লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ July 18, 2013, 4:57 AM, Hits: 1799
এ দেশে বামপন্থীদের ভুলগুলো কোথায় কিভাবে বা কি কারণে হয়েছে সেসব নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এবং নিশ্চয় আরো হবে। এবং তার প্রয়োজনও আছে। তবে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বিতর্কে সাধারণত অনুপস্থিত থেকেছে তা হল শত ভুলের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ-রাষ্ট্রের উদ্ভবে তাদের অবদান। আমার মনে হয় এর একটা প্রধান কারণ হল সে যুগের মূল চালিকা শক্তি ছাত্র-যুব সমাজের গতি-প্রকৃতি ও ভূমিকা বিচারের চেষ্টা না করে উপরের নেতৃত্বের দৃষ্ট ভূমিকা দিয়ে সে যুগের সবকিছু বিচারের চেষ্টা করা। কিন্তু আমার ধারণা মূল চালিকা শক্তির ভূমিকা ও গতি-প্রকৃতি এবং তার ফলাফল বুঝলে শুধু যে অনেক বিতর্কের অবসান হবে তা-ই নয়, উপরন্তু আমরা ভবিষ্যতের দিকে সঠিকভাবে এগিয়ে যাবার পথও পাব। এই কারণে ষাটের দশকের তরুণ প্রজন্মের ভূমিকার উপর আর একটু আলোচনা করব। এতে কিছু পুনরুক্তি ঘটলেও হয়তো এটা অনেক বিষয়ের উপর নূতন আলো ফেলবে।
ইতিপূর্বেই আমি বলেছি যে, ষাটের দশকে বাম আন্দোলনের বিকাশ মূলত তরুণ প্রজন্মের উথানের ফল। বস্তুত প্রতিষ্ঠিত পিকিংপন্থী নেতৃত্বের মূল অংশটাকে একজন সাধারণ কর্মী হয়েও আমি কাছ থেকে দেখেছিলাম। এ থেকে আমার মূল্যায়ন হল (অবশ্য সে কালে এটা আমার একার মূল্যায়ন ছিল না) তারা বৃহৎ কোন আন্দোলনের ঝুঁকি নিতে রাজী ছিল না। জাতীয় আন্দোলনের তো প্রশ্নই উঠে না। ভাসানী বাদে। কিন্তু ভাসানী তাদের দ্বারাই পরিবেষ্টিত ছিলেন। সুতরাং সেই দশকে বাম গণ-আন্দোলনের বেগবান ধারাটা যারা গড়ে তুলেছিল মূলত তাদের সমস্যাটা বুঝতে হবে।
জাতীয় রাজনীতির ব্যাপার যাঁরা জানেন তাঁরা বোঝেন শুধু মেধা, শ্রম, উদ্যম, সাহস এবং সংখ্যা দিয়ে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বে আসা যায় না। এর জন্য চাই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি, অর্থ, প্রচার মাধ্যম, সামাজিক সংযোগ ও প্রভাব, অভিজ্ঞতা ইত্যাদিও। আর এই পরেরগুলো ছিল না বলে তরুণ প্রজন্ম তাদের নেতৃত্ব এমন একদল লোকের হাতে অর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল যারা জাতীয় রাজনীতি ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে চায় নি। তারা বরং তাদের তত্ত্বচর্চা নিয়ে আগ্রহী ছিল; আর কম ঝুঁকির বা ঝুঁকি নেই এমন ছোটখাটো আন্দোলন। বাম রাজনীতিতে তাদের বিরাট ভাবমূর্তি থাকলেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ ও খণ্ডিত। জাতি গঠনে নেতৃত্ব দেবার জন্য যে দৃষ্টিভঙ্গী ও সাহস দরকার সেসব কিছুই তাদের ছিল না। হয়তো সুদীর্ঘ আত্মগোপন বা জেল জীবন তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখায় তারা সামাজিক বিকাশধারা সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে গিয়েছিল। মস্কো-পিকিং উভয় ধারার নেতৃত্ব সম্পর্কেই এই কথাটা খাটে। তবে আমার বিবেচনায় পিকিং ধারায় নেতৃত্ব দিতে সেদিন যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাঁরা মস্কোপন্থী নেতৃত্বের তুলনায় যোগ্যতা ও সততার বিচারে অনেক ক্ষেত্রে নিকৃষ্ট ছিলেন। একটা উপমা আমার মাঝে মাঝে মনে হয়। সেটা হল ষাটের দশকের প্রজন্ম এমন একদল লোককে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছিল যারা ছিল গ্রামের মোড়লের মত। গ্রামের মোড়ল দিয়ে কি আর জাতির নেতৃত্ব হয়! কাজেই তারা এই তরুণ প্রজন্মের শক্তিকে যার যার নিজ গ্রামে মোড়লির আয়তন ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছিল। এর জন্য