Banner
ইসলামে ক্রীতদাসী ও বন্দী নারীদের সঙ্গে যৌনকর্ম — আলমগীর হুসেন

লিখেছেনঃ আলমগীর হুসেন, আপডেটঃ June 20, 2010, 12:00 AM, Hits: 1190

 

প্রফেসর তাজ হাশমী ( সঙ্গে ছিলেন আবিদ বাহার) এবং ইসলাম-ব্যাশার্স নামে তথাকথিত তার প্রতিপক্ষ শিবিরের মধ্যে এক প্রাণবন্ত বিতর্ক আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। প্রফেসর হাশমী এমন কিছু অতি পরিচিত আয়াতের নূতন অনুবাদ হাজির করেছিলেন যে আয়াতগুলো নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। অনুবাদগুলো আমার কাছে বেশ উদ্দীপনাময় মনে হয়েছে। আমি ইসলাম থেকে সরে আসার ব্যাপারে অর্ধেক পথ অতিক্রম করেছি। এখন এ ব্যাপারে পুনর্বিবেচনার অবস্খা হয়েছে। তবে ইসলামে ফিরে যাওয়ার আগে এই বিতর্কে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি, বিশেষ করে প্রফেসর হাশমীর প্রতি আমার কিছু প্রশ্ন আছে।

১৯৭১ এর যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী নারীদের ধর্ষণ বনাম আবু গারিব কারাগারে ধর্ষণ

এই বিতর্কে প্রফেসর হাশমী জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইরাকে আবু গারিব কারাগারে মহিলা কারাবন্দীদের ধর্ষণ করা ছিল বন্দীদের ধর্ষণ করা সংক্রান্ত মার্কিন নীতি ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর জবাবে সৈয়দ কামরান মীর্যা যা বলেছেন তাতে মনে হয় তিনি আবু গারিব কারাগারের কেলেঙ্কারীর ঘটনাগুলো এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন সৈন্যরা সেখানে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটায় নাই। তারা শুধু বন্দীদের উপর নির্যাতন ও অবমাননার বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করেছে। অবশ্য মিডিয়ায় আসা পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধরে নেওয়া যায় যে, আবু গারিব কারাগারে মার্কিন সৈন্যগণ কর্তৃক নারী কারাবীন্দদের ধর্ষণের কিছু ঘটনা ঘটেছিল। তবে এ ধরণের ঘটনা দুই ডজনেরও কমের মধ্যে সীমিত ছিল। এ সংখ্যা কিছুতেই পাকিস্তানী মুসলমান ভাইদের দ্বারা ২/৩ লাখ বাংলাদেশী নারী ধর্ষণের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এই নারীদের অপরাধ ছিল তারা ১৯৭১­এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থী কাফের, কমিউনিস্ট ও হিন্দু ভারতের পক্ষ নিয়েছিল।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আবু গারিব কেলেঙ্কারীতে জড়িতদের সাজা হয়েছে; তাদের অনেকে এরই মধ্যে জেল খাটছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের ২/৩ লাখ মা-বোনকে ধর্ষণের জন্য ক্ষমা  চাওয়া দূরে থাকুক পাকিস্তান এই গণ-ধর্ষণের কথা স্বীকারই করতে চায় না। বাংলাদেশের গুটিকয়েক ইসলাম-সমালোচক এখনো এই দুষ্কর্মের বিচারের স্বপ্ন দেখেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মুসলমান এসব ঘটানা ভুলে গেছে অথবা ক্ষমা করে দিয়েছে ; কিংবা কখনো তাদের মা-বোনদের এই লাঞ্ছনার স্বীকৃতি ও ন্যায়বিচার চায় নাই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে :

আবু গারিব কারাগারের কেলেঙ্কারীকে স্বীকার করা হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট বুশসহ যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য ক্ষমা চেয়েছে। এই কেলেঙ্কারীর বিচার হয়েছে। প্রফেসর তাজ হাশমী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। পাক সেনাবাহিনী হাশমীর মা-বোনের উপর যে গণধর্ষণ চালিয়েছিল তার কোন উল্লেখ না করে আবু গারিবের ধর্ষণের ঘটনাবলীকে যুদ্ধ বন্দীদের ধর্ষণ করা মার্কিন নীতি বলে উল্লেখ করার নৈতিক অধিকার কি তার আছে? আমরা আমাদের বাংলাদেশী মুসলমান ভাইদের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে বংলাদেশে সংঘটিত ওইসব ধর্ষণের স্বীকৃতির আহ্বান পর্যন্ত শুনতে পাই না; ক্ষমাপ্রর্থনা ও ন্যায় বিচার দাবীর কথা দূরে থাকুক। আমি জানতে চাই হাশমী তার গবেষণা, প্রকাশন, বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণের জন্য কতবার ন্যায়বিচার দাবী করেছেন?

