Banner
ভোটতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র : নির্বাচন পরবর্তী ভাবনা — শামসুজ্জোহা মানিক

লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ March 14, 2019, 12:00 AM, Hits: 1216

 

২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমত বলি এ দেশের সমস্যা সমাধানে নির্বাচনমূলক রাজনীতির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমি সচেতন হলেও জনগণ ও জাতির অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার জন্য একটা পর্যায় পর্যন্ত তার ভূমিকা বা প্রয়োজন থাকতে পারে বলে মনে করি। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ বাস্তবতায় গণতন্ত্র এবং গণ-রাজনীতির সমস্যা ও সঙ্কটগুলিকে যেমন চিহ্নিত করা যায় তেমন সেগুলির সমাধান কিংবা প্রতিকারের পথও বেরিয়ে আসে। সে দিক থেকে আমি আওয়ামী লীগের বিপরীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গঠনকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলাম। বিশেষত ব্যাপক জনগণ দ্বারা সমর্থিত বিএনপি-এর একটা রূপান্তর আমার নিকট প্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল। ষুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হলে ঐক্যফ্রন্ট হয়ত সেই রকম একটা অভিমুখে বিএনপি-কে নিতে পারত, যাতে তা পুরাপুরি ইসলাম নির্ভর না হয়ে অনেকাংশে ধর্মমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করতে পারত।

বাস্তবটা হচ্ছে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদের মত মুসলিম সমাজে কোনও ব্যাপক জনসমর্থিত দলের পক্ষেই প্রকৃত অর্থে ধর্মমুক্ত বা লোকবাদী হওয়া সম্ভব নয়। কারণ ব্যাপক শ্রমজীবী এবং আম জনতা ধর্মাচ্ছন্ন কিংবা ধর্মের আবেদনের প্রতি যেমন দুর্বল তেমন সামগ্রিক চিন্তা-চেতনায়ও অনেকখানি দুর্বল এবং পশ্চাৎপদ। জনগণের এই মানসিকতাকে ব্যবহার করতে চেয়ে আওয়ামী লীগ ধর্ম এবং তথাকথিত সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার গোঁজামিল দিয়ে চলে। এতে পশ্চাৎপদ আমজনতা এবং আধুনিকতার আলোকপ্রাপ্ত মধ্যশ্রেণী উভয়েরই কমবেশী সমর্থন পাওয়া যায়। এবং এতে আওয়ামী লীগ বেশ সফল।

আমি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-এর মধ্যে চরিত্রগত বা আচরণগতভাবে বিশেষ কোনও পার্থক্য দেখতে পাই না। সুতরাং ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলেই যে বিরাট পরিবর্তন হত তা মনে করি নাই। তবে এটা পরিবর্তনের একটা সুযোগ উপস্থিত করতে পারত বলে মনে করেছিলাম। অন্তত কিছুদূর পর্যন্ত দেশে একটা অগ্রগমন হতে পারত। সবচেয়ে বড় কথা বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার যে চরম দুর্গতি দেশে চলছে তার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারত। কিছুদিন এই অবস্থা চললে চিন্তার জগতে একটা অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা দিত। অবশ্য সেটা যে দীর্ঘমেয়াদী হত তা আশা করি নাই। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রের যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে তার অবসান এভাবে এইসব দলের নেতৃত্বে সম্ভব হত না। অন্যদিকে, সমাজ ও রাজনীতির উপর ধর্মের প্রভাব সামগ্রিক পরিস্থিতির পুনরায় অধঃপতন ঘটাত। এটা স্বাভাবিক যে দুর্বৃত্তায়নের শক্তিগুলি ধর্মকে তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ মতাদর্শিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত।

ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ হলেও এবং তাতে ঐক্যফ্রন্ট জিতলেও আমি খুব বেশী আশান্বিত হতাম না। তবে যে কথা বলেছি এটা আমার নিকট বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগামী পদক্ষেপ হিসাবে দেখা দিত। তখনকার পরিস্থিতিতে কী সমস্যা হত এবং তার মোকাবিলায় কী করণীয় হত এখন সেসব কল্পনা করা অবান্তর। বাস্তবটা হচ্ছে নির্বাচনই হয় নাই। তবে হ্যাঁ, ভোট হয়েছে। অর্থাৎ ব্যালট পেপার দিয়ে ভোটের বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। এর জন্য ভোটারের দরকার হয় নাই। ভোট কেন্দ্র পাহারার দায়িত্ব যাদের তারাই সে কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করেছে। জাতীয় নির্বাচনে এই যে ধারা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটা এখন সকল স্থানীয় নির্বাচন নামক ভোট বাক্স ভর্তি করার অনুষ্ঠানে যে পরিণত হবে সেটাই কি স্বাভাবিক না? এবং সেটাই এখন হয়ে চলেছে।

আমাদের জন্য এটা ভালোই হয়েছে যে, গণতন্ত্রের নামে ভোটতন্ত্রের যে প্রহসন ব্রিটিশ শাসন কাল থেকে এ দেশে চলে এসেছে প্রায় দেড় শত বৎসরের নানান চড়াই-উৎরাই পার হয়ে অবশেষে সেই ভোটতন্ত্র, এক অর্থে, মুখ থুবড়ে পড়েছে। এরপরেও হয়ত ভোট আমরা আরও অনেক দেখব। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে ভোটতন্ত্রের যে মহিমা কীর্তন এ দেশে এ যাবৎ কাল চলেছিল কিছু সময়ের জন্য হলেও তার অবসান হল।

