লিখেছেনঃ এন্ড্রু স্টানিচ, আপডেটঃ June 16, 2009, 12:00 AM, Hits: 1005
মুসলমানরা যতদিন পর্যন্ত এমন একটি আদর্শ ও বিশ্বাসমূলক ব্যবস্থার দাসত্বে আবদ্ধ হয়ে থাকবে যেটা কিনা কেবলমাত্র সর্বাত্মকতাবাদী ইসলামবাদীদের ক্ষমতা দখলকে সাহায্য করে ততদিন পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়া হঠকারী, অর্থহীন এবং ভয়ানকভাবে বিপজ্জনক।
বিশেষ করে পাশ্চাত্যের বুদ্ধিজীবী মহলে একটা চরমভাবে কুযুক্তি দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। সেটা হচ্ছে এই যে গণতন্ত্র ইসলামী বিশ্বকে তার স্বৈরশাসক এবং বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং এইভাবে অমুসলিম বিশ্বকে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
যাইহোক, গণতন্ত্র ইসলামী বিশ্বের সর্বরোগহারী তাৎক্ষণিক মহৌষধ এই বিশ্বাসটা খুব বেশী হলে কথা ফুলঝুরি মাত্র, বাস্তবে যার কোন ভিত্তি নাই। ইসলামী বিশ্বের অধিকাংশই গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়। অনেক দেশ যেগুলি এখন ইসলামবাদীদের হাতে চলে যাবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেগুলিতে এখন গণতন্ত্র কিংবা নির্বাচনমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য দাবী অথবা চাপ এই সব দেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মিসরের দৃষ্টান্তের উপর জোর দিয়ে বলতে চান যে মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রায়ন শান্তি প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নিবে। তবে বাস্তবে খুব সম্ভবত মিসরে গণতন্ত্রের ফল হবে অধিকতর ইসলামবাদী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং এখানে গণতন্ত্র শান্তির জন্য কোন কাজেই আসবে না। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আনোয়ার সাদতের কথা বিবেচনা করুন যিনি বৃহত্তর মিসরীয় সমাজের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেন। যদি তাকে জনগণের নির্বাচনকে মোকাবিলা করতে হত তবে তিনি কখনই শান্তি স্থাপন করতে ইচ্ছুক অথবা সক্ষম হতেন না। যদি কোন একটি জনগোষ্ঠীর চেতনা একটি আদর্শ ও বিশ্বাসমূলক ব্যবস্থার দাস হয়ে থাকে তবে তাদেরকে তাদের নেতাদের নির্বাচনের জন্য মুক্ত করাটা অর্থহীন। কারণ এই রকম ক্ষেত্রে ইসলামবাদীরা ধ্বংসাত্মক পদ্ধতির পরিবর্তে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। ২০০৬ সালের নির্বাচনে গাজায় সহিংস সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হামাস জয়ী হয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে শত শত রকেট নিক্ষেপ করেছিল; এইটুকুই ছিল গাজায় উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় হামাসের ভূমিকা। ইসলামী বিশ্বের অধিকাংশ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র এবং নির্বাচন থেকে উন্নয়ন ও শান্তির জন্য এর চেয়ে ভিন্ন কিছু আমরা আশা করতে পারি না।
মিসরের মত দেশে যেখানে মুসলিম ভ্রাতৃসংঘ (মুসলিম বাদ্রারহুড)-এর মত সুপ্রতিষ্ঠিত এবং দৃঢ়বদ্ধ ইসলামবাদী গোষ্ঠীগুলির উপর স্বৈরতান্ত্রিক সরকারসমূহ কিছু নিয়ন্ত্রণ রাখে ইসলামীর বিশ্বের সে সব দেশে গণতন্ত্র দিয়ে এর চেয়ে ভাল কোন ফল পাওয়া যাবে এমনটা ধারণা করা অবাস্তববাদী। একটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক কারাগারে গণতন্ত্র চালু ক’রে যেমন শান্তি এবং সামাজিক ন্যায় বিচার লাভ করা যায় না তেমন একই কথা প্রযোজ্য মিসরের ক্ষেত্রে।
পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে প্রবল বিশ্বাস রয়েছে যে ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ নীতি দ্বারা সরকার বাছাই নিয়ন্ত্রত হওয়া উচিত। যাইহোক, মিসরে সম্ভবত এই নীতির অর্থ হয়ে দাঁড়াবে ‘এক মানব এক ভোট’। একবার কোন ইসলামবাদী দল ক্ষমতা দখল করতে পারলে আর কোন নির্বাচন হবে ইসলামবাদীদের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকে বৈধতা দানের পদ্ধতি মাত্র, এবং এর পরে নির্বাচন প্রক্রিয়া দ্বারা ইসলামবাদীদের ক্ষমতা থেকে সরাবার বাস্তবে আর কোন উপায় থাকবে না। পরিণতিতে ‘এক ভোট’-এর আক্ষরিক অর্থ হবে খুব বেশী হলে এক প্রকৃত ভোট এবং তার পরে যেটা হবে সেটা হচ্ছে তুলনামূলকভাবে অর্থহীন নির্বাচন যেমনটা কিনা ইরানে হচ্ছে।
