Banner
কুরআন কি বউ পেটানো অনুমোদন করে? – মোহাম্মদ আসগর

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ আসগর, আপডেটঃ July 7, 2009, 12:00 AM, Hits: 2541


এই প্রশ্নটি অনেকের মনকে উত্যক্ত করে। মুসলমানরা দাবী করেন যে, কুরআন নারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ অনুমোদন করে না। আবার ইসলামের সমালোচকরা বলেন, যে সব স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হয় এবং আদপেই করা উচিত নয় এমন কুৎসিত কাজে লিপ্ত হয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্খা এমনকি প্রহার করা কুরআন অনুমোদন করে। এ ব্যাপারে তারা কুরআনের ৪:৩৪ আয়াত থেকে উদ্ধৃতি দেন। এতে বলা হয়েছে : “পুরুষ নারীর রক্ষক ও ভরণপোষণকারী, কারণ আল্লাহ একজনকে অপরজনের চেয়ে বেশী (শক্তি) দিয়েছে, এবং কারণ তারা নিজেদের উপার্জন থেকে তাদের প্রতিপালন করে। সুতরাং ন্যায়নিষ্ঠ নারী আন্তরিকভাবে অনুগত, এবং আল্লাহ যা তাদের জন্য পাহারা দিয়ে রেখেছেন সেসব (স্বামীর) অবর্তমানে পাহারা দিয়ে রক্ষা করে। যে সমস্ত নারীর নিকট থেকে অবিশ্বস্ততা ও দুষ্কর্মের আশঙ্কা কর তাদের (প্রথমে) তিরস্কার কর, (পরবর্তীতে) তাদের শয্যাসঙ্গী হতে অস্বীকার কর, (এবং শেষে) তাদের (মৃদুভাবে) প্রহার কর; তবে যদি তারা বাধ্যতায় ফিরে আসে, তাদের বিরুদ্ধে (অসন্তোষ) প্রকাশ কর না : কারণ আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহান (তোমাদের সকলের ঊর্ধ্বে)।”  (অনুবাদ ­ আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী)।*

 একই আয়াতের মোহাম্মদ মারমাদুক পিকথাল কর্তৃক অনুবাদ:
 
“পুরুষরা নারীদের তদারকের দায়িত্বে রয়েছে, কারণ আল্লাহ তাদের একজনকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, এবং কারণ তারা (নারীর ভরণপোষণের জন্য) তাদের সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং ভাল নারীরা বাধ্য, আল্লাহ যা পাহারা দিয়ে রক্ষা করেছেন তারা গোপনে পাহারা দিয়ে রক্ষা করে। এবং তাদের যাদের কাছ থেকে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, তাদের তিরস্কার কর এবং তাদের আলাদা বিছানায় বিতাড়িত কর, এবং তাদের প্রহার কর। তখন তারা যদি তোমাদের মান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে কিছু করো না। দেখ! আল্লাহ চিরউন্নত, মর্যাদাবান, মহান।”
 

উভয় অনুবাদ মনোযোগ দিয়ে পড়লে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে; সেটা হচ্ছে : ইউসুফ আলীর অনুবাদে “স্বামীর”কথাটি আছে। কিন্তু পিকথালের অনুবাদে নেই। আলী শব্দটি যোগ করেছেন বন্ধনীর মধ্যে। এতে প্রকাশিত হয় যে, এটি মূল আরবী আয়াতে নেই এবং তিনি তার অনুবাদে এটা যোগ করেছেন বিশাল এক সত্য লুকানোর জন্য। আমরা এই সত্য নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আলোচনা করব।
 
আমরা দেখি যে, আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে প্রধানত নিম্নোক্ত চারটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
 
        (১) মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ করেছেন;

       (২) প্যাগানদের (মূর্তি উপাসক) কিছু প্রথা রেখে দিয়েছেন যেগুলো তিনি পছন্দ করেন;

       (৩) তিনি পছন্দ করেন না প্যাগানদের এমন কিছু  সামাজিক প্রথা বাতিল করেছেন এবং

       (৪) কিছু নতুন প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করেছেন যেগুলো আগে তাদের মধ্যে ছিল না, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন তারা মুসলমান হওয়ার পর তাদের জীবনে এগুলো পালন করুক।

