লিখেছেনঃ মোহাম্মদ মোস্তফা, আপডেটঃ June 8, 2009, 12:00 AM, Hits: 6455
টিকটিকির লেজ খসে গেলে আবার লেজ গজায়। মানুষের হাত-পা খসে গেলে হাত-পা গজায় না। দিনের পরে রাত্র আসে, জন্ম নিলে মরতে হয়, এটা হচ্ছে পৃথিবীর বাস্তব রূপ। একে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নাই।
এই বাস্তবতা স্বীকার করে পথ চলতে হয়। কিন্তু এই বাস্তবতা সকল মানবকুল পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মেনে নিতে পারে নাই। অনেকেই এই বাস্তব পরিস্থিতিতে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। মৃত্যুর পরে এত সুন্দর শরীর মাটির সাথে মিশে মাটি হয়ে যাবে - একদমই কিছু থাকবে না? তখন মানুষ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে অন্য কিছু ভাবতে চায়, অন্য কিছুর ভাবনা নিয়ে জীবনের সময়টা পার করতে চায়।
তখন দুর্বল চিত্তের মানুষদের উপর প্রভাব বিস্তার করে সমাজের চতুর লোকজন, সুবিধাবাদী লোকজন। তারা দুর্বলচিত্তের মানুষদেরকে বাস্তব অবস্থা থেকে মুখ ঘুরিয়ে অলীক কোন কথা বিশ্বাস করায়। মূলত এই দুর্বল চিত্তের মানুষগুলো অলীক কিছু শোনার জন্যই নিজেকে তৈরী করে রাখে। সত্যি কথা হল তাদেরকে বাস্তবতার কথা শোনানো হলেও তারা তা শুনতে চায় না; অলীক অবাস্তব কিছু বিশ্বাস করার জন্য দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দেয়, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেয় অদৃশ্য কোন কিছুকে বিশ্বাস করবার জন্য। এই দলের নেতৃত্বে থাকে সমাজের সুযোগ-সন্ধানী লোক; তারা এই লোকদেরকে ব্যবহার ক’রে সমাজে একটা পাকাপোক্ত অবস্থান গড়ে নেয়।
মূলত এই সুযোগ সন্ধানী লোকরা এই দুর্বল সাধারণ লোকদেরকে কিভাবে কত সুন্দর করে বোঝালো সেটা হচ্ছে ব্যাপার। বলার ভঙ্গিটা কেমন হল, মিথ্যা গল্পটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হল এই চতুর লোকজনের উদ্দেশ্যই থাকে সেটা।
এরা যুগে যুগে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্নভাবে আবির্ভূত হয়। তারা দেব-দেবীর পূজা করতে বলে, অগ্নি পূজা করতে বলে, গাছকে পূজা করতে বলে; পূজা করলে, অদৃশ্য বস্তুর সাধনা করলে জীবনে মঙ্গল হবে, পরকালে ভাল ফল পাওয়া যাবে এমন কথা ব’লে তাদের প্রভু সেজে বসে থেকে আরাম-আয়েশে জীবন পার করে দেয়।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঠক দুর্বলচিত্তের লোকজনদের কাছে তাদের মনগড়া কথা ব’লে সমাজে, রাষ্ট্রে একটা শক্ত অবস্থান তৈরী করে জীবন কাটিয়েছে। তাদের কথা অন্য আর এক ফন্দিবাজ এসে তার মত করে সাজিয়েছে এবং সেও সমাজে একটা অবস্থান তৈরী করেছে।
যেমন হযরত মোহাম্মদ এসে বলেলেন তিনি নাকি শেষ নবী, তার কাছে নাকি কোথা থেকে ওহী আসে, তাকে নাকি দেখা যায় না। সে সব কথার ভিতরে কিছু দুর্বলচেতা মানুষ দারুণ একটা আইটেম পেল। তাদেরকে বলা হল জিন-পরী-শয়তান, অপরূপ সুন্দরী বেহেস্তের হুরদের কথা। ক্ষুধার্ত বাঘ মাংস পেলে যেমন খাবলে নেয় হযরত মোহাম্মদের আশেপাশের মানুষগুলো তাই নিল এবং তাদের খাবার যেন অন্য কেউ কেড়ে নিতে না পারে তার জন্য রীতিমত হুংকার দিতে লাগল। অনেকদিন পরে দারুণ একটা খাবার পেয়েছে এমন একটা অবস্থা। যারা বলল এটা তো খাবার না, এটা হচ্ছে মোহাম্মদের চালাকী তখন এই ক্ষুধার্ত বাঘরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তাদেরকে থাবা দিয়ে আহত করতে থাকল, প্রয়োজনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিল। মাঝখান দিয়ে হযরত মোহামমদ দৌড়ে গিয়ে ক্ষমতায় বসলেন এবং নারীদের নিয়ে আমোদ-ফূর্তি করতে থাকলেন। তিনি যা চেয়েছিলেন তা পূর্ণ হল। যুগে যুগে সমাজের চালাক লোকজন, ভণ্ড লোকজন যা করে গিয়েছেন তিনিও সেরকম করে জীবন কাটালেন।
