লিখেছেনঃ আমিল ইমানী, আপডেটঃ March 7, 2010, 12:00 AM, Hits: 910
ঘরটিতে বিভক্তি রয়েছে। একদিকে আছে সরকারের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সঠিক লোকজন, মূলধারার বামপন্থী মিডিয়া এবং ইসলামপন্থী যুক্তি উপস্থাপনকারী। তারা আমাদেরকে এ কথা বোঝানোর জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে, মেজর নিদাল মালিক এবং জনাকীর্ণ বাজার এলকাগুলোতে এমনকি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা ব্যক্তিগত গণ্ডগোল সৃষ্টিকারী। তার যা করছে সে জন্য ইসলাম দায়ী নয়। অন্যদিকে আছে তারা, যারা বিশ্বজুড়ে নিত্যদিনের অসংখ্য ভীতিকর কর্মকাণ্ডে বীতশ্রদ্ধ, যে কাজগুলি করা হচ্ছে পরিষ্কারভাবে ইসলামের প্রতি অঙ্গীকারের নামে। সার্বিক স্বচ্ছতার স্বার্থে ব্যাপারটা সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। প্রতিদিন অমুসলিমরাও অসংখ্য অপরাধমূলক কাজ করছে। তবে পার্থক হচ্ছে, অমুসলিম অপরাধীরা তাদের দুষ্কর্মের যথার্থতা প্রমাণের জন্য ধর্মের পতাকা তুলে ধরে না; পক্ষান্তরে মুসলমানরা গর্বের সঙ্গে বলে যে, তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের নির্দেশ মেনেই এসব ঘৃণ্য কাজ করছে।
নিদাল হাসান করদাতাদের টাকায় মেডিকেল স্কুলে লেখাপড়া এবং পোস্ট মেডিকেল স্কুলে প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। তার যা কিছু অর্জন তার সবগুলোই যে জাতির অবদান সেই জাতির বিরুদ্ধে নিজের ঘাতক অস্ত্র তুলে ধরতে কী তাকে উদ্বুদ্ধ করল কেউ কি দয়া করে সেটা ব্যখ্যা করবেন?
মেজর নিদাল হাসান যা করেছে তার সঙ্গে যদি ইসলামের কোন সম্পর্ক না থাকে তবে কেন :
•সে বারবার মার্কিন সংবিধানের চেয়ে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছে?
•সে প্রকাশ্যে ইসলামী আত্মঘাতী বোমাবাজি সমর্থন করেছে?
•সে ইসলামের প্রতি তার সর্বোচ্চ আনুগত্য ঘোষণা করেছে?
•সে কি হিংস্র মার্কিন বিরোধী ইসলামপন্থীদের সঙ্গে এবং একজন হিংসাত্মক ইয়েমেনী ইমামের সঙ্গে জড়িত ছিল?
•সে কি রক্তাক্ত হামলা চালানোর দিন সকালে কুরানের কপি বিতরণ করেছিল?
•নির্দয়ভাবে শতাধিক গুলি বর্ষণ করে ১৩ জন নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা এবং অপর ৩০ জনকে আহত করার সময় কি সে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিচ্ছিল?
