লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ November 27, 2019, 12:00 AM, Hits: 3292
(১)
সুষুপ্ত পাঠকের লিখা ‘প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে কেন সক্রেটিসের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করতে গিয়ে আমি কিছু কথা বলার তাগিদ বোধ করছি। এটাকে ঠিক তার লেখার সমালোচনা বা পর্যালোচনা বলা ঠিক হবে না। তবে তার লেখার সূত্র ধরে আমি আমার কিছু কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি যা থেকে আমার কথাগুলো বলা। এখন আমি মূল প্রসঙ্গে যাই।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে ঘিরে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের কারো কারো মধ্যে এক ধরনের মোহ আমি বহুকাল ধরে দেখে আসছি। বলা চলে তাকে নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে অনেক কাল ধরে, প্রথম থেকেই আমি যেটাকে খুব অপছন্দ করে এসেছি। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলা উচিত হবে যে, আব্দুর রাজ্জাক আমার নিজেরও অধ্যাপক ছিলেন। আমি যখন ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত কালপর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ(অনার্স) এবং এমএ ক্লাসের ছাত্র ছিলাম তখন তিনি আমার বিভাগীয় অধ্যাপক ছিলেন। সত্যি কথা বলতে কী তার জ্ঞান-গরিমার অনেক প্রশংসা শুনলেও আমার সবচেয়ে অপছন্দের শিক্ষকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। হয়ত বয়সের কারণে তিনি যা বলতেন তার অকেনটাই ছাত্রদেরকে শুনাতে পারতেন না। অন্তত আমার কথা বলতে পারি। একে তো ইংরাজীতে তখন সব শিক্ষকই বক্তৃতা (লেকচার) দিতেন। ফলে আমার মত ছাত্রদের বুঝতে কিছু সমস্যা তো হবার কথা। তার উপরে যদি সেই ইংরাজী বক্তৃতারও প্রায় অর্ধেক শব্দ মুখের ভিতর রয়ে যায় আর বাকী অর্ধেক শ্রুতিগোচর হয় তবে ছাত্রদের কী অবস্থা হতে পারে তা সহজেই কল্পনা করা যায়। এছাড়া অনেক সময়ই তিনি ক্লাসে বক্তৃতার মধ্যে মাঝে মাঝেই বিড়বিড় করে কিছু বলতেন এবং হঠাৎ হঠাৎ আপন মনে হাসতেন। আমার এখনও মনে আছে এ নিয়ে আমার সহপাঠীদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে তার সমালোচনা করতাম। শিক্ষক হিসাবে আমি তাকে পছন্দ করার কারণ দেখি নাই। সকলে যখন বলত তখন তিনি নিশ্চয় অনেক বড় পণ্ডিত ছিলেন। অর্থাৎ অনেক কিছু পড়েছিলেন। কিন্তু আমার কখনও তাকে মহান শিক্ষক মনে হয় নাই।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গ যখন উঠল তখন তার সমগ্র অর্ধউচ্চারিত বক্তৃতার মধ্যে তার মাঝে মাঝে আপন মনে হাসার কথা না বলে পারলাম না। যখন তার কথা ভেবেছি তখন তার সেই বিড়বিড় করে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে কোনও কারণ ছাড়াই আপন মনে হাসতে থাকার দৃশ্য আমার মনে জেগে উঠে। আর সেই দৃশ্য মনে হলে আজও যে উপমাটা আমার মনের ভিতর আসে সেটা হল যেন ক্লাসে তার সামনে একদল গরু-ছাগল-গাধা বসে আছে এবং তার উপরে দায়িত্ব পড়েছে তাদেরকে মানুষ করার। অথচ তার কাছে এরা তো গরু, ছাগল, গাধা ছাড়া আর কিছুই না!
না, তার ক্লাসগুলি করার পর তার কাছ থেকে শিক্ষণীয় যেমন বিশেষ কিছু পাই নাই তেমন তাকে এমনকি শিক্ষক হিসাবে শ্রদ্ধা করারও কোনও কারণ দেখি নাই। ইংল্যান্ডের পণ্ডিত লাস্কির নাকি তিনি প্রিয় ছাত্র ছিলেন। তাতে আমাদের কী? শিক্ষক হিসাবে রাজ্জাক সাহেবের অবদানের কথা তো বললাম, অন্তত আমার অভিজ্ঞতা থেকে। জ্ঞানের জগতে তার কী অবদান আছে? তার লেখা একটা উল্লেখ্য বইয়ের নামও তো আমি কখনও শুনি নাই। খালি মুখের কথায় মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার সপক্ষে বললেই হল? সেটাকেও তো যৌক্তিকভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে হবে।
হ্যাঁ, সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে আমি একবার তর্ক করেছিলাম আহমদ ছফার সামনে। সেই সময় তিনি বাসা থেকে নেমে যাচ্ছিলেন। কার বাসা আমার ঠিক মনে নাই। তবে আমি তার কাছে নয়, বরং গিয়েছিলাম আহমদ ছফার কাছে। যাইহোক, তিনি যখন বাসার বাইবে দাঁড়িয়েছিলেন তখন তার সঙ্গে সামান্য কিছু কথা হয়। এটা ’৮০-এর দশক অথবা ’৯০-এর দশকের ঘটনা। তখনই আমি প্রথম বুঝেছিলাম এই লোকটি প্রবলভাবে হিন্দু বিদ্বেষী এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পাকিস্তানবাদী। আসলে তর্কটা উঠেছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা এবং তাতে মুসলিম লীগ নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে। এটাকে বোধ হয় তর্কও বলা ঠিক না। বলা চলে আমার একটা বক্তব্যের বিরোধিতায় তার কিছু বক্তব্য এবং তার এই বক্তব্যেরও প্রতি আমার বিরোধিতা জানানো। ব্যাস কথা ওখানেই শেষ। এরপর তিনি মোটর গাড়ীতে উঠে চলে যান।
তারপর ছফার যে প্রতিক্রিয়া হল সেটা এখনও আমার মনে আছে। অধ্যাপক রাজ্জাকের মুখের উপর আমি কথা বলেছি এটাই সে হজম করতে পারছিল না। আমি চিরকাল যে জিনিসটা খুবই অপছন্দ করি সেটা হচ্ছে অন্ধভক্তিবাদ। ভক্তির যোগ্য হলে ভক্তি করা অন্যায় নয়। তার কাছে রাজ্জাক সাহেব ভক্তিযোগ্য। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তার জন্য আমি তার সেই ভক্তিযোগ্য মানুষটাকে ভদ্রতার সঙ্গে আমার ভিন্নমতটাও জানাতে পারব না?
