লিখেছেনঃ তামান্না ঝুমু, আপডেটঃ November 30, 2023, 12:00 AM, Hits: 1208
রিকশা এসে দাঁড়িয়েছে দুয়ারের সমুখে;
আর দেরি করা যাবে না,
তল্পিতল্পাসহ উঠে পড়তে হয়।
রিকশা চলতে শুরু করে পুবদিকে।
উঠোন পেরিয়ে, কাছারি পেরিয়ে, খেলার মাঠ,
পুকুর পেরিয়ে, চিরদিনের চেনা গাছগাছালি পেরিয়ে,
দাদু-দাদির কবর পেরিয়ে
রিকশা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকে
পূর্ব দিগন্তের দিকে —
মেঘনানদী-পাড়ে, যেখানে ইস্টিমার ঘাট।
দক্ষিণ হ’তে বইছে উতল হাওয়া,
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি,
আকাশে কালো মেঘের পাহাড়।
এমন দিনে কে বের হয় ঘর ছেড়ে?
কে ছুটে যায় উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিতে,
জীবন হাতে নিয়ে,
এমন প্রত্যুষে,
আকাশের অশ্রুধারা মাথায় নিয়ে?
ডাক এসেছে সুদূর আমেরিকা তথা
শ্বশুরবাড়ি থেকে।
তাই যেতেই হচ্ছে।
জানি না, আর কখন ফেরা হবে,
কতকাল পর!
মানসপটে এক নিমেষে যেন ভেসে ওঠে
হাজার বছরের স্মৃতি।
আমার হৃদয় এই কাদামাটি ছুঁয়ে থাকতে চায়।
চোখ হ’তে বৃষ্টি নামে
সেদিনের আকাশের মতো।
কোনো বাড়ি থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে,
কোনো বাড়ি থেকে শোনা যায় কারো কণ্ঠ।
এই হাসি, এই কণ্ঠ আমার চিরচেনা মানুষদের।
কারো বাড়ির রান্নাঘরের চালের ওপরে উড়ছে ধোঁয়া,
শরতের মেঘের মতো।
প্রাতরাশের তাদের চলছে আয়োজন।
চিত্তল পিঠার ঘ্রাণ লাগছে নাকে।
সবকিছু পেছনে ফেলে
রিকশা আমায় নিয়ে ছুটে চলে মেঘনার পানে।
মেঘনা আজ বড় অধীর।
অস্থির জলধি, প্রমত্ত ঢেউয়ের রাশি।
দোলনার মতো দুলছে ইস্টিমার।
ভয় হচ্ছে, যদি আজ হয়ে যায় সলিলসমাধি!
ইস্টিমার পুব দিকে চলেছে,
সুবিশাল উত্তাল ঢেউয়ের দল ঠেলে ঠেলে।
মেঘনা পার হয় একসময় ইস্টিমার।
অতঃপর দু’দিনের তরে
থামি আমি চাটগাঁ শহরে।
তারপরের যাত্রা বিমানবন্দরের দিকে।
আমার তৎকালীন সর্বস্ব,
কয়েক সেট সালোয়ার কামিজ
আর কয়েকটি শাড়ি ভ’রে-নেওয়া
গ্রাম্য ব্যাগটি হাতে নিয়ে
ভীরুপায়ে গিয়ে উঠি বিমানে।
বিমান উড়াল দেয়,
আমাকে নিয়ে, আমার সর্বস্ব-ভরা ব্যাগটি নিয়ে;
বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে, বাংলা ছেড়ে।
মেঘের সমুদ্র সাঁতরে সাঁতরে
বিমান ছুটতে থাকে আমায় নিয়ে —
সুদূর পশ্চিমের পানে,
যমের বাড়ি তথা আমার শ্বশুরবাড়ির পানে।