লিখেছেনঃ ইমাম গাজ্জালী, আপডেটঃ April 19, 2023, 12:00 AM, Hits: 1741
এক
ইতিহাস একই ব্যক্তি বা একই দলকে বড় কোনো ঘটনা সংঘটনে দুইবার সুযোগ দেয় না। হয়ত চলার পথে হোচট খেতে খেতে তারা পোক্ত হতে পারে, নানা বাক নিতে পারে, কিছুটা সময় নিতে পারে। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে, লালনের ভাষায় সময় গেলে আর সাধন হয় না। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে, শেখ মুজিব যখন বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারার প্রতিশ্রুত পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জায়গা থেকে সরে আসলেন, তিনি যখন হাল ছেড়ে দিলেন, ব্রিটিশের সৃষ্ট ও পাকিস্তানের পরিত্যক্ত রাষ্ট্র ও সংবিধানকেই যখন একটা স্বাধীন দেশে খাড়া করতে গেলেন, রুশ-ভারতের অসম্ভব প্রভাব এড়াতে পর্যায়ক্রমে ইসলামি রাজনীতির দিকে ঝুঁকছিলেন ঠিক তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুত গণতান্ত্রিক পথেই দেশের অভিযাত্রাকে জারি রাখতে ইতিহাস জাসদকেই একটি সুনিদ্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছিল। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারার প্রগতির রিলে রেসের কাঠি এগিয়ে নেওয়ার কর্তব্য যখন জাসদের সামনে দলটির সামনে ইতিহাসের কালপর্বে প্রবেশের অপার সম্ভাবনার সুযোগ, ঠিক তখন নেতৃত্বের বালখিল্যতা, স্বতস্ফূর্ততাবাদ, রাজনৈতিক অস্পষ্টতা ও হঠকারিতা কেড়ে নেয় জাসদের সেই কর্তব্য পালনের সক্ষমতা। সুযোগটি হাতছাড়া হয়, হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে জাসদ। এসব কি জাসদ নেতৃত্বের ইচ্ছাকৃত এজেন্ডা নাকি ভ্রান্তি, এটা অদৃশ্য শক্তির ইশারা নাকি অপরিপক্বতা, এসব প্রশ্ন নিয়ে অনেকের মধ্যেও সংশয় জাগছে। তারা বলতে চাইছেন, আদৌ কি জাসদ স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্বকারী শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে চেয়েছে, নাকি একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে, অপার সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করে এবং নিজের ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে গণবিরোধী সাবেকি ধারাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে গেছে। জাসদ সৃষ্টির অর্থশতক পর এমন অনেক প্রশ্নের অনেক সংশয়ের নির্মোহ জবাব খোঁজা দরকার। দেখা গেছে, দলটির সামনে ক্ষমতা দখলের যে সুযোগ ছিল, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরপরই তা মিলিয়ে যেতে থাকে, ক্রমন্বয়ে হাত ছাড়া হয়। দেশে সামরিক শাসন শুরু হয়। দলে ভাঙন শুরু হতে থাকে, জাসদ দিকভ্রান্ত হতে থাকে। শুরু হয় দলের বিপর্যয়। তারপর যা কিছু দৃশ্যমান তা কেবলি জাসদের ব্যর্থতা, স্বপক্ষ ত্যাগ ও বিচ্যুতির ইতিহাস। বিচ্যুত ও স্বপক্ষত্যাগী জাসদ হতে থাকে প্রতিক্রিয়ার সস্তা জ্বালানি। তার ভাঙনপ্রক্রিয়া এখনও চলমান। তার প্রতিটি খণ্ড হিসেবে নিলে তা এক ডজনের কম হবে না। দু’একটি অংশ বাদে বিভক্ত সকল অংশই জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও, ঝাঁকে ঝাঁকে বহু নেতাকর্মী এসব প্রতিক্রিয়াশীল দলে ভিড়তে থাকেন। বিএনপি ও নব্বই পরবর্তী আওয়ামী লীগ গঠনে বিচ্যুত জাসদ নেতাকর্মীদের বড় ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। এছাড়া বহু নেতাকর্মী দেশত্যাগ করেন, অনেকে গড়ে তোলেন এনজিও। সেই সঙ্গে অবিভক্ত জাসদের লড়াকু মেজাজ দলটি হারাতে থাকে। ততদিনে দেশে ভিন্ন প্রেক্ষাপট আবির্ভূত হয়।