এখানেই তিক্ত সত্য বেরিয়ে আসে : মূল অপরাধী হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম অন্য যা কিছু হতে পারে, কিন্তু শান্তির ধর্ম নয়। ইসলামের অন্তরের অন্তস্তলে রয়েছে সহিংসতা। মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কুরানের বহু সূরায় সহিংসতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে :
কুরান ৯:৫ - “তোমরা যেখানেই খুঁজে পাও অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর এবং তাদের হত্যা কর। তাদের বন্দী কর, নির্যাতন কর, ঘাপটি মেরে বসে থাক এবং যুদ্ধের যাবতীয় কৌশল প্রয়োগ করে সেখানে আচমকা আঘাত হেনে তাদের মেরে ফেল।”
৯:১১২- “বিশ্বাসীরা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে; তারা জবাই করে এবং জবাই হয়, মারে এবং মরে।”
৮:৩৯- “সুতরাং ফেতনা (অবিশ্বাস [অমুসলমান] ) শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সকলে শুধুমাত্র আল্লাহর ধর্মে সমর্পিত না হওয়া পর্যন্ত (সারা বিশ্বে) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।”
৮:৬৫- “হে নবী, বিশ্বাসীদের যুদ্ধ করতে আহ্বান জানাও। যদি তোমাদের মধ্যে ২০ জন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে তবে তারা ২০০ জনকে শেষ করে ফেলবে; যদি ১০০ জন থাকে তবে তারা ১০০০ জন অবিশ্বসীকে কেটে ফেলতে পারবে। কারণ অবিশ্বাসীরা বোধবুদ্ধিশূন্য।”
৯:৩৮- “বিশ্বাসীরা, তোমাদের কী হয়েছে যে সামনে এগিয়ে গিয়ে আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করতে বললে তোমরা মাঠি আঁকড়ে পড়ে থাক? তোমরা কি পরকালের চেয়ে এই পার্থিব জীবন পছন্দ কর? তোমরা যদি এগিয়ে না যাও তবে তিনি (আল্লাহ) ক্রুদ্ধ হবেন এবং তোমাদের বেদনাদায়কভাবে ধ্বংস করে শাস্তি দিবেন, এবং অন্যদেরকে তোমাদের জায়গায় বসাবেন।”
৪৭:৪- “যখন তোমরা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে (আল্লাহর নামে জিহাদ), তাদের অনেকে হত্যা ও জখম করে বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত তাদের ঘাড়ে আঘাত করতে থাক। অবশেষে তারা চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করার পর তাদেরকে শক্তভাবে বাঁধ, (তাদের) বন্দী কর। তারপর যুদ্ধ শেষ হলে তাদের প্রতি উদারতা দেখাও অথবা মুক্তিপণ আদায় কর (যেটা ইসলামের জন্য সুবিধাজনক হয়)। এভাবে তোমরা অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত , যে পর্যন্ত না তারা ইসলামে আত্মসমর্পণ করে।”
এবং কুরানের প্রতিটা শব্দকে মুসলমানরা তাদের আল্লাহর বাণী মনে করে।
শুরু থেকেই সহিংসতা ইসলামের ইঞ্জিন হিসাবে কাজ করে আসছে মুহাম্মদের নিজের নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে। নবীর জামাতা এবং চাচাতো ভাই আলীকে বিশ্বাসীদের সেনাপতি বলা হত তার অনতিক্রম্য বর্বরতার জন্য । এক কিংবা দুইজন দুর্বৃত্তের সহায়তা নিয়ে আলী মাত্র একদিনে সাত শ’র বেশী বন্দীর শিরচ্ছেদ করেছিল। তাদের প্রায় সবাই ছিলেন ইহুদী। আল্লাহর নবী কর্তৃক উচ্চপ্রশংসিত এই লোকটি জুলফিকার নামের একটি তরবারি বহন করত। শিয়াদের ঘরে ঘরে এবং দোকানপাটগুলোতে এই কুখ্যাত তরবারিসহ আলীর প্রতিকৃতি শোভা পায়। এবং শিয়ারা আলীকে মুহাম্মদের সমান শ্রদ্ধা করে।
সুন্নীরা মুহাম্মদের পরে শ্রদ্ধা করে ওমরকে। সেও অসংখ্য মানুষের খুনী । এবং অবশ্যই শান্তির ধর্মের এই শীর্ষ প্রবক্তাদের প্রিয় অস্ত্র ছিল তরবারি। অজকের দিন পর্যন্ত শান্তির ধর্মের জন্মস্থান সৌদী আরবের জাতীয় পতাকার শোভা বর্ধন করছে একটা তরবারি। এবং ইসলাম তার নীতি-আদর্শের ধরনের কারণে মানুষের আদিম প্রবৃত্তিতে আবেদন সৃষ্টি করে। এটা অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বৈষম্য, এবং আরো অনেক কিছু শিক্ষা দেয়।
কুরান ৬১:২- “হে মুসলমানগণ, কেন এক কথা বল এবং অন্য কাজ কর? তোমরা যা নও তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে বেয়াদবী এবং ঘৃণ্য। সত্যই আল্লাহ তাদের ভালবাসেন যারা সুদৃঢ় ঐক্যের সাথে তাঁর জন্য যুদ্ধ করে।” বাস্তবে ইসলাম এক মারত্মক ঘাতক ব্যাধির মত। একবার এটা শিকারের মাথায় ঢুকে গেলে সে অসহায় দাবার ঘুঁটি হয়ে যায় এবং নির্দেশিত অপকর্ম বাস্তবায়ন ছাড়া তার আর কিছু করার থাকে না ।
