লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ May 8, 2019, 12:00 AM, Hits: 2156
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ছিল বঙ্গ বা বাংলা এবং বাঙ্গালী জাতির জন্য এক মহাবিপর্যয়ের দিন। ঐ দিন ধর্মের ভিত্তিতে অখণ্ড বঙ্গ ও বাঙ্গালী জাতিকে বিভক্ত করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুইটি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এভাবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরার বাঙ্গালী ভারত-রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলে সেখানে অবাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর তুলনায় নিতান্ত সংখ্যালঘুতে পরিণত হয় এবং সেখানে বাঙ্গালীর ভূমিকা অনেকাংশে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। অপর দিকে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশভুক্ত অঞ্চল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা অধ্যুষিত হলেও পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে চলে যাওয়ায় নিদারুণ জাতিগত বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে পড়ে।
ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের সবচেয়ে বড় এবং মর্মান্তিক মাশুল দিতে হয়েছে পূর্ব বঙ্গের হিন্দু বাঙ্গালীকে। পশ্চিম বঙ্গ থেকে মুসলিম বাঙ্গালীর অভিগমন কিংবা বিতাড়ন তুলনায় অনেক কম হলেও পূর্ব বঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু বাঙ্গালীর উপর ধর্ম সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। প্রণালীবদ্ধ হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বঙ্গ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভারতে যে অভিগমন শুরু হয় তা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙ্গন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এত কাল পরেও আজ অবধি অব্যাহত আছে। প্রায় ২/৩ কোটি মানুষ ভিটামাটি ছেড়ে এই বঙ্গ থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গ বা বাংলা ভাগ বিরাট মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে।
এ হল একদিক। অপর দিকে, বঙ্গভঙ্গ বা বাংলা ভাগের ফলে বাঙ্গালীর অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকটিও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। পূর্ব বঙ্গ ছিল প্রায় সম্পূর্ণরূপে কৃষি নির্ভর। নদী বিধৌত উর্বর এই অঞ্চল ছিল বঙ্গের শস্য ভাণ্ডার। যেটুকু শিল্প ছিল তা ছিল প্রধানত পশ্চিম বঙ্গে বিশেষত কলকাতা ও তার আশপাশে। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বঙ্গ পরিণত হয় সম্পূর্ণরূপে পশ্চাৎপদ একটি কৃষি নির্ভর অঞ্চলে, যার সুযোগ পুরাপুরিভাবে নেয় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী এবং সেখানকার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা।
অন্যদিকে, পশ্চিম বঙ্গ তার খাদ্যশস্য এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের প্রধান উৎস এবং শিল্প পণ্যের বাজার পূর্ব বঙ্গকে হারিয়ে প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়ে। এই অবস্থা পশ্চিম বঙ্গের অর্থনীতির উপর ভারতের অবাঙ্গালী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। এভাবে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত বঙ্গে ধীরগতিতে হলেও হিন্দু বাঙ্গালীদের নেতৃত্বে যে শিল্পোদ্যোগ ও পুঁজির বিকাশ ঘটছিল সেটি বঙ্গভঙ্গের ফলে বিপর্যস্ত হল। বঙ্গভঙ্গ হিন্দু বাঙ্গালীর জন্য দুই বঙ্গেই ধ্বংসাত্মক হল। এই ধ্বংসের প্রভাব পশ্চিম বঙ্গ আজ অবধি কাটিয়ে উঠতে পারে নাই। উপরন্তু আজ অবধি পূর্ব বঙ্গ বা বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে হিন্দু বাঙ্গালীদের অভিগমনের স্রোত পশ্চিম বঙ্গকে অব্যাহতভাবে প্রবল চাপের মধ্যে রেখেছে।
ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের বিষময় ফলের সামান্য কিছু বিবরণ উপরে দিলাম। কিন্তু ধর্ম ভিত্তিক এই বিভক্তির সবচেয়ে বড় কুফল হল অন্ধবিশ্বাস নির্ভর অলোকবাদী ধর্মের শক্তিবৃদ্ধি, যা সরাসরি রাষ্ট্র ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই বঙ্গে বা বর্তমান বাংলাদেশে আমাদের জন্য ভয়ানক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এটা এখানে চিন্তাশীলতা, ন্যায়-নীতি বোধ, মানবিকতা, ব্যক্তির স্বাধীনতা, নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা, গণতন্ত্র এবং আধুনিক সভ্য জীবনকে অবিরাম আঘাত করে চলেছে। ধর্মের আশ্রয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন ও বিকৃতি অপ্রতিহতভাবে এগিয়ে চলেছে। বিশেষত ইসলাম ধর্মের ভয়ঙ্কর গোঁড়ামির শিকার হয়ে এই সমাজ প্রকৃত অর্থে উত্থানশক্তি রহিত হয়ে আছে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ এখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বহাল রেখেছে।