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মি. হাশমী একজন উচ্চ পর্যায়ের গবেষক। তূলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে কাজের জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন জার্নালে তার বহু লেখা ছাপা হয়েছে। তার মাতৃভূমিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী যেসব দুষ্কর্ম ঘটিয়েছে সেগুলো তার কিছু লেখায় অন্তত স্খান পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের মা-বোনদের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণধর্ষণের নিন্দা ও স্বীকৃতি সম্মিলিত তার গবেষণা পত্র পড়ার জন্য আমরা আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করব।

যদি এ ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ না থাকে তবে আমি কি প্রফেসর হাশমীকে প্রশ্ন করতে পারি; প্রথম বারের মত রক্ষীদের দ্বারা যুদ্ধবন্দী ধর্ষণের ঘটনায় আগ্রহী হয়ে তিনি যে বিষয়টি তুলে ধরলেন সেটা যে তার নিজের দেশে মা-বোনদের উপর যা ঘটেছিল সে তুলনায় অতি তুচ্ছ, এই বোধটুকু কি তার আছে ? আবু গারিব কারাগারে তুলনামূলকভাবে অতি তুচ্ছ অপকর্মের কথা সংশ্লিষ্ট পক্ষে স্বীকার করেছে, এর জন্য ক্ষমা চেয়েছে এবং ঘটনার যে বিচার হয়েছে সে খবর কি তিনি রাখেন?

অবশ্য বাংলাদেশী মুসলমানদের একটা বড় অংশ ১৯৭১ সালের গণ ধর্ষণের কথা ভুলে গেছে। অন্যরা বিষয়টির তোয়াক্কা করে না, এবং কিছু মানুষ ঘটানাবলী স্বীকার করলেও ভুলে যেতে চায় অথবা স্বীকৃতি ও ন্যায়বিচারের দাবী জানাতে লজ্জা পায়। ইসলামী পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারতের মত কোন অমুসলমান রাষ্ট্র যদি এমন গণধর্ষণের ঘটনা ঘটাতো তবে প্রফেসর হাশমী ও তার বাংলাদেশী ভাইয়েরা তা কখনো ভুলতেন না, ক্ষমাও করতেন না। 

এখন মূল প্রশ্নে আসা যাক : কেন প্রফেসর হাশমীর মত বাংলাদেশী মুসলমানরা বাংলাদেশী নারীদের পাক-সেনাদের হাতে গণহারে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার স্বীকৃতি ও বিচার দাবী করতে পারে না? এর কারণ কি এই যে, ব্যাপারটা বিশ্বের একমাত্র ভ্রান্ত ধর্ম ইসলামের নির্দেশনার বিরুদ্ধে যাবে? 

মনে হয় যে, প্রফেসর তাজ হাশমীর মত উচ্চশিক্ষিত মুসলমানরা আধুনিক পশ্চিমা বিবেক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্তমানে ভ্রান্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত তাদের ধর্মের শিক্ষাকে নিন্দা জানালেও অন্তর্নিহিতভাবে তারা এগুলোকে মেনে নেয়। অবশ্য মাঝে মধ্যে বলা হয় যে, এগুলো ইসলামী অনুশাসনের ভুল অনুবাদ ও ভুল ব্যাখ্যা। তারা কিছুতেই অনন্তকাল নরকের আগুনে পুড়তে থাকার পরিবর্তে হুর এবং অন্যান্য ভোগ-বিলাসে পরিপূর্ণ ইসলামী বেহেস্তেতে যাওয়ার কাফেলা থেকে চ্যুত হতে চায় না।

