লিখেছেনঃ মুমিন সালিহ, আপডেটঃ July 15, 2009, 12:00 AM, Hits: 8663
ইসলাম বৃহৎ মিথ্যা এবং অতিকথার সমষ্টি। এ নিবন্ধটি বহুল প্রচলিত সেসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তির মধ্য থেকে সাতটির উপর আলোকপাত করবে।
১। অতিকথাঃ “নাস্তিকেরা ঈশ্বরের অনস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারে না, এতেই বোঝা যায় যে, ইসলামই সঠিক ধর্ম।”
সত্যঃ ইসলাম এবং ঈশ্বরের মধ্যে কোনো সম্পর্কই নেই।
নাস্তিকেরা ঈশ্বরের অনস্তিত্ব প্রমাণ করতে নাও পারে, কিন্তু মুসলিমরাও তো তার (ঈশ্বরের) অস্তিত্ব প্রমাণে অপারগ। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী তাদের কাছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব এ নির্দেশ করে না যে, ইসলাম সঠিক। বরং, এতে এই প্রতিভাত হয় যে, ইসলাম পুরোপুরি ভুল। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং দয়ালু। কিন্তু কুরআন যে ঈশ্বরের বর্ণনা দেয় - তিনি বিদ্বেষাক্রান্ত, প্রতিশোধপরায়ণ ও মূর্খ, এমনকি বকলমও। এ বিচারে, ইসলাম ঈশ্বরের কাছে সাক্ষাৎ অপরাধ। কুরআনের দুর্বল ভাষাকাঠামো, এর অসঙ্গতি, এর অযৌক্তিক কার্যকারণ এবং এর অগ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক ত্রুটিগুলো এ গ্রন্থটিকে, ঈশ্বর তো দূরে থাক, যে কোনো লোকের কাছেই মূর্তিমান অপমান হিসাবে উপস্থিত করবে। সত্যিকারের আস্তিক যে কোনো লোকেরই এহেন ভয়ঙ্কর মূর্তির ধারক একটি বইয়ের সাথে সর্বশক্তিমান এবং দয়ালু ঈশ্বরের যোগসূত্র স্থাপনের প্রচেষ্টায় বিরক্ত হবার কথা। অথচ, মুসলিমরা ঠিক উল্টোটা করে যাচ্ছে; তারা ঈশ্বরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের গ্রন্থকে মহিমান্বিত করতে ও এর ভুলগুলোকে সঠিক হিসাবে প্রতিপন্ন করতে প্রয়াসী হয় এবং দাবী করে যে, এটি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে।
আর নিরীশ্বরবাদীদের কাছে তো ইসলাম বিবেচনাযোগ্যই নয়।
২। অতিকথাঃ “মুহামমদের বাণীর সারকথা ছিলো আল্লাহ্ (যা ঈশ্বরের আরবী প্রতিশব্দ) - তে বিশ্বাস স্থাপন।”
সত্যঃ মুহামমদের বাণীর সারকথা ছিলো তার উপর বিশ্বাস স্থাপন, আল্লাহ- তে নয়!
