লিখেছেনঃ হাবিবুর রহমান, আপডেটঃ September 3, 2020, 12:00 AM, Hits: 1775
সামন্ততন্ত্রকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেমন সামন্ততন্ত্র মূলত ভূমিকেন্দ্রিক এমন একটি সরকার ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পরিবর্তে স্থানীয় ভূস্বামীদের মধ্যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়। আবার সামন্ততন্ত্রকে একপ্রকার ভূমি ব্যবস্থাপনাও মনে করা হয়, যেখানে ভূস্বামীরা জমির মালিক, কিন্তু জমি চাষ করত না। আর যে কৃষক জমি চাষ করত সে জমির মালিক না হলেও চিরজীবন জমিতেই বাঁধা পড়ে থাকত। তারা হল ভূমিদাস। পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সামন্ততন্ত্র বিকশিত হতে দেখা যায়। তবে ইউরোপ তথা পশ্চিম ইউরোপের সামন্ততন্ত্রকে চিরায়ত বা ধ্রুপদী সামন্ততন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্ততন্ত্র ছিল এটাকে ধ্রুব সত্য ধরে নিয়ে পণ্ডিতজনের ভারতীয় সামন্ততন্ত্রকে ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের আদলে মিলিয়ে দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা লক্ষ্যণীয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এ অঞ্চলে যে সকল রাষ্ট্র কার্যকর ছিল তা আদৌই সামন্ততন্ত্র কি না তাকে তাঁরা তাঁদের পর্যালোচনার বিষয় করেন নি।
এদেশের বিপ্লবী রাজনীতিতে এসব ব্যাখ্যার প্রভাব পড়েছে অবধারিতভাবে যা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। বিপ্লবী রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর আজকে একটা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে বিপ্লবী রাজনীতি সঠিক পথের দিশা পায় নি। আর এ অঞ্চলের সামন্ততন্ত্রকে না বুঝতে পারাও ভুল কর্মসূচি নির্ধারণের একটি অন্যতম কারণ। পথ হাতড়ানো বিপ্লবী রাজনীতিকে তাই এখনো এ অঞ্চলের সামন্ততন্ত্র বোঝার প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে। এ অনুধাবন থেকেই বাংলাদেশ তথা ভারতীয় সামন্ততন্ত্র বোঝার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এ আলোচনার শুরুতে শুধুমাত্র মুঘল আমল নিয়ে লেখা হল। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রাচীন ভারত এবং ব্রিটিশ ও পাকিস্তান ঔপনিবেশিক আমলের সামন্ততন্ত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে। মূল আলোচনার সুবিধার জন্য ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্র সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেয়া হল।
ইউরোপে, বিশেষত পশ্চিম ইউরোপে সামন্ততন্ত্র বিকশিত হয়েছিল তখন, যখন সম্পদ ও ক্ষমতার উৎস ছিল একমাত্র জমি। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের যুগে জার্মান উপজাতীয় বর্বরদের ব্যাপক আক্রমণে কৃষি কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে কৃষি কাজ সহজে শুরু করা সম্ভব হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতির ফলে বহুদিন যাবত ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকে। দেখা দেয় অর্থনৈতিক সংকট এবং কমে যায় জনগণের ক্রয় ক্ষমতা। ফলে বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাসের ভরণপোষণ করা ভূস্বামীদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় ক্রীতদাস শ্রম নির্ভর বড় বড় কৃষি খামার ভেঙ্গে পড়ে এবং উৎপন্ন ফসলের একাংশ প্রদান করার শর্তে তদস্থলে জমিকে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত করে নতুন নতুন কৃষক বসানো হয়। এসব কৃষকের অধিকাংশ হল ভুমিহীন কৃষক, সদ্য মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাস কিম্বা বেকার শ্রমিক প্রমুখ যারা ভূস্বামীর নিকট আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করত। উৎপন্ন ফসলের একাংশ প্রদান ছাড়াও কৃষকগণকে সপ্তাহে কয়েকদিন ভূস্বামীর জমিতে বেগার খাটতে হতো। এ প্রথার নাম ছিল প্যাট্রসিনিয়াম প্রথা। অন্যদিকে প্রচণ্ড বর্বর আক্রমণে ইউরোপীয় সমাজে অরাজকতা দেখা দেয়, মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। কৃষকেরা ঋণ ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ফলে আশ্রয় ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ও