Banner
আরবের ইসলাম - মোহাম্মদ মোস্তফা

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ মোস্তফা, আপডেটঃ May 27, 2009, 12:00 AM, Hits: 6013

ইসলাম ধর্ম বলতে আমরা বুঝি ইহকালে ইবাদত-বন্দেগী করে পরকালে তার ফল ভোগ করা; ভাল কাজ করলে বেহেস্ত, খারাপ কাজ করলে দোজখ।

পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে নীরবে অতি পবিত্রতার সাথে ধর্ম পালন করে যাচ্ছে। এক মনে এক ধ্যানে রাষ্ট্র, সমাজ, সংসার এক পাশে রেখে  একশত পারসেন্ট সৎ হিসাবে জীবন যাপন করছে।

আল্ল্নাহতায়ালাও সেই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন : আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি এ জন্যেই যে তারা আমারই ইবাদত করবে (সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬)। অর্থাৎ সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত-বন্দেগী করা।

কিন্তু তিনি সকল ইনসানকে এ কথা জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। তিনি শুধু আরবের ইনসানদের জানালেন।

আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের আবিষকার করলেন কলম্বাস চৌদ্দশত বিরানব্বই খ্রীষ্টাব্দে। তার আগে আমরাও জানতাম না তাদের কথা, তারাও জানত না আমাদের কথা। কোরানশরীফ মতে আমরা একই আদমের সনতান। তিনি তাদের কাছে তার কোন বাণী পৌঁছানোর চিনতা করলেন না। আমেরিকার মানুষরা কি তার সৃষ্টি নয়!

ধরে নিলাম কলম্বাসকে খোদাতায়ালা আমেরিকার পথ দেখিয়েছেন, সেখানকার উদ্দেশ্য করেই পাঠিয়েছেন। কিন্তু কলম্বাস সেখানে গিয়ে আল্ল্নাহর বাণীর কথা বললেন না, তিনি আরো মানুষ নিয়ে গিয়ে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করতে থাকলেন।

তার একই সময়ের সকল মানুষ সৃষ্টি। অথচ আরবে তার বাণী পাঠালেন খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে, আর প্রায় এক হাজার বছর পরেও রেড ইন্ডিয়ানদের কাছে তার বাণী পাঠানো হল না।

অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের কাছেও পাঠানো হল না তার বাণী। তারা জানল না তার সৃষ্টির কারিগরীর কথা, তার জন্যে ইবাদত-বন্দেগী করার কথা।

কেন তাদেরকে জানালো হল না? তারা তো আল্ল্নাহর কাছে একই সমান! পার্থক্য থাকতে পারে আমাদের কাছে, তার কাছে নয়।

আমাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য তার জন্য ইবাদত-বন্দেগী করা। আমাকে সৃষ্টি করার আনন্দেই আমি তার ইবাদত-বন্দেগী করতাম - আল্ল্নাহতায়ালা যদি ঐ কথা বলেই ক্ষানত থাকতেন, কিন্তু তিনি আরো বলেছেন।

তিনি বলেছেন ঃ এবং আল্ল্নাহ কখনো মুমিনদের উপর কাফিরদের কোন কর্তৃত্ব রাখবে না। (সূরা নিসা ৪:১৪১)

এখানে ইবাদত-বন্দেগী ছেড়ে অন্য কথা বলা হয়েছে, কাফির এবং মুসলমানদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কথা বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কথা বলা হয়েছে, কাফির এবং মুসলমানদের দুইভাগে ভাগ করে দেখানো হয়েছে, মুসলমানদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব রাখা হবে না এমনই বলা হয়েছে। অথচ তিনি আবার আর এক জায়গায় বলেছেন : হে মানুষ আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক স্ত্রী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের ভিতর আল্ল্নাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্ল্নাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খরব রাখেন। (সূরা হুজরাত ৪৯ :  ১৩)

অর্থাৎ সকলেই তার ঘরের সনতান। অথচ তিনি কাফির-মুসলমান কথা বলে নিজেদের ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি, কাটাকাটি লাগিয়ে দিয়েছেন। মুমিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব রাখবে না শুধু এই কথা বলে সেই থেকে আজ পর্যনত লক্ষ, কোটি মানুষ মরেছে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে, গ্রাম ইউনিয়ন জেলা এমনকি রাষ্ট্রের পরে রাষ্ট্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শুধু এই এক কথার উপর ভিত্তি করে। তো এ অবস্থায় আমি এবাদত-বন্দেগী করি কখন! ইবাদত-বন্দেগী করার ফাঁকে তিনি কাফিরদেরকে খুন করার হুকুম দিয়েছেন ভিন্ন কৌশলে।

