লিখেছেনঃ সুষুপ্ত পাঠক, আপডেটঃ September 3, 2019, 12:00 AM, Hits: 3637
ইসলাম ধর্মের গোমড় ফাঁসানো পোস্ট শেয়ার করে এমন একজনকে আমি বাস্তবে চিনি যিনি নামাবলীর ছাপ মারা পাঞ্জাবী পরে মন্দিরে যান! আমার পোস্ট, তসলিমা নাসরিনের পোস্ট শেয়ার করেন। লোকটিকে কমিউনিস্ট পার্টিতে দেখা যায়। ঢাকায় মেয়ার নির্বাচনে, কমিউনিস্টদের ওয়ার্ড কমিশনারদের প্রার্থী হয়ে খেটেছে। কমিউনিস্টদের কাগজ বিক্রি করে দেয়। এতকিছু করেও লোকটা খাঁটি ধার্মিক হিন্দু! বউকে সহি হিন্দু সতীসাধ্বী স্ত্রী সাজিয়ে রাখেন। কপালে চন্দনের তিলক পরে মন্দিরের পুরোহিতের প্রসাদ নতজানু হয়ে গ্রহণ করেন। এইরকম বাম লিবারাল হিন্দু যে কয়টিকে বাংলাদেশে চিনতাম এদের মধ্যে কয়েকটিকে এখন ভারতে এসে শুনি বিজেপির সমর্থক হয়েছে! বাংলাদেশ ছেড়ে কোলকাতা আসার পরই এরা হিন্দুত্ববাদী হয়ে গেছে।…
মুসলমানদের মতই চরম মাত্রায় সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা। কোন কোন ক্ষেত্রে মুসলমানদের চেয়ে বেশি। যেমন ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ মানায় হিন্দুরা ভয়ংকর রকমের কাল্ট। তাদের কাছে মানুষ বলতে কোন শব্দ নেই। অবশ্যই হিন্দু এবং স্বঘরের হিন্দু হতে হবে। এরকম হিন্দু পুরুষরা লিবারাল আড্ডায় দাবী করবে তাদের মধ্যে এখন আর কোন গোঁড়ামী নেই, বাড়ির মহিলাদের চাপে এখনো কিছু প্রথা পার্বণ করতে হয় আর কি…। অথচ এই লিবারাল হিন্দু পুরুষটির স্ত্রী যদি সিঁদুর পরা বন্ধ করে দিতে চায় তো ‘সিঁদুর নিয়ে যুদ্ধ’ বেঁধে যাবে! মুসলিম নারীর তিন তালাক যেমন গলার ফাঁস, হিন্দুর নারীর তেমন তালাকের বিধান না থাকা তার গলার ফাঁস। ভারতে হিন্দু নারীর তালাকের অধিকার থাকলেও বাংলাদেশে একজন হিন্দু নারীকে আজীবন একটা পাষণ্ড বদমাইশ স্বামীকে সহ্য করে যেতে হবে হিন্দু শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুসারে। হিন্দু মেয়েরা পারিবারিক হিন্দু শাস্ত্রীয় অত্যাচার থেকে বাঁচতে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে। কারণ সে জানে তাকে বিয়ে করতে হবে এমন কাউকে যে তার জাতপাত-গোত্র-কুষ্ঠিতে মিলবে। সেরকম কোন ঘাটের মড়াও বাপ-ভাইদের কাছে পছন্দনীয় হবে। তারচেয়ে মুসলিম হয়ে গিয়ে হিন্দু জেলখানা থেকে মুক্তিই ভালো! কিন্তু এক্ষেত্রে হতভাগী মেয়েটির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কপাল পুড়তে হয়। একটা মুসলমান হিন্দু মেযেকে মুসলিম বানিয়ে বিয়ে করে সোয়াবের আশায়। দ্বিতীয়ত, ইসলামে এরকম কোন নিয়ম নেই যে এরকম সোয়াবের পর আর দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। কাজেই একদিন মুক্তি আশায় যে মেয়েটি নিজের ধর্মত্যাগ করেছিলো সেই মুক্তি আর আসে না। হিন্দু জেলখানা থেকে তার জায়গা হয় ইসলামের জেলখানায়…।
মানুষের ধর্ম পালনের চাইতেও সাংঘাতিক তার নিজেকে হিন্দু কিংবা মুসলমান মনে করাটা। দাঙ্গা লাগে যখন তখন দুই ধর্মের ষণ্ডা-পান্ডা-গুন্ডা-বদমাইশ লোকজনই প্রথম সারিতে থাকে মানুষ কোপাতে। এটা খুবই ভয়ংকর যখন আপনি নিজ ধর্মীয় পরিচয়ের মানুষের প্রতি পক্ষপাত দেখাবেন। যেমন ধরুন ভারতীয় ক্রিকেট টিমে শামিকে আপনি সব সময় দেখতে চান কারণ সে মুসলিম। তাকে কোনভাবে বাদ দেয়া হলে আপনি সন্দেহ করে বসেন মুসলিম বলেই তার প্রতি এই অবিচার। উল্টো দিকে বাংলাদেশ টিমে সৌম্য সরকারকে আপনার ভালো লাগে কারণ সে হিন্দু। তাকে বাদ দেয়া হলে আপনি সন্দেহ পোষণ করেন হিন্দু হবার জন্যই তাকে বাদ দেয়া হলো…। আরো আছে, দুইজন ইউরোপীয়ান বর্ষসেরা ফুটবলার পদক পাবার সম্ভাবনা আছে। আপনি চাইছেন যেন কালো খেলোয়ারটিই এটি পায়। কারণ সে কালো বলে…। সাদা সুপ্রিমিটি থাকলে কালো সুপ্রিমিটি থাকবে না? গেছেন শ্রীলংকা বেড়াতে। ঘুরতে ঘুরতে এক ডাবওয়ালা পেলেন যে মুসলমান। অমনি খুশি হয়ে উঠলেন। আপাত এসব খুব নিরীহ অনুভূতি। কিন্তু এই জাতিচেতনা উপমহাদেশকে রক্তাক্ত উপায়ে বিভক্ত করেছে। ধর্মীয় প্রথা চর্চার ধুম পরিবার থেকে হ্রাস করতে না পারলে দেশ কিভাবে অসাম্প্রদায়িক হবে? ধর্মকে রেখে সাম্প্রদায়িকতা দূর করার ইচ্ছা ভন্ডামী আর ইতরামি কথাবার্তা।