৭২-৭৫ এর জাসদ বাংলাদেশে অপ্রতিরোধ্য তারুণ্যের শক্তির উদ্বোধন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে রাজনীতিতে বাংলাদেশে সাধারণত বুর্জোয়া দল বনাম বুর্জোয়া দল মুখোমুখি থাকে। বুর্জোয়া বনাম বামপন্থী কমিউনিস্টরা কখনই সরাসরি মুখোমুখি ছিল না, কখনও প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারেনি। বামপন্থী হিসেবে বিবেচনায় নিলে এটা বলাই যায় যে, উপমহাদেশের মধ্যে জাসদই একমাত্র দল, যা শাসকশ্রেণির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটা এমনই এক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছিল যে তারা নানা সীমাবদ্ধতা সহ রাষ্ট্রকেই চ্যালেঞ্জ করতে গিয়েছিল। শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ে ব্যাপৃত অপরাপর দলের মধ্যে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি। ষাটের দশকে পূর্ববাঙলায় যে বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের উম্মেষ ঘটেছিল, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তা জাসদের খাতেই প্রবাহিত হয়। সুপরিকল্পিত কিনা জানি না, জাসদ নেতৃত্ব সেই প্রবাহকে বিনষ্ট করে, অপার সম্ভবনাকে ধ্বংস করে, ক্ষমতা দখলের সুযোগকে হাতছাড়া করে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন সমাজ বিনির্মাণের একটি স্বপ্নময় প্রজন্মকে তিলে তিলে ধ্বংস করে ফেলেছে। পরিণতিতে বাংলাদেশ ফিরে গেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি থেকে, বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ভারত পছন্দ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানে। একে মেনে নিতে না পেরে ব্যর্থ জাসদ হয়ে উঠেছে নৌকার মাঝিমাল্লা। এজন্য তৈরি করেছে ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার’ নানা রাজনৈতিক বিবরণী। অথচ জাসদ বাংলাদেশের রাজনীতির ঠিকানাই হতে পারত, বাংলাদেশের রাজনীতির দর্শনের দিশা দিতে পারত। পরিবেশবান্ধব ও গণবান্ধব শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও উন্নয়নের ভিত্তি দাঁড় করাতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। কেন হয়নি? তার কারণ নিহিত আছে দলটির রাজনীতি ও নেতৃত্বের মধ্যে। সেই কারণের তত্ত্বতালাশ করা দরকার।
জাসদ হল বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এগিয়ে থাকা ধারা। ষাটের দশকে ছাত্রলীগের মধ্যে দুটো ধারা ক্রিয়াশীল ছিল। একটা স্বাধিকারপন্থী, অপরটি স্বাধীনতাপন্থী। জাসদ হল, ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী ধারার সাংগাঠনিক প্রকাশ। তবে তাদের সাথে স্বাধিকারপন্থীদের দ্বন্দ্ব কখনো বিরোধাত্মক কখনো মিলনাত্মক ছিল। তবে অধিকাংশ সময় সেটা মিলনাত্মকই ছিল, দীর্ঘদিন ধরে চলা সেই দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত আর মিলনাত্মক থাকেনি। স্বাধীনতার পরপরই ভাগ হয়ে গেছে। স্বাধীনতার আগে উভয় অংশই ছিল সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম বিরোধী। ষাটের দশকে ছাত্র-তরুণদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ছিল ছাত্র ইউনিয়ন। তারা সমাজতন্ত্রের কথা বলত। তাকে মোকাবেলার জন্য ছাত্রলীগ সমাজতন্ত্র নিয়ে নানা ধরণের ঠাট্টা-মশকরা করত। তখন তাদের শ্লোগান ছিল, ‘হো হো মাও মাও, ব্যাঙ খাও চীন যাও’, ‘রুশ ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার-সাবধান’ ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাড়ির আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। যা ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের জন্য ছিল অস্বস্তিকর। কিন্তু আতঙ্কটা ছিল অন্যখানে। কোনোক্রমে যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নকশালবাড়ি মিলে যায় তো আধিপত্যবাদী আগ্রাসনবাদী ভারতের জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ। এ ব্যাপারে ইন্দিরার সরকার খুব সতর্ক ছিল। ভারতে ট্রেনিং নিতে যাওয়া যুবকদের কমিউনিজম বিরোধী দীক্ষা দেওয়া হত বিশেষত মুজিব বাহিনীর সদস্যদের। কমিউনিজম বিরোধিতা ভারতীয় প্রশিক্ষণ সূচিতে ছিল বলে জানা যায়। তারা সেই ‘শিক্ষা’ মুক্তিযুদ্ধকালে এদের একাংশ কাজে লাগিয়েছেন বলে জানা যায়। মুজিব বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম বিএলএফ। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত দেশে প্রতিরোধ যুদ্ধ জারি রেখেছিল কমিউনিস্টরা, সুনিদিষ্টভাবে চীনাপন্থী ধারার কমিউনিস্টরা। কিন্তু বিএলএফের যোদ্ধারা দেশে আসার পর তাদের পক্ষে আর মাঠে থাকা সম্ভব হয়নি। দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বিরোধাত্মক। তাদের অনেকের মতে ‘ভারত থেকে যারা আসছেন তারা একটি রাষ্ট্রের ভ্রূণ, একটি রাষ্ট্র। দেশের মধ্যে থেকে যে সকল কমিউনিস্টরা যুদ্ধ করছেন, তারাও একটি রাষ্ট্রের ভ্রূণ। সুতরাং ভারত ফেরত যোদ্ধারা দেশের ভেতর ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার এসব উপাদান রাখবেন কেন? মুজিব বাহিনীর লোকেরা ঠিক কাজই করেছেন।’
দুই
১৯৭০ সালের ১১-১৬ আগস্ট ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় নিউক্লিয়াসের সদস্য স্বপন কুমার চৌধুরী ‘স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ এর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। শক্তিশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের প্রভাবে ওই সময়ে ছাত্র তরুণদের মধ্যে সমাজতন্ত্রের যে দারুণ জনপ্রিয়তা ছিল, তার প্রভাব এড়াতে পারেনি সমাজতন্ত্র নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা সংগঠন ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী। সংগঠনটির নেতা স্বপন চৌধুরীর ‘স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ প্রস্তাবে ছাত্রলীগের ৪৫ সদস্যের মধ্যে ৩৬ জন সমর্থন করেন, আর সমর্থন করেননি ৯ জন। এতে অস্বস্তি তৈরি হয় সংগঠনে। সভাপতি নূরে আল সিদ্দিকী ছিলেন প্রস্তাবের বিপক্ষে। অবস্থা প্রতিকূল দেখে তিনি সভা মূলতবী রেখে ৩২ নাম্বারে শেখ মুজিবের কাছে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। সেখানে যা ঘটে তার বিবরণ পাওয়া যায় মহিউদ্দিন আহমেদের এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল বইয়ে। সেটা এই রকমের :
শেখ মুজিব সব শোনেন, তিনি একটু বিব্রত হন। বদিউল আলম বললেন, ‘আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রস্তাব পাশ করেছি।’ উত্তেজিত তরুণ তুর্কিদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুজিব বলেন, স্বাধীনতা চাস ভালো, কিন্তু মিটিংয়ে রেজ্যুলেশন দিয়ে তো স্বাধীনতা হয় না! গ্রামে যা, কাজ কর। এসময় রফিক পাশ থেকে শ্লোগান দিয়ে ওঠে। ‘কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ রফিক ছাত্রলীগের পুরনো কর্মী। অল্প বয়সে জেল খেটেছে। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে জেল থেকে। শার্টের বুকে মাও সে তুঙের একটা মুখ ক্লিপে এঁটে রাখত। সেই থেকে তার নাম লিটল কমরেড। রফিকের শ্লোগানে শেখ মুজিব অসন্তষ্ট হন। বলেন, ‘খবরদার এই শ্লোগান দিবা না। এটা কমিউনিস্টদের শ্লোগান।’ চিশতি খেপে যান। তিনি শেখ মুজিবের মুখের সামনে দুই হাতের বুড়ো আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেন, ‘আপনি শ্রেণিসংগ্রামের কী বোঝেন?’ শেখ মুজিব হতভম্ব হয়ে যান। এই প্রজন্মকে তিনি চেনেন না। তিনি শেষে বললেন, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোরা যা। সিরাজের সঙ্গে আমার কথা হবে।’ পৃষ্ঠা. ৬২