সহি হাদীস সহি নয়

একাধিক সহি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রফেসর হাশমীর প্রতিপক্ষ দেখাতে চেয়েছে যে, ইসলামে মহিলা যুদ্ধবন্দী, কারাবন্দী ও ক্রীতদাসীদের ধর্ষণ করা বৈধ। এ ব্যাপারে তার উত্তর : “যদি আমরা ধরেও নিই যে এই হাদীসগুলো সহি (চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি সকল সহি হাদীস সঠিক নয়), তারপরও আমাদের কিছু তথ্যকে ইতিহাসের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে।”

প্রফেসর হাশমী বলতে চেয়েছেন, সহি হাদীস যে সহি হবেই এমন কোন কথা নেই। আমি কি তাকে প্রশ্ন করতে পারি : তার এই দাবীর ভিত্তি কী? হাদীসের সহিত্ব বা সঠিকতা নির্ধারণের জন্য তিনি কী গবেষণা করেছেন? তার গবেষণা লব্ধ তথ্য তিনি কোন্ স্বীকৃত ধর্মীয় জার্নালে ছাপিয়েছেন? তার গবেষণা কর্ম যদি অপ্রকাশিত থাকে সেগুলো কি বিশ্বের ইসলামী পণ্ডিতদের স্বীকৃতি পেয়েছে?

আল-বুখারী ও আল-গাজ্জালীর মত মহান ইসলামী পণ্ডিতগণ ইসলাম সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য তাদের গোটা জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা হাদীস গ্রন্থবদ্ধ করার আগে হযরত মুহাম্মদের কর্ম, জীবন ধারা ও বাণী সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটনের মানসে তাদের গবেষণার জন্য তারা ভূমির একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত কষ্টসাধ্য ভ্রমণ করেছেন। বিশ্বে এ পর্যন্ত আগত সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সম্পর্কে সত্য সংরক্ষণের জন্য অই মহান ইসলামী পণ্ডিতগণ যে শ্রম দিয়েছেন এবং একাগ্রতা ও নিষ্ঠা দেখিয়েছেন সেগুলোকে বাতিল করে দেওয়ার মত কতটা গবেষণা প্রফেসর হাশমী করেছেন? কেন প্রফেসর হাশমী মনে করছেন যে, তার গবেষণালব্ধ তথ্য (যদি আদৌ কিছু থাকে) অধিকতর সঠিক এবং বিশ্বাসযোগ্য? তার গবেষণা কি এই ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক পণ্ডিতদের ক্ষুরধার পর্যবেক্ষণ দ্বারা স্বীকৃত? যদি তাই হয়, তার গবেষণা পত্রে কি সহি হাদীস সংগ্রহকারীদের সমুদয় লেখা ধ্বংস করে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে?

কেন এইটা সহি?

প্রফেসর তাজ হাশমী লিখেছেন :

“আমরা জানি হুনায়েনের যুদ্ধের পর নারী যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করে দেওয়ার ব্যাপারে নবীর ইচ্ছা কেন পূর্ণ হয় নাই।

‘কয়েকজন সাহাবা তার বস্ত্র ধরে তাকে অত্যন্ত কর্কশ স্বরে বললেন: এসব নারীর দখল নেওয়ার ব্যাপারে আপনি আমাদের নিবৃত্ত করতে পারেন না। এটা আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য।’ এবং নবী অসহায় দর্শক হয়ে থাকলেন।”

যদিও প্রফেসর হাশমী নরকে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে হাদীসসমূহের বিরোধিতা করেছেন, তিনি তার দাবীর পক্ষে যায় এমন একটা হাদীসকে ব্যবহার করতে ছাড়েন নাই। তার মতে এই হাদীস সহি! কেন হাদীসটি সহি? তিনি কি আমাদের দেখাতে চান যে তার গবেষণা ও প্রকাশনা এই হাদীসকে সহি বলে প্রমাণ করেছে তা এই ক্ষেত্রের পণ্ডিতগণ কর্তৃক স্বীকৃত?

