লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ April 1, 2018, 12:00 AM, Hits: 1524
ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ ও সভ্যতার নিজস্ব ধারার দিকে যখন আমি দৃষ্টি দিই তখন যে সকল দিক আমার কাছে খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয় সেগুলির একটি হচ্ছে অহিংসার উপর এমনই গুরুত্ব প্রদান, যা অনেক সময় বোকামি কিংবা কাপুরুষতার পর্যায়ে পড়ে। সেটা যেমনই হোক এই অহিংসার প্রভাবের কারণ এবং তাৎপর্য বুঝাটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। কেন যুগ যুগ ধরে এখানে সমাজ মানসে অহিংসা ও শান্তিপ্রিয়তার প্রভাব অন্য বহু সমাজের তুলনায় এত বেশী? ভারতবর্ষেই বোধহয় সম্ভব একটা মাত্র যুদ্ধের মৃত্যু ও রক্তপাতের বেদনার আঘাতে চণ্ডাশোকের মৃত্যুবরণ এবং ধর্মাশোকের জন্মলাভ।
মৌর্য সম্রাট অশোক (জন্ম- খ্রীষ্টপূর্ব ৩০৪ অব্দ, সিংহাসনে আরোহণ- খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৯ অব্দ [?] এবং মৃত্যু- খ্রীষ্টপূর্ব ২৩২ অব্দ) সম্পর্কে কথিত আছে যে, সিংহাসনের জন্য তিনি তার ভাইদেরকে হত্যা করেছিলেন এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুর ছিলেন বলে তাকে চণ্ডাশোক বলা হত। তার সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল উত্তর-পশ্চিমে প্রায় সমগ্র আফগানিস্তানসহ বর্তমান পাকিস্তান, উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে তামিলনানাড়ু ও কেরালা বাদে সমগ্র দাক্ষিণাত্য আর কিছুটা দক্ষিণ ঘেঁষা পূর্বে অবস্থিত কলিঙ্গ বা উড়িষ্যা বাদে সমগ্র বঙ্গ বা বাংলা পর্যন্ত বিশাল ভূভাগ। শক্তিশালী কলিঙ্গ রাজ তার অধীনতা মানতে অস্বীকার করেন। প্রায় সমগ্র উপমহাদেশের উপর তার রাজ্যের বিস্তার সম্পূর্ণ করতে চেয়ে খ্রীষ্টপূর্ব আনুমানিক ২৬০ অব্দে তিনি কলিঙ্গ রাজ্যকে আক্রমণ করলে কলিঙ্গ প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ফলে প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কলিঙ্গ পরাজিত হয় এবং তার এক লক্ষ সৈন্য ও প্রতিরোধকারী বেসামরিক যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া পরাজিত কলিঙ্গের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে বাস্তুভূমি থেকে উৎখাত করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এই কাহিনী অনেকেরই জানা। বলা হয়ে থাকে এত বিপুল মৃত্যু এবং যুদ্ধ জনিত ধ্বংস সম্রাট অশোককে এতই ব্যথিত ও অশান্ত করে যে তিনি হিংসা বা যুদ্ধের পথ চিরতরে পরিত্যাগ করেন এবং অহিংসার ধর্ম হিসাবে শেষ পর্যন্ত খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৩-তে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বাকী জীবন বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। যুদ্ধে পরাজিত শত্রুপক্ষের মৃত্যু, ধ্বংস ও স্বজনহারাদের ক্রন্দনে শোকাহত ও অনুতপ্ত অশোকের প্রস্তর অনুশাসনে লিপিবদ্ধ ব্যাকুল ও আর্ত অনুতাপ আজও পাঠকদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়।