সুষুপ্ত পাঠকের লেখাটা আমার কাছে খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আসলে শুধু অধ্যাপক রাজ্জাক নয়, ছফা ইত্যাদির ভূমিকা নিয়েও আলোচনার প্রয়োজন আছে। বাঙ্গালী জাতি এবং মুসলিম সমাজের আধুনিক যুগোপযোগী জাগরণের পরিবর্তে প্রতিক্রিয়া ও পশ্চাদপদতার অভিমুখে যাত্রায় এদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা প্রায় কেউই করতে চায় না। বিশেষ করে ছফার ভূমিকা নিয়ে ব্যক্তি পর্যাযে আমি ইদানীং কখনও ব্যক্তিগত আলোচনায় কিছু কথা বললেও লিখি না। আসলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি অনেক কিছুকে নিতে চাই না। কতজন সম্পর্কে বলব? এত বেশী সংখ্যক প্রতিষ্ঠিত লোকজনের ক্ষুদ্রতা বেরিয়ে আসে যে এ সমাজের বিশেষ কিছু আর টিকে থাকে না। এ সমাজে একটা আদর্শ নিয়ে টিকে থাকা যে কতটা কঠিন তা আমি ছফাকে দিয়েও বুঝি। বিশেষ করে উপরের তলার মানুষদের জন্য কিংবা যারা বিদ্যমান সমাজের প্রতিষ্ঠার জায়গায় যেতে চায় তাদের জন্য এ কথাটা খুব সত্য। যেভাবেই হোক ছফা শেষ পর্যন্ত উপর তলার প্রতিষ্ঠা বা স্বীকৃতির কাঠামোতে জায়গা করে নিয়েছিল। তার এই সামাজিক উত্থানের এবং নৈতিকতার বিচারে পতনেরও অনেকটা আমার দেখা।
ছফা আমার সমসাময়িক শুধু নয়, আমরা দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বর্ষের ছাত্র ছিলাম। অনার্সে তার বিষয় ছিল বাংলা আর আমার ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। অধিকন্তু আমরা দুইজন একই ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। আমার মত উৎসাহী ও পরিশ্রমী কর্মী না হলেও সেও ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে তার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যাতে বিভিন্ন পর্যায়ে বিরতি ঘটলেও বহুকাল পর্যন্ত টিকেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা টিকে নাই। তার মৃত্যুর কয়েক বৎসর পূর্বেই সম্পর্কটা শেষ হয়।
যাইহোক, এ কথা মনে করলে ভুল হবে যে, ছফা প্রথম থেকেই ইসলাম এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার অনুবর্তী ছিল। মোটেই তা না। আমি যতদূর মনে করতে পারি বিশেষত ষাটের দশকের বুদ্ধিদীপ্ত মার্কসবাদী কিংবা কম্যুনিস্ট যুবকদের মত সেও ধর্মের প্রশ্নে শুধু উদার নয়, ধর্মমুক্তই ছিল। বিশেষ করে আমার ধর্মমুক্ত কিংবা আরও সোজাসাপ্টা ভাষায় বললে ধর্মবিরোধী চিন্তা সম্পর্কে সে খুব ভালোভাবেই জানত। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অনেক পরবর্তী কালের কথা আমার মনে আছে যখন ধর্মের প্রশ্নে আমাদের মধ্যে মতবিনিময় হত। ধর্ম বিশেষত ইসলাম সম্পর্কে তার চিন্তায় পরিবর্তন ঘটতে দেখি অনেক পরবর্তী কালে, ’৮০-এর দশকের শেষ দিক থেকে এবং বিশেষত ’৯০-এর দশকে। সেক্ষেত্রেও তার যুক্তি ছিল এই রকম যে, সমাজের মূলধারায় (mainstream) না থাকলে কিছু করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ সমাজের মূলধারায় না থেকে তার বাইরে গিয়ে সেখান থেকে সমাজ পরিবর্তনের জন্য কিছু করা সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্ত বা চিন্তা যে, আপোস এবং শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণে নিতে পারে সেটা তাকে বুঝাতে পারি নাই। আমার বক্তব্য ছিল সমাজের যেটা অন্যতম প্রধান সমস্যা আমাদের সমাজের বাস্তবতায় সেই ইসলাম ধর্মের সঙ্গে আপোস করে কিংবা তার প্রবাহে গা ভাসিয়ে সমাজের মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়। সুতরাং আমার বক্তব্য ছিল মূলধারায় যাবার চিন্তা না করে বাইরে থেকেই এমন ধারা গড়তে হবে যা এক সময়ে হয়ে উঠবে মূলধারা।
যাইহোক, যতদূর মনে হয়, প্রথম দিকে ইসলাম বা মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার অনুশীলন তার নিকট ছিল কৌশলগত বিষয়। তবে ক্রমে তার মধ্যে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা এবং হিন্দু বিরোধিতা প্রবল্ হয়ে উঠতে দেখি। পরবর্তী সময়ে তার মধ্যে আর একটি প্রবণতা আমি দেখি সেটা হচ্ছে নারী বিদ্বেষ ও নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ। অথচ সে নারীদের সাহচর্য খুব পছন্দ করত; খ্যাতি এবং প্রতিষ্ঠার কারণে সেটা সে পেতও। তার হিন্দু বিদ্বেষ আর নারী বিদ্বেষ এই দুইয়ের প্রকাশকে আমি খুব অপছন্দ করতাম। সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু অযৌক্তিকভাবে বিদ্বেষ এবং ঘৃণা প্রকাশকে আমি অপছন্দ করতাম। স্বাভাবিকভাবে আমার সঙ্গে তার মতবিরোধ তীব্র হয়ে দেখা দেয়। এটা নব্বইয়ের দশকের ঘটনা। একটা পর্যায়ে সামাজিক কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে আমার সম্পর্কও শেষ হয়ে যায়।
এই সমাজের ভাবগত বা চেতনাগত এবং নৈতিক অধঃপাত বা পশ্চাদযাত্রার গতিপ্রকৃতি এবং কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আহমদ ছফা আমার নিকট একটা চমৎকার কেস-স্টাডির বিষয়। এর বেশী ছফা সম্পর্কে অন্তত এখনও বলতে চাই না।