মর্যাদা রক্ষায় হত্যা

মর্যাদার কারণে হত্যা সম্পর্কে প্রফেসর হাশমী লিখেছেন : “মর্যাদা রক্ষায় হত্যার ঘটনা ব্রাজিলেও ঘটে। শুধু ইসলামে নয়, শিখদের মধ্যেও এটা ঘটে।”

এই দাবী অবশ্যই সত্য। কানাডায় মর্যাদা রক্ষার জন্য এক শিখ কর্তৃক তার মেয়েকে হত্যার ঘটনা ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। এটা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, ক্যাথলিক মতবাদ ব্রাজিলে অত্যন্ত শক্তিশালী। শিখরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। সম্প্রতি ফন্সান্সে এর পরিচয় মিলেছে। ফন্সান্সে ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলে ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা মেনে  নেয়। কিন্তু মুসলমান ও শিখরা অত্যন্ত জোরালোভাবে তার প্রতিবাদ করে। কঠোরভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকারী লোকজনের মধ্যে মর্যাদা রক্ষায় হত্যার ঘটনা সাধরণত ঘটে থাকে।

তারপরও মুসলমানদের মধ্যে এই ঘটনা এত বেশী যে, অন্য কোন ধর্মের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে আমি বহু শিখ মেয়েকে হিন্দু ছেলের প্রেমে পড়ে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে দেখেছি। তারপরও সেখনে মর্যাদা রক্ষায় হত্যার ঘটনা খুব একটা ঘটে বলে জানা যায় না। মুসলমান মেয়েরা এমন করলে তাদের কপালে কী ঘটত একবার কল্পনা করুন!

ভাগ্যবতী মুসলমান মেয়েদের এ বোধটুকু আছে যে, অন্য ধর্মের কাউকে প্রেমে পড়ে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হলে কপালে কী ঘটবে! সঙ্গত কারণেই তারা এসব প্রলোভন থেকে নিজেদের দূরে রাখে।

ধর্ম/অর্ধম যুদ্ধ

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ধর্মের নামে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধেই অধিকাংশ মানুষ নিহত হয়েছে, সৈয়দ কামরান মীর্জার এ দাবী প্রত্যাখ্যান করে প্রফেসর হাশমী নেপোলিয়ন, আলেকজাণ্ডার এবং দু‘টি বিশ্বযুদ্ধের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। তার মতে এগুলো ধর্মযুদ্ধ ছিল না।

অবশ্যই আলেকজাণ্ডার এবং নেপোলিয়নের যুদ্ধ ধর্মযুদ্ধ ছিল না। যদিও ধর্ম প্রচারের জন্য যে সব যুদ্ধ হয়েছে সে তুলনায় ওই দু’জনের যুদ্ধে কঠোরতার চিহ্ন ছিল কম। আলেকজাণ্ডার কখনো বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা করেন নাই। বিপুল সংখ্যক লোককে বন্দী করে ক্রীতদাস বানানোর ঘটনাও তার নেতৃত্বে ঘটে নাই। নেপোলিয়নের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। নেপোলিয়নের মিসর দখল ও দেশটি শাসন কালে তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি ব্যাপক সহানুভূতি দেখিয়েছেন। বরং সেই আলোকিত যুগে ইউরোপে খ্রীষ্ট ধর্মবিরোধী ব্যাপক মনোভাবের প্রভাবে তিনি মিসরে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। ইসলাম এবং খ্রীষ্ট ধর্মের নামে যে সব যুদ্ধ হয়েছে সেগুলোতে সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক লোকজন সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন কোন যুদ্ধে হিন্দুকুশ ট্র্যাজেডির মত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে নাই। সে সময় মুসলমান বিজয়ীরা হিন্দু দাসদের পারস্যে নিয়ে যাওয়ার সময় হিন্দুকুশ পর্বতে একলাখ হিন্দু বন্দী-দাস মারা গিয়েছিল (তা থেকে হিন্দুদের মৃত্যু অর্থাৎ হিন্দুকুশ নাম হয়েছে)।

ইতিহাসের আদিকাল থেকে অধিকাংশ যুদ্ধ হয়েছে তৎকালীন ধর্মসমূহের দেবতাদের অনুপ্রেরণায়। ‘ট্রয়’ চলচ্চিত্রে পরিষ্কার ভাবে দেখানো হয়েছে যে, বিশ্বে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেবতারা প্রতিটি যুদ্ধের অনুমোদন দিতেন। রাজা যুদ্ধ শুরু করতে চাইলে দেবতা আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতেন।

