Banner
ইউক্রেনঃ আমরা একা, কেউ জবাব দেয় না ভয় পায় — গৌতম দাস

লিখেছেনঃ গৌতম দাস, আপডেটঃ March 2, 2022, 12:00 AM, Hits: 1304

 

(ওয়েবসাইট www.goutamdas.com-এ প্রকাশিত নিবন্ধটির গুরুত্ব বিবেচনা করে লেখকের অনুমতি ক্রমে এটি ‘বঙ্গরাষ্ট্র’-এ প্রকাশ করা হল। — বঙ্গরাষ্ট্র)

guide to the Ukraine-Russia crisis

 

শেষ পর্যন্ত রাশিয়ান সৈন্য ইউক্রেন অভিযান শুরু করে দিয়েছে। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে এক ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর জন্য নির্দেশ দেয়ার পরেই এই অভিযান শুরু হয়ে যায়। তিন দিক থেকে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ শুরু হয়। গত কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেন নিয়ে সামরিক উত্তেজনা চলছিল। একদিকে পশ্চিমা দেশ ও তাদের ন্যাটো জোট আর বিপক্ষে রাশিয়া – এভাবে হুমকি পাল্টা হুমকি চলার মধ্যেই এই সামরিক অভিযান এখন সত্যি হয়ে গেল। এই লেখায় পশ্চিমা দেশ বা শুধু পশ্চিমা বললে তা আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের মিলিত স্বার্থ বুঝাতে লেখা হয়েছে; যার আরেক প্রকাশ হল ন্যাটো জোট।

বৃহত্তর দিকটা দেখে বললে, পুরান সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্র ভেঙে গিয়েছিল ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে। ভেঙে গেলে পরে তা  রাশিয়াসহ মোট পনেরোটা রাষ্ট্রে আপসে বিভক্ত হয়েছিল। ইউক্রেন ওই পনেরো ভেঙে-গড়া রাষ্ট্রের একটা। আর সেই থেকেই মূলত রাশিয়া বাদে ১৪ রাষ্ট্রকে নিয়ে আরেক ধরনের ভাঙা-গড়া শুরু হয়েছিল। আর সম্ভবত তার শেষ-কাণ্ডই এখন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আলাদা আলাদা ১৫ রাষ্ট্র স্বাধীন হয়ে বাধাহীন  জন্ম নেয়ার পরেও তারা থিতু না হয়ে উল্টো অস্থিরতার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল মূলত কিছু বাইরের উপাদান এতে হাজির হওয়ার কারণে। সেই বাইরের উপাদান ছিল ‘পশ্চিমা দেশ’। অথবা অন্যভাবেই বলা যায় ন্যাটোকেন্দ্রিক পশ্চিমা দেশ এরা, তাদের ব্যাপক খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেসব মারাত্মক ভুলগুলো করেছিল তার মাশুল দেওয়ার শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া ধরনের ঘটনাটাই বোধহয় এবার ঘটল।

রাশিয়ার ইউক্রেনকে তিন দিক থেকে ঘিরে ধরে আক্রমণ শুরুর মূল লক্ষ্য রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটানো তাই সেই অভিমুখে; আর তা সাময়িক হলেও লক্ষ্য কিয়েভ দখল। পুতিন ঘোষণা করেই বলছেন, ‘ইউক্রেনকে ডি-মিলিটারাইজ [to demilitarise] করা’ মানে তার সব সামরিক সক্ষমতা বিনাশ করে দেয়া আর ইউক্রেনের মনে হিটলার-গিরির ভাবনা [“denazify”], মানে ইউক্রেনের উগ্র চরম জাতিবাদী অবস্থান ছেয়ে গেছে সেটা ছেঁটে দেয়া এই অভিযানের লক্ষ্য [ Putin said he had orderd the operation to demilitarise and “denazify” the country.]। ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রুশ আর্মি রাজধানী কিয়েভের প্রবেশ মুখ পার হয়ে গেছে। এখন কার্যত সবাই কমবেশি নিশ্চিত যে, পুতিনের রাশিয়া কবে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ফিরে যাবে সেটা একমাত্র তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে [Putin’s ‘prerogative to decide end of Ukraine operation’]। তবে ইউক্রেনকে রাশিয়া নিজ দখলে নিয়ে নেবে এমন কোনো পরিকল্পনা এখানে নেই বলে জানা যাচ্ছে।

তাই এটা অনেকটা, ১৯৬২ সালে চীনের ভারতে আক্রমণ করে পুরো নর্থ-ইস্ট (আসাম) দখল করে নেয়া, এরপর কয়েক দিন এটা দখলে রেখে নিজের সক্ষমতা কতদূর এর একটা ইমেজ প্রতিষ্ঠার পরে নিজ ইচ্ছাতেই আবার সেনা প্রত্যাহার করে চলে যাওয়া – সেরকম। আর পরে এরই প্রভাব-প্রতিক্রিয়ায় সে যাত্রায় ভারত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল, আর নতুন করে চীনকে ভাব-ভালোবাসার মেসেজ পাঠানো এমনকি তার এক গালভরা নামও ছিল ‘পঞ্চশীলা নীতি’ [শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি] বলে। তাতে চীন-ভারত ‘ভাই ভাই’ হয়ে গিয়েছিল। এটা তেমনি একটা কিছুর দিকে যাবে হয়ত। অথচ মূল ঘটনা হল – মাওয়ের চীন সরকার আর দালাইলামার মধ্যে তিব্বতের স্বায়ত্বশাসন নিয়ে  মতভেদ দেখা দিলে আমেরিকা তাতে দালাইলামার পক্ষে সিআইএ পাঠিয়েছিল; আর তারা ভারতের ভুমিতে নর্থইস্ট-আসামে স্টেশন করে ততপরতা শুরু করেছিল। তার তা থেকেই  নেহেরুর ভারতকে চীনের শিক্ষা দেওয়ার জিদ বা ঘটনা। কারণ, ১৯৫৩ সাল থেকে কোথাও কিছু হলেই আমেরিকা সেখানে সিআইএ পাঠানো – এভাবে হস্তক্ষেপের কূটনীতি চালু করেছিল। তাই কোনটাকে ন্যায় আর অন্যায় বলবেন?