(২)
সুষুপ্ত পাঠক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে এ বাংলার বাঙ্গালী মুসলিম সমাজের কতকগুলি সমস্যাকে প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরেছেন। তবে তিনি আব্দুর রাজ্জাককে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন ততটা গুরুত্বের অধিকারী তিনি নন। হলে পাকিস্তান কালে ষাটের দশকে বামপন্থী যে তরুণ প্রজন্মের উত্থান ঘটেছিল সেটা সম্ভব হত না। আমার ধারণা এই প্রজন্মের উত্থানের উৎস ছিল প্রধানত ব্রিটিশ কালে সংঘটিত হিন্দু সমাজের জাগরণ এবং এই জাগরণের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে বিকশিত কম্যুনিস্ট আন্দোলন। পাকিস্তান পরবর্তীকালে পূর্ব বঙ্গে কম্যুনিস্ট রাজনীতি বা দল নিষিদ্ধ হলেও হিন্দু সমাজ থেকে উদ্ভূত কম্যুনিস্টরা মূলত ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ বা আত্মগোপনে থেকে এ দেশে ধর্মমুক্ত সামাজিক চেতনার একটা দৃঢ় ভিত্তি নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। কাজটা তারা করেছিলেন অপরিমেয় আত্মত্যাগ করে। একদিকে পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসক শ্রেণীর সঙ্গে বাঙ্গালী মুসলমানের দ্বন্দ্ব, অপর দিকে, বিশ্বব্যাপী কম্যুনিস্ট আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান জোয়ারকে কাজে লাগিয়ে ঐ কালে মূলত হিন্দু সমাজ থেকে আগত কম্যুনিস্টরা যা করেছিলেন তার একটা ফল হল বাঙ্গালী মুসলিম সমাজ থেকে আগত এ দেশের ছাত্র তথা শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের ধর্মমুক্ত রাজনীতি ও সমাজচিন্তার ঝটিকা বাহিনী হিসাবে উত্থান। ধর্মমুক্ত রাজনীতির চেতনা এভাবে প্রবল না হলে ষাটের দশকে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার রাজনীতির বিস্তার যেমন সম্ভব হত না তেমন এই রাজনীতি না থাকার কারণে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধও ঘটতে পারত না।
এভাবে হিন্দু বাঙ্গালীর অর্জন হিসাবেও আমরা ১৯৭১-এর বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিবেচনা করতে পারি। সেক্ষেত্রে বাঙ্গালীর এই ধর্মমুক্ত জাতি চেতনা তথা স্বাজাত্যবোধের জন্মের জন্য আমাদেরকে যেতে হবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন, বঙ্গিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের কাছে। অর্থাৎ অবশ্যই ১৯৭১-এর বাঙ্গালীর জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে হিন্দু বাঙ্গালীর নেতৃত্বে যে জাগরণ সূচিত হয়েছিল তার একটা ফল। তবে এটা প্রকৃত অর্থে বাঙ্গালী জাতির পরিণতি নয়, একটা পর্যায় মাত্র। সামনে আরও অনেকটা পথ পড়ে আছে।
এ প্রসঙ্গে আমি এটুকু বলি যে, বাঙ্গালী জাতির এই যাত্রাপথ নির্মাণে হিন্দু বাঙ্গালীর অবদান অনেকাংশে ভাষা এবং সংস্কৃতি নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু হিন্দু বাঙ্গালী এই যাত্রাকে সেভাবে রাজনৈতিক মাত্রা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উভয় বঙ্গেই হিন্দু বাঙ্গালী যে রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে সেটা ঐতিহাসিক সত্য। ব্রিটিশ শাসনকালে হিন্দু বাঙ্গালীর সমাজ থেকে বাঙ্গালী জাতির যে শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা এসেছিলেন তিনি হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি সফল হলে কী হত সেই আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। বরং তার সাফল্যের কোনও বাস্তবতাই সে কালের বাংলায় তো বটেই এমনকি সমগ্র ভারতবর্ষেও ছিল না। যাইহোক, তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হিন্দু বাঙ্গালীর দৃশ্যমান রাজনৈতিক ভূমিকা একটা কালের জন্য হলেও শেষ হয়েছে।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানভুক্ত পূর্ব বঙ্গের মুসলিম বাঙ্গালী সমাজে মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক এবং লোকবাদী চেতনা নির্মাণে হিন্দু সমাজের পটভূমি থেকে আসা কম্যুনিস্টদের মহামূল্যবান ভূমিকাকে আমি সদাসর্বদা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু একই সঙ্গে ষাটের দশকের বিপ্লবী প্রজন্মের উত্থান যে ঐ কম্যুনিস্ট নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রবল সংগ্রাম এবং তাদের সঙ্গে মূলত সম্পর্কচ্ছেদের মধ্য দিয়ে সম্ভব হয়েছিল সেই সত্যকেও বলা উচিত হবে। হিন্দু পটভূমি থেকে আগত কম্যুনিস্টদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল রাষ্ট্রচিন্তা বিমুখ সমাজ সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গী। ফলে স্বাধীনতা তো দূরের কথা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রতিও তাদের ছিল বিরোধিতা। এদেশে বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক বিকাশে তাদের ভূমিকা থাকলেও সেটা ছিল অতি সতর্ক এবং রাজনৈতিক অর্থে জাতীয়তাবাদ বিরোধী। এটাকে বড় জোর বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ বলা যায়।