বিশ্বের ১৩০ কোটি মুসলমানের মধ্যে কয়েক কোটি ইতিমধ্যে এই ব্যাধির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আরো কয়েক কোটি তাদের সঙ্গী হচ্ছে। ইসলামী মানসিক রোগে আক্রান্ত যারা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তারা অত্যন্ত সংক্রামক। তারা এ রোগ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করে। পাশাপাশি তারা ইসলামী নির্দেশের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য দেখাতে সহিংসতার ভয়ঙ্কর পথে চলতে থাকে ।
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন এসব ইসলামের নিগড়ে আটকে পড়াদের বিচিত্র সব ঘৃণ্য তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইসলামের নামে সাধিত এসব অপতৎপরতার অনেকগুলো প্রায় অভিন্ন হওয়ায় বিশ্ব এখন এদেরকে মানব জাতির অসুস্থ অংশের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে দেখছে। এই ইসলামী রোবটদের কৃত অপকর্মে বিশ্ব মাঝে মাঝেই হতবাক হয়ে যায়। তবে লোকজন দ্রত এসব ভুলে যায় এবং এসবের মোকাবিলায় তারা গভীরভাবে কিছুই করে না।
মেজর নিদাল মালিক সম্প্রতি ফোর্ড হুড-এ যে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে লোকজন তা কিছুদিনের মধ্যে ভুলে যাবে। জীবন তার মৃত্যুর ধারায় চলতে থাকবে, যা মৃত্যুর কারবারী ইসলামপন্থীরা চালু করেছে। শুধু প্রিয়জন হারা পরিবারের সদস্যরা এবং বুলেটের আঘাত সত্ত্বেও বেঁচে যাওয়া আহতরা আজীবন মনে রাখবে এ স্মৃতি। মনে হয় না তারা এই বিয়োগান্ত ঘটনার রেশ নিজেদের বাইরে ছড়িয়ে দিতে পারবে।
গণহত্যাকারী হাসান তাৎখানিক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে লোকজনকে বুলেটে ঝাঁঝরা করে নাই। এই উত্তেজনা জন্ম থেকে তার সঙ্গী ছিল। ইসলাম নামের ঘৃণার মতবাদের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে প্রতিদিন পাঁচবার মক্কার দিকে মাথা নত করার মধ্য দিয়ে তার উত্তেজনা ক্রমেই বেড়েছে। যদিও সে প্রশিক্ষণ পেয়েছে ভালবাসা দিয়ে মানব সেবার।
একজন সত্যিকারের মুসলমান পছন্দের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতে পারে না। ইসলাম ধর্মে সবকিছু আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। এ কথা কুরানে পরিষ্কারভাবে বারবার বলা হয়েছে। এ কারণে মুসলমানকে আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশের কাছে শর্তহীন আত্মসমপর্ণ করতে হয়। একজন ‘ভাল’ মুসলমান সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ও নির্দেশ মোতাবেক করবে। এটা মুসলমানেদের মজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
মানব জাতি এখন এক গভীর উভয় সঙ্কটে পড়েছে। একদিকে আলোকিত লোকজনের ইচ্ছা হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বকে শান্তি ও ন্যায্যতা দ্বারা শাসিত এক সমাজে পরিণত করা। অন্যদিকে ইসলামপন্থীরা চাইছে সবার উপর প্রস্তর যুগের বিধিবিধান চাপিয়ে দিতে। এক ডজনের মত ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর মধ্যে কারা শাসন করবে তা নিয়ে আবার ইসলামপন্থীরা একে অপরের গলা কাটছে। এখন ইসলাম অমুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত। এ ধারা চলছে ইসলামের জন্মলগ্ন থেকে।
সত্যি কথা বলতে হবে, সহিংসতাই হচ্ছে ইসলামের চালিকা শক্তি। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার জন্ম সহিংসতার মধ্য দিয়ে, বেড়ে ওঠা সহিংসতার মধ্য দিয়ে, টিকে আছে সহিংসতায় ভর ক’রে। সহিংসতা না থাকলে ইসলামের মৃত্যু ঘটবে ।
(Amil Imani-এর লেখা Does Islam Breed Violence? নামক ইংরাজী নিবন্ধটি Islam Watch (http://www.islam-watch.org)-/এ ১২ নভেম্বর, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত হয়। এটি তার বাংলায় ভাষান্তর। -- বঙ্গরাষ্ট্র)
অনলাইন : ৭ মার্চ, ২০১০