আবার মনে রাখতে হবে, আইনের মারপ্যাচে আপনি একটা দেশের বন্দর ব্লক করে ওদেশে প্রবেশ বা পণ্য আনা-নেয়ার পথ বন্ধ বা বাধাদেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এখন এসব ক্ষেত্রে ঐদেশের মুরোদ থাকলে সে অবশ্যই সামরিক-সহ সব পথেই বাধাদাতাদের উতখাত করবেই। রাষ্ট্রের কোর [core] ইন্টারেস্ট বা মৌলিক স্বার্থ ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া এমনই হবে; তাতে এই স্বার্থরক্ষার পক্ষে কোন দেশি বা আন্তর্জাতিক আইন থাকুক আর নাই থাকুক অথবা এমনকি তা বেআইনি হোক! প্রতিক্রিয়া এমনই হবে। তাতে আপনি “আমেরিকা সেজে” সেটাকে “বেআইনি” আগ্রাসন বলার মজাও নিতে পারেন।

বাংলাদেশের প্রধান মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়াতে স্বাভাবিকভাবে ইউক্রেন ইস্যু আছড়ে পড়েছে যদিও সেসব আলোচনার বেশির ভাগই “ন্যায়-অন্যায়” কার কতটা এদিকটাই ভারী করে। শুধু ন্যায়-অন্যায় বিচার করতে অনেকেই যাবে অবশ্যই। কিন্তু কেন ঘটল এমন ঘটনা বা ঘটনাটা এ দিকে গেল কেন তা বুঝতে হলে আরো গভীর অন্য দিকে তাকাতে হবে। আবার এমন ঘটনা দুনিয়ায় নতুন নয়। সাথে আরেকটা সতর্কতা জানিয়ে রাখি; এটা কমিউনিস্ট-অকমিউনিস্ট ইস্যুও নয়। ফলে পুতিন বা কমিউনিস্টরা ভাল কিনা এই চোখে কোনো তর্ক তুলে আনাও অর্থহীন। এতে বুঝবুঝিতে অযোগ্যতাই প্রদর্শন করা হবে ও অকেজো তর্ক তুলে আনা হবে। আবার শুধু হামলার প্রসঙ্গের মধ্যে থেকে এজন্য যারা “ন্যায়-অন্যায়” খুজছেন তারা ধরে নিয়েছেন যেন এই হামলার আগে বা পরে কিছু নাই, কোন ঘটনা নাই  – জানবেন কেবল এর উপরে দাঁড়িয়ে তারা কথা বলছেন।

 অপর রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবোধের অভাব অনুভব কী খুবই তুচ্ছ বিষয়ঃ

তাহলে অপর রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবোধের অভাব অনুভব কী খুবই তুচ্ছ বিষয় – “যা আমার কী আমি কেন”  আমল করব ধরণের???  একটু পরীক্ষা করা যাক!  আমেরিকান ফ্লোরিডা উপকূলের ৯০ মাইলের মধ্যে কিউবার নেতা ক্যাস্ত্রো এক কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটিয়ে বসলে, ১৯৬২ সালের এঘটনায় আমেরিকার তাতে অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। এখান থেকে কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস বলে ১৩ দিনের এক সেনা মোতায়েন ধরে টেনশনের কাহিনী শুরু হয়েছিল। কারণ, তাতে হুমকি পাল্টা হুমকিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় মিসাইল স্থাপন ও আমেরিকার দিকে তাক করে বসিয়ে দিলে তা এক চরম উত্তেজনাকর অবস্থা তৈরি করেছিল। মূল ইস্যু আমেরিকার ‘নিজ নিরাপত্তাবোধ’। আর অন্যদিকে, কিউবান বিপ্লবকে বাধা দান না করা।  আমেরিকা ‘নিজ নিরাপত্তাবোধ’ এর অভাব থেকে আপত্তি করাতে এর সব শুরু। আর তাতে এর শেষ হয়েছিল ‘কোনো যুদ্ধ নয়’ ভাবে। মানে আমেরিকা কিউবা থেকে আক্রান্ত হবে না আর বিপরীতে আমেরিকাও কিউবান বিপ্লব ভেঙে দিতে যাবে না আক্রমণ করবে না – উভয় পক্ষ এমন প্রতিশ্রুতি  বিনিময়ে তখন ঐ বিরোধের সমাপ্তি ঘটেছিল। এ বাইরে কোনো ন্যায়-অন্যায় অথবা এরা সঠিক-বেঠিকতা নিয়ে আলোচনা করতে বসে নেই। তাহলে এখানে রাশিয়ার “নিজ নিরাপত্তাবোধ” কোন বিবেচনার বিষয় হবে না, ১৯৯৭ সাল থেকে আমেরিকা রাশিয়াকে অপমান ও কোনঠাসা করে চলবে – আর এনিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া পরিণতি হবে না – এই আশা অবাস্তব ও আকাঙ্খা দিশাহীনই হবে।

ইউক্রেনে কী নিয়ে বিরোধঃ

অল্প কথায় বললে এর একদিকে ‘রাশিয়ার নিজ নিরাপত্তাবোধ’। কারণ প্রো-আমেরিকান ইউক্রেন সরকার ন্যাটোতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এথেকেই রাশিয়ার নিরাপত্তা চিন্তা শুরু। এটাকে যদি একালের ঘটনা হিসাবে দেখি, তবু এর শুরু খুবই কম করে ২০১৪ সাল থেকে। কিন্তু এ নিয়ে আপস আলোচনার ডায়লগের পথে কখনো দু’পক্ষ যায়নি, যেতে পারেনি; যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ান সেনারা পৌঁছানোর মুহূর্তে চীন-রাশিয়ার মধ্যে এক তথ্য বিনিময় ঘটেছিল, আর তাতে চীনের দিক থেকে রাশিয়াকে এক প্রকাশ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক নিউজে বলা হয়েছে, চীন ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে এখন ‘নেগোসিয়েশন’ করে নিতে আহ্বান জানিয়েছে [China’s Xi speaks to Putin, calls for ‘negotiation’ with Ukraine]। যদিও আপাতত ঘটনা এদিকে যাবার পক্ষে কোনো আভাস নাই।

