লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ April 1, 2018, 12:00 AM, Hits: 1441
সিন্ধু সভ্যতার অবসান হয়েছে কতকাল আগে! প্রায় পৌনে চার হাজার বছর আগে। সাধারণভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মত অনুযায়ী খ্রীষ্টপূর্ব ১৯ শতকে উন্নত নগর সভ্যতার ক্ষয় শুরু হয় এবং মোটামুটি খ্রীষ্টপূর্ব ১৭ থেকে ১৩ শতকের মধ্যে সমগ্র অঞ্চলব্যাপী তার পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে সিন্ধু সভ্যতা হিসাবে পরিচিত হরপ্পান সভ্যতার যাত্রা শুরু প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে। সেটা ছয় হাজারও হতে পারে। তার পরিণত বা উন্নত নগর সভ্যতার পর্যায়ের শুরুই কমপক্ষে ৪ হাজার ৬ শত বছর আগে (খ্রীষ্টপূর্ব ২,৬০০ বৎসর)। এত কাল আগে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ কীভাবে এমন এক বিস্ময়কর সভ্যতা নির্মাণ করেছিল সে কথা যখন চিন্তা করি তখন বিস্ময়ে অভিভূত হই। প্রথমত, তার আয়তনের বিশালতা বিস্ময় জাগায়। সমকালীন মিসর কিংবা মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার দ্বিগুণেরও অধিক আয়তন নিয়ে এই সভ্যতা বিস্তৃত। উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান, সমগ্র পাকিস্তান এবং ভারতের উত্তরে কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে দক্ষিণে রাজস্থান, গুজরাট ও মহারাষ্ট্র পর্যন্ত প্রায় দশ লক্ষ বর্গকিলোমিটার ব্যাপী আয়তন নিয়ে বিস্তৃত এক বিশাল সভ্যতা তার বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতার পাশে আশ্চর্য রকম সমরূপতা নিয়ে বিরাজমান। লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এই সভ্যতাকে চিনা যায় সর্বত্র তার প্রায় একই রকম নগর বিন্যাস, অভিন্ন বাটখারা বা ওজন এবং অভিন্ন মাপের অস্তিত্ব দ্বারা। সেই সঙ্গে আছে অভিন্ন সিল এবং বিভিন্ন ব্যবহার্য মাটির পাত্র ও তৈজসপত্রের অভিন্ন ধরন।
সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীতে ছিল অতুলনীয়। তার সরল রেখায় টানা রাস্তা, রাস্তাগুলির দুই পাশে সারিবদ্ধ পাকা বাড়ী বা ভবন, আবাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের বৈষম্যের অনুপস্থিতি, আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন, নগরের বর্জ্য পরিষ্কারের নিয়মিত ব্যবস্থা, নগরের সব অধিবাসীর জন্য জল সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ─ এগুলি সবই ঐ সভ্যতার অতুলনীয় শক্তিমত্তা এবং নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও চাহিদার প্রতি বিস্ময়কর মনোযোগের পরিচায়ক।
সিন্ধু সভ্যতার সব নগরই সুবিন্যস্ত। এখানে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানও আসমান ও জমিনের নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়োসহ অন্যান্য বসতিতে ধাতুর তৈরী জিনিসপত্র, যা সে কালে ছিল মহার্ঘ, বিশেষ কোন ভবনে সীমাবদ্ধ না থেকে সকল স্থানে সমানভাবে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সম্পদ যে মুষ্টিমেয়ের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল না এই ঘটনা তার সাক্ষ্য দেয়। কোনও নগরেই বস্তির চিহ্ন নাই। নগরগুলিতে ছোট বা বড় যেমন গৃহই হোক সবাই বাস করত পাকা গৃহে। সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন নরকঙ্কালের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেহবিজ্ঞানীরা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছেন অন্য সকল সভ্যতার ধনী-দরিদ্রের কঙ্কাল থেকে পুষ্টিমানের যে ধরনের পার্থক্য ধরা পড়ে সিন্ধু সভ্যতায় সে ধরনের পার্থক্য অনুপস্থিত। তা থেকে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সিন্ধু সভ্যতায় সম্পদে বৈষম্য তুলনায় অনেক কম ছিল এবং সবচেয়ে দরিদ্রও তার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম খাদ্য থেকে বঞ্চিত ছিল না। আজকের দারিদ্র্য ও তীব্র শ্রেণী বৈষম্য কবলিত উপমহাদেশের দিকে দৃষ্টি দিলে কী মনে হবে? পাঁচ হাজার বছর পূর্বে এই উপমহাদেশে আমাদের যে পূর্বপুরুষেরা অমন একটা মহাসভ্যতা নির্মাণ করেছিলেন আমরা কি তাদেরই বংশধর, উত্তরসূরি, নাকি আর কিছু?