আমার ধারণা যে সমাজ থেকে তাদের প্রধান অংশ এসেছিল সমস্যাটা সেই হিন্দু সমাজেরও। হিন্দু সমাজ সাধারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী রাষ্ট্র-চিন্তা এবং রাষ্ট্র-সাধনা বিরোধী। এটা মনে করার কারণ আছে যে, বর্ণজাতিভেদমূলক ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শতধাবিভক্ত সমাজের পক্ষে রাষ্ট্র সাধনা করা সম্ভব হয় না বলে এই অবস্থা। এই রকম বাস্তবতায় বিভক্ত ও বিশৃঙ্খল সমাজ তার সামাজিক ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ করতে গিয়ে রাষ্ট্রচর্চার দিকটাকে অবহেলা করতে বাধ্য হয়। বলা যেতে পারে হিন্দু সমাজে রাষ্ট্র-চিন্তা বা রাষ্ট্র-চর্চা অনেকটা বহিরারোপিত। ফলে যে কোনও আদর্শ চর্চায় ক্ষমতা দখলের রাজনীতি নয়, বরং নীতি-নৈতিকতার চর্চা সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে থাকে। এই কারণে বিশেষত ষাটের দশকের ঐ কালে একটা পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সমাজ-চেতনার উত্তরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেও এ দেশের ঐতিহ্যিক কম্যুনিস্ট নেতৃত্ব রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতিতে তার উত্তরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হিন্দু কম্যুনিস্ট ঐতিহ্য দ্বারা এ দেশের যে কম্যুনিস্ট পার্টি সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত সেই বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি বা সিপিবি-এর কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টি দিলে আমার এই মূল্যায়নের তাৎপর্যকে বুঝা সহজতর হতে পারে।
আমার ধারণা সুভাষের ব্যর্থতা শুধু ব্যক্তি সুভাষের ব্যর্থতা নয়, বরং তার চেয়েও বেশী যে সমাজ থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন সেই হিন্দু বাঙ্গালী সমাজেরও ব্যর্থতা। আসলে আমরা তো ঐতিহাসিক কাল পরম্পরার ফলও ভোগ করি। বৃহৎ বঙ্গের বাঙ্গালী বিশেষত সুদীর্ঘ কালস্থায়ী বৌদ্ধ পাল আমলে কীভাবে রাষ্ট্র সাধনা করেছিল তা জানি না। হয়ত তখনও প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়েছিল। তবে শত বর্ষের কিছু কম সময় স্থায়ী হিন্দু সেন শাসনকালের পর থেকে তার মধ্যে রাষ্ট্র-সাধনা আর সেভাবে দেখা যায় না। মূলত সেন রাজাদের শাসনকালকে আমরা বাঙ্গালীর বৌদ্ধ থেকে হিন্দু ধর্মভুক্ত হবার কাল হিসাবে বিবেচনা করতে পারি। প্রায় ১২০০ সাল থেকে শুরু হয়ে গত শতাব্দীর ষাটের দশক এবং ১৯৭১-এর পূর্ব পর্যন্ত বাঙ্গালীর মধ্যে রাষ্ট্র চিন্তা বা সাধনা আর সেভাবে দৃশ্যমান নয়।
সুতরাং যখন ভারতবর্ষে বহিরাগত মুসলিম শাসনের পতন ঘটছে সেই কালে বহিরাগত ও বহিরাক্রমণকারী মুসলিম শাসন থেকে মুক্তির জন্য পাঞ্জাবে শিখ এবং মহারাষ্ট্রে মারাঠা উত্থান ঘটলেও বৃহৎ বঙ্গে তেমন কোনও ঘটনা ঘটে নাই। অথচ তখনও বৃহৎ বঙ্গে হিন্দুরা বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমনকি ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘকাল পর ১৮৭২ সালে প্রথম যে আদমশুমারী হয় তখনও বঙ্গ বা বাংলায় হিন্দুরা সংখ্যাগুরু এবং মুসলমানরা সংখ্যালঘু। আমার দৃঢ় ধারণা মোগল বা নওয়াবী আমলে বাংলায় হিন্দুরা ছিল বিপুলভাবে সংখ্যাগুরু। এর পরেও হিন্দু বাঙ্গালী রাষ্ট্র চিন্তা বা চর্চা কিছুই করে নাই। অথচ তখন সমগ্র উত্তর ও পশ্চিম ভারতে মুসলিম শাসন ভেঙ্গে পড়ছে। এটা অনুমান করা যৌক্তিক হবে যে, এমন একটা সময়ে বাংলার বহিরাগত মুসলিমদের অন্যতম নেতা এবং নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর ভারতবর্ষের ভূমিসন্তানদের অনিবার্য উত্থান থেকে বাঁচবার জন্য শেষ অবলম্বন হিসাবে আর একদল বহিরাগত ইংরেজের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে পলাশীর নাটক অনুষ্ঠিত হয়।
বাঙ্গালী হিন্দুরা কী করেছে? তাদের নেতৃত্বের প্রধান অংশই শরীক হয়েছে মীর জাফরের এই ক্ষমতার পালাবদলের নাটকে। অর্থাৎ হিন্দু কিংবা দেশজ বাঙ্গালী তখন রাষ্ট্রচিন্তা থেকে যোজন যোজন দূরে। সুতরাং পাঞ্জাবের শিখ কিংবা মহারাষ্ট্রের মারাঠাদের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের তথা বাঙ্গালীদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা তারা করে নাই। ইংরেজ শাসনকালে তারা হয়েছে একটা পর্যায় পর্যন্ত ইংরেজ শাসনের সহযোগী এবং সহযোগী হয়ে যতটা সম্ভব সুবিধাভোগী।
