Banner
সপ্তম অধ্যায় : মওলানা ভাসানী : জনতা জাগাবার কারিগর

লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ July 18, 2013, 4:55 AM, Hits: 1453

ভাসানী ছিলেন এ দেশের কৃষকের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। কিন্তু এ দেশের কৃষকের মধ্যে যেসব দোষ আমি দেখেছি সেগুলোর অধিকাংশ থেকে তিনি বিস্ময়কর পরিমাণে মুক্ত ছিলেন। যে কৃষক লুম্পেন নয়, ভাগ্যবাদী ও ধর্মাচ্ছন্ন নয়, ভীরু নয়, হুজুগে নয়, চৌর্যবৃত্তি ও ফাঁকিতে অভ্যস্ত নয় এমন এক বিশাল কৃষক চেতনার তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। এক অর্থে তিনি নিজেই ছিলেন একজন কৃষক। এই কৃষকের জীবনের ট্র্যাজেডিকে সাহিত্যের ভাষায় এভাবে বোধ হয় বলা যায় :

শক্ত হাতে লাঙ্গলের মুঠি চেপে জমি চষে চলা এই প্রাচীন মহৎ কৃষক স্বপ্ন দেখতেন এক উন্নত ও আধুনিক জাতি সৃষ্টির, নূতন সমাজ সৃষ্টির। কিন্তু তাঁর ছিল না সেই বিদ্যা ও শিক্ষা। তাই তিনি সেই উন্নত ও আধুনিক জাতি ও সমাজ সৃষ্টির বিদ্যা শেখার জন্য ছেলেদের পাঠালেন স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলেরা লেখাপড়া শিখে এবার রাষ্ট্রের বড় চাকুরিতে ঢুকল, ঘুষ খেয়ে টাকা কামাল অথবা বড় লাইসেন্স-পারমিটবাজ হল, ব্যবসাতে ঢুকে শ্রম না করে ফাঁকিতে কিভাবে অঢেল সম্পদ বানানো যায় সেসব শিখল। যখন বুড়ো বাপ গ্রাম থেকে শহরে ছেলেদের বাড়ীতে গেলেন তখন ছেলেরা তাঁকে লোকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল বাড়ীর চাকর বলে। বুড়ো বাপ যখন ছেলেদের তাঁর মতো মহৎ, সৎ ও পরিশ্রমী হতে বললেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বাবারা, তোমাদের যে একটা নূতন জাতি আর আধুনিক সমাজ তৈরীর জন্য পাঠালাম সেটা বাদ দিয়ে এসব কেন করছ? ঐ কাজটা না করলে আমি তোমাদের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখব না।’ ছেলেরা তাঁকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিল। তবু প্রাচীন কৃষকের স্বপ্ন মরে না। এবার যেসব পুত্র জুটল সেগুলো হল মানসিক প্রতিবন্ধী। আর তাদের সর্দার পড়ুয়ারা হল অসাধারণ ধূর্ত আর কুচক্রী। তবু প্রাচীন কৃষক স্বপ্ন দেখেন। দেখতেই থাকেন ততদিন যতদিন না তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে জমির আশ্রয়ে ফিরে যান।

ষাটের দশকের বিপ্লবী প্রজন্ম বাঙ্গালী জাতির স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে কাজটা করেছিল মওলানা ভাসানী সেই কাজটা ঠিক সেইভাবে হয়তো নয় কিন্তু আরেকভাবে করেছিলেন। তবে ভাসানী শেষ মুহূর্তে বাঙ্গালীর সেকিউলার রাষ্ট্র কতটা চেয়েছিলেন বলা কঠিন। ১৯৭০-এর মধ্যে কমিউনিস্টরা প্রায় সকলে তাঁকে পরিত্যাগ করে যাবার পর তাঁর পক্ষে সম্ভবত আর সেটা সেভাবে চাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ তখন তাঁকে নির্ভর করতে হত তাঁর অতীত ধর্মীয় ভিত্তির উপর। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পীরও, যাঁর ছিল বিপুল সংখ্যক মুরীদ। সুতরাং সেকিউলার কমিউনিস্টরা তাঁকে পরিত্যাগ করার পর ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত্তিতে তাঁর প্রত্যাবর্তন স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে সরেন নি। সেটা হল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা। তিনি অখণ্ড পাকিস্তানকে ভাঙ্গতে চেয়েছিলেন এবং সেটা একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আর এখানেই তিনি মৌলভাবে ষাটের দশকের বিপ্লবী প্রজন্মের অবস্থানের কাছাকাছি ফিরে আসেন। ১৯৭০-এর ৩০ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য ১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন।