মুসলিমরা আহত হয় যখন তারা জানতে পারে যে ’আল্লাহ্’ শব্দটি ঠিক ঈশ্বর বোঝায় না, কেবল জিউস, অ্যাপোলো আর ওসিরিস যেমন দেবতাদের নাম বোঝাতো তেমনি একটি নামই কেবল বোঝায়। মুসলিমরা আরো বেশী আহত হয় যখন তারা জানতে পারে যে, ইসলামপূর্ব আরবেরা মুহামমদের জন্মের ঢের ঢের আগে থেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করতো, এমনকি তাদের ঈশ্বরকে তারা আল্লাহ্ নামেই ডাকতো। এখানে স্মর্তব্য যে, মুহামমদের বাবার নাম ছিলো আব্দুল্লাহ্ বা আব্দ্-আল্লাহ্। প্রায় সব মুসলিমেরই একটি ভ্রান্তধারণা আছে যে, ইসলামপূর্ব আরবেরা ’আস্নাম্’ নামের পাথরের মূর্তির উপাসনা করতো, যাদের তারা তাদের দেবতা বা ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করতো। এটি একদমই সত্য নয়। যদিও কিছু উপজাতি তাদের দেবতাদের বা ঈশ্বরের ’প্রতিমা’ বা ’প্রতিনিধিত্বকারী’ হিসাবে পাথরের ভাস্কর্য গড়তো, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা পাথরের পূজা করতো। সারা আরবেই, বিশেষ করে মক্কাতে, বহুদেবতাবাদী ধর্মগুলো খ্রীষ্টবাদ, ইহুদীবাদ, সেবিয়ান এবং আহ্নাফের মতো একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর পাশাপাশি অবাধে পালিত হতো। ইসলামপূর্ব আরব ছিলো হৃদয়গ্রাহী ধর্মীয় সহিষ্ণুতার একটি অনুসরণীয় বহুসাংস্কৃতিক সমাজ (১)। ধর্মপালনের স্বাধীনতা মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হতো এবং আরবের সকল উপজাতি পাসপরিক শ্রদ্ধাবোধের ঐকতানে আবদ্ধ ছিলো। মুহামমদই আরবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সূচনা করেন এবং তার অনুসারীরাই তাদের অধিকৃত সব জায়গাতে এর সূচনা করে।
মুহামমদ আরবের অন্যান্য ধর্মগুলো থেকে ইসলামের যাবতীয় বিশ্বাস ও প্রথা ধার করেছেন। ইসলামী প্রার্থনা [নামায], উপবাস [রোযা] এবং তীর্থযাত্রা [হজ্জ্ব] এদের খুঁটিনাটিসহ আগাগোড়া সেঁটে দেওয়া হয়েছে তৎকালে বিদ্যমান ধর্মগুলো থেকেই। এছাড়া, মুহামমদ শরিয়া আইনকেও তৎকালীন আরবে বিদ্যমান প্রথা থেকে প্রতিলেপন করেছেন; এর মধ্যে খৎনা, চোরের হস্তচ্ছেদ এবং বিবাহ আইন উল্লেখযোগ্য। এটা সহজেই অনুমেয় যে, মুহামমদ এসব প্রথাপদ্ধতিতে নিজস্ব রং চড়িয়েছেন নিজের সুবিধা মতো। উদাহরণ স্বরূপ, মুহামমদ সৎকন্যাকে বিয়ে না-করবার আরবীয় ঐতিহ্যকে আত্মীকৃত করেছিলেন; কিন্তু তার পালিতপুত্রের আকর্ষণীয় যৌনাবেদনময়ী দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী স্ত্রী যয়নবের ক্ষেত্রে তিনি এ বিধানকে আমূল পাল্টে দিয়ে তাকে তার হেরেমে অন্তর্ভুক্ত করেন।
এ বিবেচনায়, কারোরই আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় নেইঃ যদি আল্লাহ্ আগে থেকেই উপাসিত হতেন, এবং যদি ইসলামী প্রথাপদ্ধতি আগে থেকেই পালিত হয়ে এসেছে, এবং যদি শরিয়া আইন আগে থেকেই কার্যকর ছিলো, তাহলে ইসলামে নতুন আর থাকলোটা কী?
প্রশ্নটি যৌক্তিক এবং উত্তরও সোজাসাপ্টাঃ ইসলামে নতুন কেবল আল্লাহ্র পরপরই মুহামমদের নাম!