আমার ধারণা আমাদের দেশের গণতন্ত্র প্রধনত দুইদিক থেকে বাধাপ্রাপ্ত। একদিকে আছে আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেটা মূলত বহিরাগত চরিত্র বিশিষ্ট। এই ব্যবস্থায় জনগণের উপর প্রত্যক্ষ শাসনভার থাকে মূলত বহিরাগত আমলাদের হাতে। অর্থাৎ এক এলাকার জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা, বিচার এবং শাসনের ভার থাকে ভিন্ন এলাকা থেকে আসা আমলাদের হাতে। এই ব্যবস্থায় জনগণকে অধীনস্থ প্রজা ভিন্ন আর কিছু ভাবা হয় না। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা নিজেদের বহিরাগত শাসনকে বিস্তৃত এবং দৃঢ়বদ্ধ করার জন্য বহিরাগত চরিত্র বিশিষ্ট এই যে আমলাতান্ত্রিক শাসন কাঠামো গড়ে তুলেছিল তারা বিদায় নিবার এতকাল পরেও তা এই স্বাধীন দেশে আজ অবধি বহাল তবিয়তে বিদ্যমান আছে। রাষ্ট্রশাসনের এই ব্যবস্থা মর্মগতভাবে অগণতান্ত্রিক, ফলে গণতন্ত্র বিরোধী এবং স্বৈরতান্ত্রিক। এটি সর্বদা আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে ভঙ্গুর ও দুর্বল করে রাখতে সাহায্য করে।

আমাদের দেশে অপর একটি বাধা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও সুস্থ বিকাশের পথে বিরাট বাধা হয়ে আছে বলে আমি মনে করি। সেটা হচ্ছে জনগণের গরিষ্ঠ অংশের পশ্চাৎপদতা ও ধর্মাচ্ছন্নতা। আরও বাধা নিশ্চয় আছে। তবে উপরে বর্ণিত এই দুই বাধার প্রশ্নটাই আমার নিকট সাধারণভাবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই মুহূর্তে আমি জনগণের পশ্চাৎপদতার সমস্যাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চাই।

আমার বিবেচনায় জনগণের পশ্চাৎপদতা এবং ধর্মাচ্ছন্নতাকে বিবেচনায় না নিয়ে যারা এ দেশে ইউরোপের মত নির্বাচন দিয়েই গণতন্ত্রকে বুঝতে চান তাদের পক্ষে এ দেশের গণতন্ত্রের প্রকৃত সমস্যাকে কোনও কালেই বুঝা সম্ভব হয় নাই এবং কোনও কালে বুঝা সম্ভবও হবে না। সবচেয়ে বড় কথা ইসলাম ধর্মকে বুঝতে হবে। আপাদমস্তক স্বেচ্ছাচারী বা স্বৈরতান্ত্রিক, পুরুষতান্ত্রিক এবং একনায়কী এই ধর্মের আবহ থেকে সমাজে যে সংস্কৃতি এবং মানস অবিরত জন্ম নেয় তা যে কোনও ধরনের গণতান্ত্রিকতার বিরোধী। ফলে গণতন্ত্রের দুর্দশা সমস্ত মুসলিম পৃথিবী জুড়ে বর্তমান। বাংলাদেশ তারই একটা অংশমাত্র। তবু ২০০৮ -এর ২৯ ডিসম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত একটা ভোট ভোট খেলা চলেছিল। তারপর থেকে এটা পুরাপুরি একদলীয় শুধু নয়, বরং বলা উচিত আমলাতান্ত্রিক খেলা তথা পুলিশ-প্রশাসনের খেলায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ীতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ না নিলেও ভোটের অনুষ্ঠান হয়েছিল। ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর যেটা হল সেটাকে কী বলা যাবে? এবার ঐক্যফ্রন্টের অংশী হয়ে প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে যে নির্বাচন হল সেটাকে কী বলব? ভোট ডাকাতি, নাকি ভোটের তামাশা, নাকি মধ্যরাতের ভোট? যে নামেই অভিহিত করা যাক নির্বাচনের যেটুকু মর্যাদা এ দেশে এ যাবৎকাল ছিল সেটা শেষ হল।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে এ দেশে স্থানীয় পর্যায় থেকে নির্বাচনমূলক একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে থাকে। যেমন ইউনিয়ন বোর্ড বা পৌরসভা ইত্যাদি। এটা ছিল প্রকৃতপক্ষে উপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক শাসনযন্ত্রের অধীনস্থ স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা। পরবর্তী কালে ১৯১৯ এবং ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন দ্বারা এই শাসন ব্যবস্থা প্রাদেশিক এবং অবশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকরা ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনের অধীনে ১৯৪৫-এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ১৯৪৭ সালে চলে যায়। অবশ্য যাবার আগে মুসলিম লীগের দাবী অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশকে ভারত ও পাকিস্তান এই দুই রাষ্ট্রে ভাগ করে দেয়। কংগ্রেস পায় ভারতের শাসনভার আর মুসলিম লীগ পায় পাকিস্তানের শাসনভার।

তারপর থেকে ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ধারা আজ অবধি অব্যাহত থাকলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সে রকমটা ঘটে নাই। সেই ইতিহাস আলোচনা এখানে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। তবে এটুকু বলা উচিত যে পাকিস্তান কালে সামরিক অভ্যুত্থান এবং শাসন দ্বারা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক শাসকদের দ্বারা শাসনের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটেছিল। একটা পর্যায়ে পাকিস্তানই ভেঙ্গে গেল এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হল।