আমার খুব ইচ্ছা করছে চার-পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বের সিন্ধু সভ্যতার সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত মহেঞ্জোদাড়ো বা হরপ্পা নগরের পাশে আজকের ‘মহাবস্তি’ ঢাকা নগরকে রেখে দেখতে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ইট-সিমেন্ট দ্বারা ঘর-বাড়ীর জঞ্জাল, যেখানে সেখানে বস্তি নামক হতদরিদ্রদের বাসস্থানের অস্তিত্ব এবং এক বিশাল নগরের সড়কসমূহের হাস্যকর রকম অপ্রশস্ত ও এলোমেলো বিন্যাস ইত্যাদি বলে দেয় মনের দিক থেকে কত দীন, কত হীন ও কত অযোগ্য মহানগর নামে ‘মহাবস্তি’ এই ঢাকা নগরের নির্মাণ ও শাসনের নায়কেরা।
ব্রোঞ্জ যুগের সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার রাষ্ট্রের নায়কদের পাশে দাঁড় করানো যাক আধুনিক সভ্যতার যুগের বাংলাদেশের রাষ্ট্রের নায়কদের। তাহলেই আমাদের আজকের এই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সভ্যতার নায়কদের কাল প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্রত্ব ও দীনতা আরও স্পষ্ট হবে। এ যেন সিন্ধু সভ্যতার অতিকায় দৈত্য-রূপের পাশে বাংলাদেশ-রাষ্ট্রের সভ্যতার বিকলাঙ্গ ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বামন-রূপ দর্শন। আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সভ্যতার নায়কদের এই বিকলাঙ্গ ও বামন দশা তো এই সমাজেরও পঙ্গুত্ব ও ক্ষুদ্রতার প্রকাশ। পাকিস্তান দূরে থাক। আজকের ভারত-রাষ্ট্রও কি কাল প্রেক্ষিতে ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু সভ্যতার পাশে দাঁড়াবার যোগ্যতা রাখে? অতিকায় প্রবল দৈত্যের পাশে সেও বিকলাঙ্গ বামন ছাড়া আর কী?
অথচ সিন্ধু সভ্যতায় রাষ্ট্র ছিল প্রধানত শান্তিনির্ভর ও অহিংস। সিন্ধু সভ্যতার বহুকিছুই আজও রহস্যাবৃত। কারণ তার লিপির পাঠোদ্ধার আজও হয় নাই। তাছাড়া উৎখননও তুলনায় খুব সামান্যই হয়েছে। ফলে তার সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের বহুকিছুই অনুমান বা কল্পনার বিষয় হয়ে আছে। অবশ্য এইসব অনুমান বা কল্পনার একটা বাস্তব ভিত্তি আছে। সেটা হচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের ফলে প্রাপ্ত বিভিন্ন বসতি এবং দ্রব্যসামগ্রী।
কিন্তু কীভাবে এত বিশাল অঞ্চল ব্যাপী এই সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল? এই সভ্যতার অনেক রহস্যের মত আজও এটা একটা রহস্য হয়ে আছে। যুদ্ধ কি সেখানে ছিল না? যুদ্ধ ছাড়া কি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, আর রাষ্ট্র ছাড়া কি সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায়? অভিজ্ঞতা বলে করা যায় না। অথচ সিন্ধু সভ্যতায় যুদ্ধের উপকরণ স্বরূপ অস্ত্রশস্ত্রের মান এমনই নিম্ন পর্যায়ের ও পরিমাণ এমনই কম যে তা দিয়ে আর যা-ই হোক সিন্ধু সভ্যতাকে যুদ্ধ নির্ভর সভ্যতা বলা যাবে না। প্রাচীন মিসর, মেসোপটেমিয়া এবং কিছু পরবর্তী কালের প্রাচীন চীনে রাষ্ট্র ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় ভয়ঙ্কর সহিংসতা ও নির্দয়তার যে সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় তার এমন অনুপস্থিতি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল আরও অনেক বিশালতর আয়তন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সিন্ধু সভ্যতায়? সিন্ধু সভ্যতায় অস্ত্রশস্ত্রের স্বল্পতা ও অত্যন্ত নিম্নমান দেখে কোনও কোনও বিদেশী পণ্ডিত-প্রত্নতত্ত্ববিদ এই সিদ্ধান্ত টেনেছেন যে, সিন্ধু সভ্যতায় স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল না; সুতরাং এখানে রাষ্ট্র ছিল না। (দ্রষ্টব্য ꞉ Jim G. Shaffer and Diane A. Lichtenstein: ‘The concepts of cultural tradition’ and ‘palaeoethnicity’ in South Asian archaeology,’ in, The Indo-Aryans in Ancient South Asia: Language, Material Culture and Ethnicity [1997], pp. 134-137.)