৩। অতিকথাঃ “কুরআন আল্লাহর
সত্যঃ এমনকি, মুহামমদের সময়েও কুরআনে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
এ অতিকথাটি আরেকটি মিথ্যা অনুমিতির উপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো, তা হলো যে, আগেকার দিনের আরবেরা অ-সাধারণ স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলো যা নিজেই আরেকটি অতিকথা। কুরআন অবমুক্ত [নাযিল] হয়েছে তেইশ বছর ধরে, যার অধিকাংশই মক্কাতে যেখানে লিখিত হবার কোনো সুযোগই ছিলো না। এমনকি মুহামমদ মদীনার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরও কুরআন সুশৃঙ্খলিতভাবে নথিভুক্ত হয় নি। আরবী লিপিও ছিলো অনুন্নত; অনেক বর্ণ এবং শব্দ প্রায় একই রকম ছিলো, যদিও তাদের অর্থ ছিলো আলাদা। মুহামমদের কাছে কুরআন লেখাটার অগ্রাধিকারের চেয়ে যুদ্ধ আর আরবীয় উপজাতিগোলোকে বশীভূত করাটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। অনেক হাদীসেই এমন ইঙ্গিত আছে যে, যখন অন্যেরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, অপরাপর পঙক্তিগুলো [আয়াত] মুরগির বাচ্চা বা ছাগলে খেয়ে ফেলবার দরুন খোয়া গিয়েছে, দেখা গেছে যে মুহামমদ নিজেও সে পঙক্তিগুলো ভুলে গেছেন (যেমন ব্যভিচার বিষয়ক পঙক্তি)!
কুরআন আমাদের কাছে পৌঁছেছে ইতিহাসের মাধ্যমে; যেসব মুসলিম উপরের এ অতিকথায় বিশ্বাস করেন, তারা ইসলামী ইতিহাসের জন্য তা করেন। আমি শঙ্কিত যে, এটি সেই একই ইসলামী ইতিহাস যা কুরআনের সংরক্ষণ বিষয়ে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। যাকে মুসলিমরা কুরআনের পরে সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ বলে মনে করে থাকে, সেই সহিহ্ বুখারী এবং সহিহ্ মুসলিমও কুরআনের সংগ্রহ বা সংকলন প্রক্রিয়ার নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্নবিদ্ধতাকে প্রকট করে তোলে। ইসলামী ইতিহাস আমাদেরকে এ কথাও বলে যে, খলীফা ওসমান কুরআনের চারটি দাফতরিক কপি লিখবার আদেশ দিলে মুসলিমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো। অগ্রগণ্য মুসলিমদের মধ্য থেকে কয়েকজন এ সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত পঙক্তি বা আয়াতের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন। অধিকন্তু, এসব দাফতরিক সংস্করণে ভুলও ছিলো, যা খলীফাকে অবহিতও করা হয়েছিলো; তিনি এসব ভুলের অস্তিত্ব স্বীকার করলেও তা শুদ্ধিকরণের গুরুত্ব বোধ করেন নি।
ওসমানের সংস্করণগুলোও প্রাচীন লিপিতে লিখিত হয়েছিলো; যা কুরআনকে মনে রাখবার সঙ্কেত হিসাবে ব্যবহার্য, সত্যিকার অর্থে লেখা বলতে যা বোঝায় তা নয়। এহেন অনুন্নত লিপি যে কোনো বাণী বা বার্তা সংরক্ষণের জন্যই অপ্রতুল ছিলো, কোনো বিধানগ্রন্থের তো প্রশ্নই আসে না। একটি নির্ভরযোগ্য লিখনপদ্ধতি দাঁড় করাবার জন্য আরবী ভাষার আরো হাজার বছর লেগে গিয়েছিলো।
এমনকি, যদি আমরা ধরেও নিই যে, ওসমানের কুরআন নির্ভুল ছিলো, যদিও তা ছিলো না, অধিকাংশ মুসলিমের কাছেই তার উপযোগিতা ছিলো না, কেননা তাদের কাছে তা পৌঁছয়ই নি। আসল কথা হচ্ছে যে, ইসলামের শুরুর দিককার কয়েক শতকে মুসলিমরা পরিষকারভাবে লিখিত কোনো কুরআন ছাড়াই কাজ চালিয়েছে। সংগৃহীত কুরআনের প্রথমদিককার কপিগুলো সম্ভবত ইতিহাস থেকে একেবারে নিশ্চিহ্নই হয়ে গেছে। এ সময়ের মুসলিমরা এ ইস্যুতে খুবই সংবেদনশীল এবং ইসলামী ইতিহাসের এ অংশ নিয়ে কোনোরকম বিশ্লেষণধর্মী গবেষণাকেই বরদাস্ত করতে পারে না। সমরকন্দ এবং ইস্তান্বুলে সঠিক দিনক্ষণ এবং বিশ্লেষণসহ দু’টি প্রাচীন কপি পাওয়া গেছে যা ইসলামী কর্তাব্যক্তিদের দ্বারা কঠোর পাহারায় সংরক্ষিত। যে জার্মান দলটি (২) ১৯৭০-এর দশকে ইয়েমেনের সানা’য়ায় খুঁজে পাওয়া কপিটি নিয়ে গবেষণা করছিলো, এ গবেষণায় নতুন এক কুরআন আবিষকৃত হতে পারে জানা মাত্রই কর্তৃপক্ষ তাদেরকে থামিয়ে দিয়েছে এবং সংস্করণটি সরিয়ে নিয়েছে!
