লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ July 18, 2013, 4:51 AM, Hits: 1607
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা
[ডিসেম্বর ১৯৫৩]
নীতি : কোরান ও সুন্নার মৌলিক নীতির খেলাফ কোন আইন প্রণয়ন করা হইবে না এবং ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবন-ধারণের ব্যবস্থা করা হইবে।
১। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হইবে।
২। বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারী ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করিয়া ভূমিহীন কৃষকের মধ্যে উদ্বৃত জমি বিতরণ করা হইবে এবং উচ্চহারের খাজনা ন্যায়সংগতভাবে হন্সাস করা হইবে এবং সার্টিফিকেট যোগে খাজনা আদায়ের প্রথা রহিত করা হইবে।
৩। পাট ব্যবসায়কে জাতীয়করণ করার উদ্দেশ্যে তাকে পূর্ব বংগ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে আনয়ন করিয়া পাট চাষীদের পাটের মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হইবে এবং লীগ মন্ত্রীসভার আমলের পাট কেলেংকারী তদন্ত করিয়া সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তির ব্যবস্থা ও তাহাদের অসদুপায়ে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
৪। কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হইবে ও সরকারী সাহায্যে সকল প্রকার কুটির ও হস্তশিল্পের উন্নতি সাধন করা হইবে।
৫। পূর্ব বংগকে লবণশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করিবার জন্য সমুদ্র উপকূলে কুটির শিল্পের ও বৃহৎ শিল্পের লবণ তৈয়ারীর কারখানা স্থাপন করা হইবে এবং মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভার আমলের লবণের কেলেংকারী সম্পর্কে তদন্ত করিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হইবে ও তাহাদের অসদুপায়ে অর্জিত যাবতীয় অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
৬। শিল্প ও কারিগর শ্রেণীর গরীব মোহাজেরদের কাজের আশু ব্যবস্থা করিয়া তাহাদের পুনর্বসতির ব্যবস্থা করা হইবে।
৭। খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।
৮। পূর্ব বংগকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিল্পায়িত করিয়া ও কৃষিকে আধুনিক যুগোপযোগী করিয়া শিল্প ও খাদ্যে দেশকে স্বাবলম্বী করা হইবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমসংঘের মূলনীতি অনুসারে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক এবং সকল প্রকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হইবে।
৯। দেশের সর্বত্র একযোগে প্রাথমিক ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করা হইবে এবং শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে।
১০। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করিয়া শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্যকর করিয়া কেবলমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হইবে এবং সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যালয়সমূহের বর্তমান ভেদাভেদ উঠাইয়া দিয়া একই পর্যায়ভুক্ত করিয়া সকল বিদ্যালয়সমূহকে সরকারী সাহায্যপুষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হইবে এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে।
১১। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল কানুন বাতিল ও রহিত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করিয়া উচ্চ শিক্ষাকে সস্তা ও সহজ-লভ্য করা হইবে এবং ছাত্রাবাসের অল্প ব্যয়সাধ্য ও সুবিধাজনক বন্দোবস্ত করা হইবে।
১২। শাসন ব্যয় সর্বাত্মকভাবে হন্সাস করা হইবে এবং তদুদ্দেশ্যে উচ্চ বেতনভোগীদের বেতন কমাইয়া ও নিম্ন বেতনভোগীদের বেতন বাড়াইয়া তাহাদের আয়ের একটি সুসংগত সামঞ্জস্য বিধান করা হইবে। যুক্তফন্সন্টের কোন মন্ত্রী এক হাজারের বেশী বেতন গ্রহণ করিবেন না।
১৩। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-রিশওয়াত বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা করা হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী পদাধিকারী ও ব্যবসায়ীর ১৯৪০ সাল হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত সময়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ লওয়া হইবে এবং সন্তোষজনক কৈফিয়ত দিতে না পারিলে তাহাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
১৪। জননিরাপত্তা আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রভৃতি কালা-কানুন রদ ও রহিত করত: বিনাবিচারে আটক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হইবে ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার করা হইবে এবং সংবাদপত্র ও সভা-সমিতি করিবার অধিকার অবাধ ও নিরংকুশ করা হইবে।
১৫। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ হইতে পৃথক করা হইবে।
১৬। যুক্তফন্সন্টের প্রধান মন্ত্রী বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম বিলাসের বাড়ীতে বাসস্থান নির্দিষ্ট করিবেন এবং বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলাভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে।