যে তত্ত্বের তাদের প্রয়োজন হয়েছিল সেটাই তারা ব্যবহার করেছিল। এবং অবশ্যই ভাসানীও এদের নেতা হয়েই ছিলেন। নতুবা তিনি নূতন প্রজন্মকে ডাকেন নি কেন? হয়তো ’৫৭-তে আওয়ামী লীগে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার পর অতীত সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাসের কারণে তিনি কমিউনিস্ট নেতৃত্ব ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতেন না। আর ভাসানী মূলত সংগঠক ছিলেন না। অন্তত তখন। তিনি ছিলেন একজন বাগ্মী এবং ‘এজিটেটর’। যারা শুধু গ্রাম ও কারখানার নেতা হয়ে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু জাতির নেতা হতে চায় নি তারা ভাসানীকে ঘিরে রেখেছিল। এইভাবে যিনি হতে পারতেন এক নবীন জাতির একমাত্র না হলেও অন্যতম প্রধান নেতা তাকে পরিণত করল একদল গ্রাম্য মোড়লের সর্দারে।
এই রকম নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গী ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গী ও আকাঙ্ক্ষার ব্যবধান অনেক সংঘাত, জটিলতা ও ভুলেরও জন্ম দিয়েছিল। কিভাবে সেটা হয়ত আমার আলোচনা থেকে কিছুটা হলেও স্পষ্ট হবে। তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে পারিবারিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও শক্তির বলে রাশেদ খান মেননের মত যাঁরা প্রথম পর্যায়ে ছাত্র-যুব আন্দোলনে নেতৃত্বে এসেছিলেন তাঁরা কিন্তু এই নবীন প্রজন্মের পরিবর্তে পুরাতন ও প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ থেকে তরুণ প্রজন্মের এগিয়ে যাবার পথে প্রবল বাধা সৃষ্টি করেন। নেতৃত্বের আশ্রয় না পেলে ’৬৬-’৬৭-তেই তাঁরা বাম ছাত্র আন্দোলনের উপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ হারাতেন বলে আমরা ধারণা। এক সময় তাঁরা তরুণ প্রজন্মের মূল ধারার উপর নিয়ন্ত্রণ বা নেতৃত্ব হারালেও ততদিনে মূল্যবান সময়টা চলে গিয়েছিল। জাতীয় নেতৃত্বে যারা একটা স্বাধীন ভূমিকা পালনের জায়গা খুঁজছিল সেই জায়গাটা তাদের জন্য ’৬৮-এর পর আর সেভাবে ছিল না। ততদিনে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোপুরি আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়।
বস্তুত আমাদের প্রজন্মের কারো কারো মনে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করে এখানে বাঙ্গালী জাতির সেকিউলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংকল্প জন্ম নেয় ১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক আইন জারীর পর ১৯৫৯ সালে যখন তারা স্কুলের ছাত্র ছিল সেই সময়ে। স্বাভাবিকভাবেই এই সংকল্প সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজনকেও তাদের মনে নিয়ে এসেছিল। এর সঙ্গে ছিল সমাজতন্ত্রের ভাবনা। এখানে এটা বলে রাখা ভাল যে, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ও বাঙ্গালী জাতি নিপীড়ক পাকিস্তান শব্দটার প্রতি ঘৃণা ও জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে পূর্ব বাংলা নামের ব্যবহার করা হত ঘরোয়া আলোচনায়।
আমার ধারণা এই যে একটা চেতনার প্রজন্ম জন্ম নিয়েছিল স্কুল, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেটা এক বিরাট শক্তি ও তেজ নিয়ে দাঁড়ায়। এই শক্তির অগ্রগমনে মস্কো-পিকিং সব ধারার নেতৃত্বেরই কিছু না কিছু অবদান আছে। কিন্তু এর উদ্ভব মূলত এদের সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আইয়ুবের সামরিক সন্ত্রাসের কারণে পুরাতন বাম নেতৃত্ব ও গোপন কমিউনিস্ট পার্টির অগোাচরে এদের বিকাশ স্বাধীনভাবে। বস্তুত ’৬০-এর দশকের প্রজন্মের স্বাধীনভাবে বিকশিত এই স্বাধীনচেতা গোষ্ঠীটিই