হ্যাঁ, ইংরেজ শাসনের একটা পর্যায়ে হিন্দু বাঙ্গালী সমাজে একটা জাগরণ হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ কাল পর্যন্ত সেটাতে রাষ্ট্র-চিন্তার কতটুকু ছিল? একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত প্রায় পুরোটাই ছিল সাংস্কৃতিক। রাজনীতি বা রাষ্ট্রচিন্তা বাদ দিয়ে শুধু ভাষা কিংবা সাহিত্য এবং সংস্কৃতি দিয়ে কি একটা সমাজ বা জাতি শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারে? সেটা যে পারে না হিন্দু বাঙ্গালী তার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। বিদেশী ব্রিটিশদের আশ্রয়ে তাদের যেটুকু অর্জন ছিল, ব্রিটিশদের বিদায়-কালে ১৯৪৭-এর বঙ্গভঙ্গের অঘাত সেটুকুকেও লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে।
এরপর বাঙ্গালী জাতির রাজনীতির ভরকেন্দ্র সরে এসেছে পাকিস্তানভুক্ত পূর্ব বঙ্গে তথা আজকের বাংলাদেশে। এটা এখানে আদৌ থাকবে কিনা বা এটা আবার পশ্চিম বঙ্গে সরে যাবে কিনা সেটা বলা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১-এ বাঙ্গালীর যে জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ পূর্ব বঙ্গে সংঘটিত হয়েছিল সেটাও যে শেষ বিচারে প্রকৃতপক্ষে বাঙ্গালীর জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ হিসাবে বিকশিত হয়ে উঠতে পারে নাই সেই সহজ সত্যটাই বুঝবার মত মানুষ কয়জন এ দেশে আছে? এতকাল যেটা চলেছে সেটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নামে গলাবাজী আর লুটপাট। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্কই নাই। ’৭১-এর যুদ্ধের পর যে রাষ্ট্র এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটা কতটা বাঙ্গালীর হয়েছে আর কতটা মুসলমানের হয়েছে সেটা নিয়ে কি এখনও সংশয় আছে? আসলে মুসলমানের আর একটা রাষ্ট্র হয়েছে। তবে সেটা বাঙ্গালী মুসলমানের। এর মধ্যে ধর্মুমক্তি, লোকবাদ, জাতীয়তাবাদ এসব খুঁজাকে কী বলব — মূর্খতা, নাকি প্রতারণা অথবা ভণ্ডামী? অথচ ষাটের দশকে এ দেশে বাঙ্গালী জাতির জন্য একটা ধর্মমুক্ত বা অসাম্প্রদায়িক এবং জন-গণতান্ত্রিক কিংবা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়বার প্রবল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
এগুলি বুঝবার তেমন কোনও চেষ্টা কি দেখা যায়? যে প্রজন্ম এ দেশে বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতি গড়েছিল ভুল-শুদ্ধসহ সেই প্রজন্মের সঠিক মূল্যায়নের তেমন কোনও চেষ্টাই এখানে দেখা যায় না। আসলে মুসলমান বাঙ্গালীর ভিতর থেকে শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের উত্থান ছিল সেটা। হতে পারে যে, বাঙ্গালী জাতির অগ্রযাত্রায় মুসলমান বাঙ্গালীর সেটাই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ অবদান। ভরকেন্দ্র হয়ত পুনরায় সরে যাবে পশ্চিম বঙ্গে। কী হবে সেটা সময় বলবে।
যাইহোক, আমার হয়ত একটা চাওয়া ছিল যে, সুষুপ্ত পাঠক বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিতে কলকাতা কেন্দ্রিক হিন্দু বাঙ্গালীর ভূমিকাকে গুরুত্ব দিলেও সেই সঙ্গে রাজনীতিতে হিন্দু বাঙ্গালীর তুলনায় মুসলমান বাঙ্গালী সমাজ থেকে আগত সামাজিক শক্তির ভূমিকাকে গুরুত্ব দিবেন। ফলে তিনি পূর্ব বঙ্গের মুসলমান বাঙ্গালী সমাজ থেকে ধর্মমুক্ত ব্যক্তি এবং সামাজিক শক্তির ভূমিকাকে আলোচনায় আনবেন। হয়ত এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনেক কিছু আনা সম্ভবও নয়। সুতরাং তার আলোচনায় আসেন না এই বাংলার আরজ আলী মাতুব্বর কিংবা আসেন না অধ্যাপক আহমহদ শরীফও। তাই আসে না সেই কালের পটভূমিতে বাঙ্গালী মুসলিম সমাজের মত একটা চূড়ান্ত রকম পশ্চাৎপদ সমাজের ভিতর থেকে ষাটের দশকের ধর্মবিশ্বাস থেকে মুক্ত এবং সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ বামপন্থী তরুণ প্রজন্মের বিরাট উত্থান। আসে না মওলানা ভাসানীর মত এক বিস্ময়কর ধর্মীয় নেতার উত্থান, যার ছায়ায় বেড়ে উঠেছিল পঞ্চাশ ও ষাটের দশক জুড়ে এ দেশে ধর্মমুক্ত বামপন্থী আন্দোলন বিশেষ করে ষাটের দশকের বিপ্লবী প্রজন্ম।
শুধু অধ্যাপক রাজ্জাককে দেখলে হবে কেন, অধ্যাপক শরীফকেও আমাদের দেখতে হবে। হ্যাঁ, আপাত দৃষ্টিতে রাজ্জাক সফল। কিন্তু তা-ই কি? রাজ্জাকরা সফল হলে কি পাকিস্তান ভাঙ্গত, ষাটের দশকে আমাদের প্রজন্মের উত্থান হত? হ্যাঁ, এক অর্থে রাজ্জাকরা সফল। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের নেতৃত্ব চলে যায় শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগের হাতে। আজকের বাংলাদেশ তো তাদেরই আদর্শ এবং কর্মকাণ্ডের ফসল।
অবশ্য শুধু অভ্যন্তরীণ উপাদান বা ফ্যাক্টরগুলিকে দেখলে হবে না, বহিঃশক্তির ভূমিকাকেও হিসাবে নিতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে চলে আসে ভারতের ভূমিকা। ভারতের ভূমিকাকে খুব গৌণ বিবেচনা করে পূর্ব বঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতির কোনও কিছুকে কি ব্যাখ্যা করা যাবে?