অশোকের সঙ্গে অনেক পরবর্তী কালের আরেক ভ্রাতৃঘাতী ভারত-সম্রাট আওরঙ্গযেবের (জন্ম- ১৬১৮ খ্রীষ্টাব্দ, সিংহাসন আরোহণ- ১৬৫৮ খ্রীষ্টাব্দ এবং মৃত্যু- ১৭০৭ খ্রীষ্টাব্দ) একটু তুলনা করা যাক না! পিতা সম্রাট শাহজাহান যখন গুরুতর অসুস্থ সেই সময় দুই ভাইকে হত্যা ক’রে, আরেক ভাইকে আরাকানের দিকে বিতাড়ন ক’রে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে সিংহাসন দখল করলেন এবং অসুস্থ পিতাকে বন্দী করলেন। সবচেয়ে ঘৃণ্য যে কাজ তিনি করলেন তা হল বড়ভাই দারাকে হত্যা ক’রে থালায় তার মাথা রেখে তার শয্যাশায়ী পিতাকে উপহার হিসাবে পাঠানো। শাহজাহান বন্দীদশায় আট বছর বেঁচে ছিলেন।
আওরঙ্গযেব যতদিন বেঁচেছিলেন চণ্ড রূপেই তিনি বেঁচেছিলেন। তার কোনও দিন অনুতাপ হয় নাই। বরং তার জীবন হত্যা এবং যুদ্ধ দিয়েই পূর্ণ। তিনি তার পুত্রকেও রেহাই দেন নাই। আওরঙ্গযেব তার মৃত্যুর পূর্বেই সাম্রাজ্য ধ্বংসের শুরুটা দেখে যান। এদিক থেকে অশোক ভাগ্যবান। শান্তি ও অহিংসার পথ অনুসরণ করলেও প্রায় ৪০ বৎসর রাজত্ব করে তিনি তার সাম্রাজ্য অক্ষত রেখে মৃত্যু বরণ করতে পেরেছিলেন।
যাইহোক, এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমি যে কথা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে রক্তপাত আর মৃত্যুর ভয়াবহতা যদি যারা এর জন্য দায়ী তাদের মন ঘুরাতে পারত তাহলে মানুষের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারত। মোঙ্গল যুদ্ধনেতা চেঙ্গিস (জন্ম - আনুমানিক ১১৬২ খ্রীষ্টাব্দ, মৃত্যু- ১২২৭ খ্রীষ্টাব্দ) শুধু চীনেই সেকালে প্রায় দুই কোটি মানুষকে হত্যা করেছিলেন। চীনে তখন মানুষ ছিল প্রায় দশ কোটি। দশ কোটি মানুষের মধ্যে দুই কোটি মানুষকে যে হত্যা করতে পারে তার চণ্ডতা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ ভূভাগে চেঙ্গিস ও মোঙ্গলদের নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার বহু বর্ণনা ইতিহাসে আছে। সেসব এখানে বাহুল্য এবং অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু এখানে আমি যে কথা বলতে চাচ্ছি সেটা হল এইসব মৃত্যু এবং ধ্বংসের হোতাদের মনে এর জন্য কোনও প্রতিক্রিয়া না ঘটার কারণ কী? এর জন্য শুধু ব্যক্তির দিকে না তাকিয়ে যে সমাজ জমি থেকে ব্যক্তি উঠে আসে সেই সমাজ জমিকেও বুঝতে চেষ্টা করতে হয়। তাহলে অশোক আর আওরঙ্গযেবের মধ্যকার অনেক পার্থক্যের কারণটাকে বুঝা যেতে পারে।
আমি এ কথা বলব না যে উপমহাদেশে ইসলামী শাসনই শুধু যুদ্ধ ও সহিংসতা নিয়ে এসেছে। তার পূর্বেও উপমহাদেশে প্রচুর যুদ্ধ ও সহিংসতা ছিল। সেটা যে শুধু শক বা হুনরা তাদের আক্রমণ অভিযানের মাধ্যমে এনেছিল তাই নয়, এটা তার আগেও ছিল। রাজচক্রবর্তী হবার প্রতিযোগিতা হিন্দু যুগেও ছিল। তবে প্রাগৈতিহাসিক কালের সিন্ধু সভ্যতায় যুদ্ধ ও সহিংসতার মাত্রা যে অনুল্লেখ্য সেটা প্রত্নতত্ত্ব দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু সভ্যতার ক্ষয় ও ধ্বংসের সময় যে যুদ্ধ ও সহিংসতা প্রাধান্য বিস্তার করেছিল তার সাক্ষ্য আমরা ঋগ্বেদ থেকে পাই। ঋগ্বেদকে আমি সিন্ধু সভ্যতার পতনের সময়কার সামাজিক দ্বন্দ্ব, আন্দোলন