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আল সার্হ্-এর (৩) ঘটনাটি কুরআন সংরক্ষণের ইস্যুতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য। ইবনে আবি আল সার্হ্ মুহামমদের নির্দেশে কুরআন লিখতেন। এ তো সকল মুসলিমেরই জানা যে, কুরআনের অধিকাংশ পঙক্তি বা আয়াতেরই কিছু কাছাকাছি বাক্য আছে [প্রায় সমোচ্চারিত শব্দের মতো], যেমনঃ আযিয হাকীম (শক্তিশালী এবং জ্ঞানী) এবং আলীম হাকিম (জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার সাথে অর্থজ্ঞাপক) এবং আরো অনেক।
একদিন, ইবনে আবি আল সাহ্র্ একটি পঙক্তি লিখলেন যাতে ওরকম দু’টি কাছাকাছি বাক্য ছিলো, তাতে বলা হয়েছিলো ’আযিয হাকীম’ কিন্তু নিশ্চিত হবার জন্যে তিনি মুহামমদকে প্রশ্ন করলেনঃ এটা কি আলীম হাকিম হবে? মুহামমদ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই। এ রকম ঘটনার বহুবার পুনরাবৃত্তি হয়েছিলো, পরে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আল সাহ্র্ সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, মুহামমদ মিথ্যাবাদী এবং কুরআন ঐশ্বরিক নয়, কেননা মুহামমদ ইচ্ছা করলেই এর শব্দ পরিবর্তন করতে পারেন। ইবনে আবি আল সার্হ্ ইসলাম ত্যাগ করলেন এবং গোপনে মক্কায় গিয়ে আরবদেরকে তার অভিজ্ঞতার কথা বললেন। এ কলঙ্ক মুহামমদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ ছিলো এবং তিনি যে কোনো মূল্যে ইবনে আবি আল সার্হকে হত্যা করবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
মুহামমদ মক্কা জয় করবার পর ইবনে আবি আল সার্হ্কে বন্দী করে মুহামমদের সামনে আনা হয়। উল্লেখ্য যে, ইবনে আবি আল সার্হ ছিলেন মুহামমদের সংগ্রামের সবচেয়ে বড়ো অর্থ যোগানদাতা ওসমান ইবনে আফ্ফানের দুধভাই। ওসমান মুহামমদের উপর তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তার ভাইকে মাফ করে দিতে বলেন। মুহামমদ ওসমানের হস্তক্ষেপে বিস্মিত হন এবং তার ক্রোধ গোপনে সচেষ্ট হন। এ সুযোগে ওসমান তার ভাইকে নিয়ে চলে যান।
তারা ইবনে আবি আল সার্হকে হত্যা করে নি বলে মুহামমদ তার লোকদের উপর ক্ষেপে গিয়েছিলেন। তাদের আজুহাত ছিলো যে, মুহামমদ তো তাদের কোনো ইশারা দেন নি। মুহামমদ বলেন, আমরা নবীরা কোনো ইশারা-ইঙ্গিত দিই না। মুহামমদের মৃত্যুর পরে আল সার্হ উমাইয়্যা রাজবংশের অধীনে একটি সফল রাজনৈতিক জীবনযাপন করেন।
আমরা জানি না যে, ইবনে আবি আল সার্হ তার ধর্মত্যাগের পূর্বে কুরআনের ঠিক কতোখানি বদলেছিলেন, কিন্তু এ তো নিশ্চিত যে, শুরুর দিকের মুসলিমরা বিশেষ করে উমাইয়া শাসনের সময়কার মুসলিমরা এ বিষয়ে পূর্ণ অবগত ছিলেন যে, ইসলাম একটি বৃহৎ মিথ্যা, যা তারা তাদের সুবিধা হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছেন।
