লিখেছেনঃ সুষুপ্ত পাঠক, আপডেটঃ September 8, 2019, 12:00 AM, Hits: 3099
শরৎকাল এসে গেছে তবু এখনো মূর্তি ভাঙ্গা উৎসব শুরু হয়নি কেন ভাবছিলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম হিন্দুদের দুর্গা পূজার মাস খানেক বাকি বা তার কিছু কম। তার মানে এখনি বাংলাদেশী মুসলমানদের মূর্তি ভাঙ্গা উৎসব শুরু হবার কথা। ফেইসবুকে নিউজ সাইটগুলোর পেইজে সি-ফাস্ট দিয়ে রাখায় সব আপগ্রেট নিউজ ফেইসবুকে ঢুকলেই চলে আসে। সেরকমই একটা নিউজ চোখে পড়ল, ময়মনসিংহের ফুলতলীর কালীবাড়ী মন্দিরে হামলা চালিয়ে চারটি মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি হবিগঞ্জে, দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের শুরুতেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।… যাক বাবা নিশ্চিন্ত হলাম! ইট-বালু-সিমেন্টের শহরে কাশফুল দেখে শরৎকে মনে পড়ার জো নেই। একমাত্র বাংলাদেশের সিরিয়াল মূর্তি ভাঙ্গার খবর আসলেই বুঝতে পারি শরৎকাল এসে গেছে…।
আমি আজ পর্যন্ত শরৎকালীন মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে কোন টকশো অনুষ্ঠিত হতে দেখিনি। ব্যারিস্টার সুমনকে কখনো দেখেছেন মন্দিরের মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে কোন লাইভ করতে? এই যে প্রিয়া সাহা ঘটনায় যেসব প্রগতিশীলের লুঙ্গি খুলে গিয়েছিলো তাদের কাউকে কোনদিন দেখেছেন শরৎকালীন মূর্তি ভাঙ্গা উৎসব নিয়ে কিছু বলতে? বাংলাদেশের বামপন্থিদের আপনি কোনদিন দেখেছেন এই ইস্যু নিয়ে কর্মসূচী দিতে? আমাদের ফেইসবুক মার্কসবাদী বিপ্লবীদের একজনকেও দেখেছেন কথা বলতে? দেখননি। তাদের সমস্ত দৃষ্টি মুসলিম জাহান নিয়ে। সাম্রাজ্যবাদীরা কিভাবে তেলের লোভে মুসলমানদের পাখির মত গুলি করে মারছে…। নিজ দেশে হিন্দু-পাহাড়ী-আদিবাসীদের পরবাসীর মত বসবাস নিয়ে এরা নিশ্চুপ। উল্টো বলে বাংলাদেশে নাকি হিন্দুরা নয় মুসলমানরাই বেশি নির্যাতিত। আমাতী বুদ্ধিজীবীরা তো বলেই দিয়েছে নির্যাতন-হামলা-ভাংচুরের পর যারা দাঁত কামড়ে পড়ে থাকবে তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক সংখ্যালঘু…।
আসন্ন দুর্গাপূজায় নিশ্চিত করেই গণভবনে শুভেচ্ছা নিতে যাবে হিন্দু হোমড়া-চোমড়ারা। তারা কোনদিনই প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে শরৎকালীন মূর্তিভাঙ্গা উৎসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা মনে করে, কী দরকার জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করে। আছিই তো কিছুদিন, তারপর সব বেচেবুচে… সল্টলেকে তো বাড়ি করাই আছে, চলে যাবো! এটা মুসলমানদের দেশ হবে সেটা তো সেই ৫০ বছর আগেই গণভোটে ঠিক হয়েছিলো…। …এইসব