যার সাহায্যেই হোক বাংলাদেশে জয় হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবের। তাই এখানে ষাটের দশকের বিপ্লবী তথা বামপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী ধারা থেকে আগত পরাজিত আহমদ ছফারা মুসলিম জাতীয়তাবাদের ধারার দার্শনিকে পরিণত হয়। ষাটের দশকের প্রজন্মের এটাও তো এক পরিণতি! কী করুণ পরিণতি! যেমন করুণ পরিণতি হয়েছে আমার বিবেচনায় ষাটের দশকের প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা কাজী জাফর আহমদের। ষাটের দশকের অত বড় সম্ভাবনাময় এক বামপন্থী তরুণ নেতা অধঃপতিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত এরশাদের মত এক ইসলামী সাম্প্রদায়িক ও নিকৃষ্ট সমর-নেতার পদলেহী অনুচর হলেন!
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী কালের সমাজের প্রতিষ্ঠার জায়গায় জাঁকিয়ে বসা ষাটের দশকের প্রজন্মের দুই নক্ষত্রের কথা বলতে গিয়ে আমার এই মুহূর্তে দুইজনের কথা মনে হল — একজন কাজী জাফর আহমদ, অপর জন আহমদ ছফা। দুইজনকেই আমি কাছে থেকে দেখেছি। তবে ছফাকে যতটা কাছে থেকে দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশী কাছে থেকে দেখেছি কাজী জাফরকে। তিনি ছিলেন আমার সিনিয়র এবং নেতা। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসাবে এক সময়ে কাজী জাফরের সঙ্গে কিছুকাল ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। এক উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলে (এসএম হল) থাকায় সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ার সুযোগও ছিল।
যাইহোক, আমাদের প্রজন্মের এই দুই নক্ষত্রকে আমি যথেষ্ট ঘনিষ্ঠভাবে দেখবার সুযোগ পেয়েছি। এদেরকে এই দেখা থেকে আমি এই সমাজের সমস্যাগুলিকেও বুঝতে চেষ্টা করেছি। আমি নির্মোহভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছি কেন এমন হয়। কেন এভাবে এই মানুষগুলি বদলে গেল? এটা তো একদিনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে হয়। সেই দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নিয়ে কখনও আমি কাছে থেকে এবং কখনও দূরে থেকেও বুঝতে চেষ্টা করেছি। শুধু যেটা করেছি সেটা হল সুবিধার আশায় তাদের দলে ভিড়ে না যাওয়া। এক সময়ে চিরতরে দূরে সরে গেছি। শুধু মাঝখানে রয়ে যায় অনেক অনেক স্মৃতি। আর থাকে কিছু উপলব্ধি, যা আসে এইসব অভিজ্ঞতা থেকে। আমি বুঝেছি সমস্যাটা শুধু ব্যক্তির নয়, সমাজেরও। বরং সমাজের সমস্যাটাই সবচেয়ে বেশী। তাই যারা বিদ্যমান সমাজে প্রতিষ্ঠা এবং স্বীকৃতি খোঁজে তাদের অধঃপাতটা এভাবে হয়। অর্থাৎ আমরা একটা অধঃপতিত ও নিকৃষ্ট সমাজের বাসিন্দা।
তাহলে করণীয় কী? সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্য না থাকলে বিদেশে চলে যাবার পথ খোঁজা এবং পারলে চলে যাওয়া। আর এক হল সমাজের গড্ডল প্রবাহে গা ভাসানো। আর ভিন্নটা হল সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাওয়া। সেটা নিজের সামর্থ্য এবং অবস্থা অনুযায়ী হলেও। সুষুপ্ত পাঠকের মত যারা এখন অনলাইনে লিখছেন এবং ইদানীং অনেকে বলছেনও পরিবর্তনের চিন্তা না থাকলে তারা এ কাজ করতেন না্। তারা যেখানেই থাকুন এ সমাজের প্রতি তাদের একটা অঙ্গীকার বা দায়বদ্ধতা আছে বলেই তারা এভাবে লিখছেন বা বলছেন এটা আমরা ধরে নিতে পারি। তাহলে তাদের কিন্তু সমাজের পরিবর্তনের সমস্যাগুলিকেও বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
আমার মনে হয় বাংলাদেশের পরিবর্তনের সমস্যা বুঝবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি বিশেষ করে রাজনীতির সমস্যা বুঝা। আজকে যারা বংলাদেশের ধর্ম বিশেষত ইসলামের সমস্যা বুঝার উপর সমগ্র মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছেন তারা যদি বাংলাদেশের রাজনীতির সমস্যা বুঝতে না পারেন তবে এ দেশের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনও সঠিক দিশাই দিতে পারবেন না। বিশেষ করে ইসলামকে বুঝার ক্ষেত্রে রাজনীতি বুঝাটা খুবেই জরুরী। কারণ এটা বুঝা অত্যাবশ্যক যে ইসলাম রাজনৈতিক ধর্ম।