নেতাদের কাছে শোনা গেছে, শেখ মুজিব ওই প্রস্তাব উত্থাপনকারীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের জন্য সিরাজুল আলম খানকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সিরাজুল আলম খান সেই নির্দেশ কার্যকর করার সময় পাননি। ততদিনে দেশে স্বাধীনতার ঢেউ আছড়ে পড়ে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। কিন্তু তখন সেটা কার্যকর করতে পারেননি। যুদ্ধোপূর্বকালে সমাজতন্ত্রের প্রস্তাব উত্থাপনকারীকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করতে না পারলেও, যুদ্ধ শেষেই তাকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর বিষয়টি এখনও ধামাচাপা পড়ে আছে, স্বপন চৌধুরীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটন দাবি কেউ উত্থাপন করছেন না। কেন করছেন না, তার কারণ আমাদের অজানা। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনের সকাল ৯টা পর্যন্ত তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার আগে তাকে আটক করে পাক হানাদার বাহিনী। জানা যায়, তাকে প্রাণ দিতে হয় ওই মুজিব বাহিনীর একাংশের হাতেই। এই মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ এর বড় অংশই গড়ে তোলে জাসদ। রহস্যজনকভাবে কোনো অংশই মুখ খোলে না।
এখন প্রশ্ন হল, কিছু দিন আগে যারা সমাজতন্ত্রীদের বিরোধিতা করত, তাদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করত, যুদ্ধকালীন কমিউনিস্ট নিধনের অভিযোগ রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে, যারা সমাজতন্ত্রের প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য রোসানলে পড়া নিজ সংগঠনের নেতার (স্বপন চৌধুরীর) হত্যার বিচার দাবি করে না। তারাই দুই দিনের মাথায় হঠাৎ করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী বনে গেলেন!
স্বাধীনতার পরপর প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন তাদের কথার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, যেমনটা দিতেন স্বাধীনতার আগে। তখন মুজিব বাহিনীর ওই অংশ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তারাই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের শ্লোগান দিয়ে জাসদ গঠন করেন। এখন প্রশ্ন হল, জাসদ কি আদৌ সমাজতন্ত্রের জন্য বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী হয়েছিলো, নাকি শেখ মুজিবকে বিরোধিতা করার জন্য নিছক শ্লোগানটিকে ব্যবহার করেছিলো? সমাজতন্ত্র বিরোধিতা এবং হঠাৎ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী হওয়া-উভয় ঘটনার পেছনে কাজ করেছে নিজেদের অস্তিত্ব শক্তি ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। কারণ শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পরপরই তারা প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণা থেকে সরে আসে।
জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণা ছিল : সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিক সর্বহারা জনতা, মেহনতী মধ্যবিত্ত ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী এবং যুব শক্তির মধ্য হতে গড়ে ওঠা নতুন নেতৃত্বের অধিকারী শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের উপরে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা অর্পণ এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে শ্রেণিহীন শোষণহীন কৃষকশ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সূত্র : জাসদের ঘোষণাপত্র
আর শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠাকালীন এ ঘোষণা থেকে সরে এসে এর বদলে তারা শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবীর প্রতিনিধিত্বমূলক দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের শ্লোগান তোলেন।
তিন
হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার রাজনৈতিক লাইনের নেতা ছিলেন না। পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে থেকে রাজনীতি করাই ছিল তার কৌশল। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তার শিষ্য। সেই গুরুকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন বলেই শেখ মুজিবুর রহমান এতবড় বিশালকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পেরেছিলেন।
অপরদিকে, সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে গভীরভাবে ধারণ করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। ওই সময় শেখ মুজিবকে এভাবে আর কেউ ধারণ করতে পারেনি।
শেখ মুজিবুর রহমান যেমন তার রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দীকে অতিক্রম করার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। অপরদিকে, সিরাজুল আলম খান তার রাজনৈতিক গুরু শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিক্রম করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, তাকে পায়ে দলে গেছেন। ইতিহাস নির্দিষ্ট কাজ বাদ দিয়ে তিনি একটা রহস্যের বাতাবরণ তৈরি করে, তার ঐন্দ্রজালিকতার মধ্যে লুকাতে গেছেন। এই রহস্য ও ঐন্দ্রিজালিকতাকে রীতিমত উপভোগ করতেন তিনি। গুরুকে অতিক্রম করা তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলাকালেও শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার মধুর সম্পর্কে এতটুকুও চিড় ধরেনি। জাসদ তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়নি, তারা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে গিয়েছিল মাত্র। আমাদের মতে জাসদের রাজনীতির অসফলতার এটাই মূল কারণ।
কিন্তু সত্যটা হল এটাই যে, জাসদ টিকলে আওয়ামী লীগ টিকত না। জাসদ সফল হলে আওয়ামী লীগের পরিণতি হত মুসলিম লীগের মত। একটা বিপ্লবী প্রজন্মকে ধ্বংসের ধারাবাহিকতায় জাসদ নিজের মৃত্যু ঘোষণা করেছে। আর এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কারণ। লড়াকু তেজবিহীন ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন জাসদকে নিজ স্বার্থেই টিকিয়ে রাখছে আওয়ামী লীগ। কারণ অনেক রাজনৈতিক বিবরণী বলার জন্য আওয়ামী লীগের লোক দরকার। সেটাই বিশ্বস্ততার সঙ্গে করার জন্য এমন আর কাকে পাওয়া যাবে?
এই জাসদকে নিয়ে অনেকে স্বপ্ন দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন, জাসদ আবার জাগবে। আবার মরা গাঙে জোয়ার আসবে, আবার দাপিয়ে বেড়াবে রাজপথ। আগের মত শক্তি নিয়ে জনতার সামনে আবির্ভূত হবে। সেটা আর সম্ভব নয়। এই লেখার পয়লাই বলা হয়েছে, ইতিহাসের একই ঘটনা দুইবার ঘটে না। একই ব্যক্তির দুইবার আবির্ভাব হয় না। এখন প্রশ্ন হল, জাসদ কি আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? জাসদের উত্থান কি সম্ভব?
এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব ‘না’। সেটা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। জাসদ বাসদ নামে যাবতীয় সংগঠন/দল একত্রিত হলেও সেটা সম্ভব না। যদিও এসব সংগঠন/দলের এক হওয়াও আর সম্ভব না। সোজা কথায় জাসদ নামে কোনো সংগঠনের আর উত্থান সম্ভব নয়। বণিক বার্তা পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে জাসদের প্রতিষ্ঠার প্রধান ব্যক্তিত্ব সিরাজুল আলম খান বর্তমানে বিভক্ত অবস্থায় জাসদ নামে ক্রিয়াশীল আ স ম আব্দুর রব, হাসানুল হক ইনু ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা অনেক কিছু করেছেন। আ স ম আব্দুর রব এখনো আছেন। আশির কাছাকাছি বয়স। তিনি এখন আর কী করতে পারবেন? যা করে গেছেন যথেষ্ট।’
জাসদের উত্থান যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কি সব শেষ, এত রক্তক্ষয়, এত ত্যাগ, এত লড়াই, এত রক্তঘামশ্রম সবই গরলভেল! সবই বৃথা? জাসদ রাজনীতি কি ব্যর্থ? সবই কি শেষ হয়ে গেছে?