সব ধর্মেরই কিছু লিবারাল ধার্মিক থাকে যারা ধর্মকর্ম করেই নিজেদের অসাম্প্রদায়িকতা প্রমাণ করতে চান। কথা বলার সময় তারা বলেন ‘আমাদের হিন্দু ভাইরা’ কিংবা ‘আমাদের মুসলমান ভাইরা’ উল্রেখ করে। এরাই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর কাল্ট। এরাই সাইকো। ঠান্ডা মাথার সাম্প্রদায়িক কীট। এদের বলতে শুনবেন ধর্ম পালন মানব সভ্যতার জন্যই প্রয়োজনীয়। এমনকি এরা দাবী করবে আধ্যাত্মিক কোন ব্যাপার নেই ধর্মে তবু ধর্ম পালন মানুষকে সামাজিকভাবে একটা সিস্টেমে রাখে। এসব ক্ষেত্রে বড় বড় বিজ্ঞানীদের জবানে ধর্মের গুণগান তো আছেই। যেমন মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের উক্তি, ‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান হয় না, বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম হয় না’। আসলেই কি এই কথা আইনস্টাইন বলেছিলেন কিনা সেটা কেউ খতিয়ে দেখে না। যেহেতু বেশির ভাগ মানুষ ধার্মিক তাই ধর্মের পক্ষে কথা বলে যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন নেই। আইনস্টাইন কিন্তু জীবনেও এরকম কোন কথা বলেন নাই। ধর্ম সম্পর্কে তিনি কি ভাবতেন সেটা তার বন্ধুকে চিঠিতে লিখেছেন আইনস্টাইন এভাবে, ‘ঈশ্বর শব্দটি আমার কাছে মানুষের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ও দুর্বলতা থেকে উৎপাদিত বস্ত্তর চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না । বাইবেল গ্রন্থটি খুবই ন্যায়পরায়ণ, তবে আদিম কিংবদন্তীর বেশি কিছু নয় । তার চেয়ে বড় কথা, খুবই শিশুসুলভ এগুলো’।
অর্থ্যাৎ আইনস্টাইন বলছেন, ধর্ম হচ্ছে মানুষের মানসিক বিকাশের একটি স্তর। বেদে বিজ্ঞান আবিষ্কার করা হিন্দু মুমিনদের হয়ত জানা নেই চার্বাকরা কয়েক হাজার বছর আগে যাগযজ্ঞের ঘি পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবার অর্থহীনতা কিভাবে মানুষকে সজাগ করতে প্রচার করেছিলেন। চার্বাক বলছে, ‘প্রতারক ধূর্ত পণ্ডিতগণ আপনাদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরলোক ও স্বর্গ-নরকাদির কল্পনা করিয়া জনসমাজকে বৃথা ভীত ও অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে। বেদ অধ্যয়ন, অগ্নিহোত্র, দণ্ডধারণ, ভস্মলেপন প্রভৃতি বুদ্ধি ও পৌরুষশূন্য ব্যক্তিবৃন্দের উপজীবকা মাত্র…’।
এতসব প্রমাণ থাকার পরও আজ যখন দেখি ‘হিন্দু বিজ্ঞান’ ‘মুসলিম বিজ্ঞান’ ‘ইহুদীনাসারা বিজ্ঞান’ তখন হাসির বদলে আজকাল ক্রোধ জন্মায়। পাকিস্তানের নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী আবদুস সালাম এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘হিন্দু বিজ্ঞান, ইহুদী বিজ্ঞান, কনফুসিয়াস বিজ্ঞান ও খ্রীষ্টান বিজ্ঞান বলে কিছু নেই, সেহেতু ইসলামিক বিজ্ঞান বলেও কিছু নেই’। দু:খজনক হলো সেই তাকেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় ‘প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী’ হিসেবে। অথচ পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে সাংবিধানিকভাবে। বাংলাদেশের মোল্লারা ও সাধারণ মুসলমানরাও চান তাদের বড় ভাই পাকিস্তানের মত বাংলাদেশেও কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হোক। আবদুস সালাম পাকিস্তানী কাদিয়ানী মুসলিম ছিলেন। ভণ্ড মুসলমানদের এখন তাকে ‘মুসলমান’ বলতে এতটুকু লজ্জা হয় না! আরো দু:খজনক কি জানেন, আবদুস সালাম নোবেল গ্রহণের ভাষণে কুরআন থেকে কোট করছিলেন বারবার!