একটা সেকিউলার বা লোকবাদী জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই রাষ্ট্রের বর্তমান পরিণতি দেখে বিস্মিত হতে হয়। ধর্ম-রাষ্ট্র পাকিস্তান কালেও এখানে ধর্মের এতটা প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল না। ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী ইসলামী উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিকে পঙ্গু করে তাদের শাসন চিরস্থায়ী করার যে চেষ্টা শুরু করে তা প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় প্রথম থেকেই। এরই প্রকাশ ঘটে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দূকে চাপিয়ে দিতে চাওয়ার বিরুদ্ধে এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবীতে গড়ে উঠা বাঙ্গালীর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে বাঙ্গালী চেতনার যে জাগরণ ঘটে তা থেকে ক্রমে বিকশিত ও বেগবান হয়ে উঠে ধর্ম থেকে মুক্ত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনা। এই চেতনার একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটে ’৫০-এর দশকে পূর্ব বঙ্গের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। অবশ্য স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে ধর্ম কিংবা ধর্মীয় চেতনার বিজড়ন থাকা স্বাভাবিক ছিল। সেটা ছিলও। কারণ এই আন্দোলনের দাবী ছিল ইসলামী পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে স্বায়ত্তশাসন। সুতরাং স্বায়ত্তশাসনের রাজনীতি বা আন্দোলন ছিল ইসলামী সাম্প্রদায়িকতা তথা ধর্মের কাঠামোবদ্ধ। কিন্তু স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের পাশাপাশি আর একটি চেতনা ক্রমবিকশিত হয়ে উঠে বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নবতর মাত্রা দান করে - সেটি হচ্ছে পূর্ব বঙ্গের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার রাজনীতি ছিল পাকিস্তানের কাঠামো ভাঙ্গার রাজনীতি। এটা ছিল ধর্মীয় পরিচয় ভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিপরীতে ধর্মীয় পরিচয় মুক্ত এবং জাতি পরিচয়ের ভিত্তিতে বাঙ্গালীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি।
তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ এবং বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসক শ্রেণীর বঞ্চনা ও বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের প্রধান আদর্শিক হাতিয়ার ছিল ইসলাম। ইসলামের আবেদনকে ব্যবহার ক’রে এবং ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতির দোহাই দিয়ে তারা বাঙ্গালীর অধিকার হরণের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। ফলে মুসলমান বাঙ্গালীর পক্ষে আত্মরক্ষার স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করার উপায় থাকে নাই। এই অবস্থায় ধর্মমুক্ত তথা লোকবাদী বা সেকিউলার রাজনীতির বিকাশের জন্য পূর্ব বঙ্গ হয়ে পড়ে উর্বর ক্ষেত্র।
এই অবস্থায় মুসলমান বাঙ্গালী এক সময় ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দিলেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ধর্মমুক্ত কিংবা ধর্মের প্রশ্নে কিছুটা উদার রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলন ছিল যাত্রাবিন্দু। কারণ ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমান বাঙ্গালী তার জাতিগত সত্তাকে প্রথম কার্যকরভাবে চিনতে শুরু করে। তবে সেকালে ধর্মমুক্ত বা লোকবাদী রাজনীতির প্রসারের পিছনে সবচেয়ে বড় যে আদর্শিক উপাদান কাজ করেছিল সেটা হচ্ছে এ দেশে মার্কসবাদ বা কমিউনিস্ট রাজনীতির ক্রমবর্ধমান প্রভাব। মার্কসবাদ সম্পূর্ণরূপে লোকবাদী তথা এটি ধর্ম বিশ্বাস থেকে মুক্ত একটি দর্শন। পাকিস্তান কাল বিশেষত ষাটের দশক ছিল বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনের উত্তাল জোয়ারের কাল। এর ঢেউ এ দেশেও আছড়ে পড়ে। পঞ্চাশের দশকে শুরু হলেও ষাটের দশকে ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম কমিউনিস্ট মতাদর্শ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। তারা তাদের লোকবাদী ও বস্তুবাদী দর্শনের কারণে পাকিস্তানের ধর্মীয় জাতি পরিচয়ের পরিবর্তে বিকল্প জাতি পরিচয় খুঁজতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবে ধর্মীয় পরিচয় মুক্ত জাতি হিসাবে তারা দেখতে পায় বাঙ্গালী সত্তাকে। জাতিগত বঞ্চনা, বৈষম্য ও শোষণের কারণে পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর ক্ষোভ এই প্রজন্মের দর্শনগত উপলব্ধিকে সহজ বস্তুগত ভিত্তি দান করে। এইভাবে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বিকশিত বাঙ্গালী জাতি চেতনা তাদের বিপ্লব ভাবনার সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদেরকে নিয়ে যায় বাঙ্গালীর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভাবনার দিকে। যৌক্তিকভাবে এই ভাবনায় প্রথম পর্যায় ছিল পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা এবং দ্বিতীয় পর্যায় পশ্চিম বঙ্গেরও স্বাধীনতা এবং অবশেষে শান্তিপূর্ণভাবে ও স্বেচ্ছাসম্মতির ভিত্তিতে উভয় বঙ্গের সম্মিলনে বঙ্গরাষ্ট্র বা যুক্তবাংলা প্রতিষ্ঠা, যা হবে একই সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক।
বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্র আন্দোলনের ভিতর বিকাশমান বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র ভাবনা নূতন প্রেরণা ও গতি লাভ করে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচী হিসাবে ৬ দফা দিবার পর। ৬ দফা যদিও ধর্ম ভিত্তিক পাকিস্তানের কাঠামোবদ্ধ স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচী তবু এটা ছিল পূর্ব বঙ্গের প্রতি পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর বঞ্চনার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ। এই কর্মসূচী নিজে পাকিস্তান ভাঙ্গার কর্মসূচী না হলেও এটা ছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনকে দুর্বল করার কর্মসূচী এবং পূর্ব বঙ্গের বাঙ্গালীর জাতিগত চেতনার জাগরণের ক্ষেত্রে সহায়ক কর্মসূচী, যার সুযোগ নিয়ে ষাটের দশকের বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম পূর্ব বঙ্গের স্বাধীনতার রাজনীতিকে প্রবল গতিবেগ দিয়েছিল। এই প্রজন্মের ভিতর থেকে যে স্বাধীনতার রাজনীতি উত্থিত হয় তা-ই এক সময় সমগ্র জাতীয় রাজনীতি এবং ৬ দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকেও অধিকার ক’রে ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনিবার্য করে।
ছয় দফা কর্মসূচী দিবার পর থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগ ছয় দফা এবং নিয়মতন্ত্রের বাইরে না গেলেও এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ঘোষণা দিয়ে অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন করলেও যুদ্ধ অনিবার্য হল । ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাক সেনাবাহিনী বাঙ্গালী জাতির ক্রমবর্ধমান আন্দোলনকে দমন করার জন্য আক্রমণ অভিযান শুরু করলে শেখ মুজিব বাড়ীতে বসে থেকে পাক সেনাবাহিনীর হাতে ধরা দেন এবং অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে তারা ভারত রাষ্ট্রের সমর্থন ও সাহায্য নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়।
এখন এই প্রশ্ন এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজনীতি গড়লেও তাতে তারা নেতৃত্ব দিতে পারল না কেন। এর একটা সহজ উত্তর হতে পারে ভারত-রাষ্ট্রের ভূমিকা, প্রকৃতপক্ষে যে রাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে তাকে নির্দিষ্ট অভিমুখ দিয়েছিল। কিন্তু ভারত-রাষ্ট্রের ভূমিকাই সব নয় এবং উত্তরটা এত সহজ বা সরল নয়। ভারত ঘটনার সুযোগ নিয়েছে মাত্র। কিন্তু তার আগে ষাটের দশকে বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতার রাজনীতি গড়তে গিয়ে যে সমস্যায় পড়েছিল আমাদের সেটাকে বুঝতে হবে। বিষয়টা বিশদ ব্যাখা-বিশ্লেষণ দাবী করে যেটা এই আলোচনায় সম্ভব নয়। তবে এখানে আমি খুব সংক্ষেপে মূল সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করব। কারণ এটা বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতির সমস্যাকে বুঝবার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
এটা কৌতূহলোদ্দীপক যে, বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম যে মার্কসবাদ ও কমিউনিজমের প্রভাবে ধর্মমুক্ত বা লোকবাদী জীবন বোধের অধিকারী হবার কারণে পাকিস্তান বিরোধী এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠত সেই মার্কসবাদ এবং কমিউনিজমই আবার শ্রেণী সংগ্রামকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দিতে গিয়ে তাদের জাতি-রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনের অগ্রগতির পথে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াত। মার্কসবাদ ও কমিউনিজম বা সাম্যবাদ শ্রেণী রাজনীতি ভিত্তিক, যার মূল কথা সর্বহারা বা শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে এবং একনায়কত্বে সমাজতন্ত্র এবং পরিণতিতে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করা। এই সমাজে ব্যক্তি মালিকানার চূড়ান্ত অবসান ঘটানো হবে। ফলে ব্যক্তিগত সম্পত্তিহীন তথা নির্বিত্ত শ্রমিক বা সর্বহারা শ্রেণীকে এই সমাজ নির্মাণের মূল চালক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু জাতীয় সংগ্রামকে প্রাধান্য দিলে এই ফর্মূলা অনুযায়ী সর্বহারা শ্রেণী রাজনীতি করা সম্ভব ছিল না। তাতে বরং জাতীয় আন্দোলনে সম্পত্তিবান শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহের প্রাধান্য কিংবা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে কমিউনিজম অভিমুখী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। যে সমাজতন্ত্র হতে পারে সেটা বরং হতে পারে মিশ্র অর্থনীতি এবং জনকল্যাণবাদী রাষ্ট্রের এক রূপ। অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চীন-ভিয়েতনাম অনেকটা সেই রূপ নিয়েছে। সে কালে এদেশে মার্কসবাদের শুদ্ধতার পূজারী কমিউনিস্টরা এমন কোন বাস্তবতাকে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না বলে তারা কোন ধরনের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে চায় নাই। বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে অগ্রাধিকার দিতে চাইত বলে তারা ছিল পুরাতন ও প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট নেতৃত্বের দৃষ্টিতে পেটি বুর্জোয়া (ক্ষুদে পুঁজিপতি) জাতীয়তাবাদী।
যদিও এখানে বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী প্রজন্মের সমস্যা সম্পর্কে বিশদ আলোচনার সুযোগ নাই তবু এইটুকু বলা যেতে পারে যে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও তাদের জন্য গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। ষাটের দশকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথ নিয়ে মস্কো ও পিকিংয়ের মধ্যে মতপার্থক্য ঘটে। এ দেশেও তার প্রভাব পড়ে। ষাটের দশকের শেষার্ধে এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন মস্কো এবং পিকিং এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে গড়ে। মস্কোপন্থী ধারায় ছিল সেই অংশ যারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজ পরিবর্তনে কিংবা সমাজতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বাসী । এই ধারা ছিল সাধারণভাবে ছয় দফা এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং অনুসারী। প্রকৃতপক্ষে ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তারা স্বাধীনতা বা যুদ্ধ কোনটারই সমর্থক ছিল না। অপর দিকে, পিকিংপন্থী ধারায় ছিল সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী কমিউনিস্টরা। চীন সশস্ত্র বিপ্লবের পথকে সমর্থন করায় জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মও এই ধারায় ছিল। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের একটি গুরুতর সমস্যা ছিল এটা যে, চীন সেই সময় আইয়ুব সরকার এবং পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতির দৃঢ় সমর্থক হওয়ায় এই ধারার নেতৃত্ব আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে যেমন আগ্রহী ছিল না তেমন স্বাধীনতা দূরে যাক, এমনকি স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন গড়ে তোলায়ও আগ্রহী ছিল না। অবশ্য শেষ পর্যায়ে এই ধারার নেতৃত্বের একাংশ তরুণ প্রজন্মের চাপে স্বাধীনতার রাজনীতিকে সমর্থন দিলেও এই প্রশ্নে আন্তরিকতা এবং প্রজ্ঞা কোনটারই পরিচয় দিতে পারে নাই।
এই অবস্থায় বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম ছিল নেতৃত্বহীন। পিকিংপন্থী পুরাতন নেতৃত্ব থেকে যদি বা কখনও তারা কিছু সমর্থন পেয়েছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করে শ্রেণী সংগ্রামের রাজনীতিতে নিয়ে যাওয়া। পিকিংপন্থী নেতৃত্ব সেই সময়ে সারা দেশে শ্রমিক-কৃষকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী শ্রেণী ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, যা নিয়ে তারা অতিরিক্ত আশাবাদী ছিল। কিন্তু জাতীয় আন্দোলনকে অগ্রাহ্য বা গৌণ করে শ্রেণী আন্দোলনের উপর জোর দিতে গিয়ে তারা জনগণের বৃহত্তর অংশের সমর্থন হারিয়ে ফেলে। পরবর্তী সময়ে বিশেষত ’একাত্তর উত্তর কালে তাদেরকে এর খেসারত দিতে হয় ধ্বংস অথবা ক্রমিক ক্ষয়ের মাধ্যমে। বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের দাবী মেনে নিয়ে ’৬৬ অথবা ’৬৭-তেও যদি ছয় দফার সমান্তরালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপের পক্ষ থেকে মওলানা ভাসানী পূর্ব বঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের একটি কার্যকর ও শক্তিশালী কর্মসূচী দিতে পারতেন তবে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। সেক্ষেত্রে বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম ব্যাপক জন-সম্পৃক্ত এমন একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত যে আন্দোলনের ভিতরে থেকে গোপনে হলেও তারা তাদের স্বাধীনতার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে পারত। এতে তাদের স্বাধীনতার রাজনীতি স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একটা আড়াল পেত। এই রকম কোন কর্মসূচী না পাওয়ায় তারা স্বাধীনতার দাবীকে সামনে রেখে এমন এক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ল যা তাদেরকে অনেকাংশে জন-বিচ্ছিন্নও করল। কারণ যে জনগণ পাকিস্তান এনেছিল তারা তখনও পাকিস্তান ভাঙ্গার রাজনীতি করতে প্রস্তুত ছিল না। তাদের সর্বোচ্চ দাবী ছিল স্বায়ত্তশাসন। ১৯৬৬-তে প্রদত্ত শেখ মুজিবের ছয় দফা ছিল তেমন একটি কর্মসূচী।