১৭। বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবীতে যাহারা মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভার গুলিতে শহীদ হইয়াছেন, তাহাদের পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ ঘটনাস্থলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হইবে এবং তাহাদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইবে।
১৮। ২১শে ফেব্রুয়ারীকে শহীদ দিবস ঘোষণা করিয়া উহাকে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করা হইবে।
১৯। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব বংগকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয় (অবশিষ্টাত্মক ক্ষমতাসমূহ) পূর্ব বংগ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে এবং দেশরক্ষা বিভাগের স্থল বাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে ও নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা হইবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র নির্মাণের কারখানা নির্মাণ করত: পূর্ব পাকিস্তানকে আত্মরক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হইবে। আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হইবে।
২০। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভা কোন অজুহাতেই আইন পরিষদের আয়ু বাড়াইবে না। আইন পরিষদের আযু শেষ হওয়ার ছয় মাস পূর্বেই মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করিয়া নির্বাচন কমিশনের মারফত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করিবেন।
২১। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভার আমলে যখন যে আসন শূন্য হইবে, তিন মাসের মধ্যে তাহা পূরণের জন্য উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হইবে এবং পর পর তিনটি উপনির্বাচনে যুক্তফন্সন্টের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হইলে মন্ত্রীসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিবেন।
শেখ মুজিবের ৬ দফা
[৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬]
ভারতের সাথে বিগত সতের দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ রেখে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো সম্পর্কে আজ নূতনভাবে চিন্তা করে দেখা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শাসনকার্য নির্বাহের ক্ষেত্রে বাস্তব যে সব অসুবিধা দেখা দিয়েছিল তার পরিপেক্ষিতেই এই প্রশ্নটির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কথা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জাতীয় সংহতি অটুট রাখার ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রগাঢ় আন্তরিকতা ও দুঢ় সংকল্পই দেশকে এই অস্বাভাবিক জরুরী অবস্থাতেও চরম বিশৃঙ্খলার হাত হতে রক্ষা করেছে। এই অবস্থার আলোকে সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনা করে পাকিস্তানের দু’টি অংশ যাতে ভবিষ্যতে আরও সুসংহত একক রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে পরিগণিত হতে পারে এই সংক্ষিপ্ত ইশতাহারটির লক্ষ্য তা-ই। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই আমি দেশবাসী জনসাধারণ ও রাষ্ট্রের আজিকার কর্ণধারদের কাছে নিম্নলিখিত ছয়-দফা কর্মসূচী পেশ করছি।
– শেখ মুজিবুর রহমান
প্রস্তাব- ১
শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি :
দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশেনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের। আইন পরিষদের (Legislature) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম এবং এই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারণের সরাসরি ভোটে।
প্রস্তাব - ২
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা :
কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবলমাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে, যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অংগ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরংকুশ।
প্রস্তাব- ৩
মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা :
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু’টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারে :-
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। অথবা
(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে করে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থ বিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।
প্রস্তাব - ৪
রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা :
ফেডারেশনের অংগ-রাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অংগ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অংগ-রাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
প্রস্তাব - ৫
বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা :
(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অংগ-রাষ্ট্রগুলির এক্তিয়ারাধীন থাকবে।
(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অংগ-রাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।
(ঘ) অংগ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্যাদি চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা কর জাতীয় কোন বাধা-নিষেধ থাকবে না।