১৯৭১-এ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৫ সালে নির্বাচনমূলক শাসন ব্যবস্থায় ছেদ ঘটল। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হলে এই প্রক্রিয়ায় ছেদ ঘটে। এরপর কখনও সামরিক শাসন, কখনও নির্বাচনের মাধ্যমে আধা সামরিক শাসন আবার কখনও নির্বাচনমূলক রাজনৈতিক শাসন এভাবে এতটা কাল পার হয়েছে। মাঝে আবার কয়েক বার নির্বাচনের পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছে গেছে। মোট কথা একটি জটিল এবং পরিবর্তনশীল যাত্রাপথে বাংলাদেশের গত ৪৭ বছর কাল অতিক্রান্ত হয়েছে।

তবু নির্বাচনের একটা আবহ এতকাল ছিল এ দেশের রাজনীতির মূলধারায়। সেই আবহ কি এবারের নির্বাচনের পর আর নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? আসলে কি এখন গণতন্ত্রের নামে প্রচলিত এ দেশের সমগ্র নির্বাচনমূলক প্রক্রিয়াকেই বিচারের সম্মুখীন করা উচিত নয়?

আধুনিক সভ্যতার জন্ম পাশ্চাত্যে, আরও সহজ ভাষায় বললে পশ্চিম ইউরোপে। সেখান থেকে সভ্যতার বহু উপাদানের মত গণতন্ত্রের একটি পদ্ধতি নির্বাচনমূলক ব্যবস্থার ধারণাকেও আমরা গ্রহণ করেছি। বলা যায় পাশ্চাত্য তথা ব্রিটেন তার শাসনামলে এটা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েই বিদায় নেয়। এবং আমাদের দেশে নানান রূপে গণতন্ত্রের নামে এর চর্চাও হয়ে চলেছে। কিন্তু এ দেশ কতটা গণতান্ত্রিক তা এ দেশকে পাশ্চাত্যের যে কোনও দেশের পাশে দাঁড় করালেই বুঝা যায়।

কেন আমাদের এই ব্যর্থতা? এটা যে আমাদের সমাজ তথা আপামর জনগণেরও ব্যর্থতা এটা যতদিন আমরা বুঝতে না পারব ততদিন এই দুরবস্থা থেকে আমাদের নিস্তার নাই। এই সহজ সত্য যত দ্রুত বুঝা যাবে তত দ্রুত আমাদের মুক্তির পথ মিলতে পারে।

শুধু বহিরাগত চরিত্রবিশিষ্ট আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। আমাদের দেশের বাস্তবতায় ভোটের রাজনীতির সমস্যাটা এই জনগণের কারণেও দেখা দেখা দেয়। এ দেশে স্বৈরশাসন কিংবা গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবীতে প্রতিটি সফল গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছে অল্পসংখ্যক সচেতন এবং অগ্রগামী মানুষ। মূলত তাদের আত্মদানে আন্দোলনগুলি সফল হয়। এরপর আসে নির্বাচন। নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে এই অগ্রগামী মানুষদের হাত থেকে রাজনৈতিক উদ্যোগকে ছিনিয়ে নিয়ে অর্পণ করে জনগণের পশ্চাৎপদতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতিনিধিত্বকারী রাজনীতিকদের হাতে। এভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় পরাজিত হয় প্রগতি ও দেশপ্রেমের শক্তি এবং ক্ষমতাসীন হয় তার বিপরীত চরিত্রের শক্তিসমূহ। স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতায় গিয়ে এই রাজনীতিকরা নির্বাচকদের স্বার্থকে ভুলে গিয়ে বা গৌণ করে আমলাতান্ত্রিক শাসন কাঠামোর সঙ্গে চমৎকারভাবে খাপ খাইয়ে নেয়। কারণ সেটা তাদের দমনমূলক শাসন রক্ষা ও অবৈধ উপায়ে অর্থ-সম্পদ অর্জনের জন্য উপযোগী হয়ে দেখা দেয়। এদের শাসনে যখন জনগণের গরিষ্ঠ অংশ বিরূপ হয় তখন তারা পরবর্তী মেয়াদে যাদেরকে নির্বাচিত করে তারাও হয় পূর্ববর্তী শাসকদের কম-বেশী অনুরূপ।

শুধু আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। এ দেশে জনগণের পশ্চাৎপদতা এবং প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতার কারণেও গণ-রাজনীতির এমন অধঃপতন ঘটা সহজতর হয়। দলের ভিতর গণতন্ত্রের চর্চা না থাকার এটাও একটা কারণ। কারণ জনমানস তথা জনগণেরই প্রাণের দাবী স্বৈরশাসকের বা একনায়কের। রাজতান্ত্রিক চরিত্রের পরিবারতন্ত্রও এই একই কারণে এখানে এভবে দৃঢ়বদ্ধ হতে পেরেছে। ভোটাররা বা আমজনতা এমনটা পছন্দ করে। সুতরাং ভোটার বা আমজনতার সমর্থন এবং অংশগ্রহণ নির্ভর দলগুলিও এমনটা হতে বাধ্য হয়। কেউ চাইলেই কি আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বা বলতে পারবে? একই কথা প্রযোজ্য বিএনপি-তে খালেদা জিয়া সম্পর্কে। কার সাধ্য তার কিংবা তার পুত্র তারেক রহমানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে দলে টিকে থাকে? বিএনপি সমর্থক বিরাট সংখ্যক জনগণ জিয়া পরিবারের বাইরে আর কারও প্রতি কি আনুগত্য বা সমর্থন প্রদানে রাজী হবে?