এ হল একদিক। অন্যদিক হল পাকিস্তান কালে পূর্ব বঙ্গের স্বাধীনতা আন্দোলন একটা নির্ভেজাল ভাষা কিংবা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফলে গড়ে উঠে নাই, বরং এর মূলে ক্রিয়াশীল ছিল রাজনীতি। এটা ঠিক যে, ভাষা চেতনা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের বিকাশের জন্য ভিত্তি যুগিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করে বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার উন্মেষ সাধনের জন্য সেটুকুই যথেষ্ট ছিল না। এখানে ধর্ম থেকে মুক্তির জন্য একটা দর্শনেরও প্রয়োজন ছিল। সকল ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা নিয়েই মার্কসবাদ সে কালে সেই প্রয়োজন যতটা হোক পূরণ করেছিল। বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গড়ে তোলা রাজনৈতিক আন্দোলনের ফল হচ্ছে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ। সুতরাং বাংলাদেশের বাঙ্গালীর সমাজ ও জাতির সমস্যাগুলি বুঝতে গেলে পাকিস্তান কালে গড়ে উঠা জাতীয়তাবাদী এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃতি এবং সমস্যাগুলিকে বুঝতে হবে। এটা তো মূলত রাজনীতির সমস্যা। রাজনীতির এই সমস্যা বুঝতে গিয়ে ধর্মের সমস্যাও যে বুঝতে হবে তাতে সন্দেহ নাই্। কিন্তু সেই সঙ্গে বাস্তব রাজনীতির সমস্যাগুলিকে যদি বুঝা না যায় তবে কী করে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে?
আজ যারা ধর্মের বিরুদ্ধে লিখছেন বা বলছেন তাদের অনেকের মনে এই ধারণা সম্ভবত কাজ করে যে তারাই এ দেশে ধর্মের সমস্যা সম্পর্কে প্রথম বলছেন। অথচ এ দেশে ধর্ম থেকে মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলিম সমাজের ভিতর থেকেই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এক প্রবল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সেখানে সমাজতন্ত্র বা কম্যুনিস্ট রাজনীতি কিংবা মার্কসবাদ এক নির্ধারক বা উদ্দীপনা সঞ্চারী ভূমিকা পালন করেছিল। এই রাজনীতিতে অনেক ভুল ছিল। সেই রাজনীতি ব্যর্থও হয়েছে। তা হোক, আজ যারা ধর্ম থেকে মুক্তির চিন্তা নিয়ে লিখছেন বা বলছেন তাদের পথিকৃৎও কিন্তু পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের সেই বিপ্লবীরা। মনে রাখতে হবে তাদের হাতে আজকের মত অনলাইন মাধ্যম ছিল না। ফলে ছিল না ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব, ইত্যাদি। তখনও আজকের মতই পুস্তক বা পত্রিকার মাধ্যমে ধর্ম বিষয়ক আলোচনা কিংবা মতামত প্রচার করা ছিল বিপজ্জনক এবং প্রায় অসম্ভবও। ইউরোপ বা পাশ্চাত্য থেকে আসা কিছু ইংরাজী গ্রন্থ আর পশ্চিম বঙ্গ থেকে আসা কিছু বাংলা গ্রন্থ ছিল সে কালে ধর্ম বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা জানবার মূল মাধ্যম। আর কিছু মৌখিক আলোচনা বা তর্ক-বিতর্ক ছিল সে কালে ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান পদ্ধতি। হ্যাঁ, সে কালে যত সীমিত পরিসরে হোক ইসলামের বিরুদ্ধে একটা প্রবল জাগরণ ঘটেছিল। সে কালের বাস্তবতায় এটা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে অবলম্বন করেই যে দাঁড়াবে সেটা একান্ত স্বাভাবিক। সেই রাজনীতি ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি মনে করি সেখানকার অভিজ্ঞতার শিক্ষাকে বাদ দিয়ে আগামী দিনের ধর্ম থেকে মুক্ত রাষ্ট্র কিংবা সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে পাব তাহলে আমরা ভুল করব। সফল হোক, ব্যর্থ হোক যারা এ দেশে ধর্ম থেকে মুক্তির আন্দোলনের পথিকৃৎ তাদের অভিজ্ঞতাকে বাদ দিয়ে নূতন করে কিছু করার চেষ্টাটা হবে পণ্ডশ্রম মাত্র। যেমনই হোক যে ভিত্তিটা তৈরী হয়ে আছে নূতন পথে যাত্রা করতে হলে সেখান থেকেই যাত্রা করতে হবে। বাস্তবে হয়ত সেই ভিত্তির বহুকিছুকেই বাদ দিতে হবে। তেমন কিছু বাস্তবে নাইও। তাতে কী? অভিজ্ঞতাটা যাবে কোথায়? কিংবা তার শিক্ষা এবং প্রেরণা, সেটা কি এতই ফেলনা?