(ঙ) শাসনতন্ত্রে অংগ-রাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্বস্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
প্রস্তাব - ৬
আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা :
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অংগ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
ন্যাপের ১৪ দফা
[৪-৭ জুন, ১৯৬৬]
[১৯৬৬ সালের ৪, ৫, ৬ ও ৭ জুন অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ‘জাতীয় মুক্তির কর্মসূচী’ শিরোনামে গৃহীত]
জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপাইয়া দেওয়া একটি অগণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে দেশ আজ নিষ্পিষ্ট হইতেছে, দুর্নীতি জাতির অস্থিমজ্জায় প্রবেশ করিয়াছে। পুঁজিপতি ও সমাজ বিরোধীরা তাহাদের জীবনের চরম সুযোগ লাভ করিতেছে। এক রাজনৈতিক শ্বাসরুদ্ধকর ও বুদ্ধিবৃত্তির স্থবিরতার পরিবেশে মানুষের মন আজ দ্বিধাগস্ত, মৌলিক স্বাধীনতার অস্বীকৃতি দেশের মূলে আঘাত হানিতেছে এবং সন্দেহ ও হতাশার এক পরিবেশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সুযোগ লাভ করিতেছে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহিক সংসদ জনগণের ঐক্য, প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশান, পাকিস্তানের সংহতি, ফেডারেল ধরনের পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র, বর্তমান স্বৈরাচারী একনায়কত্বের উচ্ছেদ সাধন ও সমাজতন্ত্রের দিকে অগ্রগতির স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে, পার্টি ও জনগণকে সংগঠিত করার জন্য পার্টির সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানাইতেছে। এই উদ্দেশ্যে আমরা নিম্নলিখিত দাবীসমূহ আদায়ের জন্য সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল পাকিস্তানীকে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন গড়িয়া তোলার আহ্বান জানাইতেছি : ১। বর্তমান আইন পরিষদগুলি ভাংগিয়া দিয়া প্রত্যক্ষ ও প্রাপ্তবয়স্কের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নূতন আইন পরিষদ নির্বাচন করিতে হইবে এবং অনুরূপভাবে নির্বাচিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নিম্নোদ্ধৃত বিষয়গুলির ব্যবস্থা করার জন্য শাসনতন্ত্র সংশোধন করিবেন :
(ক) ফেডারেল শাসন ব্যবস্থার অধীনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান।
পাকিস্তানের উভয় অংশকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান। কেবলমাত্র দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও মুদ্রা এই তিনটি বিষয়ের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ন্যস্ত থাকিবে।
(খ) সংস্কৃতি ও ভাষার সমতা এবং ভৌগোলিক সংলগ্নতার ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশসমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসাবে পুনর্গঠন। পশ্চিম পাকিস্তানের পুনগর্ঠিত প্রদেশসমূহের গণতান্ত্রিক গঠন কাঠামো একইরূপ হইবে এবং তাহারা (প্রদেশসমূহ) একটি আঞ্চলিক ফেডারেশনে ঐক্যবদ্ধ হইবে। এই ফেডারেশনের আইন পরিষদে কোন প্রদেশই নিজের সংখ্যাধিক্যের বলে একত্রে অবশিষ্ট প্রদেশসমূহ অপেক্ষা বেশী সংখ্যক আসনের অধিকারী হইতে পারিবে না এবং প্রদেশসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ যে সকল বিষয়ে একমত হইবেন, পরিষদ সেই সকল সাধারণ বিষয় কার্যকর করিবে। একটি আঞ্চলিক ফেডারেশনের দ্বারা বর্তমান এক-ইউনিট ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার উপরোক্ত লক্ষ্য শাসনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জন করা হইবে। বর্তমান উপজাতীয় এলাকা, দেশীয় রাজ্য, ইজারাধীন এলাকা, এজেন্সিসমূহ ও অনুরূপভাবে শাসিত এলাকাগুলিসহ সমস্ত বিশেষ ও সাধারণ আওতা বর্হিভূত এলাকাসমূহকে সন্নিহিত প্রদেশগুলির সহিত অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে যুক্ত করিতে হইবে। যাযাবর, আধা-যাযাবর ও উপজাতীয় জনসাধারণকে বৃহত্তর জীবনের সহিত সম্পৃক্ত করিতে হইবে যাহাতে তাহারা উন্নত নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধাদি ভোগ করিতে পারে।
সকল পাকিস্তানীর মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব বোধের বিকাশকে উৎসাহিত ও শক্তিশালী করিতে হইবে। সামাজিক সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করিতে হইবে এবং উভয়াঞ্চলীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও স্বল্পব্যয়সাধ্য করিতে হইবে।
(গ) পরিষদগুলিকে আইন ও বাজেট পাশের পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করিতে হইবে এবং প্রেসিডেন্ট ও গভর্ণরগণের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রহিত করিতে হইবে।
(ঘ) জনগণকে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা দিতে হইবে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৪৮ সালে গৃহীত মানবাধিকার সনদে স্বীকৃত সকল অধিকার ভোগ করিতে দিতে হইবে।
২। পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতার পুন:প্রতিষ্ঠা এবং ঘোষিত জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করিতে হইবে। সকল দমনমূলক আইন প্রত্যাহার করিতে হইবে।