একটা বিষয় আমি বার বার ভেবেছি ভাসানী সাম্প্রদায়িক ছিলেন কিনা। ইসলামে বিশ্বাস তাঁর ছিল। অবশ্য আমি এ ব্যাপারে আজো নি:সংশয় নই তিনি কতটা আন্তরিক বিশ্বাসী ছিলেন আর কতটা তাকে ব্যবহার করতেন। তবে তিন সেকিউলার চেতনার শত্রু ছিলেন না। হয়তো এ ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল ইসলামের প্রফেট মোহাম্মদের চাচা আবু তালেবের মত, যিনি যতকাল বেঁচেছিলেন ততকাল আপন ভাতিজার ধর্মকে গভীর যত্নে, মমতায়, প্রবল তেজ আর শক্তিতে সব বিপদ আর আঘাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আর এইভাবে তাকে লালন করেছেন আপন ছায়ার নীচে, কিন্তু কোন দিন সেই ধর্মকে গ্রহণ করেন নি পূর্বপুরুষদের ধর্মের শেষ উত্তরাধিকারী হিসাবে বিদায় নিতে চেয়ে। ভাসানী ছিলেন প্রাচীন যুগের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি যিনি তাঁর সন্তানদের দেখতে চেয়েছিলেন আধুনিক যুগের অগ্রদূত রূপে।

প্রাচীন ভাসানী ছিলেন দূরদর্শী। তিনি জানতেন যেভাবেই হোক একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হবে অথবা তিনি এই যুদ্ধটাকে অনিবার্য করতে চেয়েছিলেন। কারণ সেই যুদ্ধের বীজ তিনি ’৬৯-এর গণ-অভ্যুথানেই বুনে দিয়েছিলেন। কিভাবে দিয়েছিলেন সে কালের অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে তাঁরা সেই সময়কার তাঁর ভূমিকাটা স্মরণ করলেই বুঝবেন। এইভাবে ‘প্রফেট অফ ভায়লেন্স’ উপাধিতে খ্যাত ভাসানী জাতিকে দিয়ে ’৭১-এর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের বিশাল মহড়াটা করিয়ে নিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন আওয়ামী লীগের চরিত্র এবং বামপন্থীদের মতিচ্ছন্নতা ও মানসিক প্রতিবন্ধ। সুতরাং তিনি জানতেন যে, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রকৃত শক্তির অভ্যুদয়ের জন্য একটা আড়াল বা আবরণ দরকার। কারণ তিনি বুঝতেন যে, বাংলাদেশ যে মুহূর্তে স্বাধীন হবে সেই মুহূর্ত থেকে বাঙ্গালী জাতির অভ্যুদয় ও বিকাশের সবচেয়ে বড় বহি:শত্রু হবে ইসলামাবাদের পরিবর্তে দিল্লী।

আমি অনুমান করে এই বিবেচনা থেকে তিনি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘোষণা দিলেন। অনেকেই হয়তো স্মরণ করতে পারবেন ১৯৭২-এর প্রথম দিকে তাঁর যুক্ত বাংলার আহ্বান। সেদিন কি কোনও প্রকৃত সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি এই আহ্বান দিতে পারত?