নিজ নিরাপত্তাবোধের অভাব- সব সমস্যার শুরু এখান থেকেই। তবে এই বিবাদের রুট অনেক অনেক পুরোনা। আর সেখানেই এই “নিরাপত্তাবোধে অভাব” ব্যাপারটা ঢুকে আছে। অটোমান সাম্রাজ্যের সময়কাল (১২৯৯-১৯২২) যার তুলনায় রাশিয়ান জার সাম্রাজ্যের বয়স (১৮৯২-১৯১৭) অনেক কম। কিন্তু দুটা সাম্রাজ্যের আয়ু শেষ হয়েছিল কাছাকাছি সময়েই। সাম্রাজ্য মানেই তার কিছু কলোনি বা উপনিবেশ থাকতে দেখা যায়। আর জার সাম্রাজ্যের আমলেই নানা পথ ঘুরে ইউক্রেন জারের রাশিয়ার উপনিবেশ হয়েছিল আর তা থিতু হয়েই ছিল। তবে অস্থির হয়ে যায় ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় লেনিনের কমিউনিস্ট বিপ্লব থেকে।

অনেকেই হয়তো খেয়াল রেখেছেন জারের রাশিয়ায় লেনিনের বিপ্লব হয়েছিল কেবল রাশিয়ায়, মানে  জার সাম্রাজ্যের অংশ সংশ্লিষ্ট উপনিবেশগুলোতেও না। ব্যাপারটা অনেকটা, আমরা যখন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া পরিচয়ে ছিলাম তখন যদি মূল ইংল্যান্ডে কোনো কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটত তবে তখন কলোনি ব্রিটিশ-ইন্ডিয়াতে কি কমিউনিস্ট বিপ্লব হয়েছে মনে করা যেত? অবশ্যই ঠিক তা না। তবে কী তা কল্পিত কমিউনিস্ট ইংল্যান্ড এই নয়া-রাষ্ট্রের অংশ হয়ে যেত? নাকি তাতে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়াকে তারা কলোনিমুক্ত স্বাধীন বলে ছেড়ে দিত? আলোচ্য ক্ষেত্রে যেন কমিউনিস্ট ইংল্যান্ড কলোনি ব্রিটিশ-ইন্ডিয়াকে নিজের অঙ্গ করে নিয়ে নয়া এক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়েছিল এটা হলে যেমন হত তেমনই রাশিয়ান বিপ্লবের নয়া নাম হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন – এক বিপ্লবী নয়া কমিউনিস্ট দেশ।

১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পরে, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে  ঠিক এটাই ঘটেছিল। ইউক্রেন জারের উপনিবেশ ছিল বলে লেনিনের বিপ্লবের পরে কমিউনিস্ট রাশিয়ার সাথে একে যুক্ত করে নিলে তা সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে হাজির হয়, ১৯২২ সাল থেকে। অর্থাৎ একা ইউক্রেন নয়, জারের সব উপনিবেশকে অন্তর্ভুক্ত করে নয়া সোভিয়েত রিপাবলিক বলে রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। এতে ইউক্রেনও রাশিয়ান কর্তৃত্বের সোভিয়েত রিপাবলিক হয়ে যায়। বিপ্লব রাশিয়াতে হলেও রাষ্ট্র হিসেবে এর নাম হয়ে যায় ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ (১৯২২ সাল থেকে) আর বলাই বাহুল্য এতে রাশিয়ান ভূখণ্ডের তুলনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কয়েক গুণ বড় হয়ে যায়।

অনেকে এটাকে নয়া নামে লেনিনের উপনিবেশ এক্সটেনশন বলতে পারেন বা বলেন হয়ত। কিন্তু  এর পেছনের মূল কারণ ছিল রাশিয়ান কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুনিয়ায় প্রথম কমিউনিস্ট বিপ্লব বলে আর খোদ ইউরোপের ঘটনা আর ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত এই সুযোগে ফাঁক গলে লেনিনের ক্ষমতা দখল করে নেয়ার ঘটনা ছিল সেটা। ফলে পরে তারা প্রচণ্ড ভীত ছিল যে ইউরোপের কলোনিমালিকেরা (তখনকার ব্রিটেন ফ্রান্স এরা; যাদের প্রধান ব্যবসা তখনও ছিল কলোনি দখলদারি ) কখন জানি হামলা করে। ম্যাপের দিকে তাকালে দেখব, মূল রাশিয়ার মোটামুটি চার পাশে বেষ্টন করে আছে সাবেক সোভিয়েতের ইউক্রেনসহ বাকি উপনিবেশগুলো। অর্থাৎ তাদের পেরিয়ে গেলে তবেই বাইরে থেকে রাশিয়া আক্রমণ করা সম্ভব হতে পারে। আবার ইউক্রেন হলো সবচেয়ে বড় ভূখণ্ড যার অপর পাড়ের দিকটাই হল পশ্চিম ইউরোপ। রাশিয়াকে যাদের ভয়ে সারাজীবন কাটাতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এরাই ইউরোপের মূল কলোনি দখলদার যারা এককালে আজকের আমেরিকাসহ সারা দুনিয়াকেই কলোনি করে রেখেছিল ১৯৪৫ সালের আগে পর্যন্ত।

রাশিয়ার নিরাপত্তাবোধের প্রশ্ন কবে থেকেঃ

তাহলে কমিউনিস্ট রাশিয়ার আমল থেকেই নিরাপত্তাবোধের অভাব প্রসঙ্গটা তুঙ্গে উঠেছিল যে, তারা নতুন ধরনের (কমিউনিস্ট) রাষ্ট্র বলেই পড়শিদের থেকে বা তাদের মাধ্যমে অন্যের হাতে হামলার শিকার হতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে সব শুরু। এমনকি এই নিরাপত্তাবোধের অভাব প্রশ্নটা এতই সিরিয়াস ছিল যে, এ’থেকে ট্রটস্কি-র (Leon Trotsky)   নতুন রাজনৈতিক তত্ত্ব পর্যন্ত হাজির হয়ে ছিল যে, ‘এক দেশে সমাজতন্ত্র’ করে তা টিকানো সম্ভব কিনা; সম্ভব করতে গেলে কী করতে হয় ইত্যাদি। এ নিয়ে তাদের নেতৃত্বে বিভক্তিও দেখা দিয়েছিল সেসময়। সারকথায় ওই ১৯২২ সালে রাশিয়া রাষ্ট্রের বদলে সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্র (সংক্ষেপে এরপরে শুধু সোভিয়েত লিখব) গড়ার মূল কারণ ছিল নিরাপত্তাবোধের অভাব মিটানো। আর ইউক্রেন-রাশিয়ার বিশেষ নিরাপত্তা সম্পর্ক সেই থেকে। কারণ ইউক্রেন পশ্চিম ইউরোপ থেকে রাশিয়াকে প্রটেক্ট করা সবচেয়ে বড় ও মূল ভূখণ্ড।

পরবর্তীকালে ১৯৫৩ সাল থেকে আইসেনহাওয়ার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ‘হকিশ’ [hawkish] বা বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে সব কেড়ে নিয়ে যাওয়া আচরণের খারাপ দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল এমন আমেরিকার জন্ম হয়। এটাকেই কমিউনিস্টদের ভাষায় আমেরিকাকে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ হয়ে ওঠা বলা্র শুরু। এমনকি তা কোল্ড-ওয়ার [Cold War] বা স্নায়ুযুদ্ধের কালের শুরু ধরা হয় যার অন্য একটা বড় কারণ হল ‘পারমাণবিক অস্ত্রের’ জমানার শুরুও সেটা। সোভিয়েত ও আমেরিকা দু’পক্ষই পারমানবিক অস্ত্রের  ব্যাপক বিস্তার ঘটিয়েছিল ঐ পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়েই। পারমাণবিক অস্ত্রের কথা ইউক্রেন নিয়ে আলাপে কেন তুললাম?