সুতরাং আমাদেরকে নূতন করে দৃষ্টি দিতে হবে একাত্তরের দিকে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের নূতন এবং ভিন্ন একটা বয়ান দিতে হবে। এটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বাইরে দেশের ভিতর থেকে জনগণের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূ্র্তভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর যুদ্ধের পুরোটা সময় ভারতের আশ্রয়ে থাকা আওয়ামী লীগের যুদ্ধের বয়ান নয়। তার বাইরের স্বাধীনতা যুদ্ধের বয়ান। আর সেটা করতে গেলে পর্যালোচনায় চলে আসবে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশ ও বিস্তারের ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ কালটা, যে কালটাতে প্রায় এককভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজনীতি গড়ে তুলেছিল ঐ দুই দশকের বামপন্থী তরুণ প্রজন্ম। যাদের হাতে চলে যাক একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ওটা ঐ রাজনীতিরই ফসল।
(৩)
আমার মনে হয়েছে এ দেশে ধর্মীয় সমস্যা নিয়ে যারা অনলাইনে আলোচনা করছেন ২/১ জন ব্যতিক্রম ছাড়া তারা এ দেশের রাজনীতির সমস্যার গভীরে খুব কমই যেতে চান। রাজনীতির প্রতি তাদের আগ্রহ নাই বলে এ দেশে ধর্মের শক্তিবৃদ্ধির মূল কারণগুলিকে যেমন তারা বুঝতে চান না তেমন সমাধানও তারা দিতে পারেন না। একই কারণে তারা ’৭১-এর সমস্যাও বুঝতে চান না। অনেকের হয়ত তখন জন্ম হয় নাই। সমস্যা বুঝাটা তো তার জন্য বাধা হতে পারে না। আসলে অধিকাংশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমস্যা নিয়ে কোনও আগ্রহই নাই। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মার্কা কিছু গৎবাঁধা কথা বললেই হল? তাদের বয়ানে আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত বিশ্লেষণমূলক আলোচনা যেমন প্রায় থাকে না তেমন থাকে না ভারত সংক্রান্ত নির্মোহ আলোচনাও। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে রাষ্ট্রের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই ভারত-রাষ্ট্রের ভূমিকাটা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের আজকের পরিণতির বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনার কি কোনও অর্থ হয়?
এটা কি বুঝতে চাওয়া হয় যে, ১৯৭১-এ ভারত কোনও অবস্থাতেই পূর্ব বঙ্গে একটা প্রকৃত ধর্মমুক্ত এবং উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা চায় নাই? ভারত নিজে যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের রেখে যাওয়া উপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্র একইভাবে পূর্ব বঙ্গের বুকেও তেমন একটা রাষ্ট্র চেয়েছিল। অন্যদিকে ভারত উপর তলার রাষ্ট্রচর্চায় ধর্ম থেকে মুক্ত কিছু বিধি-বিধান অনুসরণ করলেও সমাজের ভিত্তিমূলে ধর্মকে সংরক্ষণ করে চলেছে। ভারতে সেই ধর্ম হচ্ছে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম হিন্দুধর্ম। সুতরাং এখানে এমন কোনও রাষ্ট্র ভারতের চাওয়ার কারণ নাই যা হবে ধর্মমুক্ত।
যাইহোক, ভারতের প্রয়োজন ছিল তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী এক অখণ্ড পাকিস্তানকে ভেঙ্গে তুলনায় দুর্বল দুই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা। এ কাজে আওয়ামী লীগ ছিল ভারতের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হাতিয়ার। সুতরাং যুদ্ধে এভাবে লীগকে পৃষ্ঠপোষকতা দান। মানলাম তখন কংগ্রেস ছিল, এখন বিজেপি। কিন্তু ভারত তখনও যা ছিল এখনও তা আছে। বরং তা এখন আরও বেশী ধর্মের দিকে ঝুঁকেছে। সুতরাং যারা এ দেশে ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের কাছ থেকে বেশী প্রত্যাশা করেন তারা হতাশ হবেন। সবচেয়ে বড় কথা ভারতের বহু ভাষা ও জাতির মানুষদের মধ্যে ঐক্য রক্ষার সবচেয়ে বড় আদর্শিক বন্ধন এখন পর্যন্ত হয়ে আছে ধর্ম — ভারতের প্রেক্ষিতে হিন্দু ধর্ম। যেহেতু আর কোনও লোকবাদী বা ধর্মমুক্ত আদর্শিক শক্তি সেখানে নাই যা ভারতকে এক রাষ্ট্রে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে সেহেতু রাষ্ট্র কোন না কোনভাবে ধর্মের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে বাধ্য। একদিকে উপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্র, অপর দিকে সমাজের ভিত্তিমূলে ধর্মের নির্ধারক ভূমিকা ভারত-রাষ্ট্রকে স্বৈরতা, বর্বরতা, পশ্চাৎপদতা ও রক্ষণশীলতায় আবদ্ধ করে রাখতে বাধ্য। ভারতের দিকে দৃষ্টি দিলে কী মনে হয়? পাকিস্তান বা বাংলাদেশের চেয়ে কি খুব একটা উন্নত সমাজ বা রাষ্ট্রের চিত্র তা দেয়? পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলির পাশে ভারতকে রাখলে কোন সত্য সামনে আসে?
সবশেষে বলতে চাই বাংলাদেশে একটি লোকবাদী তথা ধর্মমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে কোনও বহিঃশক্তির প্রতি মোহ না রেখে আমাদেরকে স্বাধীনভাবে অগ্রসর হবার চিন্তা করতে হবে। তাতে যেটুকু অগ্রগতি হবে সেটুকুই হবে স্থায়ী। আর যেটা টিকে থাকে তার উপরই রচিত হয় ভবিষ্যতের নির্মাণ।
সুষুপ্ত পাঠকের লেখা আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তার কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে, আছেও। তা সত্ত্বেও আমি তার বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে বুঝতে চেষ্টা করি। তার যে লেখার সূত্র ধরে আমি লিখলাম সেটা আমাকে বেশ কিছু বিষয়ে নূতন করে ভাবতে উৎসাহিত করেছে। বিশেষ করে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এবং আহমদ ছফা সংক্রান্ত তার মূল্যায়ন এই আলোচনায় যুক্ত হতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অবশ্য আমার আলোচনায় বহু কিছুর ইঙ্গিত থাকলেও সেগুলি বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবী রাখে। প্রসঙ্গক্রমে হয়ত ভবিষ্যতে সেসব বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলব। এখনকার মত এইটুকুই।
২৫-২৬ নভেম্বর, ২০১৯