ঊনিশশ’ খৃষ্টাব্দে এলেন পূর্ব পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নিবাসী মিরবা গুলাম আহমমাদ কাদীয়ানী। তার অনুসারীরা আহমমাদীয়া সম্প্রদায় নামে পরিচিত।
তিনি বললেন হযরত মোহাম্মদ বলেছেন তিনি শেষ নবী কথাটা ঠিক নয়, কথাটা হল এ রকম : “নবীর আগমন শেষ হয় নাই; সুতরাং হযরত মোহাম্মদের পরও অন্য নবী আসিতে পারে, মিরজা গুলাম আহমেমদ একজন নবী।” (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশনী)।
তিনি এ কথা বলে কিছু লোক যোগাড় করে ফেললেন। এই অনুসারীরাও অনেক দিন পর নতুন খাবার পেয়ে ভালই খেলেন। কারণ এই সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব “আফগানিস্তান, ইরান, আরব, মিশর প্রভৃতি অন্যান্য মুসলিম দেশেও তাদেরকে দেখিতে পাওয়া যায়।” (সূত্র - ঐ)
তবে মনে হয় এই লোক অত বড় ভণ্ড ছিলেন না। তাহলে হয়ত নতুন কারিকুলামে নতুন ধর্মের কথা বলতেন। সেটা একদম খারাপ হত না। আমরা আর একটা নতুন ধর্মের আগমন দেখতাম।
যুগে যুগে এই রকম লোক আসায় ক্ষতি ছিল না তেমন। কারণ দুর্বল লোকদের বেঁচে থাকার আশ্রয় দেখিয়েছেন তারা। তাদের কথা মত তারা জীবনকে সাজিয়েছেন। প্রতিদিন ভোরে উঠে নামাজ করেছেন, পূজা করেছেন - গাছকে, অগ্নিকে, সাগরকে ও মূর্তিকে। তারা নিজেদের জীবন পার করে দিয়েছেন। কেউ অদৃশ্যের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেছেন, কেউ দৃশ্যমান বস্তুর দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেছেন।
কিন্তু ইসলাম ধর্মের লোকজন এরকম জীবন সাজাতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে। তাদেরকে আল্লাহর গুণগান করতেও বলা হয়েছে, আবার বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু বানাইয়োনা - তাহারা একে অপরের বন্ধু আর তোমাদের মধ্য হইতে তাহাদের সহিত যে বন্ধুত্ব করিবে সে তাহাদেরই একজন (হিসাবে গণ্য) হইবে নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না (সুরা মায়িদাহ, আয়াত ৫১, ছহীহ নূর বঙ্গানুবাদ, আশরাফীয়া লাইব্রেরী)।
তাহলে এই কথার মর্ম এই দাঁড়ায় যে একজন সত্যিকার অর্থে খাঁটি ইসলামী মানুষ ইহুদী, খ্রীষ্টানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না, সে তার সাথে খেলাধুলায় শরীক হতে পারবে না, পড়ালেখায়, গবেষণায় এবং রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে তার সাথে একই মানসিকতা নিয়ে পথ চলতে পারবে না। একই পৃথিবীতে একই জায়গায় বসবাস অথচ একে অপরের সাথে কিছুতেই “শেয়ার” করতে পারছে না, তখন দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে পড়ে। সংঘর্ষ শুরু করে এক অপরের সাথে।
মূলত ধর্মের ভিতরেই সেটা বলা আছে। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মকে বুঝে-শুনে পালন করতে হলেই তাকে এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সুতরাং বলা যায় ভণ্ড লোকেরা তাদের স্বার্থে ভণ্ডামী করে গেলেও সমাজের অনেক ক্ষতি সাধন করে গেছে। তাদের কারণে সমাজের মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে।
এই যারা বোমা নিয়ে মানুষকে মারতে তেড়ে আসছে তাদের কাছে ইসলাম ধর্ম আবিষকারের অতি সহজ ভণ্ডামীর দিকটি তুলে ধরতে হবে। অতি সোজা অংক। অতি দুর্বল চিত্তের লোকেরাও আশা করি এটা বুঝবে অথবা তাদেরকে বুঝাতে হবে।
কারণ পৃথিবী আজকে এই উগ্রবাদী মুসলিমদের ভয়ে খাবি খাচ্ছে। তারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে অন্যের জীবন কেড়ে নিচ্ছে ধর্মীয় উন্মাদনায়। এই উগ্রবাদী ধর্মীয় পথ থেকে সকলকে সরে আসতে হবে। এই পৃথিবী সকলের। সকলে মিলে একে রক্ষা করতে হবে । একটা ভণ্ড লোকের কথা মত এই সুন্দর পৃথিবীকে শেষ হতে দেওয়া যায় না।
৩১-০৫-০৯
অনলাইন: ৮ জুন, ২০০৯