লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ February 22, 2024, 12:00 AM, Hits: 1090
পার্শ্ববর্তী ভারত-রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালী থানার নারী জন-বিস্ফোরণ বিগত কয়েক দিন যাবৎ গোটা পশ্চিম বঙ্গের জন-সমাজকে তোলপাড় করে চলেছে। এটা এমন একটা ঘটনা যা পার্শ্ববর্তী দেশের ঘটনা হলেও আমার মনকেও এমনইভাবে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও আলোড়িত করেছে যে আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।
সন্দেশখালীর ঘটনা নিয়ে বিশদ বিবরণে আমি যাব না। বাংলাদেশ থেকে যারা সেভাবে জানতে আগ্রহী হবেন তারা পশ্চিম বঙ্গ থেকে প্রচারিত বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন, যেমন, আরামবাগ টিভি, বাংলার মন, রিপাবলিক বাংলা, টিভি ৯ বাংলা, দ্য নিউজ বাংলা, প্রিয় বন্ধু মিডিয়া, বঙ্গ টিভি ইত্যাদি।
একটা দীর্ঘ অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্দেশখালীতে যে জন-বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা মূলত রূপ নিয়েছে নারী বিস্ফোরণে। এটাকে নারী অভ্যুত্থান কিংবা নারী বিদ্রোহও বলা যায়। এক দীর্ঘ নির্যাতনের মূল শিকার ছিল ঐ অঞ্চলের নারী সমাজ, বিশেষত হিন্দু ও আদিবাসী নারীরা। নির্যাতন পরিচালনার মূল নায়ক ছিল শাসক দল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা শেখ শাহজাহান। শেখ শাহজাহানকে এলাকার বেতাজ বাদশাহ্ও বলা হত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের সব ধরনের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে সে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কী সে করে নাই? পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে সে তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজী, জমি দখল, বাড়ী দখল করেছে। সে একা নয়, তার সাঙ্গোপাঙ্গরাও হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি দখল করে তাতে লোনা জল ঢুকিয়ে চিংড়ি ঘের তৈরী করেছে। শুধু এইটুকু নয়। তার এলাকায় বিশেষ করে হিন্দু ও আদিবাসী নারীদের সম্ভ্রমের কোনও মূল্য ছিল না। পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক নারীদেরকে গভীর রাতে শাহজাহান কিংবা তার সঙ্গীদের মনোরঞ্জন করতে এলাকার তৃণমূল পার্টি অফিসে যেতে হত। ইচ্ছা হলে নারীদের রেখে দেওয়া হত দিনের পর দিন। এর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেই নেমে আসত অত্যাচারের স্টীমরোলার, নারীদের উপর এবং তাদের পরিবারের পুরুষদের উপর।
ভয়াবহ সব অত্যাচারের বিবরণ এখন এই নারী বিদ্রোহের পর উঠে আসছে। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসন মরীয়া চেষ্টা করেছে এই বিদ্রোহকে চেপে দিতে। পশ্চিম বঙ্গের কোনও কোনও চ্যানেল যথাযথভাবে এই ধরনের গণ-অভ্যুত্থাকে নারী বিদ্রোহ বলছে। তবে পুরুষরাও আছে এই বিদ্রোহে। কিন্তু তাদের অবস্থান নারীদের কিছুটা পিছন সারিতে। আসলে এটা এক নূতন ধরনের আন্দোলন, যেখানে হাজার হাজার নারী ঝাঁটা, লাঠি হাতে নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশে পথে নেমেছে। তাদের পিছনে সহযাত্রী হিসাবে আছে পুরুষরা।
এখন ক্রমে পশ্চিম বঙ্গের আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী শক্তির এই জাগরণ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এ থেকে আর একটা ঘটনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, বিগত তেরো বৎসর ধরে পশ্চিম বঙ্গকে তৃণমূল কোন অধঃপাতে টেনে নামিয়েছে। প্রশ্ন জাগে, গণতন্ত্রের নামে এ কী শাসন ব্যসস্থা পশ্চিম বঙ্গের জনগণ লাভ করেছে! ভোট দখলের মাধ্যমে এমন মাফিয়া রাজও যে লাভ করা যায় তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল তৃণমূলীয় শাসন। কিন্তু প্রশ্ন আসবে ৩৪ বৎসরের বাম ফ্রন্টের শাসন তাহলে পশ্চিম বঙ্গকে কী এমন উত্তরাধিকার দিয়েছে যে, সেখানে তৃণমূলের মতো মধ্যযুগীয় দুর্বৃত্ত শাসন চেপে বসতে পারে? যারা সমাজের আমূল পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন তাদের নিকট পশ্চিম বঙ্গের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে বলে বোধ করি।
২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