ থেকে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা সৃষ্টি ও দখলের জন্যও প্রয়োজন কোন না কোন মতবাদের।

ধর্মও একটি মতবাদ। তবে সব ধর্ম এক বা সমান নয়। এক এক ধর্ম এক এক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আবির্ভূত হয়েছে। মূসা মিসরে দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ইহুদীদের মুক্তির জন্য মতবাদ দিয়েছেন। ঈসা মসীহ্‌ সকলকে ভালবাসার কথা বলেছেন। গৌতম বুদ্ধ অহিংস থেকে নিজের ভিতর নিজেকে ফুল ফোটাবার আহ্বান জানিয়েছেন।

হযরত মোহাম্মদ ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ক্ষমতা কেন্দ্রিক মনোভাব দিয়ে, অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের মতবাদ ক্ষমতার মতবাদ। এই ক্ষমতার জন্য তিনি ধর্ম প্রচার থেকে যুদ্ধ ও লুণ্ঠন সবই করেছেন।

হযরত মোহাম্মদের বংশ ছিল কুরাইশ। মক্কার ক্ষমতা হাত বদল করে এই বংশের লোকদের হাতেই থাকত যুগ যুগ ধরে। সেই সঙ্গে ছিল তাদের নিজেদের ভিতর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। হযরত মোহাম্মদের সাথেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব লেগেছিল তার নিজ বংশের ভিতরেরই অন্যদের। কিন্তু তার প্রবলতর প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে ঘায়েল করার মত লোকবল বা তার অনুসারী ছিল না। ক্ষমতার মূল স্রোত ছিল অন্য দিকে। এ অবস্থায় হযরত মোহাম্মদের বয়স যখন চল্লিশ হল তখন তিনি তার পক্ষে কিছু অনুসারী যোগাড় করতে সক্ষম হলেন। তিনি বললেন তার কাছে নাকি আল্লাহর তরফ থেকে ওহী নাজিল হয়। মানুষ সব সময় রূপকথা পছন্দ করে; এটাও করল। এবং ধীরে ধীরে তার দলে লোক ভারী হতে থাকল। তিনি ক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। তার কাছে অনেক ওহী নাজিল হত যেগুলো সকল মানবকুলের জন্য সকল সময়ের জন্য অসমানযোগ্য। বলা হয়েছে আল্লাহ সকলের, সব সময়ের। কিন্তু আল্লাহ যে ওহী নাজিল করেছে তাতে আল্লাহ সকল সময়ের, সকল মানুষের সেটা মনে হয় না। একটা উদাহরণই এ জন্য যথেষ্ট। আবু লাহাব (আবদুল-মুততালিব) হযরত মোহাম্মদের চাচা। হযরত মোহাম্মদের প্রতি শত্রুতার পরিণামে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের শাস্তি এবং চরম অবমাননার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কোরানের সুরা লাহাবে। সুরাটির তর্জমা এইরূপ (১) আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হউক, সে নিজেও ধ্বংস হউক (২) তাহার ধন-সম্পদ এবং সে যাহা উপার্জন করিয়াছে তাহাতে তাহার কোন উপকার হয় নাই (৩) সে শীঘ্রই শিখাযুক্ত অনলে প্রবেশ করিবে (৪) আর তাহার স্ত্রী, সেই কাষ্ঠ বহনকারী (৫) তাহার গলায় পরিবে খর্জুরের আঁশের রজ্জু।

সকল মানবকুলের সকল সময়ের জন্য অসমানযোগ্য এই জন্য বলা হয়েছে যে একজন ভিনদেশী যখন সকাল বেলা অতি মিষ্টি সুরে এই সুরা পাঠ করছে তখন কিন্তু আবু লাহাব পৃথিবীতে নাই। চৌদ্দশ’ বৎসর পূর্বেই তার জীবনাবসান ঘটেছে। অতএব সকল মানবকুলের জন্য ওই ওহী আসে নাই, এসেছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। সুরা লাহাবে বলা হয়েছে তাহার (লাহাবের স্ত্রী) গলায় পরিবে খর্জুরের আঁশের রজ্জু। পরবর্তী সময়ে লাহাবের স্ত্রীকে খর্জুরের আঁশের রজ্জু গলায় প্যাঁচানো অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়।

কে তাকে খর্জুরের আঁশের রজ্জু দিয়ে মারল সেটা সপষ্ট নয়, ইতিহাসও সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয় নাই। তবে এ রকমভাবে মারা যাবে এটা হজরত মোহাম্মদ আগেই জানতেন। কারণ তার কাছে ওহী এসেছিল।