পারমাণবিক অস্ত্রের কথায় ইউক্রেন নিয়ে আলাপে কেনঃ

কারণ ওসব পারমাণবিক অস্ত্রের একটা বড় অংশই রাশিয়া মোতায়েন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্মুখ ভূমি [frontal state-land], ফ্রন্টাল স্টেট হিসেবে ইউক্রেনে। কারণ পশ্চিম ইউরোপ থেকেই রাশিয়া আক্রান্ত হতে পারে বলেই রাশিয়াকে  রক্ষা করতে বাফার ইউক্রেনেই সেসব পারমানবিক অস্ত্রগুলোর বেশিরভাগ মোতায়েন করা হয়েছিল। পরে সোভিয়েত ভেঙে  গেলেও সেই থেকে ১৯৯২ সালে ইউক্রেন আলাদা রাষ্ট্র হবার পরেও অনেকদিন তা আগের মতই মোতায়েন ছিল।   পরে আস্তে আস্তে সেসব পারমাণবিক অস্ত্র তুলে বা খুলে ফেলা হয়।

এখন অনেকে যুক্তি তুলছেন, সেসময় ওসব অস্ত্র রেখে দিলে আজ ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাতে মার খেতে হতো না। এমন কথা কিছু ফ্যাক্টস নজরে না থাকার কারণে বলা হচ্ছে। প্রথমত পারমাণবিক অস্ত্র নিজেই এক বিরাট রাজনৈতিক তো বটেই এমনকি অর্থনৈতিক বোঝা। এর প্রধান কারণ অহেতুক (তুল্য রিটার্ণ নাই) বিরাট খরচ; যে খরচের পক্ষে সাফাই জোগাড় করা কঠিন। এছাড়া টেকনিক্যালি সাউন্ড স্টাফ লাগে প্রচুর আর এমন মোতায়েন থাকা অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ করা আরেক বাড়তি খরচ।  যেমন উত্তর কোরিয়া নিয়ে নিরন্তর আমেরিকার সাথে খোচাখুচি টেনশনের মুখে এখন চীনের পজিশন হল – ঐ পুরা অঞ্চলকেই পরমানু-মুক্ত রাখা। সবপক্ষই  অপরের সামরিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকলে মিলে একটা কোন চুক্তি করুক, এটাই চীনের অবস্থান।  এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কথাগুলো এভাবে বলা হছে এজন্য যে, অস্ত্রগুলো ইউক্রেনের ভূখণ্ডে মোতায়েন হলেও এর মালিক-কর্তা ও খরচ বহনকারী ছিল খোদ রাশিয়া। ফলে সোভিয়েত ভেঙে গেলে এটা ইউক্রেনের জন্য দায় হয়ে উঠেছিল। মোতায়েন অস্ত্রে জং ধরিয়ে তো কারো কোনো স্বার্থ নেই। তবে উল্টা স্বার্থ ছিল ন্যাটোর। অস্ত্রগুলো পশ্চিম ইউরোপের দিকে, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি – এসব দেশের দিকে তাক করা। কাজেই তাদেরই বড় স্বার্থ ছিল কেবল ইউক্রেনকে যেন  পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করে দেয়া হয়। এখানে নেপথ্যে বলে রাখি, এখন পাঠকেরা বুঝবেন ইউক্রেনে হামলা স্রেফ ন্যায়-অন্যায়ের ইস্যু না। শুধু রাশিয়ান হামলার ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা দিয়ে এর সমস্যা বা সমাধান কিছু বুঝা যাবে না।

সোভিয়েত ভেঙে যাবার পরেঃ

বেশির ভাগ মানুষই কোল্ড-ওয়ার [cold war] বলতে সেকালে সোভিয়েত-আমেরিকার রেষারেষি-টেনশন যেটা যেকোনো দুটো দেশের মধ্যে হয়েই থাকে  তেমনই কিছু একটা বলে বুঝে থাকে। এটা ভাল অনুমান না। গভীর তলদেশ কত গভীরে তার আন্দাজ না নিবার মত ভুল। কোল্ড-ওয়ার বা এই এনিয়ে টেনশনের এক মূল বৈশিষ্ট্য হল দুই ধরনের অর্থনীতি। না, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বা যেটাকে ম্যাক্রো [macro] অর্থনীতি বলে সেটার কথা বলছি না। বলছি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য বা গ্লোবাল বাণিজ্যের দিক থেকে গ্লোবাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অর্থে। তাই কোল্ড-ওয়ার বলতে তাদের মূল এক বিভক্তি হল – আমেরিকার নেতৃত্বে একদল দেশ, গ্লোবাল বাণিজ্যের প্রয়োজনে এক গ্লোবাল অর্থনৈতিক সিস্টেম চালু করে সবাই তাতে যুক্ত হয়ে পড়েছে। আরেক দল (এরাই কমিউনিস্ট বা সোভিয়েত ব্লকের) বলছে, গ্লোবাল বাণিজ্য দূরে থাক, আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যও দরকার নেই। তাই আমরা ওদের সাথে নাই।  প্রথম দল আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গড়ে এই বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ’ব্যবস্থাটা একটা শৃঙ্খলার সিস্টেম  চালু করেছে। যদিও এটা বৈষম্যমূলক, এর মাখন যায় মাতবর রাষ্ট্রের ঘরে। অন্যদের জন্য তবু তা মন্দের ভাল; বিনিয়োগ বা কাজ-চাকরিহীন হয়ে না খেয়ে মরার চেয়ে। তাই সোভিয়েত ব্লকের রাষ্ট্রগুলো কেউ আইএমএফের সদস্য হয় নাই, (আমেরিকাও আগ্রহ দেখাতে চায় নাই এটাও একটা কারণ) একারণে কোনো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যে যোগ দিতে চাইলেও তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