জ্ঞান-বুদ্ধি মত সেদিন যা করেছিল তার প্রভাবে বাম ধারায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এবং সশস্ত্র সংগ্রামের চেতনা এভাবে বিস্তার লাভ করে বলে আমার ধারণা। তাদের নেতৃত্ব দেবার মত অভিজ্ঞতা, শক্তি ও যোগ্যতা ছিল না বলে তারাও ভুল করেছিল অনেক। বিভিন্ন নেতৃত্বের পিছনে গিয়ে বিভক্তও হয়েছে তারা সশস্ত্র সংগ্রাম ও বিপ্লব করতে গিয়ে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ কারো মধ্যে প্রধান হয়েছে, কারো মধ্যে গৌণ হয়েছে এবং কারো মধ্যে দমিতও হয়েছে। তবু সকলে মিলে জনগণের সশস্ত্র সংগ্রামের যে ধারণাটি ছড়িয়ে দিয়েছিল তার মূল্য কম নয়। বিশেষত যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন জন-গণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা গড়তে চেয়েছিল তাদের ভূমিকাটা অনেক বিচারেই আমার কাছে অত্যন্ত তাংপর্যপূর্ণ মনে হয়। আমার বিবেচনায় জাতির ভিতর সশস্ত্র সংগ্রামের চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে তারা এক অনন্যসাধারণ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এই সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া আার যা-ই হোক সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানকে এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করা যেত না। আর যদি বা কোন দিন পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হত তবে কি সত্যিকার অর্থে সেকিউলার বাঙ্গালী চেতনা দাঁড়াবার মত কোন জায়গা পেত? শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোয় এবং চেতনার জগতে আমূল পরিবর্তন যে সম্ভব হয় না সে অভিজ্ঞতা তো ব্রিটিশের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার ফলাফল থেকেই আমরা পেয়েছি। আসলে ধর্ম-সম্প্রদায়িকতার কাঠামো ভেঙ্গে বাঙ্গালীর সেকিউলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ’৭১-এর যুদ্ধটাই ছিল সেকিউলার বাঙ্গালীর উঠে দাঁড়াবার প্রথম সফল প্রয়াস। অবশ্যই ভাষা আন্দোলন এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।
সমগ্র জাতির মনে যুদ্ধের এই সাহস ও স্পৃহা যোগাতে এবং জাতিকে যুদ্ধের জন্য তৈরী করতে সেদিন এ দেশে পিকিংপন্থী কিংবা সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী অনেক গোষ্ঠীই নিশ্চয় অপরিমেয় ভূমিকা রেখেছিল। তা না হলে ’৬৮-’৬৯-এর গণ-অভ্যুথানের জোয়ার ’৭১-এর যুদ্ধে পরিণত হতে পারত এটা মনে করার কারণ নেই। দীর্ঘ প্রস্তুতি ও কঠোর প্রয়াস ছাড়া হাজার বছরের পরাধীন, ধর্মাচ্ছন্ন, জাতি চেতনাহীন এবং জাতীয় যুদ্ধের ঐতিহ্যহীন একটা জনগোষ্ঠী হঠাৎ করে এমন এক বিশাল সেকিউলার জাতীয়তাবাদী যুদ্ধে ঝাঁপ দিতে পারত কি? এক দীর্ঘ ও কঠোর প্রয়াসে আমরা পেয়েছি ’৭১-এর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ, যে যুদ্ধ না হলে এ দেশের হাজার বছরের পরাধীনতা, ধর্মান্ধতা, ভাগ্যবাদ ও ভীরুতার শিকলে বাঁধা একটা জাতিসত্তা একটা যোদ্ধা ও সেকিউলার বাঙ্গালী জাতির পরিচয় নিয়ে এভাবে উঠে দাঁড়াতে পারত না। এটা ঠিক যে, নয় মাসের যুদ্ধ হাজার বছরের অন্ধকার দূর করতে পারে না। তাই আমরা আবার পিছনের দিকে যাত্রা করেছি। তবু আমরা পেয়েছি বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসের প্রথম জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের অগ্নি মশাল, যার আলোয় অন্ধকার বিদারিত করে পুনরায় সামনের দিকে যাত্রা শুরু করতে পারছি।