স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে কেন্দ্রে রেখে একটি উন্নততর কর্মসূচী দিতে পারলে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন একটি পর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হতে পারত। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটলে সেখান থেকেই শুরু করা যেতে পারত স্বাধীনতার যুদ্ধ তথা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তবে সেভাবে এটা ঘটলে নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের অংশগ্রহণ ঘটলেও সেটা হত প্রধানত ভাসানী এবং ন্যাপ নেতৃত্বাধীন। আর এখানেই কমিউনিস্টদের আপত্তি। কারণ তাতে সর্বহারার একনায়কত্বের নামে একদল বুদ্ধিজীবীর নেতৃত্বে গঠিত কমিউনিস্ট পার্টির একনায়কত্ব এবং অতঃপর ব্যক্তিগত মালিকানাহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। সুতরাং কমিউনিস্টদের উপর নির্ভরশীল এবং তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত মওলানা ভাসানী সে কালে কার্যকর কোন কর্মসূচী দিতে পারেন নাই।
কমিউনিস্ট নেতৃত্ব মনে করেছিল যে, শ্রেণী রাজনীতি দিয়ে তারা শ্রমিক-কৃষকের জাগরণ ঘটিয়ে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসবে এবং ব্যক্তিমালিকানা ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম বা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু জনগণের ব্যাপকতর অংশ এই ধরনের শ্রেণী রাজনীতিকে এ দেশে গ্রহণ করে নাই। সে কালেও নয়, এ কালেও নয়। এটা যে শুধু তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ এবং বর্তমান বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য তা-ই নয়, উপরন্তু সাধারণভাবে সমগ্র মুসলিম পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য।
কারণটা কী? ইসলামের মূল একটি বৈশিষ্ট্যের দিকে দৃষ্টি দিলে এটা অনেকটা বুঝা যেতে পারে। ইসলামী সমাজে শ্রেণীভেদ এবং এমন কি তীব্র শ্রেণী বৈষম্য থাকলেও শ্রেণী চেতনার চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী যে চেতনা সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকে সেটা হচ্ছে ইসলামী উম্মা বা সম্প্রদায় চেতনা, যেটাকে আমরা গোষ্ঠী চেতনা বলতে পারি। ইসলাম হচ্ছে ব্যক্তিসত্তাহীন এমন এক নিরঙ্কুশ গোষ্ঠীবাদের ধর্ম যেখানে নিরঙ্কুশভাবে একনায়কী ও স্বৈরতন্ত্রী সামাজিক কর্তৃত্বের অধীনে সমগ্র সমাজ ক্রিয়াশীল থাকে। এখানে সামাজিক বন্ধন এবং সমাজপতিদের তথা সামাজিক কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ প্রচণ্ড রূপে দৃঢ়বদ্ধ। প্রবল মাত্রায় ধন বৈষম্য থাকলেও সেটাকে যেমন বিশ্ব কর্তৃত্বের ইচ্ছা বলে মেনে নেওয়া হয় তেমন মসজিদে ধনী-গরীব, শাসক-শাসিত সবার একত্রে নিয়মিত নামাজ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও প্রচার শ্রেণী ভেদকে চেতনার জগতে প্রবল হতে দেয় না। এই অবস্থায় প্রবল হয়ে থাকে ধর্মীয় গোষ্ঠী বা মুসলিম উম্মার চেতনা বা বোধ। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব এবং ধনিক শ্রেণীর প্রতি জনগণ থাকে সাধারণত অন্ধভাবে অনুগত। যখন কেউ শ্রেণী ভেদকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এনে সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি করে তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বকারী শ্রেণী কিংবা ক্ষমতাবান ও সম্পত্তিবান শ্রেণী তার বিরুদ্ধে সহজে সাধারণ মানুষকে জমায়েত করে। এর জন্য তাদের সহজ হাতিয়ার হয় ধর্ম। তারা তখন সমাজ পরিবর্তনকামীদেরকে অভিযুক্ত করে নিরীশ্বরবাদী বা কাফের (সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) রূপে।
মার্কসবাদ বা কমিউনিজম যেহেতু লোকবাদী বা নিরীশ্বরবাদী দর্শন সেহেতু মার্কসবাদ বা কমিউনিজমের পরিচয় নিয়ে গেলে সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকারী শ্রেণীগুলির পক্ষে এই অভিযোগ তুলে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা আরও সহজ হয়। তাতে অনেক সময় জনগণও ব্যাপকায়তনে যোগ দেয় এবং কমিউনিস্ট নিধন করে গণহারে। এ প্রসঙ্গে আমরা ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট আন্দোলনের মর্মান্তিক পরিণতির কথা উল্লেখ করতে পারি।
