Banner
সৌদি আরবের মিত্র আবার গণতন্ত্রী হয় কী করে? - এমরান হোসেন

লিখেছেনঃ এমরান হোসেন, আপডেটঃ August 21, 2009, 12:00 AM, Hits: 9360

 

দীর্ঘকাল ধরে একটা প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজেছি। তা হল কি করে কোন গণতান্ত্রিক দূরের কথা একটা সভ্য রাষ্ট্র  সৌদি আরবের মত একটা চরম বর্বর মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক হতে পারে? হাঁ, আমি আমেরিকার কথা বলছি।

পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশের বেশীরভাগ মানুষ দু’জন সরকার প্রধানের নাম জানেন। একজন হল তার রাষ্ট্রের সরকার প্রধান আর এক জন হল আমেরিকা নামক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের নাম। নিজের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের নাম জানবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমেরিকার রাষ্ট্র প্রধানের নাম তার কিভাবে যেন মুখস্থ হয়ে যায়।

আমাদের ঢাকা শহরে হাজি সেলিম এবং পিন্টুর নাম সকলে জানে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নাম অনেকেই জানে না। হাজি সেলিম, পিন্টু যেমন সন্ত্রাস ক’রে সকলকে তাদের নাম মুখস্থ করিয়েছে তেমন আমেরিকাও সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসী ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে সবাইকে তার নাম মুখস্থ করিয়েছে।

কিসের নেশায় তারা এটা করছে? সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য? শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য? নাকি পৃথিবী ব্যাপী নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুত্ব রক্ষা করার জন্য?

তারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। অথচ চরম স্বেচ্ছাচারী এবং দুরাচারী সৌদি আরবীয় রাজতন্ত্র তার পরম মিত্র। সৌদি রাজতন্ত্রের যাবতীয় দুষকর্মের সবচেয়ে বড় সহায়ক হয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইসলামের পতাকাবাহী সৌদি রাজতন্ত্রের মধ্যযুগীয় বর্বরতা তার চোখে পড়ে না। অথচ সাদ্দামের স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদ করার ধুয়া তুলে এবং গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র রাখার ভুয়া অজুহাত তুলে ইরাককে শেষ করেছে বহু আগে। হাজার হাজার বছরের সভ্যতার দেশটিকে তার সমস্ত বেশভূষা কেড়ে নিয়ে উলঙ্গ করে ছেড়েছে। অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরের আসবাবপত্র হয়েছে লুঠ। সেইসব জিনিস আর কোনও কালে ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই।

ইরাক যে তেলের উপর ভাসছিল সেই তেল নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে তারা জাহাজ ভরে। অজুহাত স্বৈরশাসক দূরীকরণ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। এই কথা হাসির খোরাক ছাড়া অন্য কিছুই যোগায় না। কারণ পৃথিবীতে স্বৈরশাসক বহু আছে। অনেকেরই পৃষ্ঠপোষক তারা নিজেরা।

মধ্যপ্রাচ্যে চৌদ্দটি দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, বাহরাইন, মরক্কো ও সৌদি আরবে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। এই সব দেশে সেই ধরণের রাজতন্ত্র বিদ্যমান যে ধরনের রাজতন্ত্রের কথা মনে হলে সেই বর্বর যুগের কথা মনে পড়ে। সেখানকার মানুষ এখনো সেই বর্বর যুগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি শুধু ইসলামী ব্যবস্থার চাপের কারণে নয়, এই রাজতন্ত্র প্রথা বিলুপ্ত না হওয়ার কারণেও। এগুলির সব কয়টিরই সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ও সংরক্ষক আমেরিকা।

এই রাজতন্ত্র প্রেমিক দেশগুলোর চরিত্র নেই বললেই চলে। সৌদি আরবের সংবিধান কোরান। তারা আধুনিক সভ্যতার সকল নিয়মের বরখেলাপ করে মধ্যযুগীয় কোরানের আইন অনুয়ায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র শাসন করে চলেছে। কিন্তু তাতে বারাক ওবামা বা মার্কিন ও পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের কোন সমস্যা নেই। যত সমস্যা তাদের তাঁবেদার বা দাসানুদাস না হলে!

এইসব মধ্যযুগীয় বর্বর রাষ্ট্রগুলিরও প্রয়োজন মার্কিনের আশ্রয়। চমৎকার গণতন্ত্র বুশ কিংবা ওবামার তথা মার্কিন ও পাশ্চাত্যের! মিয়ানমার কিংবা উত্তর কোরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের চোখে ঘুম নেই। কিন্তু সৌদি আরবের মত গুহা মানবীয় শাসন ব্যবস্থায় তাদের সুখনিদ্রায় এতটুকু ব্যাঘাত ঘটে না। বরং সে ঘুম আরও গাঢ় হয় মাত্র।

কোরান শাসিত সৌদি শাসকদেরও কোন সমস্যা হয় না আমেরিকার আশ্রয়ে বেঁচে থাকতে এবং তার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে। অথচ কোরানে সপষ্ট করে বলা আছে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু সৌদি আরব শুধু বন্ধুত্ব নয়, তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরাককে ধ্বংস করার জন্য তাদের দেশে আমেরিকার সৈন্যদের জায়গা পর্যন্ত করে দিয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও এহেন পরিস্থিতির জন্য সৌদি আরবকে কোন দোষারোপ করলেন না। ভাবখানা এমন সৌদি আরব যাই করে তাই ধর্ম। এই সুযোগে আমেরিকা তার উদ্দেশ্য হসিল করছে।

আজকের আফগানিস্তানের পরিস্থিতির জন্য মূল দায় কার? সেটা কি আমেরিকার নয়? ইসলামী জঙ্গী আর তালেবান জন্ম দিয়ে, দুধ-কলা দিয়ে পুষে, বড় করে এখন তাদের দমনের খেলার নাম কি আমেরিকার গণতন্ত্রের লীলা? এটাকেই কি বলে, ’সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো?’

বারাক ওবামার কায়রো বক্তৃতাকে মুসলিম মনীষীরা বলেছেন এটা নাকি তার ক্ষমতা গ্রহণ পরবর্তী কালে দেওয়া বক্তৃতার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা। সকলে খুশী হবার কারণ তিনি বলেছেন ইসরায়েল থাকবে এবং একই সঙ্গে ফিলিস্তিনও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হবে এ কথাতেই সকলে খুশী। ওদিকে তিনি ইরাকে-আফগানিস্তানে মানুষ মারার খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে কিছু বলা হল না।

আমাদের মত গরীব দেশগুলোতে এই আমেরিকার দালালের কিন্তু অভাব নেই। তারা ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মত আমেরিকার গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে আমাদের জীবনকে যে বর্বর ও নৃশংস ব্যবস্থা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে তাকে ভুলে থাকতে বলে। ইসলাম যদি সাম্রাজ্যবাদ হয় তবে এটা কী? এই কারণেই কি সৌদি আরব আর আমেরিকার মধ্যে এত প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা?

অনলাইন :   ২১ আগস্ট, ২০০৯

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