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে আওয়ামী লীগ যা করল সে কথা আজও অনেকে স্মরণ করতে পারেন। সেই অরাজকতা, আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মীদের দুর্নীতি, লুট, সন্ত্রাস। শহীদ মিনারে ’৭২-এর ২১ ফেব্রুয়ারী ভোর রাতে মুজিববাদী ছাত্র-যুবকদের সেই নারী অপহরণ ও ধর্ষণের উৎসব যেন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে বাঙ্গালী জাতি ও তার জাতীয়তাবাদকে ধর্ষণের দ্যোতক।

এই অবস্থায় ভাসানীর আর কি করার ছিল জানি না। তাঁর সঙ্গে সেকিউলার শক্তি নেই। সেকিউলারিজমের নামে সেকিউলারিজমকে ধর্ষণ ও ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই ’৭২-এর প্রথম দিকে যুক্ত বাংলার ধ্বনি দিয়ে যখন বুঝলেন যে, লাভ নেই, সেই সামাজিক শক্তি নেই যা বাংলাদেশের সেকিউলার জাতীয়তাবাদের শক্তিকে রক্ষা ও লালন করবে, বরং এখানে এখন সেকিউলার জাতীয়তাবাদের ধ্বনি দিল্লীকে ভীত ও ক্ষিপ্ত করতে পারে তখন হয়তো তিনি পিছনে ফিরলেন, দেশের রাজনৈতিক ভূখণ্ডটাকে রক্ষা করার জন্য ইসলাম ধর্মকে অবলম্বন করলেন। বাংলাদেশকে বাঁচাবার জন্য হয়তো তিনি একটা পশ্চাদগতি চেয়েছিলেন তাঁর মত করেই। হয়তো ভেবেছিলেন এটাই তখন বাঙ্গালী জাতিকে রক্ষার জন্য আপাতত একটা ব্যবস্থাএকটা স্থিতি এলে, সবকিছু থিতালে ধীরে ধীরে নূতন শক্তির অভ্যুদয় হবে। যুদ্ধের ভিতর দিয়ে প্রধানত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন বাম দলের নেতৃত্বে যে ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী ধ্বংসের শক্তিগুলো মুক্ত হয়েছিল সম্ভবত সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সহজাত বুদ্ধি বশেই সবচেয়ে কার্যকর শক্তি হিসাবে দেখতে পেয়েছিলেন ইসলামকে। হাঁ, তখন তিনি সাম্প্রদায়িক। তবু তিনি মোশতাক, জিয়ার কাতারে যে পড়েন না এটাও বুঝতে হবে। সম্ভবত তিনি চেয়েছিলেন বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটা আড়াল। তাই তিনি জিয়াকে সতর্ক সমর্থন দিলেন। সুতরাং আসলে কি তিনি সাম্প্রদায়িক? ওটা অন্তত তাঁর প্রধান দিক ছিল না। জাতিটাকে রক্ষা করার জন্য তিনি তাঁর পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল তা-ই করেছিলেন। কারণ কৃষক নিয়ে গঠিত জাতিটা ছিল ঐ কৃষক পিতার সন্তান। ঐ সন্তানকে রক্ষার জন্য ঐ পিতা সব কিছু করতে পারতেন।

অবশ্য এটাও বুঝতে হবে তাঁর চিন্তা ও আচরণের মধ্যে ছিল অনেক বৈপরীত্য ও স্ববিরোধ। তবু তাঁর রাজনীতিতে একটি প্রগতিশীল, জাতীয়তাবাদী ও গণমুখী মূল স্রোত কখনও প্রবল ও প্রকাশ্যভাবে, কখনও অন্ত:সলিলার মত প্রবাহিত থেকেছে। এই ঘটনা বুঝলে প্রবল পুরুষ ভাসানীর মৌল সত্তাটিকে উদ্ঘাটন ও উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না। এই জাতির আম জনতার ভাগ্যের সঙ্গে গ্রথিত করে রেখেছিলেন যিনি নিজের ভাগ্য ও কর্মকাণ্ডকে, বস্তুত তাঁর মধ্যে বৈপরীত্য ও স্ববিরোধ তো এই জাতি ও জনগোষ্ঠীরও বৈপরীত্য ও স্ববিরোধের প্রতিফলন।