ইবাদত-বন্দেগীর ভিতর যখন রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের কথা বলা হয় তখন যেন একটু কিন্তু কিন্তু লাগে। তিনি ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন আমাদের এবং জিন-পরীদের, অথচ তিনি বারবার ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছেন কাফিরদের কাছ থেকে কিভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া যায় সে কথা।

এবং এই কথাগুলো যখন হযরত মোহামমদ বলেন তখন কিন্তুটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তুটা বেড়ে গিয়ে পাহাড় সমান সন্দেহ দেখা দেয়, যখন পরবর্তীতে দেখা যায় হযরত মোহামমদের ক্ষমতা দখল  - তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি ক্ষমতা দখলের সাথে সূরা নাজিল হবার নিবিড় একটা সম্পর্ক আছে!

আল্ল্নাহতায়ালার কথাবার্তা নিয়ে সন্দেহ থাকার কারণ হিসাবে আর একটি আয়াত উল্ল্নেখ করছি। তিনি বলেছেন ঃ হে বনি আদম তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি। আর তাকওয়ার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট, এটা আল্ল্নাহর নির্দেশ সমূহের অন্যতম যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আরাফ ৭ঃ২৬)

অর্থাৎ তিনি আদম সনতানদেরকে লজ্জাস্থান ঢাকবার জন্য পরিচ্ছদ দিয়েছেন তাই বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে ঠিকই তো লজ্জাস্থান ঢাকবার জন্য পরিচ্ছদ দিয়েছেন যে পরিচ্ছদ পরে আমি বসে আছি।

কিন্তু আল্ল্নাহতায়ালার সৃষ্টি অনেক আদম এখনো বনে-জঙ্গলে অনেক জায়গায় আছে যারা পরিচ্ছদের খবর জানে না, তারা জানে না তাদের স্রষ্টা আল্ল্নাহর কথা, তারা জানে না নবীর কথা, পরিচ্ছদ তো পরনে নাই বহুদিন থেকেই।

অথচ আল্ল্নাহতায়ালা চৌদ্দশ’ বছর আগে বলেছেন তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদিগকে পরিচ্ছদ দিয়েছি। যারা জঙ্গলে আছে তার কথা মত তারাও তার সৃষ্টি এবং আমরাও। তিনি বললেন, তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি; আমরা পরিচ্ছদ পেলাম, তারা পেল না। অথচ তাদের দাবীও সমান সমান। তাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়ে আবার ফেরত নেওয়া হয়েছে ব্যভিচারের দায়ের তত্ত্বে নয়। তাহলে কি আল্ল্নাহতায়ালা তাদের ঠিকানা জানতেন না যে পরিচ্ছদ পৌঁছে দিবেন? সেটা বা কীভাবে হয়? তিনি বলেছেন যে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তার হুকুম ছাড়া গাছের পাতা নড়ে না, তিনি সর্বত্র বিদ্যমান।

ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে, আফ্রিকার বহু জঙ্গলে কত অজানা মানুষ যারা আজো পরিচ্ছদ পায় নাই যদিও চৌদ্দশ’ বছর আগে তাদের সৃষ্টিকর্তা বলেছেন তাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি। সেই পরিচ্ছদ বিহীন মানুষদের জন্য সমবেদনা জানাই আর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্ল্নাহর কাছে আবেদন জানাই যেন চৌদ্দশ’ বছর আগের দেওয়া কথা খুব দ্রুত তিনি বাস্তবায়ন করেন।

অবশ্য ঐ কথা যদি আল্ল্নাহর  না হয়ে ক্ষমতা দখল করার উদ্দেশ্যে হযরত মোহামমদের কথা হয়ে থাকে তাহলে আমার আল্ল্নাহর কাছে কোন আবেদন নাই, তার কাছে আবেদন-নিবেদন করে কী লাভ হবে, তিনি তো হযরত মোহামমদের প্রয়োজনে কথা বলেছেন!

অনলাইন: ২৭ মে, ২০০৯

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