 এই বিবরণে পরবর্তী অনুচ্ছেদগুলোতে আমরা যা বলব সেসব যেন পাঠকরা সহজে বুঝতে পারেন তার জন্য আমরা উপরোক্ত তথ্যগুলো দিলাম।

 প্রাক-ইসলামী আমলে প্যাগানদের জ্যেষ্ঠ পুত্ররা উত্তরাধিকারসূত্রে তাদের বাবার বিধবা পত্নীদের লাভ করত; সেই সঙ্গে পেত বাবার পশুর পাল এবং তাঁবুগুলো। তাই ছেলে এবং সৎমায়ের মধ্যে যৌনসংসর্গ শুধু বৈধই নয় বরং বাধ্যতামূলক ছিল।** যেহেতু প্যাগানদের এই প্রথা অত্যন্ত নোংরা ছিল, মোহাম্মদ এটা কুরআনে রেখে দেন। তিনি যখন তার দাদা ও চাচার বাড়ীতে ছিলেন তখন সেখানে তার সঙ্গে বসবাসকারী মহিলারা তাকে যে বিশ্বাসঘাতকতা, অপমান এবং দৈন্য দশার মধ্যে ফেলেছিল অতি সূক্ষ্মভাবে, পর্যায়ক্রমে সেসবের কার্যকর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি এটা করেছিলেন। এই ইচ্ছা রেখে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে আয়াত নাজিল হওয়ার কথা জানান, যাতে সকল মুসলমান পুরুষকে মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাসহ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সকল নারীকে শাস্তি প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একটি আয়াতে আছে :
 
“তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কাছে চাষযোগ্য জমির মত। সুতরাং যখন সেখানে ইচ্ছা কর্ষণ কর; তবে আগে তোমাদের আত্মার জন্য কিছু ভাল কাজ কর; এবং আল্লাহকে ভয় কর; এবং মনে রেখ যে, তোমাকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে (পরকালে) এবং এই (ভাল) সংবাদগুলো তাদের দাও যারা বিশ্বাস করে।”

[কুরআন ­ ২:২২৩]
 
অনুবাদক এখানে সততা দেখাননি। তিনি ইচ্ছা করে নিসাআ শব্দকে মহিলাদের-এর পরবর্তে ‘স্ত্রীগণ’ অর্থে ব্যবহার করেছেন। এতে কুরআনের মুসলমান ও অন্যান্য  পাঠক বিভ্রান্ত হবেন। আয়াতে উল্লেখিত ‘নিসাআ’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে স্ত্রী, দাসী, এবং অন্য সকল নারী যাদের উপর পুরুষের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
 
তারা যে জঘন্য অপরাধ করতে যাচ্ছে তার প্রতিদান হিসাবে কিছু ভাল কাজ করার পর মুসলমান পুরুষগণকে তাদের নারীদের ধর্ষণ করার জন্য কার্যকর অনুমোদন দিয়ে (যেখানে,*** যখন অথবা যেভাবে খুশী তোমাদের লাঙ্গলের ফলা প্রবেশ করাও) আল্লাহ তাঁর প্রিয় অনুসারীদের যা বলেছিলেন তা আমরা উপরে উদ্ধৃত ৪:৩৪ আয়াতে পড়েছি।
 
যদিও এই আয়াত মুসলমান পুরুষদেরকে তাদের “স্ত্রীদের” প্রহার করার অনুমতি প্রদানের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রায় কেউই এর সত্যিকার অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে পারেনি। আমাদের যুক্তি পরিষ্কার করার জন্য আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর  গুরুত্ব দিই:
 
এই আয়াত ৪:৩৪ যে সূরার অংশ তার শিরোনাম হচ্ছে “নারী” অথবা আরবীতে “আন-নিসাআ।”
 