এই জাতিকে, জনগোষ্ঠীকে তাঁর মত আর কেউ চিনেছে কিনা সন্দেহ। অন্যরা যারা চিনেছে তারা সাধারণত এই জাতি ও জনগোষ্ঠীর দুর্বলতাগুলোকে ব্যবহার করেছে নিজেদের হীন ও ক্ষুদ্র স্বার্থে, যেটা এই ব্যক্তি করেন নি। তিনি চেয়েছিলেন এই জাতি ও জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন ও তার বিশাল উত্থানপরিবর্তনকামী যত নেতা আমি দেখেছি তাঁদের কারোরই মধ্যে কোনও দিন কখনই এই অসাধারণ চেনা ও বোঝার ক্ষমতাটা দেখি নি। প্রাচীন জ্ঞানী কৃষক যেমন তাঁর জমিকে চেনেন ও বোঝেন তিনিও তেমন এই জাতিকে চিনতেন ও বুঝতেন। হিন্দু ও মুসলমান সবাইকেই। এবং সেসব বলতেন।

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে যখন বিতর্ক শুনি তখন আমার দৃষ্টিটা ফিরে যায় সেই ১৯৫৭-এর দিনে যেদিন তিনি প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানকে বিদায় জানিয়েছিলেন।

১৯৫৭ সালের ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারীতে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সম্মেলনে মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেন, ‘পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন থেকে পূর্ব পাকিস্তানীদেরকে বঞ্চিত রাখলে এমন এক সময় আসবে যখন পূর্ব পাকিস্তানীরা পশ্চিম পাকিস্তানীদেরকে “আসসালামু আলাইকুম” বলতে বাধ্য হবে।’ (খন্দকার আবদুর রহিম, শতাব্দীর জননেতা মওলানা ভাসানী, খন্দকার প্রকাশনী, ১৯৯৩, পৃ: ১২৯-১৩০)। জাতির পিতা, মাতা এ সবের অর্থ কতটা আছে বলা কঠিন। অবশ্য রাজনৈতিকভাবে তার অর্থ আছে। তবে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তিটা যদি প্রকৃতপক্ষে ২১ দফাতেই প্রথম রচনা করা হয়ে থাকে তবে এই রাষ্ট্রেরও প্রকৃত পিতা হবার অধিকার তাঁর চেয়ে বেশী আর কার আছে? কারণ ২১ দফার অঙ্গীকারকে অন্যেরা পরিত্যাগ করলেও তিনি তা করেন নি। ১৯৬৮-’৬৯-এ ঐ প্রাচীন কৃষকের কণ্ঠ হতে উচ্চারিত যে বজ্র নির্ঘোষ আকাশ-বাতাসকে প্রকম্পিত করে তারই ঢেউ আছড়ে পড়ে হাজার বছরের স্থবির, ঘুমন্ত জাতির কানে; তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। হাজার বছরের ভীরু-কাপুরুষ-দুর্বল মনা জাতিটা সহসা উঠে দাঁড়ায় এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করতে গিয়ে ’৭১-এ এই ভীরু জাতিটা এক দু:সাহসী যোদ্ধা জাতি হয়ে ওঠে এবং পাকিস্তানের বিশাল ও দুর্ধর্ষ সমরযন্ত্রটাকে আঘাতে আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।

ভাসানীকে বুঝতে হলে এ দেশের সেকালের মুসলিম জনসমাজটিকে বুঝতে হবে। পাকিস্তান হবার আগে এ দেশের মুসলমানদের ৯৫% বা তারও বেশী চাষা-ভূষা ছাড়া আর কি ছিল? প্রকৃতপক্ষে মুষ্টিমেয় বহিরাগত উচ্চ শ্রেণীর মুসলমানদের বংশধর আশরাফ ছাড়া আর প্রায় সমস্ত মুসলমানই ছিল কৃষক, যারা ছিল সভ্যতা ও শহর-নগর থেকে বহু দূরে। এখন যাঁদের বয়স ৫০ বা ৬০ কিংবা তারও বেশী তাঁরা তাঁদের অতীত স্মৃতি একটু ঝালিয়ে নিলেই বুঝবেন আমার কথার সত্যতা কতটা। নদী বিধৌত বাংলার চরাঞ্চলে বা দুর্গম গ্রামগুলোতে ছিল তাদের অনিশ্চিত জীবন। এরা পরিচয়ে মুসলমান হলেও ইংরেজ শাসনামলের সেই কালটাতে পৃথিবীর আর কোন দেশেই কি এমন ধর্মজ্ঞানহীন মুসলমান ছিল? এটা ঠিক যে বিভিন্ন ধর্মীয় আন্দোলন এবং বিশেষত পাকিস্তান আন্দোলন তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে গোঁড়া ধর্ম-সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। তা সত্ত্বেও সেটা দৃঢ়বদ্ধ হতে সময় লেগেছে। এবং পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সবখানে সেটা খুব একটা দৃঢ়বদ্ধ কখনও হয় নি। আর তাই আজো বাংলাদেশের যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশালের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রকাশ্য অথবা গোপন সেকিউলার কমিউনিস্ট দলগুলো টিকে থাকতে পারে। এবং এ কথাটাও আমাদের ভাবতে হবে ’৬৯-এ কৃষক আন্দোলনের যে রূপটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি পৃথিবীর কোনও মুসলিম দেশে কি তার সমতুল্য একটি দৃষ্টান্তও আছে?