এ দেশে এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের গণতন্ত্র কোথা থেকে আসবে? সুতরাং গণতন্ত্রের নামে যেটা হয় সেটাকে বহিরাগত আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর অধীনে অনুষ্ঠিত ভোটের তামাশা ছাড়া আর কী বলা যায়? ভোটের মাধ্যমে যেটা আসে সেটা হচ্ছে আমলা শাসনের সমান্তরালে এক ব্যক্তি এবং এক পরিবারকে কেন্দ্র করে পাঁচ বছর মেয়াদী স্বৈরতন্ত্র। এই সঙ্গে চলে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ক্রমপ্রসার। যেহেতু ভোটের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতার কারণে দলগুলির নেতাদের চাই বিপুল অর্থ সেহেতু ভোটের রাজনীতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠে ক্রমবর্ধমান দু্র্নীতি। ক্ষমতার মেয়াদকালে প্রতিটি দলের নেতা-কর্মীরা পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অথবা ক্ষমতার বাইরে অবস্থানকালে টিকে থাকার জন্য যত বেশী সম্ভব অর্থ-বিত্ত-সম্পদ সংগ্রহে মরীয়া হয়ে উঠে।

এক অর্থে আওয়ামী লীগ এক বিরাট ভূমিকা রেখেছে ভোটের রাজনীতির এই চক্রকে একটা পর্যায়ের জন্য হলেও ভেঙ্গে ফেলে। গত ৩০ ডিসেম্বর লীগ সরকার তার নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রযন্ত্র তথা আমলাতন্ত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহার দ্বারা এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে যেখানে ভোটারদের ভোটদানের প্রয়োজন একেবারেই হয় নাই। ভোটের ফলাফল প্রকৃতপক্ষে দিনপূর্ব রাতেই নির্ধারিত হয়েছিল।

অবশ্য এ দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যেতে পারে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই ক্ষমতার বৈধতা থাকে না। কারণ এখন এটা সবারই জানা যে বর্তমান সরকার মধ্যরাতের ভোট দখলের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। এটা খুব চিত্তাকর্ষক বিষয় যে, এই ক্ষমতা দখলের জন্য তার প্রধান হাতিয়ার তার দলের কর্মীবাহিনী এবং সমর্থক ভোটারদের পরিবর্তে হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্র। দলের কর্মীবাহিনী ছিল বড় জোর সহায়ক শক্তি, কিন্তু ভোটকেন্দ্র দখল ও নিয়ন্ত্রণ এবং ভোটবাক্স ভর্তি করার মূল শক্তি ছিল রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা। অর্থাৎ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আর জনগণ সমর্থিত দলেরও সরকার রইল না, বরং তা পরিণত হল আমলাদের দ্বারা মনোনীত বা বাছাই করা সরকার।

ইতিবাচক হোক আর নেতিবাচক হোক এই ঘটনার তাৎপর্য কিন্তু বিরাট। ভোটতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্র ইত্যাদি যে নামেই অভিহিত করা যাক ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসা সরকার এক ধরনের মর্যাদা ভোগ করে। এখন আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী এবং সমর্থকরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন কি যে তাদের দল এখন আর সেই মর্যাদা ভোগ করে?

আমার বিবেচনায় গত ৩০ ডিসেম্বরের বিশেষ ধরনের ‘নির্বাচনের’ মাধ্যমে জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ আত্মহত্যা করেছে।

তাহলে এই সরকার এখন কাদের সরকারে পরিণত হয়েছে? যারা তাকে ভোটবাক্স ভর্তি করে ক্ষমতায় এনেছে এই সরকার কি এখন তাদের প্রতিনিধিতে পরিণত হয় নাই? লীগ সরকারের মর্যাদা সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে এখন তাকে আমলাতন্ত্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা কিংবা ‘পাবলিক রিলেশন্স অফিসার’ বা ‘পিআরও’ বলা কি ভুল হবে?

যাইহোক, আমার মূল বক্তব্য হল আওয়ামী লীগ এখন প্রধানত আমলাতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তি তথা আমলাতন্ত্রের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। আমলাতন্ত্রের সহায়তায় ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে এ দেশের আমজনতার একাংশের প্রধান প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে নিজের অবস্থানকে তা নিজেই ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগের কী করুণ পরিণতি! এখন এই দীনদশা নিয়ে কতদিন তা ক্ষমতায় থাকবে তা সময়ই বলবে।

অবশ্য সেটা এখানে আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। আমি যে বিষয়টা বুঝতে চাইছি সেটা হচ্ছে রাজনীতি এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে তার অর্থাৎ রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা তার প্রধান দল বিএনপি কি সঠিক দিশা দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ যেহেতু এখন আমার দৃষ্টিতে আগামী রাজনীতির জন্য একটা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় সেহেতু এখন আমি এ দেশের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ বিরোধী জনগোষ্ঠীর এখনও পর্যন্ত প্রধান প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসাবে বিদ্যমান বিএনপি-এর দিকে দৃষ্টি দিতে চাই।

এই নির্বাচন একটা বিষয় স্পষ্ট করেছে বিএনপি এখন জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হলেও তার আন্দোলনের সক্ষমতা নাই। এর সহজ কারণ এ দেশের আন্দোলনের প্রধান শক্তি ছাত্র এবং যুব সমাজ তার সমর্থনে নাই। এ দেশে ভোট দিয়ে যারা ক্ষমতার পালাবদলে ভূমিকা পালন করে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বা ভোটাররা আন্দোলনে কখনই নির্ধারক ভূমিকা পালন করে না। তারা বড় জোর সমর্থক বা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ছাত্র এবং যুব সমাজ দ্বারা সূচিত আন্দোলন যখন প্রবল রূপে নেয় তখন তার তুঙ্গ মুহূর্তে তাদের একটা অংশ তাতে অংশ নিয়ে তাকে জনজোয়ারে পরিণত করে।

