Banner
কুরআনিক বিজ্ঞানের কল্পকথার মুখোশ উন্মোচন – মুমিন সালিহ

লিখেছেনঃ মুমিন সালিহ, আপডেটঃ August 16, 2009, 12:00 AM, Hits: 4003


(আধুনিক মুসলমান পণ্ডিতগণ তাদের পবিত্র গ্রন্থে ভরপুর অসঙ্গতিকে উপেক্ষা করে কুরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকত্ব সম্পর্কে উদ্ভট দাবী করে থাকেন। যদিও তাদের নিজস্ব বক্তব্য থেকে সহজে প্রমাণ করা যায় যে, এসব দাবী অবাস্তব।)

 সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসলমান পণ্ডিতগণ দাবী করে আসছেন যে, কুরআনে অনেক বৈজ্ঞানিক অবিষ্কারের কথা আগেই বলা হয়েছে যেগুলো কুরআন নাজিল হওয়ার সময় জানা ছিল না। মুসলমানদের এসব দাবীর একটাও বৈজ্ঞানিক অথবা যৌক্তিক বিশ্লেষণে টিকে না। কুরআন এবং বিজ্ঞানের  মধ্যে অনেক অমিল থাকা সত্ত্বেও মুসলমান পণ্ডিতরা কেন এমন অযৌক্তিক দাবী করেন তা ভেবে অনেকে বিস্মিত হন।

 সাধারণ মুসলমানরা ক্রমবর্ধমান হারে আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া শুরু করায় মুসলমান পণ্ডিতরা উদ্বিগ্ন হয়ে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এধরনের অবাস্তব দাবী করতে শুরু করেছেন। কুরআন এবং বিজ্ঞানের মধ্যে যে কোন অমিল নিয়ে সংশয় সৃষ্টির আশংকা আগেভাগে থামিয়ে দেওয়ার জন্য মুসলমান পণ্ডিতগণ দাবী করতে শুরু করেন যে, বিজ্ঞানের ব্যাপারে কুরআন আসলে সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিল; কিন্তু গোড়ার যুগে মুসলমানরা এটা বুঝতে পারে নাই। তাদের কৌশল হচ্ছে ছলনা, ডাহা মিথ্যা এবং শব্দের কারিগরী।

 মুসলমানরা কুরআনে বিজ্ঞানের অস্তিত্ব নিয়ে যে সব দাবী করে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে বহুল প্রচারিত চারটি দাবী সম্পর্কে এ নিবন্ধে অনুসন্ধান করা হয়েছে। প্রায়ই এ বিষয়টা মুসলমানদের মন থেকে সরে যায় যে, কুরআনে মাত্র একটি ভুলের অস্তিত্ব প্রমাণ করে এটা ঐশ কেতাব নয়, এবং ইসলাম হচ্ছে একটা ধোঁকাবাজি।

 
(১) চাঁদের বিভক্তি
 
দাবী : কুরআন মোতাবেক, মুহাম্মদ চাঁদকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছিলেন এবং পরে এগুলোকে জোড়া লাগান। চৌদ্দশ’ বছর পর নাসা এই বিভক্তির কথা নিশ্চিত করে।
 
এই অস্বাভাবিক দাবীর ভিত্তি হচ্ছে কুরআনের ৫৪:১ আয়াতে ‘(বিচারের) সময় সমাগত এবং চাঁদ দ্বিখণ্ডিত।’

 এই আয়াতে একটা ঘটনার বর্ণনা আছে। বলা হয় ঘটনাটি মক্কায় ঘটেছিল। মক্কার কয়েকজন আরব অধিবাসী মুহাম্মদ যে একজন নবী তার প্রমাণ হিসাবে তাঁকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করতে বলেছিল। মুহাম্মদ সহজেই চাঁদকে দু’টুকরা করে ফেলেন; হেরা পর্বতের দু’পাশে টুকরা দু’টি রাখেন! অবশ্য এই অস্বাভাবিক মহাজাগতিক ঘটনা সেখানকার আরবদের প্রভাবিত করে নাই। তারা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে ম্যাজিকের কৌশল প্রয়োগের অভিযোগ আনে।
 