একটা ব্যাপার একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, একটি গ্রামের মাতব্বর ধর্মের কথা বলেই দ্রুত ক্ষমতা হাতিয়ে নেয়। যেখানেই ইসলাম ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লক্ষ্য করা যায় সেখানেই ধর্মের নামে কলহ শুরু হয়। কলহ এই জন্য যে ধর্মের হাত ধরে ক্ষমতায় যেতে হবে। অথচ ধর্ম বলতে আমরা কি বুঝি? ধর্ম বলতে বুঝি শান্তি, পরকালের জন্য ইহকালে ভাল কাজ করা, প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু বিধি-বিধান মেনে চলা। কিন্তু আসলে ইসলাম ধার্মিকরা কি করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য? যা খুশী তা-ই করছে। তারা জিহাদ করতে বলে। কিন্তু একথা পরিষকার নয় যে আল্লাহকে ডাকার জন্য, তার পথে চলার জন্য জিহাদের কি প্রয়োজন? ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মেনে চললেই তো হল! কিন্তু আসলে হল না, কারণ ইসলাম আবিষকৃত হয়েছে ক্ষমতার জন্য। পাঁচটি স্তম্ভ এখানে মুখ্য নয়, গৌণ। মুখ্য হয়েছে এখানে ক্ষমতা। আরো সপষ্ট করে বলা যায়, যখন মক্কা-মদীনা সহ সকল রাষ্ট্রের অধিকর্তা হলেন হযরত মোহাম্মদ তখন তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে রাজ্য পরিচালনা করলেন। যখন সকল ক্ষমতা তার হাতে এসে গেল তখন কিন্তু ধর্মের ব্যাপারটা একটু করে দূরে সরে গেল। তখন ওহী নাজীল হত খুব দেরী করে, তখন হেরা গুহার ভিতরেও যেতে হত না। মদীনায় অবশ্য হেরা গুহা ছিল না। এবং সবচেয়ে বড় বড় কথা হল তিনি ক্ষমতার শীর্ষে যখন অবস্থান করেছিলেন তখন কোরান শরীফ সংরক্ষণের ব্যাপারে কোন মনোযোগ দেন নাই। কোরান বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ছিল তার মৃত্যু পর্যন্ত। কোন জিনিসের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যেমন অনাদরে পড়ে থাকে কোরান শরীফের অবস্থাও তেমন হল।

চার খলিফার দুই খলিফাও সংরক্ষণের দিকে নজর দিলেন না। ওসমান (রাঃ) এসে নজর দিলেন। নজর দেয়ার কারণটাও জানা দরকার। কারণটা হল ক্ষমতা, তখন তাদের ক্ষমতা প্রায় যেতে বসেছে। প্রতিটা গোত্রের ভিতর বিদ্রোহ, কলহ দেখা দিয়েছে। যে যার মত কোরান শরীফ বানিয়ে নিয়েছে। ওসমান চিন্তা করলেন সর্বনাশ, ক্ষমতা ধরে রাখার উপায় কি? ধর্মীয় বাণী ছাড়া অসম্ভব। তিনি ওহী আনার মত দুঃসাহস দেখালেন না বা দেখাতে পারলেন না। কারণ হযরত মোহাম্মদ বলে গিয়েছেন, আমিই শেষ নবী। যাইহোক ওসমান (রাঃ) তখন কোরান শরীফ সংরক্ষণের জন্য উঠে-পড়ে লেগে গেলেন। বিভিন্ন গোত্রের কাছে বিভিন্ন ধরনের কোরান শরীফ আবিষকৃত হতে থাকল। তিনি সব পুড়িয়ে ফেললেন এবং তার মতে যেটা শুদ্ধ সেটা রেখে দিলেন। শুরু হল ইসলামের পথ চলা, ধীরে ধীরে তাদের কাছে পরাজিত হতে থাকল আরবের সকল উপজাতি ও জনগোষ্ঠী এবং একটার পর একটা রাষ্ট্র। ধর্মের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য যুদ্ধ করতে কিংবা রাষ্ট্র কেন দখল করতে হবে তা বোধগম্য নয়। কত লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে এইসব যুদ্ধ ও রাষ্ট্র দখলকে কেন্দ্র ক’রে, নারীরা হয়েছে লাঞ্ছিত, সম্পত্তি হয়েছ লুণ্ঠিত। অথচ ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য এগুলোই ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। এখনো কি সেই ইতিহাসের জের চলছে না? ইসলামী পৃথিবীর দেশে দেশে সেইসব ঘটনাই কি ঘটছে না? অথবা সে ধরনের ঘটনা ঘটাবার চেষ্টা কি করা হচ্ছে না? হচ্ছে, হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সৃষ্টিই যেখানে যে কোনও মূল্যে ক্ষমতা করায়ত্ত করার জন্য সেখানে ধর্মের নামে ক্ষমতা লাভের জন্য দৌঁড়ঝাপ যে হবে সেটাই স্বাভাবিক।

১০-৫-০৯

অনলাইন :   ১৮ মে, ২০০৯

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