ও যুদ্ধের একটি দলিল হিসাবে দেখি। অর্থাৎ ভারতবর্ষে বহিরাগত, যাযাবর ও বর্বর হিসাবে কথিত আর্য আক্রমণ তত্ত্বের কোনও মূল্য আমার কাছে নাই। কেন নাই সে বিষয়ে এখানে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। যদি এ বিষয়ে আমার ইতিহাস ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানা না থাকায় কারও কৌতূহল হয় তবে তিনি শামসুল আলম চঞ্চল এবং আমার যৌথভাবে লেখা বই ‘আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা’ পড়তে পারেন। বইটিতে আমরা সিন্ধু সভ্যতার অহিংস বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছি এবং সেই সঙ্গে সেটা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল সে সম্পর্কেও ব্যাখ্যা দিবার চেষ্টা করেছি।
যাইহোক, সিন্ধু সভ্যতা প্রধানত অহিংসা ও শান্তি নির্ভর হলেও যখন সভ্যতায় ক্ষয় ও বিপর্যয় শুরু হয় তখন সমাজ ও সভ্যতায় যুদ্ধের শক্তি প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকেই বিভিন্ন কারণে পতনোন্মুখ সিন্ধু সভ্যতার পতন ত্বরান্বিত ও সম্পূর্ণ হয় বলে আমি অনুমান করি। এরপর একটা দীর্ঘ সময় ভারতবর্ষে নগর সভ্যতা ছিল না বলাই ভাল। উপমহাদেশ পিছিয়ে গিয়েছিল গ্রামীণ সমাজে। অনুমান করা যায় যুদ্ধের ধর্ম হিসাবে বৈদিক ধর্ম সমাজকে সহিংস ও যুদ্ধমুখী করে তুলে। কিন্তু উপমহাদেশ যে যুদ্ধ ও সহিংসতাকে সাধারণভাবে খুব একটা লালন করতে পারে না তার সাক্ষ্য দেয় পরবর্তী কালে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান। তত্ত্বগতভাবে বৈদিক ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মের উত্থান হলেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক। যেমন বৈদিক ধর্ম বা সমাজে বর্ণজাতিভেদ প্রথা ছিল না। এটি পরবর্তী কালে হিন্দু সমাজের বিকাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। হিন্দু সমাজের ক্রমবিকাশের সঙ্গে সমাজে ক্রমেই যুদ্ধের পরিবর্তে অহিংসা বা শান্তি প্রাধান্য বিস্তার করে। যুদ্ধ থাকল। তবে সেটার দায়িত্ব দেওয়া হল শুধু ক্ষত্রিয় বর্ণকে। এভাবে অবশিষ্ট সমগ্র সমাজকে নিরস্ত্র ও পরিণতিতে নির্বীর্যও করা হল।
যাইহোক, হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগে রাজাদের যুদ্ধ ও সহিংসতার যে সব কাহিনী আমরা পড়ি সাধারণভাবে সেগুলির কিছু বৈশিষ্ট্য বিস্ময় জাগায়। পৃথিবীর অন্য বহু দেশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে এগুলিকে ঠিক মিলানো যায় না। উপমহাদেশের রাজা বা সম্রাটরা কতকগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যুদ্ধ করত। কোনও পক্ষেরই সাধারণ নিরস্ত্র প্রজাবৃন্দ বা নাগরিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু না করা, রাত্রির অন্ধকারে আক্রমণ না করা এবং সকাল থেকে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য সময় নির্দিষ্ট রাখা, পরাজিত রাজ্যের অধিবাসীদেরকে দাস না করা, এমনকি পরাজিত ও বন্দীদের প্রতিও সদাচরণ ইত্যাদি ছিল মুসলিম আক্রমণ ও শাসনকালের পূর্ব পর্যন্ত উপমহাদেশের রাষ্ট্র ও যুদ্ধের সাধারণ নীতি। মনে রাখতে হবে সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম ঘটে। তবে সেটা সাধারণ নিয়মের মধ্যে পড়ে না। বিশেষত এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বহিরাগত আক্রমণকারী এবং অভিবাসী জনগোষ্ঠীর আগমন সমাজে ব্যতিক্রমী কিংবা চাপা পড়ে থাকা প্রবণতা বা নীতিসমূহকে যে পুনরুজ্জীবিত কিংবা শক্তি দান করত সেই দিকটাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
মুসলিম শাসনের পূর্ববর্তী কালে বহিরাক্রমণ বা বহিরাগমনের প্রভাব স্তিমিত হলে ভারতবর্ষ পুনরায় ফিরে যেত তার নিজস্ব ধারায়। বহিরাগতরা সেই ধারায় বিলীন হয়ে যেত। কিন্তু মুসলিম আগ্রাসন ও শাসন ভারতবর্ষকে ভিন্ন ও অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দান করে। ৭১২ খ্রীষ্টাব্দে আরব মুসলিম হানাদার মুহাম্মদ বিন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু আক্রমণ ও জয় দ্বারা এই অভিজ্ঞতা দান সূচিত হয় যা চলে ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশের বিজয় পর্যন্ত। সামান্য কিছু বিরতি দিয়ে প্রায় অব্যাহত ধারায় পাইকারীভাবে হত্যা, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, দাসকরণ, জবরদস্তিমূলকভাবে ধর্মান্তরকরণ এবং গ্রাম, শহর ও নগর ধ্বংসসাধন, বিশেষত ভারতীয় বিভিন্ন ধর্মের মঠ, মন্দির ও বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ব্যাপক ধ্বংসসাধন হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে ভারতবর্ষকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। ইসলামের তরবারিতে নিহত হয়েছে ছয় থেকে আট কোটি মানুষ।
যাইহোক, উপমহাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে সাধারণভাবে অহিংসার যে প্রভাব আমরা মুসলিম শাসনের পূর্ব পর্যন্ত দেখতে পাই তার শুরুর একটি জায়গা হিসাবে আমি সিন্ধু সভ্যতাকে বিবেচনা করি। কিন্তু এই শুরুরও তো একটা শুরু আছে। সিন্ধু সভ্যতা নির্মাণের আগে নিশ্চয় একটা সমাজকে বহুকাল দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নানাবিধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছিল। শুধু কি অনুকূল ভূভাগ সিন্ধু সভ্যতার অহিংস ধারায় উদ্ভব ও বিকাশ সম্ভব করেছিল? সভ্যতা নির্মাণ আরও অনেক জায়গায় হয়েছে। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতা আর কোথায়ও হয় নাই। আর সব জায়গায় সভ্যতা নির্মাণে অবর্ণনীয় নির্মমতার সাক্ষ্য ছড়িয়ে আছে। সেটা মিসর হোক, মেসোপটেমিয়া হোক, চীন হোক, গ্রীস হোক, রোম হোক কিংবা আমেরিকার আজটেক, মায়া সভ্যতা হোক।
আসলে সিন্ধু সভ্যতা যারা নির্মাণ করেছিল সেই মানুষদের উদ্ভব ও বিকাশ প্রক্রিয়ার মধ্যে আমাদেরকে খুঁজতে হবে এই রহস্যের চাবিকাঠি। সেটা কি পারা যাবে? সে কাজ করতে কত আগে যেতে হবে? দশ হাজার, পনেরো হাজার, নাকি, কুড়ি হাজার বছর? সেটা আজ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সময়টা যে বহদূর অতীতের গর্ভে লুকিয়ে আছে তাতে সন্দেহ নাই। সিন্ধু সভ্যতারও অনেক অনেক দূর অতীতে। আর একদিন সেই চেষ্টা করা যাবে।