ক্রিমখোর ধনী আর পলিটিক্স করা হিন্দুরা বাংলাদেশে ১ পার্সেন্টও নয়। বাকী হিন্দুদের সবাই নিম্নবিত্ত। এরা কোলকাতায়ও যা বাংলাদেশেও তাই। এরা চিরকাল বাংলাদেশকেই নিজের দেশ ভাবে। এখানেই দাঁত কামড়ে থাকতে চায়। পদপদবী, রাজা-উজির নেতানেত্রী যা খুশি যে খুশি হোক, দেশটা মুসলমান হোক, যারাই চালাক- কিচ্ছুতে তাদের কিছু যায় আসে না। নতজানু হয়ে, বোবার শত্রু নাই সেজে, সাতেপাচেঁ না থেকে, সবার মন জুগিয়ে নিরীহ-ভীতু গোবেচারা সংখ্যালঘু হয়ে বাঁচতে চায় শুধু নিরাপদে নিজেদের মত থাকার গ্যারান্টিটুকুর বিনিময়ে। কিন্তু ১০ পার্সেন্ট সংখ্যালঘু আর আদিবাসীর মিলিত সংখ্যাটা ‘১০০ ভাগ মুসলমানের দেশে কেন শরীয়া চালু হবে না’ বলতে দিচ্ছে না। হিন্দুদের মধ্যে আতংক তুলে দিলে এই ছাপোষা নিরীহ গরীব মধ্যবিত্ত হিন্দুরা দেশ ছাড়ার কথা সিরিয়াসলি ভাবতে বাধ্য হবে। কিন্তু ক্রিমখোর হিন্দুরা গণভবন অব্দি যেতে পারলেও তারা কোনদিন জিজ্ঞেস করবে না, এদেশে কোনদিন ঈদের দিন নির্বাচন দেবার কথা সরকার চিন্তা করতে পারবে? হিন্দুদের দুর্গা পূজার সময় রংপুরে উপনির্বাচন দিয়ে আবার তাদেরকে সংখ্যালঘু ভাবতে না বলাটা কি তামাশার মত হয়ে গেলো না? দু’টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলবে, পারবেন ঈদের দিন এরকম পরীক্ষা ফেলতে? না, এমন প্রশ্ন না আসবে টেলিভিশন টকশো থেকে, না আসবে নেতাদের কাছ থেকে। যখন ফেইসবুকে এসব উপস্থাপন করে কিছু বলি, তখন কিছু শুযোরের বাচ্চা এসে উল্টো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে করতে বলবে, যখন ভারতে মুসলমানদের উপর খুব ইয়ে হয় তখন আপনি কোথায় থাকেন…। এই শুয়োরগুলো বামাতী, আমাতী, জামাতী… যেমন পরিচয়েরই হোক না কেন, এক খোয়ারেই বাস…।
কারা ভাঙ্গে এই মূর্তি? পুলিশ দুই একজনকে কখনো হাতেনাতে গ্রেফতার করলে জানা যায় এরা ‘দুর্বৃত্ত’। আশ্চর্য যে টাকা-পয়সার জন্য নয়, স্রেফ মাটির একটা মূর্তি ভেঙ্গে এইসব দুর্বৃত্তের লাভটা কী? তখন বলা হয় এরা আসলে ‘মানসিক রোগী’! তা মানসিক রোগী কেবল মন্দিরই চেনে আর কিছু চেনে না? আসলে ভাসুরের নাম কেউ মুখে নিতে চায় না। মূর্তি ভাঙ্গা মুসলমানদের জন্য একদিক দিয়ে সুন্নত, কারণ নবী এটা ভেঙ্গেছেন। অন্য দিক দিয়ে এটা ওয়াজিব কারণ সক্ষমতা থাকলেই এটা ভাঙ্গতে হবে। ট্রাম্পের মত লোক থাকলে এরকম সুন্নত পালন করতে গেলে ইটের বদলে পাটকেল খেতে হবে। অন্যদিক দিয়ে মূর্তি ভাঙ্গাটা আবার ফরজ - কারণ নবী বলেছেন যেখানেই মূর্তি আর মাজার দেখবে সেখানেই ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিবে…।
সংগ্রহ : https://pathoksusupto.wordpress.com/2019/09/08/শরৎকালীন-মূর্তিভাঙ্গা-উৎ/