আর তাই আমরা যদি নির্মোহ দৃষ্টিতে অতীতের দিকে দৃষ্টি ফেরাই তবে দেখতে পারব আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, পিকিংপন্থী, মস্কোপন্থী সবাই যার যার মত করে অচেতনভাবে হোক সচেতনভাবে হোক একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক উদ্দেশ্য সাধন করেছে, তা হল ’৭১-এর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ, যা হয়েছে এক নবীন জাতির যাত্রাবিন্দু।
বিশেষত আমি জোর দিয়ে বলতে চাই ’৭১-এর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা সেকিউলারিজমের যে প্রকৃত রূপ আবিষ্কার করতে পেরেছি তা সমগ্র উপমহাদেশে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ভারত-রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সর্ব ধর্ম সমন্বয় থেকে গুণততভাবেই একটা ভিন্ন জিনিস।
এই কারণে প্রত্যেকের ভূমিকার বিশ্লেষণ আজ জরুরী। বিশেষত দীর্ঘকাল পর যখন মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নগুলো পুনরায় জাতীয় পরিসরে জোরালো হয়ে উঠে আসছে এবং আমার বিবেচনায় দেশ দ্রুতপায়ে আর এক ক্রান্তিকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল শক্তিটাকে খুঁজে বার করা এবং তার ভূমিকার স্বরূপ বিশ্লেষণ করা অতীব জরুরী। আর এইখানে আমি খুঁজে পাই ষাটের দশকের বামপন্থী বা বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মকে যে কথা ইতিপূর্বে বলেছি।
আসলে বৈরী সামাজিক-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর চাপে তারা কোনও দিন উপরে উঠে আসতে পারে নি বলে তাদের ভূমিকা কখনই আর চোখের সামনে আসে নি। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুথানের শুরু থেকে ’৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত টালমাটাল দিনগুলোর স্মৃতি যাঁদের মনে আছে তাঁরা আজো স্মরণ করতে পারবেন পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য শ্রমিক-কৃষকের প্রতি বামপন্থী ছাত্র-তরুণদের সেই উদাত্ত আহ্বান। এটা ঠিক যে, তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সেদিন দেয় নি আওয়ামী লীগের প্রতি বিদ্বেষ বা অবিশ্বাস বশত। বিশেষত তাদের নেতৃত্বের প্রবল প্রয়াস ছিল সমস্ত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বিভক্ত ও বিনষ্ট করার জন্য। সেই নেতৃত্ব প্রকৃতপক্ষে জাতির স্বাধীনতাই কোনও দিন চায় নি। শুধু হক-তোয়াহা নয়, মতিন-আলাউদ্দিন নেতৃত্বও কী প্রবল বাধা সৃষ্টি করেছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশের পথে সেটা সেই প্রজন্মের একজন কর্মী হিসাবে আমার খুব ভাল জানা আছে। অনেক ঘটনা আমার জানা আছে, সেগুলো যদি বলা যায় তবে বোঝা যাবে একটা নূতন ও প্রবল প্রজন্মের শক্তির উত্থান সম্ভাবনাকে এবং এই প্রজন্মের শক্তিকে অবলম্বন করে একটা নূতন জাতির উত্থান সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করার জন্য সেদিন তাদের আয়োজন কত ব্যাপক, প্রবল এবং সুগভীর ছিল। বিশেষত স্বাধীন জন-গণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচী সাথে নিয়ে যে তরুণ প্রজন্ম দেবেন-মতিন-আলাউদ্দিন নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির পতাকাতলে সেদিন সমবেত হয়েছিল তারা কিভাবে প্রতারিত হয়েছিল, কত রকম ষড়যন্ত্র ও আক্রমণের শিকার হয়েছিল সেসব ঘটনার ভগ্নাংশও যদি তুলে ধরা যায় তবে বোঝা যাবে যে, এ দেশে সেকিউলার এবং গণতান্ত্রিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রকৃত অগ্রবাহিনী এই তরুণেরা সেদিন কি অসাধ্য সাধন করেছিল! আমি বহু ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলতে পারব ঐ বামপন্থী নেতৃত্বের মূল নিয়ন্ত্রণ যাঁদের হাতে ছিল তাঁরা ছিলেন কি পরিমাণ আন্দোলন বিমুখ! এবং সবচেয়ে বড় কথা বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি তাঁদের অন্তর্গত ঘৃণা ও বিদ্বেষ, ঐ আন্দোলনের অগ্রবাহিনী স্বরূপ সে যুগের ছাত্র-যুবকদের প্রতি তাঁদের প্রত্যেকের ভীতি, ঘৃণা ও অবজ্ঞা কিভাবে প্রকাশ পেত সেসব আমি দেখেছি।