“স্বামীগণ” শব্দটি মূল গ্রন্থে নেই; বরং আমরা এর মধ্যে পাই “পুরুষগণ”।
 
“স্ত্রীগণ”, অথবা আরবীতে আয্ওয়াজাকা শব্দটিও মূল গ্রন্থে নেই; পরিবর্তে আমরা দেখি : “নিসাআ” অথবা “নারীগণ”।

 আগের এবং পরের আয়াতগুলোর সঙ্গে এই আয়াতের কোন সম্পর্ক নেই। অন্য কথায়, এটা প্রাসঙ্গিক নয় এবং এতে যে নির্দেশ আছে  তা এই আয়াতের নিজস্ব।

 এই তথ্যগুলো মনের মধ্যে রাখলে আমরা এই আয়াতে কী দেখি? এতে বলা হয়েছে যে, মুসলমান পুরুষগণ নারীদের রক্ষক এবং ভরণপোষণকারী, যেহেতু তারা তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে (মুহাম্মদের যুগে পুরুষরা সাধারণত তাদের বাবা, মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যাদের ভরণপোষণ করত এবং এখনও তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে করে, যদি তারা নিজেদের ভরণপোষণে অক্ষম হয়) সেহেতু পুরুষের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা নারীদের উচিত তাদের মেনে চলা এবং আল্লাহ তাদের যা কিছুর সুরক্ষা চান তার সুরক্ষা করা (অর্থাৎ গোপন অঙ্গ)। তবে যদি পুরুষরা তাদের নারীদের কাছ থেকে আনুগত্যহীনতা ও খারাপ আচরণের ব্যাপারে নিছক “আশঙ্কা” করে তবে তারা অবশ্যই প্রথমে তাদের সতর্ক করবে। তারা যদি তার পরও আশঙ্কা অনুভব করে তবে তারা অবশ্যই তাদের সঙ্গে রাত্রিযাপনে অস্বীকৃতি জানাবে। এবং যদি তাদের আশংকা অব্যাহত থাকে, পুরুষরা অবশ্যই তাদের প্রহার করবে। অবশ্য, যদি নারীরা “আনুগত্যে  ফিরে আসে” – ধরে নেওয়া যায় যে আশঙ্কা কেটে গেছে – তবে পুরুষরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে “ক্রোধ প্রকাশ” – অর্থাৎ আরো শাস্তির ব্যবস্খা ­ করবে না।

 প্রশ্ন হচ্ছে : আল্লাহ কি পুরুষদেরকে, নিজেদের অস্তিত্বের জন্য যে নারীরা তাদের উপর নির্ভরশীল, তাদেরকে পিটানোর জন্য  এবং এই নারীদের সঙ্গে যৌনকর্ম না করার জন্য এমন খোলামেলা ও নোংরা অনুমতি দিতে পারেন?
 
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভার আমরা পাঠকদের চিন্তার উপর ছেড়ে দিচ্ছি। তবে আমাদের বিবেচনায় আমরা নিশ্চিত যে, এই নির্দেশ এসেছিল এমন এক অসুস্থ মনের মানুষের কাছ থেকে, যিনি তার বাবা-মা সহ মূর্তিপূজক(প্যাগান) আত্মীয়দেরকেই শুধু নরকের আগুনে পাঠাননি, মুসলমান পুরুষগণকে ভরণপোষণের জন্য তাদের উপর নির্ভরশীল সকল নারীকে প্রহার করা এবং তাদের সঙ্গে যৌন কর্মে লিপ্ত হওয়ার অনুমতিও দিয়েছিলেন।

 টীকা :

* কুরআনের আয়াতগুলির বাংলা অনুবাদ ইংরাজী থেকে করা হয়েছে।
** আর, ভি, সি, বডলে, দি মেসেঞ্জার, পৃ ২২৬।
***  আল কুরআন, ২:২২২।  

 (নিবন্ধটিMohammad Asghar কর্তৃক লিখিত  Does the Quran Sanction Wife Beating-এর ভাষান্তর। ইংরাজী নিবন্ধটি ২৪ মে, ২০০৯ তারিখে ইসলাম ওয়াচ (www.islam-watch.org)-এ প্রকাশিত। – বঙ্গরাষ্ট্র)

 
অনলাইন : ৭ জুলাই, ২০০৯


 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