ইংরাজী উপশসধড়থধী শব্দটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হচ্ছে ‘জনগণের সরকার।’ গ্রীক ভাষায় উপশসঢ় শব্দের অর্থ হচ্ছে জনগণ এবং ঈড়থয়সঢ় শব্দের অর্থ হচ্ছে সরকার। এর মানে এই দাঁড়ায় যে গণতন্ত্রে জনগণের ইচ্ছার বাইরে আর কোন প্রাধান্যকারী শক্তি দেশে থাকবে না। এখানে জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী সব কিছু হবে। ইসলাম যদি জনগণের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করে তবে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করে। বিষয়টা একেবারে স্পষ্ট।
মিসরে গণতন্ত্রের জন্য জোরাজুরির ফল যেটা হবে বলে মনে হয় সেটা হচ্ছে এমন বিপর্যয় যা ইরানে হয়েছিল। বিপ্লব-পূর্ব ইরান এবং আধুনিক মিসরের মধ্যে অনেক বিষয়ে বিরাট সাদৃশ্য রয়েছে। ইরানের শাহের ভাল-মন্দ অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য হোসনী মুবারকের মধ্যেও দেখা যায়। উভয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং উভয়েই তাদের নিজ নিজ দেশের আধুনিকায়নের জন্য চেষ্টা করেন। তাদের উভয়েই ইসলামবাদীদের দিক থেকে প্রবলতম বিরোধিতার সম্মুখীন হন। তাদের কিছু দমন-পীড়নমূলক আচরণ অপরিহার্য হয়েছে অথবা হয়েছিল তাদের ইসলামবাদী বিরোধীদের নির্দয় চরিত্রকে মোকাবিলা করার প্রয়োজনে।
মিসরের মত দেশগুলিতে গণতন্ত্রের সফল বাস্তবায়নের পূর্বে মিসরের জনগণের উপর ইসলামের প্রভাবকে অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে হন্সাস করতে এবং দৃঢ়ভাবে সংযত করতে হবে। এটা কেবলমাত্র সম্ভব মিসরীয় সমাজের উপর সম্পূর্ণ আধিপত্য এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা দ্বারা এবং কালক্রমে ধীরে গতিতে ইসলামের প্রভাবকে নিরুৎসাহিত এবং দমন ক’রে। এই প্রক্রিয়া চালাতে হলে প্রচার মাধ্যম, বিনোদন, শিল্প, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মসজিদগুলিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে, সেই সঙ্গে প্রয়োজন হবে জনগণের বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের উপর ইসলামের যে সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ আছে তাকে নির্মূল করার জন্য যুগ যুগ ধরে শিক্ষা। অবশ্য বর্তমানে এই ধরনের কিছু করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা মিসরের সরকারের নাই। পরিণতিতে ইসলামের প্রভাবের বিরুদ্ধে তেমন কোন অগ্রগতি মিসরে হয় নাই যেমনটা কিনা কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের উপর চাপিয়েছিলেন; বরং উল্টাটাই সত্য। সৌদী আরব থেকে অর্থের প্রবাহ ইসলামী গোঁড়ামীকে বিস্তার এবং শক্তি লাভ করার পথ করে দিয়েছে। মিসর ইসলামী প্রভাবের মোকাবিলায় জয় লাভ করার পরিবর্তে পরাজিত হচ্ছে।
আমি সন্দেহ করছি যে মিসরের বর্তমান গতিধারাকে প্রতিহত করার জন্য নাটকীয়ভাবে যদি কামালের কায়দায় সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া না যায় তবে মিসর পরিণতিতে ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে চলে যাবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে মিসরের ক্ষমতার হস্তান্তরকে ত্বরান্বিত করবে। এখানে সেনাবাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ হচ্ছে সমাজের উপর ইসলামবাদীদের প্রভাব ঠেকাবার উপায় এবং তার দ্বারা এমন কিছু সংস্কার করা সম্ভব হবে যেগুলি শুরুতে জনপ্রিয় না হলেও এগুলির ফলে ইসলামবাদীদের প্রভাব হন্সাস পাবে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে, আর এভাবে তারা ইতিমধ্যে মিসরের শাসন ব্যবস্থার মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। এই রকম অবস্থায় গণতন্ত্রের প্রসার ব্রাদারহুডের অগ্রগমনকে কেবলমাত্র ত্বরান্বিত করবে। রেজা আসলানের মত লোকরা যারা বলেন যে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো গোষ্ঠীগুলিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাদেরকে অধিকতর মধ্যপন্থী বা মডারেট করবে তারা আসলে প্রতারণা করেন। কেবলমাত্র নিজেদের অবস্থান মজবুত করার জন্য মুসলিম ব্রাদারহুড মধ্যপন্থী সাজে। ক্ষমতা দখল করা মাত্র তারা তাদের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে কোন রকম রাখঢাক না করে।
ইসলাম সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা নীতি অমুসলিমদের জানা দরকার যে রেজা আসলান যে ব্যক্তিকে আল্লাহর নবী ও বার্তাবাহক হিসাবে বিশ্বাস করেন বলেন সেই মুহাম্মদ বলেছেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে প্রতারণা’। কথাটাতে তেমন কোন চমক নাই, কারণ যুদ্ধে যে প্রতারণার ব্যবহার হয় সেটা অধিকাংশ সমাজের জানা আছে। তবে মুহাম্মদ কর্তৃক গৃহীত এই নীতির তাৎপর্য ইসলামী সমাজের জন্য বিপুল। পাশ্চাত্য সমাজে যুদ্ধের যে গুরুত্ব তার তুলনায় ইসলামী মতবাদে যুদ্ধের গুরুত্ব অনেক বেশী। ইসলামী মতবাদ এবং বিশ্বাস মানব জাতিকে পরস্পর বিরুদ্ধ দুইটি ভাগে বিভক্ত করে – দার আল-ইসলাম, অর্থাৎ ইসলামের আবাস, যেখানে ইসলাম শাসন করে; এবং দার আল-হার্ব্, অর্থাৎ অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আবাস। প্রায় সকল উপায়ে ইসলামের প্রসার ঘটানো যে মুসলমানদের দায়িত্ব ইসলাম সেই শিক্ষা দেয়। এর ফলে ইসলামী মৌলবাদীরা তাদের ইসলামবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যখন যেখানে যেভাবে দরকার মনে করে তখন সেখানে সেভাবে প্রতারণা কিংবা ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের ফল হিসাবে তাদের মনে এই নীতি ধীরে ধীরে সঞ্চারিত করা হয়। জন্মের পর থেকে তাদেরকে শিখানো হয় যে তাদেরকে অবশ্যই মুহাম্মদকে অনুসরণ করে চলতে হবে এবং তার জীবনের মধ্যে রয়েছে যে কারও জীবনাচরণের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ইসলামবাদীদের জন্য ছল-চাতুরি বা প্রতারণা তাদের ধর্ম প্রসারের জন্য ব্যবহার করা শুধু যে বাস্তবসম্মত তা-ই নয়, উপরন্তু এটা মুহাম্মদ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের এবং ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার জন্য লড়াইয়েরও উপায়। মুহাম্মদ নিজেই প্রতারণার মাধ্যমে বড় ধরনের সুবিধা লাভ করেছিলেন। সুতরাং যে মুসলমানরা জন্মের পর থেকে অবিরাম শুনে আসে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ তার নবী’ এবং মুহাম্মদ সম্পর্কে যতটুকু জানা থাকে সেই অনুযায়ী নবীকে অনুসরণ করা তার জন্য কর্তব্য সেই অবস্থায় সুবিধার জন্য মুসলমান ছল-চাতুরি করবে না এমনটা ধারণা করাই মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রতারণামূলকভাবে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আয়াতোল্লাহ্ খোমিনী ইরানে দক্ষতাপূর্ণভাবে ক্ষমতা দখল করেন। প্রথমদিকে তিনি অমুসলমান এবং উদার মুসলমান গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করেন। কিন্তু ক্ষমতা দখল করার পর তিনি শাহের তুলনায় অনেক বেশী দমন-পীড়নমূলক শাসন কায়েম করেন। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে পশ্চিমারা আয়াতোল্লাহ্ খোমিনীর মিথ্যার ফাঁদে পা দিয়ে বোকা বনেছিল। অজ্ঞ পশ্চিমারা তার প্রচেষ্টায় সমর্থন দিয়েছিল। তারা এ কথা বোঝে নাই যে শাহের শাসন ভয়ানকভাবে ত্রুটিপূর্ণ হলেও প্রকৃতপক্ষে উচিত ছিল শাহের সঙ্গে কাজ করে ইরানী সমাজের সংস্কার সাধন করা। তার শাসন উৎখাতের প্রতি সমর্থন ইরান এবং পৃথিবী উভয়কেই দান করেছে আরও অধিকতর দমন ও পীড়ন মূলক শাসন ব্যবস্থা।