৩। পিন্স করিম, আবদুস সামাদ খান আচাকযাই, আতাউল্লাহ খান মেংগল, মনিকৃষ্ণ সেন, আবদুল হালিমসহ রাজনৈতিক কারণে সাজাপ্রাপ্ত ও বিনা বিচারে আটক পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বন্দীকে আশু মুক্তি দিতে হইবে। রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল বিচারধীন মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার করিতে হইবে এবং রাজনৈতিক কারণে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ও জরিমানা প্রত্যর্পণ করিতে হইবে।
৪। পাকিস্তানকে ‘সিয়াটো’ ও ‘সেন্টো’ হইতে সদস্যপদ প্রত্যাহার করিতে হইবে। পাকিস্তানে সকল মার্কিন ঘাঁটির বিলোপ সাধন করিতে হইবে এবং এই ধরনের আর কোন চুক্তিতে জড়িত হওয়া চলিবে না।
৫। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা কাঠামোকে পুনর্গঠন করিতে হইবে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে আত্মনির্ভরশীল করিয়া তুলিতে হইবে। নৌ বাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করিতে হইবে।
৬। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও শিল্প সংক্রান্ত নীতির প্রধান লক্ষ্য হইবে এখানকার জনসাধাণের কল্যাণ সাধন। পূর্ব পাকিস্তান হইতে পুঁজি পাচার বন্ধ করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তান বা পশ্চিম পাকিস্তান যেখানেই হউক না কেন, জনসাধারণকে শোষণের এবং গুটিকয়েক পরিবার কর্তৃক দেশের সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করার চেষ্টাকে বন্ধ করিতে হইবে। সকল গুরুত্বপূর্ণ ও মূল শিল্পগুলি সরকারী খাতে প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।
৭। দেশরক্ষা শিল্প সরকারী খাতে সীমাবব্ধ রাখিতে হইবে এবং উহা দেশের উভয়াংশে স্থাপন করিতে হইবে।
৮। আমলাতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি এবং ব্যাংক, বীমা কোম্পানী ও পাট ব্যবসায় জাতীয়করণ করিতে হইবে।
৯। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির পরিমাণ পূর্ব পাকিস্তানে ৩৩ একর ও পশ্চিম পাকিস্তানে ১০০ একরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিতে হইবে। সরকারের খাস জমির মঞ্জুরী অথবা হস্তান্তর শ্রমজীবী কৃষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানে ৫ একর পর্যন্ত এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ১২ একর পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করিতে হইবে। সামরিক শাসনামলে বর্ধিত খাজনা, ট্যাক্স প্রত্যাহার করিতে হইবে।
১০। শ্রমিক সংগঠনের উপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করিতে হইবে এবং আই, এল, ও, কনভেনশনে যে সকল অধিকার স্বীকার করা হইয়াছে তাহার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে। জীবন ধারণের ন্যূনতম মজুরীর নিশ্চয়তা বিধান করিতে হইবে।
১১। সকল স্তরে সকলের নিকট মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার দ্বারা উন্মুক্ত রাখিতে হইবে। হামুদুর রহমান কশিনের রিপোর্ট বাতিল করিয়া একটি নূতন গণতান্ত্রিক কমিশন নিয়োগ করিতে হইবে।
১২। বেলুচিস্তানে নির্যাতনের অবসান ঘটাইতে হইবে এবং সর্দারী প্রথা বাতিল করিতে হইবে।
১৩। পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা প্রতিরোধ করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
১৪। সাধারণ মানুষের উপর হইতে খাজনা ও ট্যাক্সের বোঝা হন্সাসের জন্য কর ধার্য করার পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন করিতে হইবে।
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন)-এর ১১ দফা
[২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭০]
স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ১১ দফা কর্মসূচী
১। সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুঁজির (যাহার চরিত্র আমলা মুৎসু্দ্দি) এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন করিয়া পূর্ব বাংলায় স্বাধীন সার্বভৌম জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা। এই ব্যবস্থায় পূর্ব বাংলার দেশরক্ষা, অর্থনীতি, শাসন ব্যবস্থা, সংস্কৃতি তথা সর্বময় কর্তৃত্ব পূর্ব বাংলার জনগণের হাতে থাকিবে। সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুঁজির জাতীয় নিপীড়ন ও শ্রেণী শোষণের কবলমুক্ত এই ব্যবস্থায় জগণের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইবে ও জনতার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হইবে।
২। (ক) আঠারো ও তদূর্ধ বয়স্ক-বয়স্কা নর-নারীর ভোট ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে জনগণ-পরিষদ নির্বাচিত হইবে। কোন নির্বাচনী এলাকার জনগণ ইচ্ছা করিলে যে কোন সময় তাদের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করিতে পারিবে।
(খ) জনতার গণতান্ত্রিক অধিকার নিরঙ্কুশ করিবার জন্য সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুঁজির দালাল ও সমর্থক যে কোন শ্রেণী ও ব্যক্তিকে ভোটাধিকার হইতে বঞ্চিত করা হইবে।
৩। (ক) হিন্দু, সুমলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, বাংগালী-অবাংগালী, জাতি-উপজাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের জনগণের সমান রাজনৈতিক অধিকার থাকিবে।
(খ) নারী জাতির সমান অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হইবে।