প্রফেসর হাশমী আমাদের জানাচ্ছেন, দু’টি বিশ্বযুদ্ধের ধর্মীয় কোন ভিত্তি ছিল না। তারপরও ধর্ম ছিল উভয় যুদ্ধের প্রধান অনুপ্রেরণা । বার্ট্রান্ড রাসেল লিখেছেন। “প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল মূলত পুরোপুরি খ্রীষ্টধর্ম কেন্দ্রিক। তিনজন সম্রাট ছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার যুদ্ধবাজ সদস্যরাও ছিলেন একই রকম।” প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কার সংক্রান্ত মার্কিন লুথারের বই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেরণা যুগিয়েছিল। হিটলারের “মেইন ক্যাম্ফে” মার্টিন লুথারের রচনার ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যদিও হিটলার ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান ক্যাথলিক এবং তার সৈন্যরা “ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আছেন”- এ গান গাইতে গাইতে যুদ্ধযাত্রা করত। নিজের কথায়, হিটলার নিজেকে ইহুদীদের হত্যা করার জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রাপ্ত বলে দাবী করেছেন।

‘‘অতএব আজ আমি বিশ্বাস করি যে, আমি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা অনুসারে কাজ করছি : ইহুদীদের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করে আমি প্রভুর কাজের জন্য লড়াই করছি।” (এডলফ হিটলার)

“ইশ্বর জার্মান জনগণকে রক্ষক দিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, গভীর এবং অটল বিশ্বাস যে, তিনি (হিটলার) জার্মানীকে রক্ষা করার জন্য ইশ্বর কতৃর্ক আমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছেন।” (হিটলার’স এলিট)

এসব তথ্যের নিরিখে মি: কামরান মীর্জার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা কঠিন যে, ধর্মগুলোই সকল বড় ধরনের যুদ্ধের মূল কারণ।

কুরআনের ভুল অনুবাদ ও ভুল ব্যাখ্যা

প্রফেসর হাশমী কুরআনের কতিপয় আয়াতের নূতন অনুবাদ হাজির করেছেন। এগুলো আমার মত আরও কিছু লোককে ভাবিত করবে যারা প্রচালিত অনুবাদ পড়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছি। এসব অনুবাদে ইসলামকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমরা এ ধর্ম পরিত্যাগের চিন্তা করছি। প্রফেসর হাশমী তার অনুবাদে যে তরতাজা ঔজ্জ্বল্যের সমাবেশ ঘটিয়েছেন তা সত্য হলে আমি ইসলাম পরিত্যাগের বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে পারি। তাতে আমি ধর্মদ্রোহের অপরাধে মুসলমানদের হাতে নিহত হওয়া থেকে রক্ষা পাব। আমাকে অনন্তকাল নরকের আগুনে পুড়তে হবে না। তারপরও পূর্ণ আস্খা ও গর্ব নিয়ে ইসলামে প্রত্যাবর্তনের প্রতিজ্ঞা গ্রহণের আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বাকী থেকে যায়।

ইংরাজী ও বাংলা অনুবাদ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আরবী ভাষায় সংকলিত কুরআন কোন অবস্খাতেই ভুল হওয়ার কথা নয়। যদি তাই হবে তবে কেন আরব দেশের সকল মানুষ, যাদের মাতৃভাষা আরবী, ঐ সমস্ত আয়াতের ইংরাজী-বাংলা অনুবাদের মত একই অর্থ করেছেন?

প্রফেসর হাশমী কি মনে করেন, তিনিই বিশ্বে একমাত্র ব্যক্তি যিনি আরবী ভাষা সঠিকভাবে জানেন? আর কেউ, এমনকি আরব দেশের সকল মানুষও আরবী বুঝে না !

আরবী ভাষায় প্রফেসর হাশমীর একক দখলের দাবীর ন্যায্যতা সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে। কেন তিনি ভাবছেন যে, তিনিই হচ্ছেন বিশ্বে আরবী ভাষার সর্বোত্তম এবং একমাত্র অথরিটি? আরবী ভাষায় তার দক্ষতার প্রমাণ কী ? আরবী ভাষায় কোন শ্রেষ্ঠ শিক্ষালয়ে তিনি অধ্যয়ন করেছেন ? আরবী ভাষায় তার সর্বোচ্চ দক্ষতার প্রমাণ বহন করে এমন আন্তর্জাতিক মানের থিসিস ও গবেষণাপত্রের সূত্র কি আমরা জানতে পারি ?

