লিখেছেনঃ মোহাম্মদ মোস্তফা, আপডেটঃ June 29, 2009, 12:00 AM, Hits: 8905
হযরত মোহাম্মদ ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে আরব দেশের মক্কা শহরে কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে। তখনকার যুগে লেখা সংগ্রহের জন্য এত উন্নত পদ্ধতি ছিল না। পাথর, বৃক্ষের ছাল, পাতা, পশুর চামড়া এগুলোর উপর লেখালেখির নির্ভরশীলতা ছিল। লেখালেখির ব্যাপারটা কষ্টসাধ্য ছিল বলা চলে। বেশীর ভাগ সময় মানুষ তার নিজস্ব মতামত, নিজস্ব অভিজ্ঞতা নিজের মুখে আর এক জনের কাছে বয়ান করত। যার কাছে বয়ান করা হত সে এটাকে মুখস্থ করে কিংবা মনে রাখত। এভাবে একজনের মৃত্যেুর পর তার অভিমত বা বক্তব্য আর একজনের ভিতর বেঁচে থাকত। এভাবে হাজারো ইতিহাসের বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়।
হযরত মোহাম্মদের বয়স যখন চল্লিশ বছর তখন থেকে জিবরাঈল আঃ তার কাছে আল্লাহর ওহী নিয়ে আসত। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত দূত। আল্লাহর ওহী নিয়ে যে গ্রন্থখানি রচনা হয় তার নাম কোরান। ওহী নাজিল হওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যে কোন মুহূর্তে এই ওহী নাজিল হত। এবং হযরত মোহাম্মদ তখন বা তার পর তার সাহাবীদের দিয়ে তা লিপিবদ্ধ করাতেন।
তার কাছে সবকিছুর ব্যাপারেই ওহী আসত - তার শত্রুদের ব্যাপারে, তার মিত্রদের ব্যাপারে, রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে। দাসীদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারেও আল্লাহতায়ালা ওহী নাজিল করেছেন, যেমন তিনি সূরা নিসার ৩ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, “আর যদি ভয় হয় যে মেয়ে এতিমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না তবে বিয়ে করে নাও তাদের মধ্যে হতে দুই তিন বা চারজন করে তোমাদের পছন্দ মত; যদি সুবিচারের ভয় হয় তবে একজন অথবা অধিকারভুক্ত দাসীকে এতে অন্যায় না হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।” (ছহীহ নুরানী বাংলা উচ্চারণ অনুবাদ, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহামদ)
তিনি মানুষকে সৃষ্টি তথা পৃথিবী সৃষ্টির রহস্যের কথাও ব্যক্ত করেছেন। তিনি সূরা ইউনুস এর তিন নাম্বার আয়াতে বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের রব আল্লাহ যিনি আকাশ ও পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি করেন পরে আরশে সমাসীন হন। তিনি প্রতিটি কাজের তত্ত্বাবধান করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশকারী কেউ নাই। তিনিই আল্লাহ তোমাদের রব কাজেই তোমরা তার দাসত্ব কর তবুও কি বুঝ না? (সূত্র ঐ) তিনি সূরা হুদ-এর সাত নম্বর আয়াত-এও ছয়দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলেছেন।
তার কথা মত তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আকাশও তিনি সৃষ্টি করেছেন। যারা পড়ালেখার সাথে সামান্যও জড়িত তারা জানেন যে আকাশ বলতে কোন কিছুই নাই। অসীমের রং নীল হয়ে খালি চোখে আমাদের কাছে একটা স্তরের মত মনে হয়, কিন্তু আসলে এটা শূন্য। আল্লাহতায়ালা কেন এটা সৃষ্টির কথা বললেন তা বোধগম্য নয়। আমরা না হয় খালি চোখে একটা স্তরের মত দেখতে পাই। তার তো সত্যিকার জিনিস কি তা জানা উচিত ছিল। কেউ কেউ বলেন এটি আল্লাহর কথা নয়, মোহাম্মদের কথা। তিনিও আমাদের মত আকাশ নামক অদৃশ্য জিনিসকে স্তর ভেবে বসেছিলেন। আমরা যে ভুল করি আকাশ সম্পর্কে তিনিও সেই ভুল করছেন আকাশ সম্পর্কে। দোষের কি? ঠিক আছে, আল্লাহ ভুল না করলেই হল, কারণ তিনি তো সব জানেন।
তিনি হা-মীম সাজদাহ সূরার নয় নম্বার আয়াতে বলেছেন, “আপনি (মোহামমদ) বলে দিন যিনি দু’দিনে এ দুনিয়া সৃষ্টি করলেন তাকেই কি অস্বীকার করবে এবং তোমরা কি তার জন্য সমকক্ষ দাঁড় করাবেই? তিনি সারা জাহানের রব।” (সুত্র ঐ)
তিনি একজায়গায় বলেছেন ছয় দিনে সৃষ্টির কথা দুনিয়া আর এখানে বলেছেন দুই দিনের কথা। সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা এই ভুল কেন করলেন তা বোধগম্য নয়। তবে অনেকে বলেন এই ভুল হয়ত মোহাম্মদের। তিনি দুইদিনের কথা বলার সময় আগে যে ছয়দিনের কথা বলেছিলেন তা ভুলে গিয়েছিলেন। অথবা আগের লেখাটা তার হাতের কাছে ছিল না। আমরা অনেকে সকালের কথা বিকালে ভুলে যাই। মোহাম্মদ ছয়দিনের কথা বলার অনেকদিন পরে যখন দুইদিনের কথা বললেন তখন হয়ত বা তার মনে হল আগেও দুইদিনই বলেছি। মানুষের এটা হতেই পারে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর এটা হতে পারে না; কারণ তিনি তো সকল ক্ষমতার অধিকারী।
অনলাইন : ২৯ জুন, ২০০৯