নিয়তির পরিহাস হচ্ছে, ড. জগলুল আল নাজ্জার নামের একজন মুসলমান বিজ্ঞানী উপরোক্ত কল্পকথা প্রচার করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মিসরীয় ভূতত্ত্ববিদ। এই আবিষ্কার নিয়ে বিভিন্ন ইসলামী টিভি চ্যানেলে হাজির হয়ে তিনি নিজের ভাগ্য ফিরিয়ে ফেলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু শিখেছিলেন সেগুলির প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে আনন্দের সঙ্গে ইসলামবাদীদের টিভি প্ল্যাটকর্ম আল জাজিরা টেলিভিশনে উপরোক্ত মিথ্যা দাবী করেন। আল্লাহর ওয়াস্তে ড. আল নাজ্জার আরো এক ধাপ এগিয়ে নির্লজ্জভাবে তার দর্শকদের সামনে এই মিথ্যা দাবী করেন যে, নাসার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন চাঁদকে দু’টুকরা করে পরে জোড়া লাগানো হয়েছিল!

 বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নাসা কখনো এমন অনন্য ইসলামী আবিষ্কার অনুমোদন করে নাই। কিন্তু তারপরও শত শত ইসলামী ওয়েবসাইট এই মিথ্যা প্রচার করে চলেছে। তারা স্যাটলাইট থেকে তোলা চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি প্রকাশ করছে। এই ছবিগুলোতে যেসব খাঁজ দেখা যায় সেগুলো তারা দাবী করছে যে, ১৪শ’ বছর আগে মুহাম্মদ চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করায় এমনটি হয়েছে! (অথচ এ ধরনের খাঁজ প্রাকৃতিকভাবে চাঁদে এবং আরো অনেক গ্রহে আছে)।
 
মুহাম্মদ হয়ত মনে করেছিলেন চাঁদ হচ্ছে আকাশে একটা ছোট বল বিশেষ। এবং আমাদের গ্রহের মধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে অবশ্যই তার কোন ধারণা ছিল না। এ ধরনের মিথ্যা বলার সময় তিনি হয়ত ভেবেছিলেন যে চাঁদকে দু’টুকরা করে ফেললে তা পৃথিবীর উপর কোন প্রভাব ফেলবে না; আকাশে একটা ছোট বল দ্বিখণ্ডিত করলে কিইবা আর হবে! আমরা জ্যেতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে মুহাম্মদের পুরোপুরি অজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে পারি। গোটা কুরআন জুড়ে এর স্পষ্ট প্রমাণ আছে। কিন্তু এ ধরনের বাজে কথা ২১ শতকের শিক্ষিত লোকেরা কীভাবে বিশ্বাস করে তা আমরা ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। নিয়তির পরিহাস হচ্ছে এই মহাকাশ যুগেও আমাদেরকে মুহাম্মদের অনুসারীদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে।
 
মুসলমানরা দাবী করে কুরআন হচ্ছে মুহাম্মদের একমাত্র অলৌকিক কাজ। এই কল্পকথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে গিয়ে তারা একটা দাবীর কথা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিল। কুরআন বলছে, আল্লাহ মুহাম্মদকে কোন অলৌকিক ক্ষমতা দেন নাই। কারণ অতীতে লোকজন এসব অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস স্থাপন করে নাই। মুসলমানরা দাবী করে যে, আল্লাহ যখন অলৌকিক কিছু পাঠান, লোকজন সেটা বিশ্বাস না করলে তিনি অবিশ্বাসীদের শাস্তি দেন (নির্মূল করেন)। ভাল কথা; সেক্ষেত্রে আল্লাহ অবশ্যই সে নিয়মের ব্যতিক্রম করেছিলেন; কারণ তিনি মক্কার অধিবাসীদের শাস্তি দেন নাই। মুসলমানরা এটা বিবেচনায় নেয় না যে, মক্কার গুটিকয়েক আরব ছাড়া আর কেউ চাঁদকে দু’টুকরা করার কথিত ঘটনাটি দেখল না, এমনকি প্রতিবেশী ইয়াস্রিবের লোকজনও না। এটাও তারা ভাবলো না যে, চাঁদকে দু’টুকরা করার ঘটনা আসলেই ঘটলে সেটা হত পৃথিবী সৃষ্টির পর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এবং বিশ্বের সকল জাতি ব্যাপারটা লক্ষ্য করত ও লিপিবদ্ধ করে রাখত।
 