আমাদের মনে রাখতে হবে পুরান কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের দুটা পরিণতির উদাহরণ হয়ে (তবে আদর্শ হিসাবে দেখতে বলছি না) তা আমাদের সামনে হাজির আছে। চীন আজ গ্লোবাল নেতৃত্ব দখলের পথে উঁচুতে অথচ উল্টাদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেছে, রাশিয়া হয়ে ধুঁকছে। আজ পাশে চীন না থাকলে আমেরিকার বিরুদ্ধে “কেঁদে উঠতেও” পারত না। কিন্তু সাবধান চীন-রাশিয়ার  তারা পুরান কমিউনিস্ট বলে হয়েছে তাদের সম্পর্কটা হয়েছে – এমন ধরে নেয়া একেবারেই না। মনে এই ভুল লালন করা যাবে না। বরং তাদের প্রধান এনিমি বা বাধা আমেরিকান আধিপত্য – এই কমন প্রধান এনিমির জন্যই তারা কাছাকাছি ও এটাই তাদের সখ্যতার ভিত্তি।

তাহলে কোল্ড-ওয়ার থাকলেও সোভিয়েত ভেঙে গেলে  -সবার আগে দুটা অর্থনীতি বা অর্থনীতিগত ফারাক – এখানেই প্রধান পরিবর্তনটা ঘটেছিল। সোভিয়েত ব্লক – ১৯৯২ সালের মধ্যেই এরা সবাই আইএমএফের সদস্য হয়ে যায়, এমনকি রাশিয়াও। অর্থাৎ তখন থেকে দুনিয়ার প্রায় সব রাষ্ট্র একই গ্লোবাল অর্থনৈতিক সিস্টেমের অংশ হয়ে যায়।সবার সাথে সবার  আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যও সম্ভব হয়ে  উঠে তাতে। কিন্তু তাহলে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমাদেশগুলোরও উচিত ছিল বিষয়টাকে গঠনমূলকভাবে দেখার, পরিকল্পিত ও সহযোগিতামূলক ভাবে দেখার।

এই অংশটা আমার বক্তব্যের সার কথাঃ

গ্লোবাল নেতৃত্ব কথাটার তাতপর্য বুঝতে হবে।  গ্লোবাল নেতা হিসাবে ১৯৯১ সালের পরে আমেরিকার এখানে এক বিরাট করণীয় ভুমিকা ছিল। যেটা সে করে নাই বলে আজকের এই সংকট ও তার ব্যর্থতা। এবং এটা আজকে গ্লোবালি আমাদের সকলকেই এক সংকটেরর মুখোমুখি করেছে। কী সেটা?

এককথায় ইন্ট্রিগেশন বা সমন্বয়। এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে সমন্বয়।  দুটা ধারার অর্থনীতিতে  থাকা ভিন্নতা ভেঙ্গে তাদের এক হবার এক ধারা হবার সুযোগ এসেছে এটাকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নতা মিশে যাবার ব্যবস্থা নেয়া। কারণ দুটা পক্ষ অসংখ্য সামরিক টেনশন ও সংঘাতে থেকে বের হয়ে আসার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে সেটাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো। কাজটাও যথেষ্ট কঠিন ছিল। কী করে পুরোনা ১৫ রাষ্ট্রকে একই গ্লোবাল অর্থনৈতিক সিস্টেমের অংশ করবে – যার প্রধান দিকটা ছিল উভয় পক্ষের মধ্যে এক বাণিজ্যিক লেনদেন, বিনিময় ব্যবস্থা কার্যকর ভাবে খাড়া করা।  এসব দেশ থেকে যেসব পণ্য প্রতিযোগিতায় বাইরের সবার জন্য সবচেয়ে সস্তায় দেয়া সম্ভব সেগুলোকে উতসাহিত করা। আর এটা সম্ভব হলেই বিনিময়ে তাদের যেসব পণ্য পশ্চিমা জগত থেকে লাগবে চাহিদা আছে সেসব আমদানির অর্থনৈতিক সক্ষমতাও হাতে পাবে বলে আমদানি করবে; আর বলা বাহুল্য সেটা পণ্য, বিনিয়োগ সেবা সবকিছুতেই।  এই লক্ষ্যে একটা ব্যাপক স্টাডিভিত্তিক পরিকল্পনা দিয়ে শুরু করতে পারত। আর একাজ করতে গিয়ে ঐ ১৫ দেশের নিজ নিজ কোর স্বার্থগুলো কী, ওদের জনগণের মানে পাবলিক এক্সপেক্টেশন গুলো কী তা জেনে নিতে হত। আর সেবগুলো অর্থনৈতিক সমন্বয়ের পরিকল্পনায় প্রতিফলিত করতে হত। আর এতেই পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক্টা আগেই তৈরি হয়ে যেত।

তবে একাজ আগে অর্থনীতি দিয়ে শুরু করতেই হত। কারণ বস্তুগত সম্পর্কটা আগে তৈরি হয়ে গেলে পরে রাজনৈতিক ভিন্নতাগুলো তৈরি হয়ে যাওয়া  অর্থনৈতিক স্বার্থে আপোষে মিটিয়ে নেয়া সহজ হয়ে যেত।

কিন্তু না। গ্লোবাল নেতা হিসাবে আমেরিকা এখানে কোন স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা করে নাই।  অথবা না করলেই বা চাপ ফেললেই তাদের বেশি লাভ এমন অনুমান কাজ করেছিল।

কিন্তু আমেরিকা বুঝেছিল উলটা।  প্রথমত সোভিয়েত পতনটাকে সে নিয়েছিল উতযাপনের বিষয় হিসাবে। কী উতযাপন? না, দুনিয়াতে আমেরিকা তাহল তখন থেকে একক পরাশক্তি। এবং এর চেয়েও বড় কথা এই পরাশক্তি-বোধ এক চরম দায়-দায়ীত্বহীন কথিত পরাশক্তির। যেন যে পরাশক্তি হয়ে যায় তার আর দুনিয়া নিয়ে  কোন দায়দায়িত্ব থাকে না। যা ইচ্ছা তাই যেন সে করতে পারে এমন এক চরম বা এবসলিউট স্বাধীনতা-বোধের ফ্যান্টাসি ছাড়া এটা আর কিছুই নয়। কথাটা একটুও বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না। মিলিয়ে দেখা যাক।