হাঁ, ভাসানী এমন এক কৃষক চেতনার প্রতিনিধি যার ভিতরে ধর্ম বাঙ্গালীর চিরকালের সহজিয়া বিশ্বাসের এক রূপ। তার একটা অবলম্বন চাই। সেটা একটা হলেই হল। এবং এক আল্লাহয় বিশ্বাসের সঙ্গে চলে তার পীর পূজা, কালী পূজা, মনসা পূজা এবং আরও সব সাধু-সন্ত, দেবতা, অপদেবতা, ভূত, জিন, পরী ইত্যাদির প্রতি ভয় মিশ্রিত ভক্তি অথবা বিশ্বাস। এই মুসলমান বাঙ্গালী কৃষক শুধু বাংলার ব-দ্বীপেই জন্ম নিতে পারে। এবং সেটাই নিয়েছিল। এই মুসলমান বাঙ্গালী কৃষকের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন ভাসানী। শুধু তা-ই নয়, এমন এক মুসলমান কৃষকের প্রতিবেশী হিন্দু কৃষক চেতনাও তাঁর ভিতর দিয়ে আশ্চর্যভাবে উদ্ভাসিত। সেটি হল ত্যাগের মহিমার প্রতি গভীর অনুরাগ ও আদর্শ নিষ্ঠা।

লালন ছিলেন সাধক, ভাবুক। হিন্দু-মুসলমান সকলের। আবার তারও ঊর্ধ্বে বাঙ্গালীর। কিন্তু তারও ঊর্ধ্বে মানুষের, সকল মানুষের। ভাসানীও ছিলেন অনেকটা তা-ই। কিন্তু ভাসানীর রূপান্তর বা উত্তরণ ছিল ভিন্ন। তিনি ধর্মীয় নেতা থেকে হয়েছিলেন কৃষক নেতা। কৃষক নেতা থেকে জননেতা এবং অবশেষে বিপ্লবী জননেতা। সকল নিপীড়িত কৃষকের, নিপীড়িত বাঙ্গালীর এবং সকল নিপীড়িত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখা এক বিপ্লবী জননেতা, এই জনগোষ্ঠীর অনেক স্ববিরোধ ও সীমাবদ্ধতা নিজের ভিতরে ধারণ করেও এক বিপ্লবী জননেতা।

তাঁর অনুরূপ নেতা সমগ্র ভারতবর্ষেও একজন নেই। আগেই বলেছি সুভাষ ভিন্ন ধরনের। হয়তো গান্ধীকে ভাসানীর সঙ্গে কিছুটা তুলনা করা যায়। গান্ধী আরও অনেক বেশী সংখ্যক মানুষের নেতা ছিলেন। সেকালের সমগ্র ভারতবর্ষের। কিন্তু তিনি ছিলেন হিন্দু কৃষক আর শ্রমজীবী মানুষেরও নেতা, যে কৃষক ছিল শূদ্র, অর্থাৎ জন্মদাস। ধর্মের শাসনে এমনই জন্মদাস যে তার দাসত্বের ভিতরেই গৌরব খুঁজে পেত। এবং অহিংস, নির্বীর্য ও নিষ্ক্রিয় ছিল। এমন এক শূদ্র ভারতবর্ষকে বদলাতে চেয়ে গান্ধী খুব ধীর গতিতে এগিয়েছেন । আপোস করেছেন খুব বেশী। শূদ্রেরই মত। কারণ গান্ধী শূদ্রেরও নেতা বা পিতা যা-ই বলা যাক তা-ই। তাকে তিনি ধীর গতিতে উচ্চবর্ণের হিন্দুর নেতৃত্বে যতটা সম্ভব আধুনিক যুগোপযোগী করে নিতে চেয়েছেন। এইভাবে উচ্চ ও নিম্ন বর্ণ হিন্দুর মধ্যে একটা ঐক্য আনতে চেয়েছেন। আবার এই ঐক্যবদ্ধ হিন্দুর সঙ্গে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছেন মুসলমানকে। প্রত্যেকের বর্ণজাতিগত, গোষ্ঠীগত, ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করেই। আর এভাবেই তিনি চেয়েছেন ইংরেজের শাসন মুক্ত একটা ভারতবর্ষ, যেখানে যুগযুগান্তের চাপিয়ে দেওয়া আবর্জনাসহ সকল কিছুই কিছুটা ভদ্রস্থ হয়ে টিকে থাকবে। কারণ তিনি বিপ্লবী ছিলেন না। বিপ্লবী বিপ্লবের আগুনে যুগযুগান্তের সকল আবর্জনা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