আরবী ভাষায় তার সর্বোচ্চ ও একক দক্ষতার প্রমাণ পাওয়ার পর শেষ প্রশ্ন হবে, কেন প্রফেসর হাশমী বর্তমানে বিদ্যমান কুরআনের সব ভুল অনুবাদ ও ভুল ব্যাখ্যা সংবলিত কপিগুলো ধ্বংস করে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছেন না। তার কথা সত্য হলে এগুলো প্রতিদিন ইসলামের অনুসারী ও কাফেরদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন প্রফেসর হাশমী নিজের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে মানব জাতিকে এতবেশী দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করছেন না ? আমি কি বিশ্বাস করব যে, প্রফেসর হাশমী ঐ সমস্ত ভুল অনুবাদ ধ্বংস করার জন্য ইসলামী বিশ্বকে ডাক দেওয়ার এবং তার নিজস্ব, সর্ব নিখুত অনুবাদ অনন্তকাল সংরক্ষণের জন্য আমাদের কাছে হাজির করার পরিকল্পনা করছেন ?

আল্লাহ কুরআনে পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, তিনি (সম্ভবত কারও মাধ্যমে) মূল ও নিখুঁত কুরআন সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করবেন। সম্ভবত মূল কুরআন সুরক্ষার জন্য আল্লাহ প্রফেসর হাশমীকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তিনি যদি আল্লাহর ডাকে সাড়া না দেন তবে এর সাজা সম্পর্কে তার কি জানা নাই ? আমার বিশ্বাস তিনি জানেন !

উপসংহার

যুদ্ধে আটক করা নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করার ব্যাপারে উপসংহার টানতে গিয়ে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, যুদ্ধকালে নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করা যে কোন সভ্য সমাজে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। সে কারণে আমরা যুদ্ধে আচরণবিধি সংক্রান্ত জেনেভা কনভেনশন প্রণয়ন করেছি। যখন একজন মার্কিন বা ব্রিটিশ সৈন্য নারী যুদ্ধবন্দীকে যৌন নির্যাতন করে তখন সে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্খা গ্রহণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানী যখন ফন্সান্স দখল করে নেয় তখন ফরসী নারীদের শ্লöীলতাহানি  না করার জন্য জার্মান সৈন্যদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তারপরও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল এবং ফরাসী নারী বন্দীদের ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় অভিযুক্ত জার্মান সৈন্যদের মৃতু্যৃদণ্ডসহ কঠিন সাজা দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধকালীন নীতিমালা সংক্রান্ত ইসলামী আইনের ব্যাপারে আমরা কি একই কথা বলতে পারি এর সুনির্দিষ্ট উত্তর হচ্ছে ‘না’। বন্দীদের ব্যাপারে ইসলামী আইন হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক। প্রযোজ্য আয়াতগুলো অনন্তকালের জন্য অপরিবর্তনীয়। সে কারণেই পাকিস্তানের ইসলামী সৈন্যরা বাংলাদেশী নারীদের উপর ধর্ষণ এবং হত্যাযজ্ঞ চালালেও তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয় নাই । ঐসব পদাতিক সৈন্যরা নারী বন্দীদের ব্যাপারে আল্লাহর আইন অনুসরণ করেছে মাত্র।

তাই, ১৯৭১ সালে পাক সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালী নারীদের ধর্ষণের জন্য অনুশোচনা, দু:খপ্রকাশ, ক্ষমাপ্রার্থনা, ন্যায়বিচার ও ক্ষতি পূরণের প্রশ্নই উঠে না। ইসলাম ঐ সৈন্যদেরকে তারা আমাদের অসহায় নারীদের উপর যা করেছে সেসব  অপকর্ম করার অধিকার দিয়েছে। ধর্ষণকারী পাকিস্তানী সৈন্যদের বিচার দাবী না করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও বিশ্বের অন্যত্র বসবাসকারী আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা আল্লাহর নির্দেশ পালন করেছে।  

(নিবন্ধটিMuhammad Hussain কর্তৃক লিখিত  Sex with Slave girls and Captive Women in Islam-এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি ইসলাম ওয়াচ   [www.islam-watch.org]-এ ১৩ মে,২০০৫-এ প্রকাশিত হয়। -- বঙ্গরাষ্ট্র)

অনলাইন : ২০ জুন, ২০১০

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