লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ June 26, 2015, 12:00 AM, Hits: 1050
কোন কোন নারীবাদী নারী নারীর স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থিত করেন যে তাতে মনে হয় যৌন স্বাধীনতাই নারীর স্বাধীনতার প্রকৃষ্ট রূপ। যেন যৌন সঙ্গী নির্বাচন ও যৌনতার স্বাধীনতা হলে নারীর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হয়। আমার বিবেচনায় এটা নারীর স্বাধীনতাকে শরীর সর্বস্ব স্বাধীনতার ধারণায় পর্যবসিত করে।
যৌনতা জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা জীবনের একটা অংশ মাত্র। কেউ কেউ সমস্ত জীবন এটাকে এড়িয়েও চলেন বা চলতে বাধ্যও হতে পারেন।
সেই জন্য কি তাকে পরাধীন বলা যাবে? মানুষের স্বাধীনতা কি শুধু যৌনতার স্বাধীনতার ভিতর সীমাবদ্ধ? মানুষের যৌবন বহির্ভূত যে সময় সেটাকে কি তবে স্বাধীন বলা যাবে না? বিশেষত পুরুষের তুলনায় নারীর যৌবন কালের সীমাবদ্ধতাকে কি আমরা হিসাবে নিব না? সবচেয়ে বড় কথা ১১/১২ কিংবা ১২/১৩ থেকে ৪৪/৪৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত সময়টা সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নারীর সন্তান ধারণের সক্ষমতা লাভের সময়। এই সময় মেয়েরা ঋতুবতী বা রজঃস্বলা থাকে। পুরুষের সময়টা এত সংক্ষিপ্ত নয়। সন্তান জন্মদানে ১২/১৩ বা ১৪ বৎসর বয়সে সক্ষমতা অর্জন হবার পর তার সক্ষমতার শেষ সীমাকে নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেওয়া সহজ নয়।
এখন এই সীমাবদ্ধ সময়টিতে নারীর যৌন স্বাধীনতাকে তার স্বাধীনতার মানদণ্ড হিসাবে যদি দেখা যায় তবে বাকী সময়টাতে তার স্বাধীনতার রূপ কী হবে? আমার কাছে মনে হয় এই ধরনের যৌনতা নির্ভর স্বাধীনতার ধারণা প্রকৃতপক্ষে পুরুষতন্ত্র বা পুরুষবাদের ভিন্ন রূপে প্রকাশ। নারীর সমস্যাকে নারীর দৃষ্টি থেকে বুঝবার চেষ্টা না করে পুরুষের দৃষ্টি থেকে বুঝবার চেষ্টা এটা। এই ধরনের নারীবাদীদেরকে আমার কাছে নারীর শরীরধারী পুরুষ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
অবশ্যই যৌন সঙ্গী নির্বাচন ও যৌনতার স্বাধীনতা নর-নারী নির্বিশেষে সব মানুষেরই স্বাধীনতার একটা বড় মানদণ্ড। কিন্তু সর্বদা এই স্বাধীনতা দায়-দায়িত্বহীন হতে পারে না। সেটা পুরুষ বা নারী কারও জন্যই নয়। যাদের মাধ্যমে মানুষ-প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা পাবে সেই সন্তানদের লালন-পালন, পরিবার ও সমাজের স্থিতি ইত্যাদির জন্য স্বেচ্ছামূলক হলেও যৌন আচরণগত কিছু বিধিনিষেধ সবাইকেই কম-বেশী মেনে নিতে হয়।
যাইহোক, আমার কাছে নারীর স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সেটা নারীর যৌন স্বাধীনতার চেয়েও অনেক বড়। নারীর যৌন স্বাধীনতা তার একটা অংশ মাত্র। বরং নারীর রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমার কাছে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। নারীর রাজনৈতিক স্বাধীনতার মূর্ত রূপ আমার কাছে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের জায়গাগুলিতে নারীর নিজস্ব প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা, যাতে করে আইন প্রণয়ন, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা এবং বিচারসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি যন্ত্র নারীর স্বার্থ সংরক্ষণে বাধ্য হয়। এই ব্যবস্থায় নারী-প্রতিনিধিরা নারীর নিজস্ব প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিবে। আমি মনে করি এইটিই নারীবাদের প্রকৃত রূপ হওয়া উচিত। এই নারীবাদই তাকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতায় তার নিজ মর্যাদা ও ক্ষমতার জায়গা তৈরী করে দিবে।