এ দেশে রাজনীতির এই প্যাটার্ন বা ছকটা ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রতিটি বৃহৎ আন্দোলনে অপরিবর্তিত রূপে দৃশ্যমান হয়েছে। এ দেশে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য গণ-আন্দোলন এবং অভ্যুত্থান ১৯৯০ সালে ঘটে। তারপর যা কিছু হয়েছে সেসব কিছুই মূলত উপরতলার সংগঠিত ঘটনাবলী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবীতে রাস্তায় কিছু আন্দোলন হলেও সেগুলিতে ছাত্র-যুব সমাজ এবং জনগণের বৃহৎ অংশের অংশগ্রহণ ছিল না। ২০১৪ সালের বিএনপি-এর নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনের ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর তারিখের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশ হিসাবে যোগ দিলেও আওয়ামী লীগের পরিচালনাধীন রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় সন্ত্রাসের শক্তিকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা তার ছিল না। সুতরাং নির্বাচনের এই পরিণতি।

কেন এমন হল এরও সহজ উত্তর শুধু লীগের সন্ত্রাসের শক্তির মধ্যে খুঁজলে চলবে না। যে কথাটা একটু আগেই বলেছি তার পুনরুক্তি করে বলব এর সহজ উত্তর হচ্ছে সন্ত্রাসের শক্তিকে এ দেশে চিরকাল যারা মোকাবিলা এবং পরাস্ত করেছে সেই ছাত্র এবং যুব সমাজ বিএনপি-এর সঙ্গে নাই।

তবে কি তারা লীগের সঙ্গে আছে? না, তাও নাই। তারা আসলে কারও সঙ্গে নাই। তারাও যে লীগ বিরোধী, এবং সেটা প্রবল রকমেই, সেটা বুঝা গেছে কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে। কিন্তু এই আন্দোলন যে এখন পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক রূপ বা চরিত্র নেয় নাই সেটাও বুঝতে হবে। অবশ্য আমাদের দেশে ছাত্র আন্দোলন সূচনায় সর্বদা খুব স্পষ্ট রাজনৈতিক রূপ নেয় না। যেমন ছাত্রদের ভাষা আন্দোলন। এটা মূলত কিছুদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রভাষার দাবীতে ছাত্রদের আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকলেও দ্রুত সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়। পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে মুসলিম লীগ বিরোধী আন্দোলন বিজয়ী হয় এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের কবর রচনা হয়। বস্তুত তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের স্বায়ত্তশাসন এবং তার ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনও গড়ে উঠে ভাষা আন্দোলনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই। এক অর্থে এর পরিণতি ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ।

এই আলোচনাকে দীর্ঘ না করতে চেয়ে বলি এই ছাত্র-যুব সমাজ তথা তরুণ প্রজন্মকে বর্তমান বিএনপি-এর পক্ষে কখনই পাওয়া সম্ভব নয় রাজনৈতিক কারণে। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে শিক্ষালাভকারী এই প্রজন্মকে কেউ যদি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ভেবে থাকেন তবে তিনি ভুল করবেন। যুগ সচেতন এবং আধুনিকতার আলোকপ্রাপ্ত এই শিক্ষার্থীদের মূল বা নির্ধারক অংশ সর্বদাই প্রগতির পক্ষে থেকেছে। সুতরাং এক সময় এরা ছিল এ দেশে সাধারণভাবে সমাজতান্ত্রিক এবং লোকবাদী বা ধর্মমুক্ত ভাবধারার অনুসারী বা চর্চাকারী। ধর্মমুক্ত চেতনার এই ধারা পাকিস্তান আমলে এই প্রজন্মের নির্ধারক অংশকে পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার পরিবর্তে বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতির দিকে নিয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তরুণ প্রজন্মের উপর ধর্মমুক্ত তথা লোকবাদী বা সেক্যুলার আদর্শের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রভাব ১৯৯০ পর্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। এরপর সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন হলে আদর্শের এই ধারা অনেকটা স্তিমিত হয়।

কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির অবিশ্বাস্য এবং অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। একদিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলামী জগৎ পাশ্চাত্যের হাতে নানানভাবে হেনস্থা এবং পরাজিত হয়। অনেক কয়টি মুসলিম রাষ্ট্র যেমন আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি মুসলিম দেশ পাশ্চাত্যের নানান আগ্রাসী ও আক্রমণমূলক ভূমিকায় বিধ্বস্ত হয়। সেই সঙ্গে দেশে দেশে ঘটে ইসলামী জঙ্গীবাদের ধ্বংসাত্মক বিস্তার। অবশ্য এটা এখন ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু।

যাইহোক, বস্তুগত এবং ভাবাদর্শিক উভয় দিক থেকেই পাশ্চাত্যকে মোকাবিলায় এখন ইসলাম শুধু অক্ষম নয, উপরন্তু সামগ্রিকভাবেই এখন বিশ্বপরিসরে ইসলামের বিপর্যয় ঘটে চলেছে। এরই পাশে ইন্টারনেটের সাহা্য্যে চিন্তার জগতে শুরু হয়েছে ইসলাম এবং ধর্মবিশ্বাস থেকে মুক্তির এক নূতন আন্দোলন। বিশেষ করে বাংলাদেশে ধর্ম থেকে মুক্তির আন্দোলন এমন একটি মাত্রা নিতে শুরু করেছে যা শুধু বিস্ময়কর নয়, অভূতপূর্বও। এর মধ্যে ধর্ম থেকে মুক্তিকামী বহুসংখ্যক ব্যক্তিকে রাষ্ট্র কর্তৃক জেলে নেওয়াসহ নানানভাবে হয়রানি ও নির্যাতন এবং ইসলামী জঙ্গী কর্তৃক হত্যা করা হলেও মূলত ইন্টারনেট ভিত্তিক এই আন্দোলনের শক্তি ও তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