শূদ্র বিপ্লবী হয় না। তাই শূদ্র নেতা গান্ধীও হন নি, হতে পারেন নি। গান্ধী এক ধরনের মধ্যস্থতাকারী। প্রাচীন শূদ্রত্ব ও আধুনিক ব্রাহ্মণত্ব (হাঁ, আধুনিক হলেও এটা ব্রাহ্মণত্বই) এই উভয়ের মাঝখানে আপোস। তাঁর মধ্যে আধুনিক যুগ মনস্কতা এই কারণে ততটা প্রতিফলিত নয়। তবু তাঁর গুরুত্ব ছিল ঐ স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে। সুভাষ এসবের অনেক ঊর্ধ্বে। আধুনিক কালে শুধু বাংলার নয় সমগ্র ভারতবর্ষেরও তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী নেতা। কিন্তু তিনি ছিলেন দেশ ও কালের চেয়ে অনেক বেশী অগ্রগামী। তাই পায়ের নীচে তাঁর জমিটা পান নি। সুতরাং অকালে ঝরে গেছেন। তবে বিরাট নাড়া দিয়ে গেছেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পথটা প্রশস্ততর করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু শূদ্র সমাজের গান্ধীর সঙ্গে ভাসানীর পার্থক্যটা বিশাল। হিন্দু সমাজ প্রকৃতপক্ষে শূদ্র অর্থাৎ দাস সমাজ। ব্রাহ্মণও এই শূদ্র দাসেরই মাথা। অর্থাৎ সেও দাস। দাস সর্দার মাত্র। মুসলমান হল বান্দা। আল্লাহর বান্দা। বাস্তবে এক নিরঙ্কুশ একনায়কী ব্যবস্থার এবং শাসকের বান্দা। অর্থাৎ মুসলমান সমাজও হচ্ছে দাস সমাজ, কারণ শাস্ত্রীয় বা তত্ত্বগতভাবে এখানে সবাই বান্দা। আর তাই বান্দা বা দাস চেতনা সমাচ্ছন্ন কোনও মুসলিম সমাজে আধুনিক ও সেকিউলার চেতনায় উদ্ভাসিত শ্রেণী সংগ্রাম বলা যাক, কৃষক আন্দোলন বলা যাক ওসব কিছুই তেমন একটা দৃঢ়বদ্ধ জমি পায় না।

কিন্তু বাংলার মুসলমান কৃষক তার অনেকটা ব্যতিক্রম। বান্দা চেতনায় যে বিশাল মুসলিম কৃষক সমাজ তখনও আচ্ছন্ন হয় নি, অন্ধ হয় নি ভাসানী তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। আর কৃষকই তো সেকালে ছিল প্রায় সমগ্র মুসলমান বাঙ্গালী সমাজ। সকল দুর্বলতা নিয়েও এখানে ছিল মুসলমান বাঙ্গালীর এক আশ্চর্য শক্তির দিক। আর তাই এই কৃষকের সংগ্রামের মধ্য থেকে উথিত হয় যে ভাসানী তা পীর হলেও বান্দা চেতনার প্রতিভূ নয়, বরং এক বিপ্লবী চেতনার প্রতিভূ। এটা সেই সৃষ্টিশীল পরিশ্রমী কৃষক চেতনা যে চেতনা আধুনিক যুগকে বরণ করে নিতে চায় নিজ মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষা করেই, যদিও পথটা তার জানা নেই। আর তা পথের আশায় আশ্রয় নেয় সেকিউলার ও বিপ্লবী চেতনার অধিকারী কমিউনিস্টদের।