সেটা ছিল ক্লিনটনের যুগ (১৯৯৩-২০০১) মানে ২০০১ সালে জুনিয়র বুশের ক্ষমতায় আসার আগের আট বছর। এতে আমাদের মত দেশে বেধরক সামরিক ক্যু ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল – এই নীতি অন্তত তিনি বদলানোর পক্ষে চলে যান মূলত কিছু থিঙ্কট্যাংকের চাপাচাপিতে।  যার ফলস্রুতিতে একটা বড় উদাহরণ হল পাকিস্তান। তবে ভারতের বেকুবি প্ররোচনা আর নওয়াজ শরীফের তাতে পা-দেয়ার পরিণতিতে মোশাররফের ক্যু ছাড়া পাকিস্তানে আর সামরিক ক্যু হয় নাই। যদিও এই নীতি পরের আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা চালু রাখতে পারে নাই। সিভিলিয়ান মুখোস পরে করেছেন। বাংলাদেশের ওয়ান-ইলেভেন এর প্রমাণ।  তাতে যতটুকু যা নয়া কাজ!

আর ২০০১ সালে থেকে নির্মম ও বেপরোয়াভাবে বুশের ওয়ার অন টেররে যেকোন (বিশেষত মুসলমান) দেশে রেজিম বদল হয়ে উঠেছিল তার প্রধান নেশা। আর এর পিছনের চিন্তাটাই ছিল “আমেরিকা এখন একক পরাশক্তি” ফলে যা ইচ্ছা তাই।  অথচ বুঝতেও পারে নাই দায়দায়িত্ব কী জিনিষ গ্লোবাল নেতৃত্ব কী জিনিষ! তাই পাঁচ বছরের মধ্যে (২০০৬) মূল স্ট্রাটেজিক প্লানারেরা বুঝে যায় তারা ডুবে যাচ্ছে, হাত-পা আটকে গেছে।

ওদিকে পুরান সোভিয়েতেও তারা একাজটাই করেছে আরো ভয়ানকভাবে। রাশিয়াকে গুনেছে বুড়া বাঘ হিসাবে আর বাকি ১৪ রাষ্টকে ব্যবহার করেছে একেকটা পুতুল সরকার বসিয়ে, ওসব দেশে এনজিও খুলে আর এর মাধ্যমে কাকে পুতুল করা হবে সেই বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করে। অথচ আমেরিকা দেখতে পায় নাই এর অর্থ হল ওসব দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সোভিয়েতের কারণে এমনিতেই ছিল দুর্বল অবিকশিত আমেরিকা সেটাকে আরও দুর্নীতিবাজ ও প্রো-আমেরিকান করে গড়ে তুলতে।  অথচ বুঝতেই চায় নাই এমন প্রো-লাগালোর অর্থ হল ঐ ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে এইবার প্রো-রাশিয়ান আরেক প্রতিরুপ গড়ার দিকে আমেরিকা নিজের ঠেলে দেওয়ার কর্মসুচি নেয়া হচ্ছে সেটা। প্রো-আমেরিকান বা প্রো-রাশিয়ান পুতুল – এটা কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা হতে পারে না। অথচ আমেরিকা এর ভিতরে ঐ ১৪ রাষ্ট্রকে নিয়ে গেছে। আর তাতেও সামলাতে না পেরে এবার “ন্যাটোর মেম্বার বানিয়ে নেয়া” – এই নতুন কায়দা শুরু করেছিল। কেউ প্রশ্ন তুললেই বিরোধী মানে তারা গণতন্ত্রবিরোধী। যেন কাউকে কৌশলে ন্যাটোর মেম্বার করে সবার মুখ বন্ধ করা খুবই “গণতন্ত্রী কাজ” ও সমাধান। মাঝে ১৯৯৮  সালে খোদ রাশিয়াকে  লোভ দেখিয়ে জি৭ এর সদস্য বানিয়ে নিয়ে সেটা নিজে জি৮ করে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার মুখবন্ধ করে রাখার এই পরিকল্পনা কাজ করে নাই। এককথায় কোন দায়ীত্ববান গ্লোবাল নেতার ভুমিকা নিয়ে নয় খাবলা দিয়ে খাবার মত ছল-বলে কৌশলে ঐ ১৪ দেশের উপর রাজনৈতিক-সামরিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে গেছে আমেরিকা। আর একালে কিছু হলেই সবার উপরে অবরোধ আরোপ – হয়ে গেছে আমেরিকানদের ঢলে পড়া গ্লোবাল নেতৃত্ব টিকবে না জেনেও তা টিকানোর আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেছে। এরই এক পর্যায়ে অসহ্য হয়ে পড়া রাশিয়া এবার পালটা আঘাত করেছে। যদিও আঘাত বা পালটা আঘাত এদের কোনটাই সমাধান নয়। দরকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা গটে তোলা, সেটা গ্লোবালি এবং ওসব ১১৪ বা ১৫ দেশেও।

আমেরিকার নেতৃত্বের পশ্চিম এখানেই ব্যর্থ আর তা থেকেই এরই এক প্রকাশ হল,  বর্তমান সঙ্ঘাত।

অনেক সময় আপনি যাকে শত্রু মনে করেন, তা সত্ত্বেও এটাও সত্যি যে তাকে কিছু ট্রেনিংয়ের ভেতর দিয়ে যদি নিতে পারেন তবে সেটা আপনাদের উভয়েরই ভাল হতে পারে। অহেতুক স্বার্থ সঙ্ঘাত তাতে লোপ পেতে পারে।

সাধারণভাবে বললে, পশ্চিমের উচিত ছিল প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে যতদূর সম্ভব ঘনিষ্ঠ ও পরস্পর নির্ভরশীল ও সহযোগিতায় এক বাণিজ্য সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া বা গড়ে তোলা। পরে রাজনৈতিক স্বার্থ অবস্থান ভিন্নতাগুলো কমানোর বিষয়ে কাজ করা। এতে পূর্ব-ইউরোপের সাথে ইন্ট্রিগেশন সহজ ও কম, বাধাহীন হত। মূলত এটাকেই বলছি পরিকল্পিতভাবে কাজ করা। কিন্তু আমেরিকার নেতৃত্ব পশ্চিম ইউরোপ এ কাজটা করেছে অপরিকল্পিত হেলাফেলায়। তার চেয়েও চাপে ফেলে বাধ্য করায়, আর অপর পক্ষের উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করে। সর্বোপরি এনজিও বা অন্য কোনো উপায়ে পাপেট সরকার বসিয়ে প্রভাবিত করা আর সাথে, যেকোনো উপায়ে ওসব দেশকে ন্যাটোতে ঢুকিয়ে নেয়া।