তরুণ প্রজন্মের কতটা অংশ ধর্ম থেকে মুক্তিকামী বা লোকবাদী তা বলা যাবে না। তবে ব্যাপকতর অংশই যে ইসলাম কিংবা ধর্মভিত্তিক কোনও ধরনের রাজনীতি বা আদর্শের প্রতিই আগ্রহী নয় সেটা জোর দিয়ে বলা যায়। ফেসবুক, ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব সম্পর্কে একটু খোঁজ নিলেই সেটা বুঝা যায়। সুতরাং গণতন্ত্রের জন্য যতই সোচ্চার হোক ইসলাম নির্ভর দল হিসাবে চিহ্নিত বিএনপি-এর পক্ষে কীভাবে এই প্রজন্মকে আকৃষ্ট বা আস্থাশীল করা সম্ভব? এর জন্য বিএনপি-কে তার রাজনীতিতেই গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে।

যে কথা আগেই বলেছি আমাদের দেশে জনগণ-নির্ভর বিশুদ্ধ রাজনীতি করা যায় না। সুতরাং একটা ভেজাল বা মিশেল দিতে হয় যেটা চমৎকারভাবে আওয়ামী লীগ দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেটা দেয় নাই। তাতে হয়ত ভোট পাওয়া যায় বহু সংখ্যক মানুষের, কিন্তু আন্দোলন করা যায় না। কারণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দিয়ে আমাদের দেশের রাজনীতি বা রাস্তার আন্দোলনের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা আঘাতকারী শক্তি ছাত্র-যুব সমাজকে পাওয়া যায় না। জামায়াতকে নিয়ে তো বিএনপি অনেক চেষ্টা করে দেখল! ফল কী? শূন্য। আসলে ধর্মাশ্রিত যে কোনও রাজনীতি আমাদের দেশে ‘অ্যান্টি প্রসেস’ — সুতরাং শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা বিরোধী নয়, উপরন্তু যুগধারা বিরোধীও। এটা আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য। ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতি তারাও করে। তবে সেটাকে তারা কিছুটা ‘ব্যাল্যান্স’ করে বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা বলে। বিএনপি-এর ঝুলিতে মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই নাই। আদর্শিকভাবে যা আছে সেটা হচ্ছে ইসলাম।

আমার ধারণা বিএনপি-এর এই ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতি শুধু তরুণ প্রজন্মকে নয়, উপরন্তু যে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের ভিতর থেকে রাষ্ট্রের আমলারা এসেছে তাদেরকেও বিএনপি-এর প্রতি বিমুখ করেছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি-এর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্য এবং সখ্য তার জন্য আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এটা মনে রাখতে হবে যে আজ যারা সেনা, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন তারা মূলত সকলেই মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্ম থেকে আগত। তাদের অনেকেরই স্বাধীনতা যু্দ্ধের স্মৃতি না থাকলেও এই যুদ্ধের জন্য গৌরব বোধ নিয়েই তারা বেড়ে উঠেছে। সুতরাং ’৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্য এবং ইসলামী রাজনীতির প্রতি প্রাধান্য দান নব্যপ্রজন্মের আমলাতন্ত্রকেও বিএনপি-এর প্রতি বৈরী করেছে।

অনেকে হয়ত ২০০১-২০০৬ শাসনকালে বিএনপি-এর ব্যাপক দুর্নীতিকে তার প্রতি আমলাতন্ত্রের বিমুখতার কারণ হিসাবে উল্লেখ করবেন। সেটা একটা কারণ হতে পারে। তবে আমার মনে হয়ে না সেটা প্রধান কারণ। কারণ দুর্নীতিতে কে কার চেয়ে কম যায়? ১৯৭১ পরবর্তী কাল থেকে বিবেচনা করলেই সেটা বুঝা যায়। অনেকে হয়ত বিএনপি-এর বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের এত দৃঢ় সমর্থন ভারতের কারণে এসেছে এটা মনে করবার কারণ নাই। বরং ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বিএনপি-এর প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের সদস্যদের তথা আমলাতন্ত্রেরও বিরূপতা বা বিরুদ্ধতাকে ভারত কাজে লাগিয়েছে এমনটা মনে করাকে অধিকতর যৌক্তিক মনে হয়।

অর্থাৎ বিএনপি-এর দুর্গতির পিছনে প্রজন্মগত সমস্যাও আছে। বিএনপি পাকিস্তানী প্রজন্মের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং আমজনতার মনস্তত্ত্ব নিয়েই এখনও পড়ে আছে। তার প্রকাশও তারা যখন তখন ঘটায়। ২০১৩ সালে অন্ধভাবে গণ-জাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা এবং হেফাজতে ইসলামের প্রতি বিএনপি-এর সমর্থন রাজনীতিতে বিএনপি-এর যে ক্ষতি ঘটিয়েছে সেটাকে আজ অবধি বিএনপি পূরণ করতে পারে নাই। এটা বুঝতে হবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আমজনতার নিকট এখন পর্যন্ত যতই কাঙ্ক্ষিত হোক পাকিস্তান পরবর্তী শিক্ষিত নূতন প্রজন্মের নিকট এটা যথেষ্ট পরিমাণে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অগ্রহণযোগ্য। এই প্রজন্মের নিকট যদি আওয়ামী লীগ কিছু আবেদন রাখতে পারে তবে বিএনপি-এর পরিবর্তে তার প্রতি এই প্রজন্মের আমলাতন্ত্রও বেশী নৈকট্য কেন অনুভব করবে না?