আমি ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ থেকে যে এ কথা বলছি না তা আমি ষাটের দশকে যাদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম আশা করি তাঁরা সকলেই বুঝবেন। আমাকে সেই কালে যাঁরা জানতেন তাঁরা জানেন যে, পদ ও নেতৃত্বের প্রতি নিরাসক্ত থেকে আমি কিভাবে সেকালে কাজ করেছিলাম প্রধানত রাজনীতির প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিয়ে। ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে সেই নেতৃত্ব আমাকে কখনই দেখেন নি কারণ কোনো পদের প্রত্যাশা নিয়ে আমি কাজ করি নি। কিন্তু আমি যে জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধারণ করতাম, যে সৃজনশীল ও মুক্ত মন নিয়ে এ দেশের বিপ্লবের পথ ও সমস্যা বুঝতে চাইতাম তা ছিল তাঁদের প্রচণ্ড আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। এবং এই সমস্যাই হয়েছিল আমাদের প্রজন্মের অধিকাংশের। ফলে আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলে তাঁরা নানানভাবে আমাদের শক্তিকে বিভক্ত করেছেন, কোণঠাসা করেছেন, পথভ্রষ্টও অনেকাংশে করেছেন। কিন্তু নিশ্চয় সম্পূর্ণ সফল তাঁরা হন নি। তাঁরা বাঙ্গালী জাতির জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে ঠেকাতে পারেন নি।
আমার মূল্যায়ন হল হক-তোয়াহা থেকে শুরু করে দেবেন-আলাউদ্দিন-মতিন পর্যন্ত পিকিংপন্থী নেতৃত্বের মূল অংশটা মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়েছিল মূলত কোনো মতাদর্শিক কারণে নয়, বরং নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে। এঁরা এসেছিলেন ঐ দশকের উদীয়মান এবং পুরাতন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রবল ছাত্র-যুব শক্তিকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অভিলাষে। দেবেন-মতিন-আলাউদ্দিন প্রমুখ হক-তোয়াহাদের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) থেকে ১৯৬৮-তে বেরিয়ে এসেছিলেন মূলত একই কারণে, একই উদ্দেশ্যে।
এঁদের উদ্দেশ্যটা এঁদের সঙ্গে যোগ দেবার পর ক্রমে আমার কাছে স্পষ্ট হয়। এটা আজ স্পষ্ট যে, এঁরা পার্টির নাম পূর্ব বাংলা দিয়েছিলেন বাম ছাত্র-যুবকদের ব্যাপক অংশটাকে হাতে পাবার এবং ব্যক্তিগত নেতৃত্বের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য। অথচ এই নবীন শক্তির তুলনায় শিক্ষায়, মেধায়, সাহসে ও শক্তিতে তাঁরা ছিলেন অনেক পিছিয়ে। তাঁরা জানতেন তরুণ প্রজন্মের জাতীয়তাবাদী আবেগ, সমাজ বিপ্লব ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে তাঁরা ধারণ করতে পারেন না। ফলে তাঁরা নিজেদের সুদীর্ঘ কাল ধরে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিকে ব্যবহার করলেন মহামূল্যবান সময়টাতে যুবশক্তিকে নিষ্ক্রিয় ও ছত্রভঙ্গ করে নিজেদের অক্ষম নেতৃত্বের হাতিয়ার করার উদ্দেশ্যে।
গ্রামে আমরা যারা ছড়িয়ে ছিলাম পার্টি কেন্দ্র থেকে দূরে, রাজধানী থেকে দূরে, তাদের তখন হয়তো বিশেষ কিছু করার ছিল না ক্ষুব্ধ হওয়া আর নিজ নিজ এলাকায় যার যার মত করে কাজ করে যাওয়া ছাড়া। কিন্তু ঢাকার প্রবল ছাত্র-তরুণ শক্তিকে সামলানো যাবে কেন? সুতরাং ১৯৭০-এর ২২ ফেব্রুয়ারী পল্টনের প্রকাশ্য জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন)-এর পক্ষ থেকে স্বাধীন জন-গণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ১১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করানো হল।