এর মধ্যে সবচেয়ে অবিবেচক ও অন্যায় কাজটা  হল ন্যাটো টিকিয়ে রাখা। আর এটাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐ ১৪ দেশকে ধরার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা।  ন্যাটোর জন্ম হয়েছিল  পশ্চিমাদের ঘোষিত রাশিয়াবিরোধী সামরিক জোট হিসাবে ১৯৪৯ সালেই। আর যার এক মারাত্মক নীতি হল, এর কোনো এক সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে বাকি সদস্যের সবাইকে ওর পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে যুদ্ধে যেতে হবে। তা থেকেই এখনকার ইউক্রেন দ্বন্দ্বের জন্ম; যেটাতে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নিয়ে রাশিয়ার ওপর পাল্টা আধিপত্য কায়েম করে নিতে চাচ্ছে। আর রাশিয়ার আপত্তি হলো আমার নিরাপত্তা স্বার্থ উপেক্ষা করলে আর আমার ওপর রুস্তমি করতে চাইলে আমি সর্বাত্মক বাধা দেব। পশ্চিমের হুমকির মুখে তাই ইউক্রেনকে রাশিয়া কিছুতেই ন্যাটোর সদস্য করে নিতে দেবে না।

এই হলো আমেরিকার অপরিকল্পিত ও হামবড়া দেখানোর সুবিধার ওপর চালিয়ে দেয়া কাজ। আমেরিকার ধারণা, সে ন্যাটোতে যোগদান করা ইউক্রেনের ‘অধিকার’ বলে চালিয়ে দিতে পারবে। এই সাফাই দিয়ে নিজের সব আকাম চাপা দিতে পারবে।  এটা ন্যায়-অন্যায়ের ব্যাপার বলে চালিয়ে দিতে পারবে।

প্রথমত আমেরিকা নিজের বেলায় এভাবে বিষয়টাকে দেখে নাই। অর্থাৎ ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস যেটাকে বলে তখন, আমেরিকা কিউবার মিসাইল মোতায়েনকে কিউবার ‘অধিকার’ হিসেবে দেখতে পারেনি কেন? ন্যায় হিসেবে দেখতে পারেনি কেন? কেন নিজের নিরাপত্তাবোধকে আপত্তির ইস্যু করেছিল?

এখানে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিম ইউরোপের প্রধান স্ববিরোধিতা হল, পুরনো সোভিয়েত ব্লককে ঘরে ডেকে নেয়া বা স্বাগত জানাতে না পারা। তারা সেটা তো করেইনি, উল্টা ন্যাটোকে শক্তিশালী করছে; তাও আবার সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোকেই ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে। সোভিয়েত ভেঙ্গে গেছে; এরপরে আর ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা থাকা যেখানে প্রশ্নের মুখে সেখানে  আমেরিকা যদি রাশিয়ার সাথে নুন্যতম কার্যকর সম্পর্ক চায় তবে ঐ ১৪ দেশকেই ন্যাটোতে ঢুকাতে হবে কেন? ফলে পশ্চিমের উদ্দেশ্যটাই অসৎ হয়ে গেছে, সে রাশিয়ার জন্য উপযুক্ত পার্টনার নয়। এটা তো কাজ করবে না সংঘাতই ফিরে আসবে।

এ ছাড়া পুরোনা সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে এনজিওর তৎপরতাকে পাপেট সরকার বসানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা আর পরিস্থিতিকে এমন দিকে ঠেলে দেয়া যেন এখন ইউক্রেনের মতো দেশগুলো হয়েছে রাশিয়া আর পশ্চিম দু’পক্ষেরই নিজ নিজ পাপেট সরকার বসানোর প্রতিযোগিতা। এটা পশ্চিমের জন্য কোনো যুক্তিতেই তাদের পলিসি হতে পারে না- তাদের দাবি অনুসারে তারা তো ডেমোক্র্যাসির বরপুত্র! নাকি? কোনো দায়িত্ববান ব্যবসায়ীও এমন অবস্থান নিতে পারে না।

রাশিয়ান হামলার মুখে আমাকে একা ফেলে পালিয়েছে পশ্চিমঃ

এই কথাগুলো হলো হামলার দ্বিতীয় দিন, মানে ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বোধোদয়! “Who is ready to fight alongside us? I don’t see anyone,এই হলো পাপেটের করুণ দশা। এ কথার সোজা মানে হল, সারা পশ্চিম তাকে ছেঁকা দিয়েছে; এতিম করে ফেলে পালিয়েছে এবং এজন্য পশ্চিম দায়ী অবশ্যই। কিন্তু প্রধান দায়ী প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজেই। কেন তিনি আগে চিনতে পারেননি? কাদের হাত ধরে ও উসকানিতে জেলেনস্কি পুতিনের সাথে শত্রুতা করতে গিয়েছিলেন? লাগতে গিয়েছিলেন কেন?

এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় যে এই খবরটা কোন পশ্চিমা মিডিয়া কাভারই করে নাই। এসেছে evening standard স্থানীয় পত্রিকায় আর নয়ত আল জাজিরায়। কেন? দেশের দোষ ঢেকে রাখার দেশপ্রেমিকতা? নাকি এটাই এমবেডেড জার্ণালিজম???

তাহলে এক মাস আগে পোল্যান্ডে ও রোমানিয়ায় পর্যন্ত বাইডেনের আমেরিকা নিজ সেনা মোতায়েন করেছিল কেন? আবার মোতায়েন করার পর যখনই নিশ্চিত হয়েছে যে  রাশিয়া আক্রমণ করবেই স্রেিরিয়াস আগেই সেনা প্রত্যাহার করে আমেরিকা ভেগে যায়। আর এখন বলছে আমেরিকা রাশিয়ার সাথে বা ইউক্রেনের ভূমিতে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করবে না। কী তামাসা! এ কথা আগে বলেনি কেন? এটা কি প্রতারণা না?