না, সব শেষ হয়নি। কোনো আত্মত্যাগই ব্যর্থ নয়। জাসদ নামে দল নিঃশেষ হতে পারে, জাসদ রাজনীতি ব্যর্থ নয়। এই প্রশ্নের তত্ত্বতালাশ করা দরকার।
আমরা জানি দ্বন্দ্ব তত্ত্বেও কয়েকটি নিয়মের মধ্যে একটি নিয়ম হল, নেতির নেতিকরণ (Negation of Negation)। এই নিয়মটি প্রকৃতির ক্ষেত্রেও যেমন, রাজনীতি ও সমাজকেও এই নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ধানবীজ মাটিতে বপন করলে সেটি মাটির সঙ্গে মিশে ‘পচে’ যায়। তার নেতি (Negation) ঘটে। তা আর আগের ধানবীজে পরিণত হতে পারে না। ঠিক যেমন জাসদ আর আগের মত অবস্থায় ফিরতে পারবে না। তাহলে কী হবে সেই ‘পচে’ যাওয়া ধানবীজের পরিণতি। সেই ধানবীজ ‘পচে’ গিয়ে সেখান থেকে একটি অঙ্কুরোদ্গম দেখা মিলবে। ওই অঙ্কুরোদ্গম থেকে চারা গাছ গজাবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে ওই চারাগাছ পূর্ণতা পাবে। সেই পূর্ণতা পাওয়া চারাগাছে ‘পচে’ যাওয়া ধানবীজের মত অসংখ্য ধানবীজের ফলন দেখা যাবে। এটা প্রকৃতির নিয়ম। সেই নিয়ম দিয়ে জাসদ রাজনীতিকেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
জাসদ যে এত বড় শক্তির উদ্বোধন ঘটাল, তার কারণ সেই দলের আভ্যন্তরেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এই শক্তিটা যে নিঃশেষ হয়ে গেল, তার কারণও ওই দলের রাজনীতির মধ্যেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ জাসদ রাজনীতি কেন টিকল না, কেন ইতিহাস নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে পারল না, তার কারণও দলটির রাজনীতি ও নেতৃত্বের মধ্যেও নিহিত রয়েছে।
এখানকার কমিউনিস্টরা যখন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইকে প্রধান রাজনৈতিক করণীয় নির্ধারণ করতে গেছেন, তখন নানা সীমাবদ্ধতাসহ জাসদই প্রথম দেশীয় শাসকশ্রেণিকে ব্যাপক জনগণের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটাই জাসদের প্রধান রাজনৈতিক অগ্রগতি এবং মৌলিক অর্জন।
জাসদ রাজনীতির পরিশীলিত রূপ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী থেকে প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদের অবসান হয়েছে। বর্তমান যুগ হল পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগ। পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগে একটি স্বাধীন দেশের বুর্জোয়া শ্রেণিই হল সেই দেশের শ্রমিক, গরীব কৃষক এবং অর্থনীতির সূচকে নিচের দিকে গড়াতে থাকা ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তের প্রধান শত্রু। তাই দেশীয় শাসক শ্রেণিকে উচ্ছেদের লড়াই হল প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম। তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর খনিজ সম্পদ ও সুন্দর বন রক্ষার লড়াই হল রাজনৈতিক চরিত্র বিশিষ্ট সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই এবং পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন, নারীর ওপর নিগ্রহের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন হল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ হল মেহনতী জনগণের নিকৃষ্ট শত্রু। ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াইও অন্যতম মূল লড়াই। প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রামের অধীনস্থ করেই এসব সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। আর প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম হল দেশীয় শাসকশ্রেণির উচ্ছেদের লড়াই।
চার
আমরা জানি সংবিধানের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য জানা যায়। বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে ব্রিটিশের সৃষ্ট ও পাকিস্তানের পরিত্যক্ত ঔপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রকেই খাড়া করা হয়েছে। তখন এর বিরুদ্ধে অনেকেই সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি প্রণীত হয় বাংলাদেশ অস্থায়ী গণপরিষদ আদেশ। নতুন সংবিধান প্রণয়নে ১৯৭২ সালের ২২ মার্চ জারি করা হয় ওই বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ। সেটিই বাংলাদেশে সংবিধান সভা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ১৯৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সর্বদলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন এবং অন্তবর্তীকালীন সংবিধান গ্রহণের আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আর একটি সাধারণ নির্বাচন না করে দেশের জন্য স্থায়ী সংবিধান গ্রহণ করা যেতে পারে না।’ ১৯৭২ সালের ২৬ মে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে ন্যাপ প্রধানের বক্তব্যেরই অনুরূপ বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের তিন নেতা আ.স.ম আবদুর রব (তৎকালীন ডাকসু ভিপি), শাহজাহান সিরাজ (তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগ) ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া। তাঁরা দাবি জানান যে, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে গণপরিষদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল করা হোক এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠন করা হোক জাতীয় সরকার।
পরবর্তীতে রব-সিরাজ আরো একটি প্রশ্ন তোলেন, প্রায় ৬০ জনের অধিক গণপরিষদ সদস্যের (যাদের মধ্যে ৫ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, ১০ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন এবং কেহ কেহ দুর্নীতির দায়ে ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পদত্যাগের দায়ে বহিষ্কৃত, কেউ কেউ অনুপস্থিত ও পদত্যাগী) অবর্তমানে অর্থাৎ বাংলাদেশের এক কোটির বেশি লোকের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই গণপরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া তাঁরা আরো প্রশ্ন তোলেন যে, জাতীয় পরিষদ সদস্যের শতকরা নব্বইজনই যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সম্পূর্ণ সময়টুকু ভারতে নির্লিপ্ত জীবনযাপন করেছেন, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের অধিকার সেইসব গণপরিষদ সদস্যের আদৌ আছে বলে দেশবাসী মনে করে না।
মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ও দলের মুখপত্র হক কথার ১৪ জুলাই ১৯৭২ সংখ্যায় বল হয়, এই গণপরিষদ সদস্যরা সেদিন জে. ইয়াহিয়ার পাঁচ দফা শর্ত মেনে নিয়ে পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্যই নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁদের নির্বাচনি সময়কাল থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময়কালের ব্যবধানও প্রায় ১৪/১৫ মাস হলেও রাজনৈতিক সচেতনতা, আশা-আকাঙ্খা ও মূল্যবোধের দিক দিয়ে জনগণ অনেক এগিয়ে গেছেন। এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির যে বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটেছে সেটিকে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাংবিধানিক কাঠামোয় নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যগণ ধারণ করতে পারেন না।
একই ভাবে ওই খসড়া সংবিধানের এবং সংবিধান প্রণয়নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক অমল সেন, সমাজবাদী দলের নেতা নির্মল সেন, কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর, সর্বহারা পার্টির সভাপতি সিরাজ সিকদারও এর কঠোর সমালোচনা করেন। এছাড়া মওলানা ভাসানী, ন্যাপ নেতা মোজাফফর আহমেদ, তখনকার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র লারমাও এ তীব্র সমালোচনা করেন।
কিন্তু অতিশয় দুঃখের ব্যাপার হল, তখন কেউই এর পরিণতি উপলব্ধি করতে পারেননি। এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই গড়ে তোলার তাগিদ অনুভব করেননি। যারা এই সংবিধানকে প্রত্যাখ্যান করলেন, তারাই একটি ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে পারতেন। ওই সংবিধান যে ধারাবাহিকভাবে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের জন্ম দিতে চলেছিল, তা আজ ষোলকলায় পূর্ণ। এর মুলোৎপাটনের জন্য ফের সেখান থেকে লড়াই শুরু করা যেতে পারে। সত্যি সত্যি যদি সেটা ঘটে যায়, এবং সেটা ঘটানো সম্ভব, তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারে উপস্থিত হবে। একটি নতুন মানবিক সমাজ, একটি শোষণহীন ও লুণ্ঠনহীন রাষ্ট্র জন্ম দেওয়ার জন্য সময় গর্ভবতী হতে পারে। এ কাজে হাত লাগানোর এখনই সময়।