অভিজ্ঞতা বলে যে, মার্কসবাদের শ্রেণী চেতনা ইসলামের গোষ্ঠী চেতনাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে না। এর ফলে ইসলামী সমাজে সম্পত্তিবান শ্রেণীগুলির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলুপ্তি অভিমুখী কমিউনিস্ট আন্দোলন তেমন কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। তাছাড়া ইসলামে আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র বলা হলেও ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক হতে বাধা নাই। এ কথা ভুললে চলবে না যে, ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ নিজেই ছিলেন সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক, যা তিনি প্রথম জীবনে স্ত্রীর সূত্রে (খাদীজার সঙ্গে বিবাহ সূত্রে) এবং পরবর্তী জীবনে যুদ্ধের সূত্রে (যুদ্ধে লব্ধ ‘মালে গণিমত’) লাভ করেন। ফলে সাধারণ মুসলমানের কাছে (এমনকি তারা নিঃস্ব হলেও) ব্যক্তিগত সম্পত্তিহীন সমাজ-কল্পনা তেমন কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। একদিকে, সমাজ কর্তৃত্বের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং ফলে দৃঢ়বদ্ধ গোষ্ঠীবাদ, অপর দিকে, ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তির প্রতি অনুমোদন অথবা আকর্ষণ এবং সর্বোপরি ধর্মের মাধ্যমে গড়ে তোলা বিশেষ চিন্তা পদ্ধতির কারণে আমজনতার চেতনার অবিশ্বাস্য নিম্ন মান এখানে কমিউনিস্ট রাজনীতির সাফল্যের কোন জায়গা রাখে না।
এই বাস্তবতায় ইসলামী সমাজে পরিবর্তন ঘটে উপর তলা থেকে অথবা বাইরের সমাজের চাপে বা অধীনতায়। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণভাবে পরিবর্তন ঘটাতে হলে এখানে বিভাজনটা ঘটাতে হয় প্রথমে উপর তলায়। তারপর সেটা বিস্তৃত হতে পারে নীচ তলায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সাধারণত মধ্যবিত্ত বা মধ্য শ্রেণী। উপর তলায় বিভাজন ঘটিয়ে একটা লোকবাদী বা উদার ও প্রগতিশীল, নীতিনিষ্ঠ, উৎপাদনশীল, দেশপ্রেমিক এবং গণতান্ত্রিক সম্পত্তিবান শ্রেণী গঠনের রাজনীতি গড়ে তুলতে পারলে সেই শ্রেণী তার গঠন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ভাঙ্গার প্রয়োজনে জনগণকে সংগঠিত করতে বাধ্য হয়। মার্কসীয় পরিভাষা ব্যবহার করলে আমরা এই শ্রেণীকে জাতীয় বুর্জোয়া বলতে পারি।
ষাটের দশকে এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সীমাহীন ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে এ দেশে জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণী গঠনের তাৎপর্য না বুঝা এবং সেই কারণে মওলানা ভাসানীকে তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে না দেওয়া। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে পিকিংপন্থী কমিউনিস্টদেরকে দায়ী করতে হয়। অপর দিকে, মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার সহযোগী তথা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া নেতা শেখ মুজিবকে জাতীয় বুর্জোয়া নেতা ভেবে নিয়ে সীমাহীন বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিল।
আপাত দৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমস্যা আলোচনা করতে গিয়ে ষাটের দশকে কমিউনিস্ট রাজনীতির ভূমিকা ও সমস্যা নিয়ে কিছু আলোচনা করতে হল। কারণ এটাই ঘটনা যে, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এ দেশে কমিউনিস্ট রাজনীতির বিস্তারের একটি প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জেগে উঠা বাঙ্গালী চেতনাকে অবলম্বন করে বাঙ্গালী জাতির জন্য একটি লোকবাদী, সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতি। এই রাজনীতিকে অবলম্বন করে এমন এক প্রজন্মের উত্থান ঘটে যা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান ধ্বংসের জন্য ’৭১-এ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে। এই যুদ্ধ হলেও সেটা তাদের নেতৃত্বে হল না। কেন হল না সেটা সম্ভবত পূর্ববর্তী আলোচনায় কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়েছে।
এই বিষয়ে আলোচনা শেষ করার পূর্বে এখানে বলা দরকার যে, এ দেশে লোকবাদী এবং প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার যে বিস্তার ষাটের দশকে ঘটেছিল তার মূলে প্রধানত ক্রিয়াশীল ছিল এই প্রজন্ম দ্বারা সৃষ্ট পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলন। স্বাধীনতা আন্দোলন প্রথমেই অধিকাংশ জনগণ কর্তৃক সমর্থিত না হলেও এর দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিল সমাজ মানস যা একটি প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী ও উদার সমাজ-জমি তৈরী করছিল।
কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় ভারতের সাহায্যে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব বঙ্গ স্বাধীন হয়ে গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। যে জিনিস গড়ার সাধনা তারা করে নাই বিভিন্ন ঘটনার সংযোগে সেটা তারা হাতে পেল। এরপর এরা তাদের চিরাচরিত চরিত্র অনুযায়ী লুটপাটে নেমে পড়ল। এই লুটপাটকে আড়াল দিবার জন্য মুক্তিযুদ্ধের কিছু মূলনীতির কথা বলতে হল। সুতরাং ’৭২-এর সংবিধানে চার মূলনীতি হিসাবে স্থান পেল জাতীয়তাবাদ এবং সেকিউলারিজম, যার বাংলা করা হল ধর্ম নিরপেক্ষতা (আসলে বাংলা হওয়া উচিত জাগতিকতা বা লোকবাদ)। এ ছাড়া স্থান পেল সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। কিন্তু এসবই ছিল কাগুজে ঘোষণা মাত্র। সুকৌশলে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ব্যবস্থা বহাল রাখার অথবা কোথায়ও তা ভেঙ্গে পড়লে তাকে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হল। বস্তুত পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঐতিহ্যকে পুনর্বহালের কাজ শেখ মুজিবের হাত দিয়েই শুরু হল। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারও কৌশলপূর্ণভাবে তিনি শুরু করেন। শেখ মুজিব যা করার উপযুক্ত তা-ই তো করবেন, যা করার উপযুক্ত নন তা করবেন কী করে? সুতরাং তার শাসনাধীনেই শুরু হল বাংলাদেশের ব্যাপকায়তনে দুর্বৃত্তায়ন। তার শাসনামলেও অব্যাহত রইল নিরাপত্তাহীন এবং নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্ম সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মানুষদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে অভিগমন। শত্রু সম্পত্তি আইনকে অর্পিত সম্পত্তি আইন নাম দিয়ে রেখে দেওয়া, ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় (ওআইসি) যোগদান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কালক্ষেপণ ও শৈথিল্য ইত্যাদি কয়েকটি ঘটনা মুজিব ও আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন ভূমিকা বুঝতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের আজকের এই পরিণতির উৎস খুঁজতে গেলে আমাদেরকে ’৭১-এ যেতে হবে। আর তখন আমরা দেখতে পাব ভারতের সাহায্য নিয়ে এবং বামপন্থীদের বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে এমন একটা দল স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দখল করেছিল যারা কখনই ’৭১-এ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আক্রমণ অভিযানের পূর্বে যুদ্ধের রাজনীতি দূরে থাক স্বাধীনতার রাজনীতিও করে নাই। নিয়মতন্ত্র ও নির্বাচন এবং ৬ দফা তথা পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে স্বায়ত্তশাসন পর্যন্ত ছিল তাদের রাজনীতির সর্বোচ্চ সীমা। অর্থাৎ বাঙ্গালীর একটা জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি তাদের কল্পনাতেও ছিল না। এটা ছিল তৎকালীন বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের ভিতর। সুতরাং, যে কথা ইতিপূর্বে বলেছি, এই প্রজন্মের ভাবনায় ছিল বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হিসাবে পূর্ব বঙ্গের স্বাধীনতা অর্জন, দ্বিতীয় ধাপ ছিল পশ্চিম বঙ্গের স্বাধীনতা অর্জন এবং অতঃপর তৃতীয় ধাপ ছিল স্বেচ্ছাসম্মতির ভিত্তিতে যুক্তবাংলা বা বঙ্গরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতির পুনরেকত্রীকরণ অর্জন।
এই ভাবনা তাদের ভিতর ছিল বলে তারা সর্বদা তাদের গোপন সংগঠনের নামের পূর্বে দেশীয় পরিচয় হিসাবে পূর্ব বাংলা ব্যবহার করত, যেমন ১৯৬৮-এর জানুয়ারীতে সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে গঠিত পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন যা পরবর্তী সময়ে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি নাম নেয় এবং ঐ একই সালের এপ্রিলে শামসুজ্জোহা মানিকের উদ্যোগে গঠিত পূর্ব বাংলার বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন যা পরবর্তী সময়ে দেবেন-মতিন-আলাউদ্দীন নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হয়, ইত্যাদি। অর্থাৎ বৃহৎ বা যুক্ত বাংলার একটা অংশ হিসাবে পূর্ব বাংলাকে দেখতে চাওয়া ছিল তাদের চিন্তায় সংগুপ্ত। এই প্রজন্মের মূল ভাবনায় বাঙ্গালী জাতি খণ্ডিত সত্তা ছিল না। ধর্মের ভিত্তিতে সংগঠিত জাতির বিভাজনকে তারা তাদের মত করে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল।
আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদ পাকিস্তানভুক্ত পূর্ব বঙ্গ বা খণ্ডিত বঙ্গ ভিত্তিক। এখানেই তা পাকিস্তানের দ্বি-জাতিতত্ত্বের অনুসারী। এই জায়গা থেকে তা কখনই বের হতে পারে নাই বলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর কখনই তার লক্ষ্য হিসাবে যুক্তবাংলা বা বঙ্গরাষ্ট্র স্থান পায় নাই। ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা আওয়ামী লীগের আদর্শিক বিভ্রান্তি কিংবা দ্বিচারিতা বাদ দিয়ে নগ্নভাবে ইসলামের আশ্রয় নিয়েছে এবং সংবিধানে পরিবর্তন এনে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এভাবে তারা বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অসমাপ্ত সংগ্রামের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে সংবিধানে সংশোধন এনে আওয়ামী লীগও সেই অবস্থানের সঙ্গে নিজেকে স্পষ্টভাবে যুক্ত করেছে।