কেন এমন পরিণতিঃ

কারা কারা রাশিয়ার ওপর স্যাংশন দিয়েছে এই তালিকাটাও বেশ মজার। এক কথায় এটা হল বাইডেনের সাজানো অ্যান্টি-চায়না ব্লক; একেবারে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। মানে হল বাইডেনেকে যদি তারা শেষ পর্যন্ত আঁকড়ে থাকে তবে এটা হবে সবাইকে না খাইয়ে মারার বুদ্ধিতে গড়া এক ব্লক যাদের মূল বৈশিষ্ট্য তাদের আর ‘গ্লোবাল’ হওয়ার ব্যাপারটাই কখনই বুঝে নাই। এছাড়া বুঝার মুরোদ নেই সেতা তো বহু পুরানা। মানে হল, তাদের যুদ্ধের খরচ বইবার অর্থেও কারো সাথে যথেষ্ট সারপ্লাস সম্পদ নেই অথচ গ্লোবাল নেতা হওয়া বা থাকার ক্ষেত্রে যা এক নম্বর শর্ত। আর মূলত একারণেই তাদের কেউ একটা দেশও ইউক্রেনের পক্ষে সামরিকভাবে দাঁড়ায় নাই। যদি না দাড়াতে পারে, দাড়ালে বিশযুদ্ধ লেগে যাবার ভয় আছে মনে করে তাহলে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে সদস্য করে নিতে চাওয়াটাই তো অর্থহীন।

কিন্তু বাইডেনের পরামর্শক বা থিংকট্যাংকের ফেলোরা তবু বুদ্ধি দিয়ে যাচ্ছেন, আমেরিকা এখনো সামরিক দিক থেকে চীনের ছয় গুণ শক্তিশালী। কাজেই তারাই গ্লোবাল নেতা।’ এদের কে বুঝাতে পারবে গ্লোবাল সক্ষমতা বলতে প্রধানত অর্থনৈতিক সক্ষমতা বুঝায়। এরপরে সামরিক আসতে পারে, আগে নয়।

তাতে ফলাফল? এখন নিম্নচাপ! মানে?

মানে হল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ন্যাটোর খরচ কে দেবে? এর উত্তর নেই বলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির রাস্তায় পড়ে থেকে কাতরাচ্ছে! আর পশ্চিম ইউরোপের কথা, আমেরিকা ন্যাটোতে খরচ না দিলে তারা নড়াচড়া করবে না। তাই সাত মণ ঘি ঢালা হয়নি, আর তাতে রাধাও নাচেনি। আবার এটা এমনই লজ্জার কথা, তারা সেটা প্রধান কারণ মিডিয়ায় আনে নাই। প্রায় ৪৮ ঘন্টা পরে লজ্জার মাথা কাটা গেলে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে হয়াত খউলেছে। যার অর্ধেকেরও বেশি ফ্রান্স অস্ত্রের ব্যবসা করে নিতে নিয়েছেন, ইউক্রেনকে দূর থেকে কিছু অস্ত্র পাঠাবেন বলে  অথচ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অভিযোগ তাকে ভালুকের মুখে ফেলে পালিয়েছে- এই বক্তব্যের ফলে পশ্চিমের কার মুখ-সম্মান এখনো বেঁচে আছে? আমেরিকান সংসদে অর্থের মঞ্জুরি হবে, এরপর বাইডেন অর্থ পাঠাবে আর এরপর ফ্রান্সের মত কেন অর্থের ভাগ পেলে অস্ত্র পাঠাবে ? এর ভাবেই যুদ্ধ করতে এমেছিলেন  প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি??? এটা কী যুদ্ধ!

আবার রাশিয়ার দিক থেকে এটা প্রতিশোধের খায়েশ কিছু মিটানো ছাড়া কিছুই নয়। দিন শেষে সবাইকেই কথা বলতে বসতে হবে। দেশের ভিতরে বা বহুরাষ্ট্রীয়ভাবে স্থায়ী রাজনৈতিক ব্যবহা গড়ে তোলার মধ্যেই  সমাধান আছে। সবাইকে সেখানে যেতে হবে।

আর এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার অসহায়ত্ব আরো স্পষ্ট হয়েছে। আর নিশ্চিত হওয়া গেছে ট্রাম্প আর বাইডেন দুজনেই আসলে  পরাজিত আমেরিকার সৈনিক – তবে একই মুদ্রার দুই দিক। ফলে এই ট্রাম্প বলছেন, তিনি আমেরিকাকে গ্লোবাল নেতাগিরিই ছাড়াতে চান! আর জাতিবাদী “সাদারাই শ্রেষ্ট” রাজনীতিতে আমেরিকাকে সাজাতে চান!  আর বিপরীতে বাইডেন মনে করেন – আরে আমেরিকা এখনও গ্লোবাল নেতা; তাদের কত কী ক্ষমতা আছে ট্রাম্প সেগুলার ব্যবহারই জানে না। তাই তিনি এবার সেগুলো ব্যবহার করে সবাইকে দেখিয়ে দিবেন। শেষে আমরা এখন দেখছি সে ফাটা ঢোল স্যাংশন! কিন্তু সেটাও হয়ত তাকে অন্তত বেইজ্জতিতে ফেলত না! কিন্তু  প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে গাছে তুলে নিয়ে দেখেন, তার পকেটে মানিব্যাগই নাই। এটা ওনেকটা বাসে উঠে টের পেলেন পকেটে কোন টাকা নাই। শেষে কন্টাকটরকে হাত ঘড়ি খুলে দিয়ে কোন মতে বাসায় ফেরা, এই আর কী!

আমেরিকার দিন ফুরানোর ইঙ্গিত এগুলো তাতে ট্রাম্প না বাইডেন এর প্রেসিডেন্ট, কিছু এসে যায় না। এরা একই মুদ্রার দুই দিক মাত্র!

আর ওদিকে পুতিন যদি টার্গেট পুর্ণ করে ইউক্রেন থেকে ফিরে আসতে চান তবে ১৪ দিন অনেক বেশি, ৭-১০ এর মধ্যে শেষ করতে হবে। নইলে পা দেবে গেলে বের হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আর ন্যাটোর কেউ যদি সেনা নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষে দাড়ানোর চিন্তা করে তবে এক নয়া বিশ্বযুদ্ধ সকলকে তাতে টেনে নিয়ে যাবে।

(এই লেখাটা  দৈনিক  “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার  ২৬ ফেব্রুয়ারি  ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে    ভালুকের মুখে আমাকে একা ফেলে পালিয়েছে – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।   ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন।  আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। - লেখক : goutamdas1958@hotmail.com, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০৬ সোমবার https://wp.me/p1sCvy-3WL )

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