তাঁর মত আর কোন্ জননেতা এমন বলতে পারেন, ‘আমার কি লেখাপড়া আছে? আমি মক্তব পড়া কাঠমোল্লা। আমি রাজনীতির কতটা বুঝি? আমি শুধু বক্তৃতা দিবার পারি। রাজনীতি বুঝবেন আপনারা যারা শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুণী মানুষ। আপনারা রাজনীতি ঠিক করে আমাকে দিবেন। আমি সেটা নিয়ে পাবলিকের কাছে যাব। সেটা আমি পারি।’ খ্যাপা বাউল যেমন তার মনের মানুষ, যে মনের মানুষ তার অন্তরের দেবতা, তাকে সারা জীবন খুঁজে বেড়ায়, ভাসানী তেমন তাঁর বিপ্লবী মানুষ, যে বিপ্লবী মানুষ গণমানুষের মুক্তির দেবতা, তাকে সমস্ত জীবন খুঁজে বেড়িয়েছিলেন।

আর এখানেই ভাসানীর অনন্যতা। সমস্ত উপমহাদেশে তো বটেই, এমন কি সমগ্র মুসলিম পৃথিবীতেই। ভাসানীর অনুরূপ কোনও নেতা তাই সমগ্র ভারতবর্ষে নেই। তিনি শূদ্র নেতা গান্ধীর প্রতিরূপ বান্দা নেতা নন। ভারতবর্ষের একমাত্র কৃষক নেতা যিনি বিশাল জননেতা হয়ে উঠে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে গেছেন। তাঁর ব্যর্থতা এইখানে যে, তিনি তাঁর সঙ্গে কখনও পেয়েছিলেন একদল যোগ্য কিন্তু অতি চালাক, ধূর্ত আর স্বার্থান্ধ মানুষ, আবার কখনও পেয়েছিলেন একদল সৎ, সাহসী, ত্যাগী কিন্তু মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষ।

চীনের সান ইয়াং সেনের সৌভাগ্য যে, তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর উত্তরাধিকারী হিসাবে একজন মাও পেয়েছিলেন। ভাসানীর দুর্ভাগ্য তিনি তা পান নি। বরং যাদের তিনি মাও হিসাবে লালন করতে চেয়েছিলেন তারাই তাঁকে পরিহাস করেছে, অবিশ্বাস করেছে এবং খর্বও করেছে। তবু তিনি শুধু বাংলার নন সমগ্র ভারতবর্ষের একজন শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী জননেতা। তিনি ১৯৬৮-’৬৯-এ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মহড়া দিয়েছেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্যতা ঘটিয়েছেন, এবং ইন্দিরা সরকার কর্তৃক অবরুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন।

আমার মনে আছে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৯-এ ভাসানীর একটা মূল্যায়ন তৈরী করে এবং সেটা তাঁকে পড়তে দেয়। তাতে ভাসানীকে মূল্যায়ন করা হয় পেটি বুর্জোয়া হিসাবে। আমি পার্টির একজন নেতার কাছ থেকে শুনেছিলাম ভাসানী সেটা পড়ে তাঁকে বলেছিলেন, ‘কে বলেছে আমি পেটি বুর্জোয়া? আমি পেটি বুর্জোয়া নই।’ তারপর তিনি গর্বভরে বলেন, ‘আমি জাতীয় বুর্জোয়া।’

