লিখেছেনঃ মৃন্ময় চক্রবর্তী , আপডেটঃ October 5, 2015, 12:00 AM, Hits: 1906
হারান, কানাই, মনিরুল রায়পুকুরের পাড়ে বসে আছে। পুকুরের চারপাশে তালবন। জলে অজস্র চাঁদমালা ফুটেছে, অপূর্ব তার শোভা। তিন প্রাণবন্ধু মাঝে মাঝেই এই নির্জনে এসে বসে গল্প করে, নিষিদ্ধ কাজ সারে। ওদের সামনে পদ্মপাতার উপরে নাচ করে ডাহুক। ভর দুপুরে বুনো ঝোপ থেকে শিয়াল বেরিয়ে অবাক হয়ে ওদের দেখে, আবার চলে যায়।
জায়গাটা গ্রামের প্রান্তে। এখানে সচরাচর কেউ খুব একটা আসে না। কানাই কৌটো খুলে মেলে ধরে ওরা খেতে শুরু করে দেয়। হারান খাবার আগে পৈতে খুলে কুলগাছে ঝুলিয়ে রাখে। মনিরুল বলে শালার বাগদি এত ঝাল খাস তোরা! ওদের চোখে নাকে জল ঝরা দেখে কানাই হাসে। সে হারানকে বলে, কী ভটচাজ ঠাকুর রান্না কেমন হয়েছে, মোল্লার ঈদের বড়খাসির চেয়ে ভাল লিশ্চই? হারান হেসে বলে, তা ভালই হয়েছে ওস্তাদ। মনিরুলের দিকে তাকিয়ে বলে, তবে বড়খাসিটা কিন্তু ভালই লেগেছে সেবারে। বড্ড ঝাল দিয়েছে রে পিসি, ওফ জ্বলে গেল ! একটুকরো মাংস মুখে ফেলে ফের বলে হারান, হ্যাঁরে কানা পিসিকে কি বললি? কানাই হাসে, কি আবার বলব, তোরা খাবি বললাম। হারান আর মনিরুলের গলায় মাংস আটকে যাবার যোগাড় হয়। কানাই হো হো করে হাসে, বলে, খা খা বলিনি, তোদের কথা বলিনি! তবে কী বললি? মনিরুলের ভয় যায় না। কানাই প্রবোধ দেয়, কী বলব, বললাম ইস্কুলের বন্ধুরা খাবে। দুজনের ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। মনিরুল বলে কালোহরিণের বাদীটা খেতে বেশ। খাওয়া শেষ হলে হারান ন্যাংটো হয়ে রায়পুকুরে নেমে তিনডুব দেয়। মনিরুলও তার দেখাদেখি জলে নেমে শুদ্ধ হবার চেষ্টা করে। কানাই পাড়ে বসে ওদের রোমশ পুরুষাঙ্গ দেখে হাসে।
হারান পৈতেটা গলায় পরতে পরতে মনিরুলকে বলে, কাল তুই তাজিয়া নিয়ে কখন আসবি মনি? মনিরুল হাত দিয়ে দুপুরের সূর্য দেখিয়ে ঈঙ্গিত করে। সন্ধ্যার নামাজ শুরু হয়ে গেছে তাই সে এখন কথা বলবে না, প্রার্থনায় বসবে।
""
পরদিন মহররমের তাজিয়া শিবতলায় আসতে আসতে বেলা গড়িয়ে যায়। কানাই বাউড়ি আর হারান ভটচাজ অস্থির হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ধু মনিরুল সরদারের জন্য।
আহা কি সুন্দর সাজে সেজেছে তাজিয়ার ঘোড়া। নানারঙের কাগজের পতাকায় ঝলমল করছে বাঁশের উঁচু উঁচু দন্ড। যারা হা হাসান হা হোসেন বলে কাঁদছে পিঠে চাবুক মেরে রক্ত ঝরাচ্ছে তাদের সাজও কম বিচিত্র নয়। ওদের ঘিরে জয়ঢাক বাজছে, ড্যাং ড্যাং ড্যাড্যাং ড্যাং! দুয়োরে দুয়োরে ধামাবাহক গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। হাসানের নামে হোসেনের নামে চাল আলু উপুড় হয়ে পড়ছে। এত ভিড় হয়েছে স্থির হয়ে দাঁড়ানোর জো নেই। গোটা হরিপুর গ্রাম যেন উপচে পড়েছে। গ্রামের পূর্বপ্রান্তে একফালি মোল্লাপাড়ার কেরামতি দেখছে হিন্দু গাঁ, বিস্ময়ে ভক্তিতে ভালবাসায়।শিবতলা, মঙ্গলচণ্ডীতলা, রক্ষাকালীতলা, দোলতলা পেরিয়ে খেলারামতলায় তাজিয়া নাচের সময় ওরা মনিরুলকে খুঁজে পায়। সে এখন বাতাসা বিলোচ্ছে। ওরা কোলাকুলি করে । এবারে মিলেছে তিনমূর্তি! ওরা হাসবে কাঁদবে নাচবে, বলবে হা হাসান হা হোসেন..... গোটা গ্রামজুড়ে আরেকটা গাজনোৎসবে মিলে যাবে ডাক, জয় শিবো শিবো হে, হা হাসান হোসেনওও......