হয়ত বলা হবে আওয়ামী লীগের এই আবেদন দ্বিচারিতাপূর্ণ কিংবা ভণ্ডামিপূর্ণ। তা হোক। তবু সেক্যুলারিজম, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ধ্বনি উচ্চারণ ক’রে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান ক’রে আওয়ামী লীগ এ দেশের কম-বেশী আধুনিক চেতনা ধারণকারী মধ্যবিত্তের মধ্যে যে সমর্থন সৃষ্টি করতে পেরেছে তার ধারেকাছে বিএনপি যেতে পারে নাই। এটা ঠিক যে, দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের ভূমিকাও তেমন কোনও প্রশংসা দাবী করতে পারে না। তবু বলতে হবে ক্ষমতা দখল ও রক্ষার লড়াইয়ে বিএনপি-এর তুলনায় আওয়ামী লীগ অনেক বেশী সফল। অবশ্য এই লড়াইয়ের পরিণতি তার নিজের জন্যও শুভ হয়েছে এটা বোধ হয় বলা যাবে না। নির্বাচনী রাজনীতির ব্যাকরণের যে নিয়ম মেনে তার জন্ম, উত্থান ও বিকাশ সেই নিয়ম ভাঙ্গার পরিণাম তো তাকে ভোগ করতেই হবে। সেটা কীভাবে, সময় সেই প্রশ্নের উত্তর দিবে।

যাইহোক, রাজনীতির এক বিরাট অধ্যায় অন্তত একটা কালের জন্য শেষ হল। আওয়ামী লীগের পর্ব শেষ হয়েছে বলেই মনে হয়। এখন বিএনপি কী করবে বা করতে পারবে তা সময় বলবে। এমনও হতে পারে লীগের সঙ্গে বিএনপি-এরও পর্যায় শেষ হয়েছে। কারণ বিএনপি-এর জন্ম তো মূলত লীগকে ঠেকাবার জন্য। এখন রাজনৈতিকভাবে লীগের অবসান হলে বিএনপি-এর অস্তিত্বের যৌক্তিকতা থাকে কী করে? সময় এ প্রশ্নের উত্তর দিবে।

তবে বিশেষত ইন্টারনেট-নির্ভর নূতন যে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এবং স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে এসে মাঝে মাঝে রাস্তায় নামছে তারা আগামীতে কোন রাজনীতির দিকে যাবে তা এখনই বলা যাবে না। তবে একটা কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় তারা বেশীদিন এভাবে রাজনীতি এবং রাস্তার বাইরে নিষ্ক্রিয় থাকবে না। এ্কটা নির্ধারক রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে তারা তাদের উপস্থিতি জানান দিবে। কোন ঘটনার মধ্য দিয়ে কীভাবে দিবে তা বলতে পারি না। তবে ঘটনার অনিবার্যতা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়।

রাজনীতিতে এখন একটা নিদারুণ শূন্যতার সময় চলছে। আওয়ামী লীগ আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী শক্তি দমনে যত সফলই হোক নিজের জন্য সৃষ্টি করেছে সর্বাত্মক জনবিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ শূন্যতা, যা ক্ষমতাসীন যে কোনও রাজনৈতিক দলের জন্য বিপজ্জনক। এটা বুঝতে হবে যে আমলাতন্ত্রের জন্যও আওয়ামী লীগও শিগগীরই দায় বা অপ্রয়োজনীয় বোঝায় পরিণত হবে। কারণ আমলাতন্ত্রের নিকট জনসমাজের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার জন্য ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যে প্রয়োজন হতে পারে যদি কোনও দল সেই প্রয়োজন পূরণ করতে না পারে তবে তার নিকট সেই দলকে ক্ষমতায় রাখবার প্রয়োজন কতদিন থাকতে পারে? ক্ষমতার রাজনীতিতে অপ্রয়োজনীয় বোঝায় পরিণত হলে কে কাকে বেশী দিন টানে?

নূতন রাজনীতির শক্তির উত্থানের জন্য এটা এক প্রকৃষ্ট সময়। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় সেটা যে নীচ থেকে হবে না সেই রকমটাই মনে হয়। কারণ গরিষ্ঠ জনগণের সেই সক্ষমতা বা যোগ্যতা নাই। হয়ত তরুণ প্রজন্ম থেকে একটা সংগঠিত শক্তি বেরিয়ে আসবে মোটামুটি কার্যকর শক্তি হিসাবে। তবে সেটুকুই যথেষ্ট হবে না ব্যাপক জনসমাজকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য, তাদের চেতনার উত্তরণের জন্য। এর জন্য একটা গণ-ভিত্তিক বৃহৎ রাজনৈতিক দলেরও প্রয়োজন আছে, যার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হোক অথবা যেটার গঠন বা পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখে হোক তরুণ শক্তি রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে এবং সেই সঙ্গে চেতনাগতভাবে জনগণেরও উত্তরণে ভূমিকা রাখতে পারে আর এভাবে গণতন্ত্রকে দিতে পারে মজবুত ও স্থিতিশীল ভিত্তি ।