ঐ মূল্যায়ন পড়ার রুচি বা কৌতূহল আমার হয় নি। যাইহোক, পেটি বুর্জোয়া হচ্ছে কমিউনিস্টদের কাছে দুর্বল, দোদুল্যমান ও অস্থির চিত্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণী, সুবিধাবাদী শ্রেণী, যার উপর নির্ভর করা যায় না। এটা শত্রুও হতে পারে আবার কখনও অনির্ভরযোগ্য মিত্রও হতে পারে। আর জাতীয় বুর্জোয়া স্বাধীনচেতা ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী বুর্জোয়া শ্রেণী। বিশেষ করে যাঁরা কমিউনিস্ট রাজনীতি করেছেন তাঁরা জানেন জাতীয় বুর্জোয়া আর পেটি বুর্জোয়ার মধ্যকার পার্থক্যের তাৎপর্য এবং জাতীয় বুর্জোয়ার মর্যাদা।

চমৎকার! মস্কোপন্থীদের কাছে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া নেতা মুজিব হলেন জাতীয় বুর্জোয়া নেতা যিনি সেদিনও ছিলেন সমাজতন্ত্র বিরোধী আর সর্বদাই সশস্ত্র সংগ্রাম বিরোধী! আর পিকিংপন্থীদের কাছে ভাসানী হলেন পেটি বুর্জোয়া নেতা যিনি সমাজতন্ত্র এবং সশস্ত্র বিপ্লবের দৃঢ় সমর্থক! তাঁকে তাদের জাতীয় বুর্জোয়া নেতার মর্যাদা দিতেও কুণ্ঠা!

তবে আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃত্ব এ দেশের সকল পুরাতন কমিউনিস্ট নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে স্খূল। ফলে এঁরা ছিলেন অনেক বেশী স্পষ্টও। অন্য নেতারা যে কথাটা মনের ভিতর চেপে রাখতে জানতেন এঁরা সেটা জানতেন না। এর একটা ভাল দিকও আছে বৈকি! এদের অনেক সহজে চেনা যায়, বোঝা যায়।

আমাদের কতটা দুর্ভাগ্য যে, এইরকম এক দল নেতাকেই আমাদের সে কালে নেতা মানতে হয়েছিল। অন্তত আমার জন্য সময়টা গেছে ভয়ঙ্কর। ১৯৬৮ পর্যন্ত আমি ছিলাম প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন মানুষ। এর পূর্বে কমিউনিস্ট পার্টির কঠিন নিগড়ে কখন আবদ্ধ হই নি। এই নিগড়ে আবদ্ধ হবার জ্বালাটা বুঝেছি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০-এর শেষ পর্যন্ত। ১৯৭১-এর ১ জানুয়ারী থেকে প্রকৃতপক্ষে আমার মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম কয়েকটা মাস গিয়েছিল ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি, আত্মবিশ্বাসহীনতা আর যন্ত্রণার মধ্যে যখন আমি প্রকৃতপক্ষে পার্টি থেকে নিক্ষিপ্ত অথচ সামনে এগিয়ে আসছিল জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। আমি ক্রমে আমার সত্তাকে ফিরে পাই জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আসলে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ আমাকে মুক্তি দিল এবং সেটাই ছিল আমার নব জন্মের সূচনা কালআমার নূতন উপলব্ধির পথে, আত্মানুসন্ধানের পথে নূতনভাবে যাত্রার কালটা শুরু হল ১৯৭২-এর গোড়া থেকেই।

অবশ্য কমিউনিস্ট পার্টির অভিজ্ঞতাটা আমার জন্য খুব প্রয়োজনীয় ছিল। এ ছাড়া কমিউনিস্ট আন্দোলনের শক্তি ও সঙ্কটের জায়গাটাকে আমার পক্ষে হয়তো এত গভীরভাবে চেনা ও বোঝা সম্ভব হত না। এবং সেই সঙ্গে কমিউনিস্ট মতাদর্শেরও।

এখন দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে এ দেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং কমিউনিস্ট মতাদর্শের সঙ্কটের জায়গার একটা কেন্দ্রবিন্দুকে আমি আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে চিহ্নিত করব। তাহলে কিছুটা হলেও বোঝা যাবে কেন এ দেশে কমিউনিস্ট পার্টি সামাজিক শক্তিগুলোকে চিনতে ভুল করেছে, ফলে ভাসানী এবং ছাত্রদের ভূমিকারও তাৎপর্য বোঝে নি কখনও|

সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