  (২) ব্রহ্মাণ্ডের সম্প্রসারণ

 দাবী : কুরআন সম্প্রসারমান ব্রহ্মাণ্ডের কথা বলেছে।
 
এই কল্পকথার ভিত্তি হচ্ছে ৫১:৪৭ নং আয়াত। আপনি আরবী শব্দ ‘মূসিঊন’কে কীভাবে বুঝেন তার নিরিখে এটার ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ হতে পারে।
 
১. ‘এবং আমরা হাত ব্যবহার করে আকাশ নির্মাণ করেছি, এবং আমরা প্রচুর পদার্থ বানাতে থাকব (মূসিঊন)।’
 
২. ‘এবং আমরা হাত ব্যবহার করে আকাশ নির্মাণ করেছি, এবং আমরা (মূসিঊন) সক্ষম।’
 
৩. ‘এবং আমরা হাত ব্যবহার করে আকাশ নির্মাণ করেছি, এবং আমরা প্রশস্ত করব (মূসিঊন)।’
 
ধ্রুপদী তাফসির পুস্তকসমূহে এই আয়াতের প্রাচীন বিশ্লেষণে পরিষ্কার দেখা যায় যে উপরোক্ত প্রথম দু’টি অর্থ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রাচীন অনুবাদসমূহেও একই প্রতিফলন দেখা যায়। অবশ্য আধুনিক মুসলমান পণ্ডিতগণ শুধু তৃতীয় অর্থটি বিবেচনায় নেন, আধুনিক অনুবাদেও সে রকম দেখা যায়। ‘মূসিঊন’ এবং এর প্রায় সমার্থক শব্দ অর্থ অথবা খাদ্যের প্রাচুর্য বুঝাতে কুরআনে বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশস্ত বোঝানোর জন্য কখনো ব্যবহৃত হয় নাই। আমরা অস্বীকার করি না যে, মূসিঊন-এর একটা অর্থ প্রশস্ত। তবে আমাদের কাছে এটা বিভ্রান্তিকর মনে হয় যে, আধুনিক ইসলামপন্থীরা এই বিশেষ আয়াতের ক্ষেত্রে শুধু এই একটি মাত্র অর্থই বেছে নিয়েছেন।
 
আধুনিক মুসলমান পণ্ডিতগণ আরো এক পা এগিয়ে এই শব্দের অনুবাদ করেছেন ‘সম্প্রসারণ।’ কিন্তু এটা ‘প্রশস্ত করা’-র সমার্থক নয়। এটা পরিষ্কার যে, আধুনিক মুসলমান পণ্ডিতগণ আয়াতটিকে এমনভাবে তুলে ধরতে চাইছেন যাতে সম্প্রসারমান ব্রহ্মাণ্ড তত্ত্বের সঙ্গে এটা মিলে যায়। এতে সঠিক অনুবাদ না হলেও তাদের কিছু আসে যায় না। সম্প্রসারণের আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘মাদ্দা’। শব্দটি কুরআনে বহুবার ব্যবহৃত হলেও আলোচ্য আয়াতে ব্যবহৃত হয় নাই।
 
মুসলমান পণ্ডিতদের দাবী অনুযায়ী ধরে নেয়া যাক, আরবী শব্দ ‘মূসিঊন’-এর অর্থ হচ্ছে ‘সম্প্রসারণ।’ তর্কের খাতিরে আরো ধরে নেয়া যাক, আমরা আয়াতটির ‘আমরা হাত ব্যবহার করে আকাশ নির্মাণ করেছি’ (কার হাত?) এবং ‘আমরা সম্প্রসারণ করব’ (কিসের সম্প্রসারণ) অংশের অসারতার দিকে চোখ বন্ধ করে রাখব, এবং মুসলমানদের ব্যাখ্যা মেনে নিব যে, আল্লাহ বলতে চেয়েছেন তিনি তাঁর নিজের হাত ব্যবহার করে আকাশ নির্মাণ করেছেন।
 