এই তরুণ শক্তির সঙ্গে ঐক্য সাধনের উপযোগী কোনও রাজনীতি নিয়ে বিএনপি কি দাঁড়াতে পারবে? তার যে ধরনের সঙ্কট ও বিপর্যয় চলছে তাতে এই রকম সময়ে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দল অনেক সময় রক্ষণশীল হয়ে পড়ে, নূতন কিছু গ্রহণের শক্তি হারিয়ে ফেলে। যদি তেমন কিছু হয় তবে বলতে হবে লীগের মত বিএনপি-ও সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাবে। এবং তার জন্য বেশী সময় অপেক্ষা করতে হবে না।

যাইহোক, শূন্যতার এই সময় বেশী দীর্ঘস্থায়ী হবে এমনটা মনে করবার কারণ নাই। এই শূন্যতা পূরণে উপর থেকে এবং বাহির থেকেও বিভিন্ন শক্তি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করবার কারণ আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের ভূমিকাকে আমাদের হিসাবে নিতে হবে। তারা কে কখন কীভাবে কোন ধরনের ভূমিকা রাখবে তা এখনই বলে দেওয়া সম্ভব নয়।

এই আলোচনা শেষ করার পূর্বে ভোট প্রসঙ্গে আমার বক্তব্যকে ধরে নিয়ে পাঠক যেন এ কথা মনে না করেন যে আমি ভোট বা নির্বাচন বিরোধী। আমার বিবেচনায় নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা অংশমাত্র, যেখানে ব্যক্তিমানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধসম্পন্নতা তার অর্থাৎ গণতন্ত্রের প্রাণসত্তা বিশেষ। সুতরাং ভোট বা নির্বাচন মাত্রই গণতন্ত্র নয়। অধীনস্থদের বাধ্যতামূলক সম্মতি আদায়েরও একটা পদ্ধতি হতে পারে নির্বাচন বা ভোট। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা এ দেশ শাসনের সুবিধার জন্য তাদের অধীনস্থ প্রজাপুঞ্জের উপর নির্বাচনের যে পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়েছিল সেটার প্রকৃত রূপ অনুসন্ধান করা আজ সময়ের দাবী। বস্তুত এটা হচ্ছে তাদের বহিরাগত উপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রের লুণ্ঠন, দমন ও নিপীড়ন মূলক শাসনকে বৈধতা দিবার একটা কৌশল।

এ দেশে আমলাতন্ত্রের চরিত্র ও ভূমিকাকে স্পষ্টতর করার জন্য যে কথা এই আলোচনার প্রথম দিকে বলেছি তার পুনরুক্তি করে বলব এই আমলাতান্ত্রিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থার একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার বহিরাগত ও স্বৈরতান্ত্রিক রূপ। এই শাসন ব্যবস্থায় এক এলাকার জনগণকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাঠানো হয় বহিরাগত তথা ভিন্ন এলাকার আমলাদের। সুতরাং এলাকার প্রশাসক, বিচারক, পুলিশ ইত্যাদি সকলে বহিরাগত, স্থানীয় জনগণের উপর প্রভুসুলভ ভঙ্গিতে খবরদারি করলেও তাদের সঙ্গে জনগণের কোনও নাড়ীর যোগ থাকে না এবং তাদের উপর জনগণের কোনও নিয়ন্ত্রণও থাকে না। ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠিত সেই উপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্র ব্যবস্থা আজ অবধি বহাল রয়েছে। একদিকে গরিষ্ঠ জনগণের পশ্চাৎপদতা, অপরদিকে বহিরাগত ও প্রভুত্বকারী চরিত্রবিশিষ্ট আমলাতান্ত্রিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা এখানে দেশকে যেমন পরনির্ভর তথা বিদেশনির্ভর করে রেখেছে, অপর দিকে তেমন গণতন্ত্রকে সর্বদা পঙ্গু করে রেখেছে। তাই প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন এ দেশে পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ গণতন্ত্রের জন্ম দেয়। পরিণতিতে প্রতিটি নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থা এ দেশে নূতন নূতন সঙ্কটের চোরাবালিতে পথ হারায়।*

----------------------------------------------------------------------------------------------------
* আমলাতন্ত্রের চরিত্র ও ভূমিকা এবং গণতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে আমার আরও কিছু বিস্তারিত  আলোচনার জন্য দেখুন ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমস্যা’। এটি ‘বঙ্গরাষ্ট্রের’ গ্রন্থাগারের প্রবন্ধ বিভাগে দেওয়া আছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------

যাইহোক, আমার আলোচনাকে আর দীর্ঘ করতে না চেয়ে এ কথা বলি যে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আসা রাজনীতির একটা প্রয়োজনীয় কালপর্ব শেষ হল। কালপর্বের এই সমাপ্তির কৃতিত্ব দিতে হবে আওয়ামী লীগকে। আর এক কালপর্ব অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। সেই কালপর্বের সূচনা কাদের হাত দিয়ে হবে, তার ধরনই বা কেমন হবে সেটা সময় আসবার আগে কী করে বলা যাবে? তবে এই প্রসঙ্গের সমাপ্তির পূর্বে প্রশ্নটা রাখি এই বলে যে, সেই কালপর্বও কি গণতন্ত্রের নামে অতীতের দুর্দশাগ্রস্ত ভোটতন্ত্রের মত দেশের রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে নূতন ধরনের নাটক মঞ্চস্থ ক’রে অবশেষে পুনরায় কিছুকালের জন্য বিদায় নিবে? অর্থাৎ অন্তহীন কাল ধরে আমরা কি চক্রাকারে একই বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকব? প্রশ্নটা থাকুক। উত্তর সময় দিবে।

৯ মার্চ – ১৩ মার্চ, ২০১৯

       

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