৪। অতিকথাঃ “কুরআন মানবজাতিকে চ্যালেঞ্জ করেছে এটির মতো একটি অধ্যায় লিখতে, এবং তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছে।”
সত্যঃ ইন্টার্নেট বা আন্তর্জালেই অনেক লেখা আছে যা গুণবিচারে কুরআনের সমপর্যায়ের।
পর্যাপ্ত সাহস আর আরবী ভাষায় সুদক্ষ যে কোনো আরবই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং তা জিততে পারবে, যেসব ধর্মভক্ত মুসলিমরা বলে বসবে, “না, এটা অসম্ভব!” তারাও তা পারবে। কুরআনের সমপর্যায়ের কোনো লেখা দাঁড় করানো খুবই সম্ভব; আর কুরআনের ন্যায়নিষ্ঠ অনুকরণের লক্ষ্যে তাতে ভাষাগত এবং বৈজ্ঞানিক একগাদা ত্রুটি অন্তর্ভুক্ত করা আরও বেশী সহজ। কিন্তু বুদ্ধিমান কোনো লোকই তার জীবনের ঝুঁকি নিতে চাইবে না; আমরা তো জানিই যে, মুসলিমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আরবের মুসলিমরা কখনোই সে চেষ্টা করে নি, কেননা তারা জানতো আল্লাহ্ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন।
যখন আমি একজন অল্পবয়সী মুসলিম ছিলাম তখনকার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আমি একজন বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম যে তার একজন আত্মীয়ের সঙ্গে কুরআনের একটি পঙ্ক্তি নিয়ে তর্ক করছিলো, তারা ঐ পঙক্তিটি কোন সুরা’র অন্তর্ভুক্ত তাই বের করবার চেষ্টা করছিলো। ঘটনাক্রমে আমি জানতাম যে, ঐ পঙক্তিটি সূরা আল বাকারার ২ নং অধ্যায়ের শেষদিকে আছে; কুরআনে একাধিকবার দেখে নেবার পরে আমার বন্ধুটির আত্মীয় নিশ্চিত হলেন যে, আমি সঠিক। আমি আমার জ্ঞানে খুব সুখী আর গর্বিত হয়েছিলাম, আর আমার বন্ধুটি ও তার আত্মীয় উভয়ই খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপর কুরআন থেকে দেখে নিয়ে আমার বন্ধুটির সেই আত্মীয় আমাকে বলতে বললেন যে নীচের পঙক্তিটি কোথা থেকে নেওয়াঃ
يا أيها الناس اتقوا الله ربكم الذي خلقكم وسواكم ورزقكم لعلكم تتقون ان يشأ ينصرم ويدخلك جناته وإن يشأ يخسف بكم ألأرض فتصبحوا من بعدها علئ ما فعلتم نادمين
কুরআন.১১৫ : ১ “হে মানবজাতি! তোমাদের প্রভু আল্লাহ্কে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, এবং তোমাদেরকে সাজিয়েছেন (সর্বতোসুন্দরভাবে) এবং তোমাদেরকে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন যাতে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পাও; যদি তিনি চান, তিনি তোমাদেরকে বিজয়ী করতে পারেন...”
(’পঙক্তি’টির প্রথমাংশ আমার অবিকল মনে আছে, অবশ্য শেষাংশের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।...)