আমার সন্দেহ হয় এ সমস্ত ছাড় দেওয়ার পরও আয়াতটিতে বুঝা যায় না যে, আল্লাহ ব্রাহ্মাণ্ডের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছেন! কারণ মূসিঊন শব্দের আগে ‘লা’ উপসর্গ আছে (লা-মূসিঊন); এর দ্বারা ভবিষ্যতে কোন কিছু করার প্রতিশ্রুতি বোঝানো হয়। তাতে আয়াতটির অর্থ এরকম দাঁড়ায়; ‘আমরা (আমাদের) হাত দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি, এবং আমরা (ভবিষ্যতে) এর সম্প্রসারণ করব।’ এর অর্থ, মুহাম্মদের আমলে ব্রাহ্মাণ্ডের সম্প্রসারিত হচ্ছিল না, তবে আল্লাহ ভবিষ্যতে এর সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করছেন।
 
এখন, এটা কি বৈজ্ঞানিক অলৌকিকত্ব নাকি গুরুতর বৈজ্ঞানিক ভুল?
 
কুরআনে ‘মূসিঊন’ শব্দটির উল্লেখ আছে এবং এর ভিত্তিতে মুসলমানদের উর্বর কল্পনা আকাশ ছুঁয়েছে।

  

(৩) পর্বত সমূহ
 
দাবী : কুরআন পর্বতসমূহের গঠন ও কার্যাবলী সঠিকভাবে বর্ণনা করেছে।
 
মুসলমান পণ্ডিতরা দাবী করেন যে, কুরআনে পর্বতসমূহের শিকড়ের বর্ণনা আছে, এগুলো পৃথিবীর কঠিন আবরণ ভেদ করে গভীরে প্রবেশ করেছে, এটা একটা বৈজ্ঞানিক সত্য। এই দাবীর সমর্থনে মুসলমান পণ্ডিতগণ নিম্নোক্ত আয়াতটি উদ্ধৃত করে :
 
কুরআন-৭৮:৭- ‘এবং পর্বতগুলো পেরেকের মত (আওতাদ)’
 
যদি আপনি এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ পড়ে থাকেন তবে এর দৈর্ঘ্য এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ধৃতি ও চিত্রসমূহ আপনাকে বিস্মিত করবে। মুসলমানরা যখন কোন বৈজ্ঞানিক অলৌকিকত্ব দাবী করে তখন এটাই হচ্ছে তাদের ধরণ। মুসলমান পণ্ডিতদের কৌশল হচ্ছে অপ্রাসঙ্গিক বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে পাঠককে মোহিত করে ফেলা যাতে পাঠক মনে করে যে, কুরআন সত্যিকার বিজ্ঞানের কথা বলে।
 
মুসলিম পণ্ডিতরা দাবী করেন যে, কুরআনের এই আয়াতে ইচ্ছা করেই ‘আওতাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কারণ এগুলো হুবহু পর্বতের মত আংশিকভাবে জমিতে প্রোথিত থাকে।
 
আসল কথা হচ্ছে পর্বতের শিকড় সম্পর্কে কিংবা মাটির নীচে কি হয় সে সম্পর্কে মুহাম্মদের কোন ধারণা ছিল না। সে কারণে তিনি দু’বার পিরামিডকে আওতাদ বলে উল্লেখ করেছেন; যদিও পর্বতের গঠন কাঠামোর সঙ্গে এগুলোর কোন সামঞ্জস্য নেই :
 
কুরআন-৩৮:১২- এবং ফারাও, পেরেকগুলির,

কুরআন-৮৯:১০- এবং ফারাওর সঙ্গে, পেরেকগুলির,
 
মুসলমান পণ্ডিতেরা আরো দাবী করেন যে, পর্বতগুলো পৃথিবীকে স্খিতিশীল রাখতে কাজ করে। অথচ এটা নিছক একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকথা।

 
মুহাম্মদের জ্ঞান ছিল সপ্তম শতাব্দীর আরবে প্রচলিত কল্পকথাগুলির পুনরাবৃত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবী হচ্ছে পানির ওপর ভাসমান সমতল ক্ষেত্র। সুতরাং পৃথিবীকে স্খিতিশীল করার জন্য আল্লাহর পক্ষে পর্বত সৃষ্টি করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
 