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল্লাহ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এবং ছাত্র ইউনিয়নের উপর তখন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অন্য দিকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার তখন ছিলেন প্রাক্তন ছাত্র নেতা এবং তৎকালীন শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমদ এবং রাশেদ খান মেননের সঙ্গে। কিন্তু তাঁরাও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি কতৃক প্রস্তুত এবং মাহবুব উল্লাহ কর্তৃক উথাপিত ১১ দফা কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) কর্তৃক ঘোষিত এই কর্মসূচীর সপক্ষে পল্টনের জনসভায় ভাষণ দেন। এই কর্মসূচী ঘোষণার প্রেক্ষিতে সামরিক আদালত কাজী জাফর আহমদ ও রাশেদ খান মেননকে সাত বৎসর এবং মোস্তফা জামাল হায়দার ও মাহবুব উল্লাহকে এক বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে। মাহবুব উল্লাহকে ১৯৭০-এর ২১ মার্চ গ্রেফতার করে জেলে নেওয়া হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত তাকে কারারুদ্ধ থাকতে হয়। অন্যেরা আত্মগোপন করেন।
এখন আমার প্রশ্ন, এই কর্মসূচী জাতীয় রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে না দিয়ে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হল কেন? হয় তাঁরা ন্যাপ থেকে এ কর্মসূচী দিতেন আর ন্যাপ রাজী না হলে নূতন রাজনৈতিক দল গঠন করে নিজেরা দিতেন। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাঁরা আন্তরিক হলে ন্যাপ থেকে এই ধরনের কর্মসূচী ঘোষণা করা যেত। কারণ ভাসানী যে রাজী হতেন তেমনটাই আমার ধারণা। ১৯৭০-এর ৩০ নভেম্বর ভাসানী নিজেই পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন এবং দেশবাসীকে স্বাধীনতার জন্য মুক্তি সংগ্রাম শুরু করার ডাক দেন।
কিন্তু আমার ধারণা তখনও ন্যাপের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া বা প্রকাশ্যে স্বাধীনতার কর্মসূচী ঘোষণা করা হত ভুল। রাস্তায় মিছিলে স্বাধীনতার স্লোগান দেওয়া আর প্রকাশ্যে জাতীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে হঠাৎ করে স্বাধীনতার কর্মসূচী দেওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। বস্তুত এই নেতৃত্ব যদি স্বাধীনতার প্রশ্নে আন্তরিক হতেন তবে তাঁরা তখনও ন্যাপের পক্ষ থেকে আর ন্যাপ রাজী না হলে নূতন কোন রাজনৈতিক দল গঠন করে তার পক্ষ থেকে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে কেন্দ্রে রেখে একটা জাতীয় কর্মসূচী দিতেন, যেখানে স্বায়ত্তশাসনের কর্চসূচীর পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক ও নারীসহ সমস্ত জনগণের নিম্নতম কর্মসূচী স্থান পেত। এবং আমি আবার আমার ধারণাটা বলি, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব চাইলে এই ধরনের কর্মসূচী ন্যাপ থেকে অনেক পূর্বেই দেওয়া সম্ভব হত। কারণ ভাসানী সেটা চাইতেন। আর ’৬৯-এর গণ-অভ্যুথানের সময় থেকেই হক-তোয়াহা নেতৃত্ব ন্যাপে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং বলা যায় ন্যাপের উপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ উৎখাত হয় এবং সেই জায়গাটা দখল করে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মূল নিয়ন্তারা সেই ধরনের কোনও জাতীয় কর্মসূচী ন্যাপ দিক এটা কোনও দিন চান নি বলেই সেটা ন্যাপের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় নি।