আমি জানতাম না, কিন্তু আমি শৈলী বা স্টাইলটি থেকে বুঝতে পারলাম যে শৈলীটি মদীনায় অবতীর্ণ সূরাগুলোর শৈলী এবং অবশ্যই এটি কুরআনের কোনো বড়ো অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম না, আমার উত্তর ছিলো যে, উপরোক্ত পঙক্তিটিও সুরা আল বাকারার অধ্যায় ২ থেকে নেওয়া হয়েছে। আমার বন্ধুটির আত্মীয় হাসিতে ফেটে পড়লেন, কেননা পঙক্তিটি কুরআনের অন্তর্ভুক্তই নয়, এটা তাৎক্ষণিকভাবে বানানো ছিলো। আমার সুখ এবং গর্ববোধ পলকেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো, কিন্তু এই ব্যবহারিক কৌতুকটি আমার ভিতরকার ইসলামী দানবটিকে জাগিয়ে দিলো। আমি রেগে গেলাম আর দাবী করলাম যে, বানানো পঙক্তিটি নিশ্চিতভাবেই কুরআনের তুলনায় অতিশয় নিম্নমানের হয়েছে এবং পার্থক্যটি ধরতে না পারার জন্য আমি শয়তানকে দোষারোপ করতে থাকলাম।
কিছু আরব নিশ্চয়ই কুরআনের অনুকরণে কিছু লিখেছিলেন, কিন্তু বেঁচেছিলেন কেবল তারাই, যারা নিজেদের লেখার নিন্দা করতে বাধ্য হয়েছিলেন; আর এসব লেখা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে যে, মুসলিমরা আগে থেকেই রায় ঠিক করে রেখেছে যে, অন্য কোনো লেখা কুরআনের সমপর্যায়ের হতে পারে না।
উল্লেখ্য যে, আলমুতানব্বি এবং আলমা’য়াররির মতো মহান আরবী কবিরা তাদের নিজেদের কুরআনীয় লেখা লিখেছিলেন, যা নিশ্চতভাবেই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। আমি আলমুতানব্বির একজন ভক্ত এবং অনুমান করতে পারি তার কুরআনখানি বর্তমান কুরআনের তুলনায় কতোখানিই না শক্তিশালী ছিলো! এখন তো, আগ্রহী নাস্তিক আরবেরা আন্তর্জালে হরহামেশাই তাদের অনুকরণকৃত সংস্করণ প্রকাশ করছেন (৪) (৫)।
ভাষা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ এবং তারই কোনো নগণ্য সৃষ্টির মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয় নিশ্চিতভাবেই হাস্যকর এবং এই এক ঘটনাই ইসলামকে ডোবাতে যথেষ্ট। অনারবদের জন্য তো এতে বিকট বর্ণবাদী গন্ধ খুঁজে পাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে, কেননা তারা তো পুরোপুরিই এ প্রতিযোগিতার খেলার বাইরে; আল্লাহ্ কেবলমাত্র আরবদের সাথেই খেলতে চান!
৫। অতিকথাঃ “কুরআন অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষকারেরই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলো।”
সত্যঃ প্রায় সর্বক্ষেত্রেই কুরআন বিজ্ঞানের মধ্যে ভুল খুঁজে পেয়েছে।
কুরআন বিজ্ঞানসমমত কোনো কথাই বলে নি। প্রকৃতপক্ষে, কুরআন সপ্তম শতাব্দীর বিজ্ঞানের সাথেও যুৎসই নয়। গ্রীক দার্শনিকেরা প্রায় ৪০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দেই একটি গোলাকার পৃথিবীর কথা বলে গেছেন এবং এর ব্যাসার্ধ মেপে গেছেন। প্রায় হাজারখানেক বছর পরও কুরআন বলছে একটা সমতল পৃথিবীর কথা!