কুরআন মোতাবেক, মহাদেশীয় সংঘর্ষের ফলে পর্বতসমূহের সৃষ্টি হয় নাই; বরং পৃথিবী সৃষ্টির পর এগুলো উপর থেকে ফেলা হয়েছে :
 
কুরআন-১৬:১৫-‘এবং তিনি পৃথিবীর উপর পর্বতসমূহ ফেললেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়।’

 এই আয়াতে আরবী ‘অল্কা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘উপর থেকে কোন কিছু ফেলা বা নিক্ষেপ করা’ ছাড়া শব্দটির আর কোন অর্থ নাই। মুসলমান পণ্ডিতরা কুরআনের ভ্রান্তি গোপন করার জন্য এই অনুবাদ – যা একমাত্র সঠিক অনুবাদ – ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছেন।

 পৃথিবীতে পর্বতগুলোকে ফেলার পর আল্লাহ এগুলোকে নিজ নিজ অবস্থানে দৃঢ়  করলেন যাতে এগুলো ভালভাবে কাজ করতে পারে:

 কুরআন-৭৯:৩২- ‘এবং পর্বতগুলোকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করলেন’

কুরআন-৮৮: ১৯- ‘এবং পর্বতগুলোতে, কীভাবে তারা দৃঢ়ভাবে প্রোথিত’
 
এটা যদি বিজ্ঞান হয় তবে অজ্ঞতা কী?

 
(৪) লোহার উৎস
 
কল্পকথা : কুরআনে লোহার উৎসের বর্ণনা আছে, যা এসেছে মহাকাশ থেকে।

 মুসলমান পণ্ডিতরা দাবী করেন যে, পৃথিবীর লোহা আকাশ থেকে ‘পাঠানো হয়েছে।’ তাদের দাবী, এটা বৈজ্ঞানিক সত্য।
 
মুসলমান পণ্ডিতগণ সূরা আল হাদীদ-এর ২৫ নং আয়াতের উল্লেখ করে থাকেন :
 
৫৭:২৫- ‘আমরা আগে আমাদের নবীদেরকে পাঠিয়েছি পরিষ্কার চিহ্নসহ এবং তাদের জন্য কিতাব ও বিচার ব্যবস্থা পাঠিয়েছি যাতে মানুষ ন্যায়বিচার পায়; এবং আমরা নীচে লোহা পাঠিয়েছি, যাতে রয়েছে প্রবল যুদ্ধ এবং সেই সঙ্গে মানব জাতির জন্য অনেক উপকার, যাতে আল্লাহ পরীক্ষা করতে পারেন কে সে যে অদৃশ্য তিনি এবং তাঁর নবীদেরকে সহায়তা করবে; কারণ আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী।’

 বৈজ্ঞানিক অলৌকিকত্ব দাবী করার ব্যাপারে মুসলমান পণ্ডিতদের কৌশল হচ্ছে তারা কুরআন থেকে একটা উপযোগী শব্দ বেছে নেন এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপলব্ধির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এর সঙ্গে তাদের কল্পনাকে ব্যবহার করেন। আগের উদাহরণগুলোতে এ ধরনের শব্দ ছিল ‘আওতাদ’ (পেরেকসমূহ) এবং ‘মূসিঊন’ (প্রশস্ত করা)। কুরআনে শুধু এ দু’টি শব্দের উল্লেখ আছে এবং মুসলমানদের কল্পনা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। কুরআনের ঐসব অলৌকিকত্ব আলোচনার জন্য হাজার হাজার নিবন্ধ ও পুস্তক রচনা এবং টিভি প্রোগ্রাম ও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে!
 