যদি পৃথিবী থেকে খ্রিস্টান, ইহুদী ধর্মের দাঁত-নখ ভোঁতা হতে পারে তাহলে বাকীদের হবে না কেন? সত্যি কথা হচ্ছে হিন্দুদের ব্যক্তিগত ধর্মাচার, কুসংস্কার চর্চা একটা সমাজকে বিভক্ত করে রাখে ঠিকই। তবু আশার কথা দিনের পর দিন, যুগের সাংঘর্ষিকতায় একদিন এটা চলে যাবে আশা করা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক ইসলাম হচ্ছে বড় বিপদ। অর্থনৈতিক কারণেই আজ বাংলাদেশে নারীরা কর্মস্থলে বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে। মনে করেন কি চরমোনাই পীর ক্ষমতায় আসলে গার্মেন্টস থেকে মহিলাদের কাজ করা বন্ধ করে দিবে? মোটেই না। শরীয়তে যা-ই বলা থাকুক অর্থনৈতিক প্রয়োজন বাস্তবতা মানতে বাধ্য হয়। তাই মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের চাইতে আমাদের সবচেয়ে বড় বিপদের নাম ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান। এই উত্থান মানুষকে আরো বেশি করে শরণার্থী করে তুলবে। যেমন ধরেন গার্মেন্টেসে কতজন হিন্দু নারী কাজ করে? ১ পার্সেন্ট হবে কিনা সন্দেহ। কাজেই হিন্দুদের পিটিয়ে দেশছাড়া করতে চরমোনাই পীরের অর্থনৈতিকভাবে সমস্যা হবে না। ইসলামের জিহাদ খিলাফতই তাই আজকের যুগে বড় সমস্যা। ‘মুসলিম উম্মাহ’, ‘গজায়াতুল হিন্দ’ এরকম রাজনৈতিক ইসলামের কারণে ভারতে পাল্লা দিয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধি পাবে। গণেশ পুজার নাচানাচি কিংবা দুগ্গা মাঈকি জয়’ এতকাল ভারতে হিন্দুত্ববাদী করতে না পারলেও রামনবমি করতে পারছে কারণ এটা একদমই রাজনৈতিক হিন্দুধর্ম। ভারতে ‘রাজনৈতিক হিন্দু’ গড়ে উঠেছে ‘রাজনৈতিক ইসলামকে’ ফাইট করতে। এই ফাইট কোন শান্তি বয়ে আনবে না। রাজনৈতিক ইসলামকে নিয়ন্ত্রণ করতে উপায় খুঁজতে হবে। রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবেলা করতে গিয়ে আরেকটা ‘রাজনৈতিক হিন্দু’ কিংবা ‘রাজনৈতিক খ্রিস্টান’ মানবসভ্যতাকে পিছিয়ে দিবে। আমাদের তাই জিহাদ-কতল-খিলাফতের যে চেতনা ইসলাম ধর্মে রয়েছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ উপায়ে। যদি ন্যাৎসিবাদের বিরুদ্ধে মানবজাতি ধর্মনিরপেক্ষ উপায়ে জিততে পারে তাহলে জিহাদ-খিলাফত-কতল-জিজিয়ার বিরুদ্ধেও মানবজাতি জিততে পারবে।
সংগৃহীত : https://pathoksusupto.wordpress.com/2019/08/30/হিন্দুদের-সাম্প্রদায়িকত/