বস্তুত পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরাকে অস্বীকার করে শুধু পূর্ব বঙ্গ বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমার ভিতরে আবদ্ধ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ইসলামী সাম্প্রদায়িকতাবাদের নামান্তর মাত্র। আওয়ামী লীগের সীমাবদ্ধতা এখানে।
এ দেশে ’৭১ পরবর্তী সময়ে যেটা করা উচিত ছিল সেটা হচ্ছে বঙ্গরাষ্ট্র বা স্বাধীন যুক্তবাংলাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা করা। কোন্ দিন এই লক্ষ্য অর্জিত হবে বা আদৌ হবে কিনা সেটা কোন বিচার্য বিষয় নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এটা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এবং বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একান্ত প্রাথমিক এবং নৈতিক দাবীতে পরিণত হয়েছে। এটা না করায় ১৯৪৭-এর ধর্মীয় বিভক্তি এমন এক নৈতিক ও বৈধ শক্তি লাভ করেছে যা ক্রমবর্ধমানভাবে রাষ্ট্র ও সমাজের দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইসলামীকরণ তথা ধর্মের শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে।
যুক্ত বাংলা বা বঙ্গরাষ্ট্রের লক্ষ্য ঘোষণা বাংলাদেশকে লোকবাদী ধারায় গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। অনেক দেরীতে হলেও এই করণীয় সম্পাদন করতে হবে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে। এটি এমন একটি নৈতিক বা আদর্শিক বিষয় যাতে কোন রাষ্ট্রেরই ক্ষুব্ধ হবার কারণ থাকে না। এমন একটা লক্ষ্য রাখা বা ঘোষণা করা কোন রাষ্ট্রের জন্য যেমন অন্যায় বা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নয় তেমন এর জন্য আর একটি রাষ্ট্র আক্রমণও করতে পারে না। আরব দেশগুলির অনেক কয়টিতে বিভিন্ন সময়ে আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বৃহত্তর আরব রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য ঘোষণা এমন কি চেষ্টাও হয়েছে। যেমন মিসর, সিরিয়া, ইরাক ইত্যাদি। বাথ সামজতন্ত্রের একটি লক্ষ্য ছিল আরব দেশগুলির সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর আরব রাষ্ট্র গঠন করা।
১৯৪৭-এর ১৪ আগস্ট তারিখে ধর্মীয় দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলার বিভক্তির মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতির যে মহাবিপর্যয় ঘটেছে তাকে আমরা মুহূর্তের জন্যও মেনে নিতে পারি না। এই বিভক্তি বাস্তব। কিন্তু এটা চিরকালীন বাস্তব নয় এবং তাকে আমরা আমাদের মনোজগতে বৈধতা দিতে পারি না। আমরা বাঙ্গালী হিসাবে আমাদের জাতিসত্তার পুনরেকত্রীকরণের দাবী তুলবার ন্যায্য অধিকারকে ত্যাগ করতে পারি না। সুতরাং ’৭১-এ বাঙ্গালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার যে ভূখণ্ডটি আমরা পেয়েছি বঙ্গরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেটিকে জাতীয়তাবাদী ও লোকবাদী ধারায় পুনর্গঠনের মাধ্যমে বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপটিকে সম্পন্ন করতে পারি।
এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা বলা অত্যাবশ্যক মনে করি তা হচ্ছে বঙ্গরাষ্ট্রকে লক্ষ্য হিসাবে তুলে ধরে যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ চর্চা হবে তা হবে আপাদমস্তক গণতান্ত্রিক। ফলে তা হবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অন্যান্য জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা জানি যে, ষাটের দশকে যে বিপ্লবী তরুণ প্রজন্ম বাঙ্গালীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেছিল তাদের রাজনৈতিক ভাবনায় ও কর্মসূচীতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অধিকারের প্রতি পূর্ণ স্বীকৃতি ছিল। সুতরাং গণতান্ত্রিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ষাটের দশকের বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এই ঐতিহ্যকে সর্বদা ধারণ করবে।
সবশেষে বলি আজ প্রয়োজন ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, লুণ্ঠন, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙ্গালী জাতির ঐক্যবদ্ধ ও অখণ্ড রাষ্ট্র বঙ্গরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ছোট ও মাঝারী শিল্পপতি-ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী এবং কৃষক-শ্রমিক সহ ব্যাপক জনগণের আন্দোলন গড়ে তোলা। এভাবে যে দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক, সুষম বণ্টন ভিত্তিক এবং লোকবাদী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজতন্ত্র হবে তার এমন একটি উপাদান যা সমাজে উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা রক্ষার প্রয়োজনে ব্যক্তিগত মালিকানা ও ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগকে জায়গা করে দিবে।
রচনা : ১৩ - ১৫ মে, ২০১৪