আলোচ্য দৃষ্টান্তে মূল শব্দ ‘আনজাল্না’। শব্দটির অর্থ ‘আমরা নীচে পাঠিয়েছি’; তবে কুরআন এটাকে ‘আমরা সৃষ্টি করেছি’ বোঝাতেও ব্যবহার করেছে ৭:২৬ এবং ১০:৫৯ আয়াতে। প্রাচীন তাফসিরকারীরা এ অর্থই বেছে নিয়েছিলেন।
 
প্রাচীন কালের অন্যান্য জাতির মত আরবরাও লোহার সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয় লোহাসমৃদ্ধ উল্কাপিণ্ডের মাধ্যমে। তারা জানত না যে পৃথিবীতে মাটির নীচে প্রচুর লোহা রয়েছে। লোহা আহরণের কোন প্রযুক্তিও তাদের জানা ছিল না। কাবা শরীফের পাশে যে ঐশ কালো পাথর রয়েছে, মনে করা হয় যে, সেটা ইসলামের কয়েক শতাব্দী আগে পৃথিবীর বুকে পতিত এক লোহাসমৃদ্ধ উল্কাপিণ্ডের অংশ। ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকে এই কালো পাথরকে আরবরা অত্যন্ত পবিত্র মনে করত; এটা এখনো তাদের কাছে পবিত্র। কিংবদন্তীতুল্য আরব কবি আনতারা ইবনে শাদ্দাদের কাছে একটা তরবারী ছিল। দাবী করা হত যে, আকাশ থেকে আসা ধাতু দিয়ে এটা তৈরী। অবশ্য সকল প্রাচীন জাতিই লোহাকে আসমানী ধাতু হিসাবে জানত।
 
জগলুল আল নজ্জর আলজাজিরা টিভির মাধ্যমে লোহা সম্পর্কে ইসলামী দাবী তুলে ধরেছেন। ড. নজ্জর যে বিভ্রান্ত বা ভুল করেছেন তা কিন্তু নয়। বরং তিনি একজন মিথ্যাবাদী। তার ধারণা তিনি যাই বলুন সবকিছু দর্শকরা বাছবিচার না করে বিশ্বাস করবে। আল নজ্জর দাবী করেন যে, পৃথিবীর সব লোহা আকাশ থেকে এসেছে। এটা একটা মিথ্যা কথা। তিনি দাবী করেন যে, লোহার পারমাণবিক ওজন (৫৭) আর সূরা আল হাদীদের ক্রমিক নম্বর সমান। এটা একটা মিথ্যা কথা; কারণ সাধারণ পরিবেশে লোহার পারমাণবিক ওজন হচ্ছে ৫৬। তিনি আরো দাবী করেন যে লোহার পারমাণবিক সংখ্যা ২৬ এবং সুরা আল হাদীদের উপরোক্ত আয়াতের ক্রমিক নম্বরও। এটা আরেকটা মিথ্যা, কারণ উক্ত আয়াতের ক্রমিক নম্বর হচ্ছে ২৫। আল নজ্জর নম্বর দুইটিকে এক করার জন্য বিসমিল্লাহকে একটি আয়াত হিসাবে গণনা করে তালাগোল পাকিয়ে ফেলেছেন!

 ড. আল নজ্জর নিজের দাবী প্রতিষ্ঠা করার জন্য কতদূর যেতে প্রস্তুত তা দেখে বিস্মিত হতে হয়। তিনি অবশ্যই এই আয়াত হাজার বার পড়েছেন। কিন্তু আয়াতের শেষে এই গুরুতর ভুল তিনি লক্ষ্য করলেন না!
 
৫৭:২৫ ‘...আল্লাহ পরীক্ষা করতে পারেন কে সে যে সহযোগিতা করবে অদৃশ্য তিনি এবং তাঁর নবীদেরকে...’

 আয়াতের এই অংশ মোতাবেক আল্লাহ জানতেন না কোন মানুষ তাঁকে এবং তাঁর নবীদেরকে সাহায্য করবে!
 
সর্বজ্ঞ আল্লাহ আসলেই জানতেন না!


(নিবন্ধটি মধ্যপ্রাচ্যের লেখক Mumin Salih -এর লেখা Exposing Some Myths of Quranic Science-এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি ওয়েব সাইট ইসলাম ওয়াচ (www.islam-watch.org)-এ ৩০ মে, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত। লেখক মুমিন সালিহর ই-মেইল ঠিকানা : rawandi@googlemail.com.)

 
অনলাইন : ১৬ আগস্ট, ২০০৯
 





 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