এখন সর্বত্র একই ধরনের ভুল অথবা কর্মকৌশল দেখা যাচ্ছে। এটা সত্য যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। আমি দেখছি উচ্চপ্রসংসিত মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের একজন বার্নার্ড লুইয়ের মত বিশেষজ্ঞ প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং বামপন্থী ইসলামী কৈফিয়তদাতাদের একজন রেজা আসলান এরা সবাই মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছেন। একদা একজন দার্শনিক বলেছিলেন, ‘নিজের কম বয়সের চাওয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন কারণ বেশী বয়সে আপনি এটা পেতে পারেন।’ প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং এই সব বিশেষজ্ঞ যার জন্য ওকালতি করছেন সেটা সম্পর্কে তাদের সর্তক হওয়া উচিত কারণ যখন তারা এটা পাবেন তখন তাদেরকে এর জন্য দু:খও করতে হতে পারে।
এটা বোধগম্য যে যারা ব্যবহারিক গণতন্ত্রের মধ্যে বাস করেন স্বাভাবিকভাবে তারা এর সুফলকে সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত হতে দেখতে চাইবেন। কিন্তু ইসলামী বিশ্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, ইসলামের প্রভাব যে কত ক্ষতিকর হতে পারে সেটা বুঝবার মত প্রজ্ঞা এবং সাহস থাকতে হবে এবং মিসরের মত দেশগুলিতে গণতন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টার পূর্বে এই প্রভাবের তীব্রতা হন্সাস করতে হবে। আমার মনে এই ভয় আছে যে ইসলামের প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা এবং অজ্ঞতার ফলে অনেকে এমন কিছু করবেন যা মধ্যপ্রাচ্যে উগ্র ইসলামের কব্জাকে শক্তিশালী করবে, যার ফল হবে বৃহত্তর পৃথিবীর জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। এখানে আমি রেজা আসলান ভুল করছেন বলে তাকে ছেড়ে দিতে পারলে এবং তিনি যে আয়াতোল্লাহ্র পক্ষে কাজ করছেন না সেটা ভাবতে পারলে খুশী হতাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আমি তার উদ্দেশ্যের সততা সম্পর্কে নিশ্চিত নই। আমি তার বই পড়েছি, আমি বিশ্বাস করি যে ইসলামের বিশ্লেষণে তিনি চরমভাবে প্রতারণাপূর্ণ।
শেষ পর্যন্ত যদি আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে চাই এবং সেই সব মধ্যপন্থী মুসলমানদেরকে রক্ষা করতে চাই যারা অমুসলমানদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করতে চায় তা হলে আমাদের জন্য একটি মাত্র উপায় আছে তা হচ্ছে ধীরে ধীরে ইসলামের প্রভাবকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। অন্য কোন কিছু দিয়ে কাজ হবে না। সমাজে ইসলামের বজ্রমুষ্টি সফলভাবে আলগা করার জন্য তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক যে ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন তেমন ধরনের পদ্ধতি ছাড়া আর কোন পদ্ধতি আছে কি না সেটা এখন পর্যন্ত আমার জানা নাই। তবে সময়ের ব্যবধানে কামাল আতাতুর্কের স্মৃতি যত ঝাপসা হচ্ছে তুর্কীরা তত তাদের পথ হারাচ্ছে এবং দৃঢ়, দীর্ঘ এবং সদম্ভ পদক্ষেপে মৌলবাদী ইসলামের পুনরুথান ঘটছে। এমন কি তুরস্কের মত দেশ যা অতীতে আধুনিকতা এবং স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করতে পেরেছিল সেখানে ইসলামের প্রভাব সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। যেখানেই ইসলাম জনগণের মনের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেখানেই জনগণ কোন না কোন ভাবে দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে এবং যতদিন পর্যন্ত তারা ইসলামের অতীব ক্ষতিকর কব্জা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত তারা কখনই প্রকৃত স্বাধীনতা, প্রকৃত গণতন্ত্র কিংবা শান্তি কাকে বলে তা জানতে পারবে না।
এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, উইনস্টন চার্চিলের ভাষায় বললে বলতে হয় যত দিন পর্যন্ত না “মানব জাতির ভিতর থেকে এক বৃহৎ শক্তি হিসাবে ইসলামের অবসান হবে” ততদিন পর্যন্ত আমরা ইসলামী সন্ত্রাসবাদ থেকে পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ হব না এবং মুসলমানরাও মুক্ত হবে না।
(নিবন্ধটি মার্কিন লেখক Andrew Stunichকর্তৃক লিখিত Democracy No Instant Panacea for What Ails the Islamic World-এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি ওয়েব সাইট ‘ইসলাম ওয়াচ’ (www.islam-watch.org)-এ ৫ জুন, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত হয়। – বঙ্গরাষ্ট্র)
অনলাইন : ১৬ জুন, ২০০৯