এখন একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যাবে যে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নকে দিয়ে স্বাধীন জন-গণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচী ঘোষণাতে দু’টো কাজ হল। প্রথমত, এক প্রবল ছাত্র-তরুণ শক্তি যা তখন একটা জাতীয় কর্মসূচীর দাবীতে অস্থির ছিল তাকে তুষ্ট করা হল এমন এক কর্মসূচী দিয়ে যা নিয়ে তারা মিছিল করতে, শ্লোগান দিতে পারে কিন্তু জনগণকে সংগঠিত করতে পারে না, যেহেতু সেটা ছিল তখনও জনগণের সাধারণ আকাঙ্ক্ষার চেয়ে অনেক বেশী অগ্রগামী। ফলে এক অর্থে ছাত্রদের শক্তি ও তেজ জনগণকে অবলম্বন করে কোন সংগঠিত রূপ নিতে পারল না। এইভাবে ছাত্র-যুব শক্তিকে অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হল। দ্বিতীয়ত, এই রকম এক অতিরিক্ত অগ্রগামী কর্মসূচী ঘোষণা করিয়ে মাহবুব উল্লাহকে জেলে পাঠানোর এবং অন্যদেরকে পলাতক করার ব্যবস্থা করা হল। এইভাবে এক বিশাল বিপ্লবী ছাত্র-যুব শক্তিকে নেতৃত্বহীন করা হল। এটা নিশ্চয় তাৎপর্যপূর্ণ যে, ঢাকার পল্টনের জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ১৯৭০-এর ২২ ফেব্রুয়ারী স্বাধীন জন-গণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচী ঘোষণা করা হলে সেখানে তখনকার শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমদ এবং রাশেদ খান মেনন বক্তৃতা দেন কিন্তু পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মূল নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত কোনও ব্যক্তি বক্তৃতা দেন নি। আমার জানা মতে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক আবদুল মতিনেরও সেই সভায় বক্তৃতা দেবার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই সভায় যান নি।
এই পার্থক্যের তাৎপর্যও আমাদের বুঝতে হবে। ইতিপূর্বে আইয়ুব সরকারের লেজুড়বৃত্তি কিংবা তার প্রতি বিরোধিতা না রাখার রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে প্রাক্তন ছাত্র নেতা ও শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমদ স্বাধীন পূর্ব বাংলার রাজনীতি গ্রহণ করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৬৯-এ প্রতিষ্ঠিত হয় কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি নামে গোপন সংগঠন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার ছিলেন এই সমন্বয় কমিটির সঙ্গে। প্রাক্তন ছাত্র নেতা হায়দার আকবর খান রনো এবং রাশেদ খান মেননও ছিলেন এই সংগঠনের নেতৃত্বে।
এটা বুঝতে হবে প্রকাশ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত কাজী জাফর আহমদ তখন স্বাধীন পূর্ব বাংলার রাজনীতি গ্রহণ করলেও তিনি ছিলেন তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী। অথচ তিনি বা মেনন তখন যে সাহস করলেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মত অত বৃহৎ একটি সংগঠনের নেতৃত্ব সেই সাহস করল না। এটা কি শুধু সাহসের অভাব নাকি আন্তরিকতার অভাব? নেতারা শুধু পাঠালেন একা মাহবুব উল্লাহকে যিনি তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং গোপন সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
আসলে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গঠিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মূল নেতৃত্ব বাঙ্গালীর স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাত করার জন্য কি নিপুণভাবে এক ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছিলেন তা বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রবেশ করতে হবে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সেই অধ্যায়ে যখন চারু মজুমদারের গণ-সংগঠন ও গণ-আন্দোলন বর্জন এবং শ্রেণী শত্রু খতমের লাইন এল।