Banner
অলোকবাদে বিশ্বাসীর মুক্তি ─ শামসুজ্জোহা মানিক

লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ July 6, 2015, 12:00 AM, Hits: 942

ধর্মবিশ্বাসীদের বিশ্বাস অনুযায়ী পরম মুক্তির রূপ কী? সেই মুক্তি তো এক এক ধর্মবিশ্বাসীদের বিশ্বাস অনুযায়ী এক এক রকম। মুসলমানের মুক্তিটা কী? মৃত্যুর পর জান্নাত বা ইসলামী স্বর্গে গেলে তার মুক্তি। ইসলামের মুক্তি হচ্ছে ইসলামী মেয়েমানুষ (হুর), বালক (গেলেমান), মদ, সুমিষ্ট ফলমূল আর যাবতীয় সুস্বাদু খাদ্য নিয়ে অনন্ত কাল আমোদ-ফূর্তি ও সুখভোগ। বুঝা যায় জান্নাতবাসের ব্যবস্থাটা মুসলমান পুরুষ পুণ্যাত্মার কথা ভেবেই করা হয়েছে। অবশ্য আল্লাহর দাসত্ব থেকে তার কোনও কালেই মুক্তি মিলবে না। এ পৃথিবীতেও মুসলমান আল্লাহর বান্দা বা দাস, স্বর্গে গেলেও দাস।  
 
খ্রীষ্টীয় মুক্তিও তো মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভ। তবে এই মুক্তির প্রতিবেদন বা রিপোর্টটা এতই নিরামিষ যে সেটা জানলে কোনও ঈমানদার মুসলমান পুরুষই ঐ স্বর্গে যেতে চাইবে না। খ্রীষ্টীয় স্বর্গে পুণ্যাত্মারা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে অনন্তকাল থাকবে। অফুরন্ত ধারায় প্রবাহিত মদ, বহুসংখ্যক (৭২) অনন্তযৌবনা তরুণী আর অগণন চিরকিশোর বালক ছাড়া শুধু ঈশ্বরের গুণগান করে আর যীশুসহ অন্যান্য পুণ্যাত্মার সাহচর্য নিয়ে কী করে অনন্ত কাল কাটানো যাবে সে প্রশ্ন অবশ্য খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীদেরকে যে কোনও বিশ্বাসী মুসলমানের করা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে।
 
হিন্দু ধর্মে অবশ্য পরজন্ম বা জন্মান্তর আছে, আবার চূড়ান্ত মুক্তি হিসাবে স্বর্গও আছে। অনেক জন্মে পাপ-পুণ্যের অনেক পরীক্ষা দিয়ে তারপর স্বর্গে যাবার সার্টিফিকেট লাভের ব্যবস্থা আর কি! আবার নরকবাসের বিধানও আছে পাপাত্মাদের। তবে হিন্দু ধর্ম যেহেতু একজন ব্যক্তির দ্বারা প্রবর্তিত নয়, বরং এটা হাজার হাজার বছর ধরে উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ ভূভাগের অসংখ্য জাতি ও উপজাতির প্রথা ও বিশ্বাসের সংযোগ বা সমন্বয়ে গড়ে উঠা ধর্ম সেহেতু এখানে মুক্তি, পরলোক বা পরজন্ম, মৃত্যু পরবর্তী বিচার ইত্যাদি নিয়ে কোনও সঙ্গতিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ মতবাদ বা ধারণা নাই। যে ধর্ম প্রবক্তা বা ধর্মগুরু যেভাবে পেরেছে সেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে অভিন্নতায় রয়েছে আত্মার ধারণা। অর্থাৎ ইসলাম, খ্রীষ্টান ও হিন্দু এই তিন ধর্মেই আত্মার ধারণা যেমন আছে তেমন আছে আত্মার অবিনশ্বরতার ধারণা।
 
কিন্তু আত্মার ধারণার জায়গায় বৌদ্ধধর্ম ভিন্ন। তার আত্মাকে জীবের চেতনাও বলা যায়। এই চেতনা এমন এক সত্তা যা দেহকে কেন্দ্র বেঁচে থাকলেও মৃত্যুর পরে দেহান্তরে গমন করে। জীবের কর্ম অনুযায়ী মৃত্যুর পর তার পুনর্জন্ম ঘটে। অনেক জন্মে পুণ্যকর্মের মধ্য দিয়ে এক সময় জীবের বা মানুষের আর পুনর্জন্ম ঘটে না। এটাই হল মুক্তি যেটাকে বলা হয় নির্বাণ। অর্থাৎ তার মুক্তি স্বর্গলাভে নয়, বরং নির্বাণলাভে। তার নরক যেমন নাই তেমন স্বর্গও নাই। যখন জীবদেহে জন্মলাভ ঘটবে না এমন এক অবস্থাই তার কাছে মানুষের মুক্তি। আর এক জায়গায় ইসলাম, খ্রীষ্টান ও হিন্দু ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্ম ভিন্ন। সেটা হচ্ছে বিশ্বস্রষ্টা হিসাবে পরম আত্মা তথা আল্লাহ্‌ বা ঈশ্বর ধারণার অভাব।
 
ঈশ্বর এবং স্বর্গ-নরকের ধারণা বিহীন বৌদ্ধধর্মে পাপীর শাস্তি দুঃখময় জন্মান্তরের চক্রে আবর্তিত হয়ে চলা আর পুণ্যবানের পুরস্কার দুঃখময় জন্মান্তরের চক্র থেকে মুক্তি তথা নির্বাণ লাভ। অর্থাৎ বৌদ্ধধর্মের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে জীবনের দুঃখময়তার ধারণা। বলা যায় এই ধারণা এই ধর্মকে আচ্ছন্ন করে আছে। বুদ্ধের ভাষায়, ‘সব্বং দুক্‌খং’, সবকিছুই দুঃখময়। সুতরাং জন্ম-জন্মান্তরের পথ ধরে চলা দুঃখময় জীবনচক্র থেকে মুক্তির পথ-সন্ধানে বৌদ্ধ চেতনার যাত্রা। নির্বাণই তাই এই ধর্মে মানুষের পরম মুক্তি।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