(গ) জনগণের সকল প্রকার মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মতাদর্শের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হইবে।
(ঘ) জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হইবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সহিত সরকারের সম্পর্ক হইবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ভিত্তিতে। ধর্মের ব্যবহার করিয়া সকল প্রকার শোষণ উচ্ছেদ করা হইবে।
৪। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষাকল্পে একটি গণবাহিনী থাকিবে। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী জনতার সমবায়ে এই গণবাহিনী গঠিত হইবে। ইহা ছাড়াও সমগ্র জাতি বিশেষ করিয়া শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী জনতাকে সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তোলা হইবে এবং তাহাদের লইয়া গণ-মিলিশিয়া গঠন করা হইবে।
৫। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিরঙ্কুশ করিবার জন্য আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সাধন করিয়া প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগকে আমূল পরিবর্তন করা হইবে। জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জড়িত ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা হইবে। বিচার বিভাগের মূল ভিত্তি হইবে গণ-আদালত।
৬। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পিন্ডি, ওয়াশিংটন, মস্কো, নয়াদিল্লীর সরকারের বিরোধিতা করা হইবে। যে কোন বন্ধুদেশের বশ্যতা স্বীকার করা হইবে না। সমাজতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হইবে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হইবে পারস্পরিক লাভ ও মুনাফার ভিত্তিতে। পৃথিবীর দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় সাহায্য ও সমর্থন প্রদান করা হইবে।
৭। (ক) জোতদারী, মহাজনী, ইজারাদারী তথা সকল প্রকার সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটানো হইবে। “কৃষকদের হাতে জমি” এই নীতির ভিত্তিতে ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে জোতদার, মহাজনদের উদ্বৃত্ত বাজেয়াপ্ত জমি বন্টন করা হইবে।
(খ) টাকা ও পণ্যে আদায়কৃত খাজনা প্রথার অবসান করা হইবে।
(গ) কৃষকের অর্থকরী ফসল ধান, পাট, ইক্ষু, ইত্যাদির ন্যায্যমূল্য প্রদান করা হইবে। এই সকল ফসলের মূল্য নির্ধারিত হইবে চাউলের সঙ্গে বিনিময়ের ভিত্তিতে।
(ঘ) কৃষিজাত উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদেরকে বিনাসুদে ঋণ দেওয়া হইবে। কৃষককে বকেয়া খাজনা ও ঋণের বোঝা হইতে মুক্ত করিয়া উন্নত চাষাবাদ করিবার জন্য সকল প্রকার উৎসাহ ও সুবিধাদি প্রদান করা হইবে।
৮। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে এবং জল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য সেচ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হইবে।
৯। (ক) বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত সমস্ত শিল্প-ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ বাজেয়াপ্ত করিয়া জনগণের সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করা হইবে।
(খ) বৃহৎ পুঁজির শোষণ হইতে জনগণকে মুক্ত করিবার জন্য বৃহৎ বাইশ পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
(গ) ব্যাংক, বীমা, পাটশিল্প, পাট ব্যবসা ও অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসাসমূহ জাতীয়করণ করা হইবে।
(ঘ) বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্রায়ত্ত করা হইবে।
(ঙ) সকল প্রকার পরোক্ষ কর প্রথা বাতিল করা হইবে। আয়ের হারের ভিত্তিতে কর ধার্য করা হইবে।
(চ) জনগণ বিরোধী অসৎ ব্যক্তি ও আমলাদের অসদুপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
(ছ) পুঁজি নিয়ন্ত্রণ নীতির সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া দেশপ্রেমিক জাতীয় ধনিকদের শিল্প ব্যবসায়ে আনুকূল্য প্রদান করা হইবে।
১০। (ক) প্রত্যেক ফ্যাক্টীর শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং সার্বিক সুবিধাদির ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দান করা হইবে। শ্রমিকদের সন্তান-সন্ততির শিক্ষার ব্যবস্থা করা হইবে।
(খ) দেশে ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে সকল প্রকার বেকার লোকদের কর্মসংস্থান করা হইবে।
১১। (ক) সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করিয়া গণমুখী, বৈজ্ঞানিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হইবে। দশম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর হইবে।
(খ) সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গণসংস্কৃতিকে সর্বাধিক মর্যাদা দেওয়া হইবে এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার কবল হইতে জনগণকে মুক্ত করা হইবে।*
___________________________________________________________________________________________________
* পরিশিষ্টে প্রদত্ত কর্মসূচীগুলোর উৎস : বাংলাদেশের রাজনীতি : প্রকৃতি ও প্রবণতা, ২১ দফা থেকে ৫ দফা। সমাজ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, জুন ১৯৮৭।
___________________________________________________________________________________________________