যতোবারই বৈজ্ঞানিক কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে গেছে, প্রায় প্রতিবারই কুরআন ভুলের প্রমাণ দিয়েছে; এতে অবাক হবার অবশ্য তেমন কিছু নেই, কেননা এটি তো অতিকথা ভিন্ন কোনো বিজ্ঞানগ্রন্থ নয় (৬)। বর্তমান সময়ের মুসলিমরা কুরআনকে এর বিব্রতকর বৈজ্ঞানিক ত্রুটির হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আরবী ভাষাকে এর ব্যাকরণ ও শব্দার্থ সমেত যথেচ্ছা বিকৃত ও পরিবর্তিত করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না।
কুরআনে বৈজ্ঞানিক অলৌকিক ঘটনার অতিকথাটি এ বিজ্ঞানের যুগে ইসলামকে বাজারজাত করতে গিয়ে মুসলিম পণ্ডিতদের প্রচারিত সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা। মুসলিমরা এ রকম শত শত দাবী করে থাকে, কিন্তু এগুলোর সবই মিথ্যা এবং ভাষার বিকৃতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। মুসলিম পণ্ডিতেরা যে কতো বেশী বেপরোয়া, তা এতেই বোঝা যায়।
এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, কুরআনে একটি মাত্র ভুলেরও অস্তিত্ব থাকার মানেই হচ্ছে যে, গ্রন্থটি ঈশ্বরিক নয় এবং ধর্মটি আগাগোড়াই ভুল।
৬। অতিকথাঃ “কুরআন বিগ্ ব্যাং ব্যাখ্যা করেছে।”
সত্যঃ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির ব্যাপারে কুরআন কেবলমাত্র প্রাচীন পুরাণগুলিরই প্রতিধ্বনি করেছে।
কুরআন কেবলমাত্র সপ্তম শতাব্দীর অজ্ঞতারই প্রতিফলন ঘটিয়েছে। প্রাচীন সংস্কৃতিগুলো বিশ্বাস করতো যে, ঈশ্বর তাদেরকে পৃথক না-করা পর্যন্ত আকাশ এবং পৃথিবী পরসপর সংযুক্ত ছিলো। যেসব মুসলিম উপরোক্ত এ দাবীটি তুলে থাকে তারা মুখ্যত এ পঙক্তিটিরই উদাহরণ দিয়ে থাকে “কুরআন.২১ঃ৩০ অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, স্বর্গ এবং মর্ত্য পরসপর যুক্ত ছিলো, তারপর আমি তাদেরকে পৃথক করলাম...”। এখানে কুরআন ঠিক সেই একই ভুল দাবী করছে যে, আল্লাহ্ই এদেরকে পৃথক করেছেন। কুরআনে বর্ণিত ভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক অনুমান প্রাচীন আরবেই প্রচলিত ছিলো, যার ব্যাখ্যা এই যে, এ পঙক্তিটি বলছে যে অবিশ্বাসীরা কি দেখতে পায় না? (আওয়ালাম ইয়ারা) যেটির আরবীয় গূঢ়ার্থ হচ্ছে যে “হ্যাঁ, তারা দেখতে পায়”। আরবীতে এটি বহুল ব্যবহৃত একটি ধরন যে, যখন আপনি কাউকে বলবেনঃ “আপনি কি ঐ বাড়ীটি দেখতে পাচ্ছেন না?” আপনি আসলে অব্যক্তভাবেই বুঝিয়েছেন যে, লোকটি আসলেই বাড়ীটি দেখতে পাচ্ছে। এ বিচারে, কুরআন মূলত তাই বলেছে যা আরবের লোকেরা আগে থেকেই জানতো।
অথচ এ পঙক্তিতে যা বলা হয়েছে, তার ঠিক উল্টোটি বলা হয়েছে বিগ্ ব্যাং তত্ত্বে, বিগ্ ব্যাং তত্ত্বানুযায়ী শুরুতে কিছুই ছিলো না, না পৃথিবী না আকাশ (৭)।
৭। অতিকথাঃ “কুরআন ভ্রূণের বিকাশ বর্ণনা করেছে”
সত্যঃ কুরআনে বর্ণিত ভ্রূণবিকাশ প্রক্রিয়া পুরো পুরি ভুল।