সেনাবাহিনী না থাকলে রাষ্ট্র থাকবে না মনে করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্র ছাড়া সভ্যতা নির্মাণ করা কি সম্ভব? আর অত বড় একটা সভ্যতা তার আত্মরক্ষার জন্যও কোনও ধরনের সেনাবাহিনী এবং বলপ্রয়োগের ব্যবস্থা রাখবে না এটা কি সম্ভব? নিশ্চয় এই রাষ্ট্র যত অহিংস হোক তার প্রতিরক্ষার একটা ব্যবস্থা ছিল। তবে সেটা যে পৃথিবীর আর কোনও সভ্যতা এবং রাষ্ট্রের মত অব্যাহত যুদ্ধ, বলপ্রয়োগ ও নৃশংসতা নির্ভর ছিল না সমস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সেই সাক্ষ্যই দেয়। সব প্রত্নতত্ত্ববিদ ও পণ্ডিত অন্তত এই একটা বিষয়ে একমত।
সিন্ধু সভ্যতার রাষ্ট্র পৃথিবীর এক বিস্ময় হয়ে আছে। বুঝা যায় ভারতবর্ষের আরও প্রাচীনতর ধারায়, আরও বহুদূর অতীতের গর্ভে হারানো কাল পরিক্রমায়, যুদ্ধ ও সহিংসতার পথ যতটা সম্ভব পরিহার করে বহুসংখ্যক উপজাতি মূলত শান্তিপূর্ণ উপায়ে বৃহত্তর সমাজ গঠনের যে পথ নির্মাণ করেছিল সেই পথ ধরেই বৃহত্তর সমাজ ক্রমবিকশিত হয়ে এক সময় রাষ্ট্র ও সভ্যতা নির্মাণ করেছিল। এরই পরিণত রূপ আমরা দেখতে পাই মূলত সরস্বতী ও সিন্ধু নদী বিধৌত অঞ্চলকে কেন্দ্র করে প্রধানত অহিংস ও নম্র ধারায় গড়ে উঠা সিন্ধু সভ্যতা হিসাবে পরিচিত এক মহাসভ্যতায়।
অতুলনীয় এই সভ্যতার শক্তি। প্রধানত শান্তিপূর্ণভাবে গড়ে উঠলেও এর শক্তি আজও প্রচণ্ডভাবে ক্রিয়াশীল তার অলোকবাদী ধর্ম ভাবনা, তার নিরীশ্বরবাদী, লোকবাদী ও বস্তুবাদী দার্শনিক ভাবনা, তার নীতি-নৈতিকতার ভাবনা, তার সংস্কৃতি এবং তার ভাষার মাধ্যমে। এই বিষয়গুলিকে কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি শামসুল আলম চঞ্চলের সঙ্গে আমার যৌথভাবে লেখা বই ‘আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা’য়।
তবে সিন্ধু সভ্যতার প্রভাব বা ধারাবাহিকতার কথা বলার সময় তার অবদানের সঙ্গে তার অনেক প্রতিক্রিয়ার দিকের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে যে সুউন্নত নাগরিকতা, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিকতার চিত্র আমরা পাই তা ভারতীয় উপমহাদেশে অনেকাংশে বিস্মৃত বহু দূর অতীতের বিষয় হয়েই থেকেছে। আসলে সিন্ধু সভ্যতার পতনের সঙ্গে উন্নত নাগরিক ভারতবর্ষের অবসান ঘ’টে সংকীর্ণ, পশ্চাৎপদ, প্রতিক্রিয়াশীল এবং গ্রাম্য ভারতবর্ষের উত্থান ঘটেছে। আর কখনও সিন্ধু-সরস্বতীর সেই নাগরিক সভ্যতাকে আমরা প্রাধান্যে আসতে দেখি নাই। এই গ্রাম্যতার ধারার অবসান সূচিত হয়েছে কেবলমাত্র বৈদেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের সকল অভিশাপ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বিদায় নিলেও সমগ্র উপমহাদেশ অভিশপ্ত সেই ধারাই আজ অবধি বহন করে চলেছে।