মুসলিমরা সাধারণত এ পঙক্তিগুলোর উদ্ধৃতি টানে “(কুরআন. ২৩:১২-১৪) আমি মানুষকে শুকনো মাটি থেকে তৈরী করেছি, এরপর তাকে বীজ বা অঙ্কুরের মতো একটি বিন্দু হিসাবে নিরাপদে স্থাপন করেছি, এরপর বিন্দুটিকে জমাটবাঁধা কণায় পরিণত করেছি, সেই কণা থেকে একটা পিণ্ডে, এবং সে পিণ্ড থেকে হাড়ে পরিণত করেছি, এবং সে হাড় মাংস দ্বারা আবৃত করেছি।”
ভ্রূণ বিকাশের উপরোক্ত বিবরণ সপ্তম শতাব্দীর কোনো আরবীয় নারীর কাছে আমরা আশা করতে করতে পারি, কিন্তু একজন ডাক্তার, নবী বা ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা নিশ্চয়ই এহেন বর্ণনা আশা করতে পারি না। কুরআন অবলীলায় সমকালীন ভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক অনুমানকে আয়ত্ত করেছে, কিন্তু উপরের এ পঙক্তির বেলায় সম্ভবত সে সীমাও অতিক্রম করে ফেলেছে। আগে কঙ্কাল (হাড়) গঠিত হয়েছে এবং পরে মাংস দিয়ে তা আবৃত করে দেওয়া হয়েছে বলে যে কথা এখানে বলা হয়েছে তা ছোট করে বললেও একটি মারাত্মক ভুল।
যখন মুসলিমেরা এ ইস্যুতে তর্ক করেন, তারা বৈজ্ঞানিক চিত্র, নিবন্ধ এবং পশ্চিমা ডাক্তারদের কথা উল্লেখ করেন, যার সাথে আরবীতে বলা কুরআনের বক্তব্যের বিন্দুবিসর্গ সম্পর্কও নেই। আমার তো মনেই হয় না যে, উপরের এ পঙক্তিগুচ্ছ নিয়ে অনুপুঙ্খ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দরকার আছে, কেননা এতে বিন্দুমাত্রও বিজ্ঞানসংশ্লিষ্টতা নেই। এ পঙক্তিগুলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেবল অজ্ঞতারই আত্মীকরণ।
যখন তিনি তাদের কাছে অদ্ভূত মনে হওয়া কোনো কথা বলতেন, তখন আরবীয়রা মুহামমদকে সমালোচনা করতো, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা কোনোরকম সমালোচনা ছাড়াই পঙক্তিগুচ্ছকে মেনে নিয়েছে; এ থেকে বোঝা যায় যে, এ পঙক্তিগুলো সপ্তম শতাব্দীর বিদ্যমান আরবের জ্ঞানের সাথে সমান্তরাল এবং সঙ্গতিপূর্ণ(৮)।
সূত্র :
3. Ali Dashti, 23 years, a study of prophetic career of Mohammed.
4.http://www.ladeenyon.net/forum/viewtopic.phpf=11&t=2040&sid=ab440fdfe95e38d0c427905fd12ab2c2
5. http://www.islam-watch.org/MuminSalih/How-Arabs-Hated-Quran.htm
6. http://www.islam-watch.org/MuminSalih/myth_of_scientific_miracles.htm
7. http://www.islam-watch.org/MuminSalih/Universe_According_To_Quran.htm
8. http://www.islam-watch.org/MuminSalih/myth_of_scientific_miracles.htm
(নিবন্ধটি মধ্যপ্রাচ্যের লেখক Mumin Salih কর্তৃক লিখিত Seven Myths About Islam -এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি ওয়েব সাইট ইসলাম ওয়াচ (www.islam-watch.org থেকে সংগৃহীত এবং ১৪ মে ২০০৯ তারিখে বঙ্গরাষ্ট্র- এর Articles - এ প্রকাশিত হয়। লেখকের ই-মেইল ঠিকানা : rawandi@googlemail.com . ভাষান্তর ঃ তৎসম বাঙালি অরণ্য)
অনলাইন ঃ ১৫ জুলাই, ২০০৯