অবশ্য সিন্ধু সভ্যতার শক্তিকে খাটো করে দেখার কারণ নাই। সকল পশ্চাদগমন সত্ত্বেও পরবর্তী ভারতীয় উপমহাদেশ সেই সভ্যতার বহু উন্নত উপাদানকে তার গর্ভে ধারণ করেছে এবং করছে আজ অবধি। সভ্যতার একটা নিজস্ব শক্তি থাকে, যা সহজে সৃষ্টি করা যেমন যায় না তেমন একবার সৃষ্টি হলে তার পুরা বিনাশও আর ঘটে না। সিন্ধু সভ্যতার মত মহাসভ্যতার ক্ষেত্রে সেটা আরও অনেক বেশী প্রযোজ্য।
এই সভ্যতার প্রচণ্ড শক্তির একটা প্রকাশ হিসাবে আমি দেখতে পাই বৈদিক ভাষাকে, যার প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে বাংলা, হিন্দী, ইংরাজীর মত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী নামে পরিচিত আজকের সারা পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভাষাগুলি। অন্তত এ বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট যে সংস্কৃত ভাষারও আদি রূপ বৈদিক ভাষা ছিল সিন্ধু সভ্যতার রাষ্ট্রভাষা। সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ও বিস্তার কালে এবং তার ধ্বংস পরবর্তী কালে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের অভিগমনের সঙ্গে তাদের ভাষাও সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত হয়েছে এবং জন্ম দিয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত অজস্র ভাষার। সভ্যতার শক্তি এভাবে ভাষার মাধ্যমে নিজেকে রূপ দিয়েছে, বাঁচিয়ে রেখেছে। যেন প্রাণীর বংশধারায় বেঁচে থাকার মত ভাষারও এভাবে বংশধারায় বেঁচে থাকা এটা, সেই সঙ্গে সভ্যতার উত্তরাধিকারেরও।
পৃথিবীর সকল সভ্যতার পাশে সিন্ধু সভ্যতাকে রাখলে বুঝা যায় এই উপমহাদেশ সমগ্র পৃথিবী থেকেই কতটা ভিন্ন। এটা ঠিক যে কাল পরিক্রমায় এবং সেই সঙ্গে হাজার বছরেরও অধিক কালের দীর্ঘ বৈদেশিক আগ্রাসন, আক্রমণ, শাসন ও পরাধীনতা উপমহাদেশে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অতীত অনেক কিছুর সঙ্গে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় দুই ধরনের ছেদই ঘটেছে। তবু সিন্ধু সভ্যতার অনেক কিছুকেই উপমহাদেশের মানুষ হিসাবে আমরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে ধারণ করি। সিন্ধু সভ্যতা আজও ছায়াতরুর মত আমাদেরকে ছায়া দিচ্ছে। সিন্ধু সভ্যতার কিছু ধারাবাহিকতা আজও আমাদের অনেক শক্তির এবং দুর্বলতারও উৎস হয়ে আছে। এবং সেই সূত্রে আরও অনেক প্রাচীনতর কালের ইতিহাস আজও আমাদের জীবনে উঁকি দেয়। শুধু তাকে দেখবার ও বুঝবার চোখ ও মন থাকা চাই।