স্বাধীন কৃষকদের অনেকেই নিজেদের জমিজমাসহ শক্তিশালী ভূস্বামীদের নিকট নিজেদের সমর্পণ করে। জমি প্রাপ্তির বিনিময়ে ভূস্বামীরা ঐ কৃষকদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিত এবং ঐ জমিটি চাষাবাদের জন্য আবার ঐ কৃষককেই ফেরত দিত। কৃষককে উৎপন্ন ফসলের একটি অংশ ভূস্বামীকে দিতে হতো। তবে জমি ভোগ ও ব্যবহার করার অনুমতি পেলেও জমির মালিকানা থাকত ভূস্বামীর হাতে। ভূস্বামী ইচ্ছে করলে যে কোনো জমি হতে কৃষকদের উচ্ছেদ করতে পারত। এ ধরনের ভূমি ব্যবস্থাকে বলা হতো প্রিকরিয়াম প্রথা। এমনকি চার্চ ও মঠসমূহের যাজকগণ নিরাপত্তার বিনিময়ে জনগণের নিকট থেকে জমি প্রাপ্ত হয়ে সেগুলো আবার তাদেরকে চাষাবাদ করতে দিয়ে ভুমিদাসে পরিণত করে। এভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে এরাও সামন্ত প্রভুতে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, সমগ্র ক্যাথলিক জগতের এক তৃতীয়াংশ জমির মালিক ছিল চার্চ।
তবে সামন্ত কালপর্বের ভূমি ব্যবস্থাপনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ম্যানর প্রথা। প্রচণ্ড বর্বর আক্রমণে ইউরোপীয় সমাজে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছিল তা দূর করা, ঋণ ভারে জর্জরিত কৃষকদের রক্ষা করা এবং উৎপাদন ব্যবস্থার সংকট অবসানের মধ্য দিয়ে ম্যানর প্রথা গড়ে উঠেছিল। এটা হল সামন্ত যুগের কৃষিভিত্তিক সমাজের একটি অর্থনৈতিক সংগঠন। মূলত সামন্ততান্ত্রিক ভূমি ব্যবস্থায় ভুস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। এটি ছিল এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা যেখানে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে পশু পালন, কাপড় বুনন, খাদ্য উৎপাদনসহ জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছুই উৎপন্ন হতো। ম্যানরের মধ্যেই ছিল আটাকল, রুটির কারখানা, তাঁত ও বুনন যন্ত্র ইত্যাদি। তবে লবণ ও লোহা জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রাম্য মেলা হতে কেনা হতো। কৃষক তথা ভুমিদাস তার উৎপাদিত দ্রব্যাদি অন্য ম্যানরে নিয়ে যেতে পারত না, অর্থাৎ ম্যানরে উৎপাদিত দ্রব্যাদি ম্যানরবাসীই ভোগ করত। এমন কি লর্ডের বিশেষ নির্দেশ ছাড়া কেউই ম্যানরের বাইরে যেতে বা বাইরে থেকে ম্যানরে প্রবেশ করতে পারত না। ম্যানরে দু ধরনের জমি ছিল – সামন্ত প্রভুর খাস জমি ও খাজনার বিনিময়ে তার ভুমিদাস কর্তৃক অধিকৃত জমি।
ম্যানর প্রথার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন লর্ড। তিনি স্বাধীনভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন। ভ্যাসালদের উপর করারোপ, নিজস্ব আদালতে তাদের বিচার, যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর, সামরিক সাহায্য প্রদানের জন্য ভ্যাসালদের নির্দেশ দান ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতেন। ম্যানর প্রশাসন পরিচালনার জন্য স্টুয়ার্ড, বাইলিফ এবং রিভি উপাধিধারী কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হতো।
ভূমি ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে প্যাট্রসিনিয়াম ও প্রিকরিয়াম প্রথা এবং ম্যানর প্রথার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নেই। প্যাট্রসিনিয়াম ও প্রিকরিয়াম প্রথায় ভুমিদাসদের জমির ওপর কোন ধরনের স্বত্ব থাকত না, সেখানে ম্যানর প্রথায় ভুমিদাসগণ বংশ পরম্পরায় জমি চাষের অধিকারী ছিল।
তবে সব প্রথাতেই রাজা বা সম্রাট ছিলেন সকল জমির মূল মালিক। তিনি বৃহৎ সামন্ত বা লর্ডদের মাঝে জমি বিতরণ করতেন যারা ডিউক, কাউন্ট, আর্ল প্রভৃতি উপাধিধারি ছিলেন। এদেরকে বলা হতো টেন্যান্ট-ইন-চীফ। এই বৃহৎ ভুস্বামীরা তাদের অধিকাংশ ভূমি ব্যারন, ভাইকাউন্ট প্রভৃতি উপাধিধারি অধস্তনদের মধ্যে বিতরণ করতেন। তারা আবার জমি বিতরণ করতেন তাদের অধস্তনদের। সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল নাইট যারা আর জমি বিতরণ করতে পারতেন না। লর্ডের কাছ থেকে এইসব জমি গ্রহণকারীরা হলেন সাব টেন্যান্ট-ইন-চীফ যাদেরকে ‘ভেসাল’ নামে অভিহিত করা হতো। এই লর্ড ও ভেসালের মধ্যে যে সম্পর্ক এবং তার ফলে যে ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল তাই হল সামন্ত ব্যবস্থা। এখানে উল্লেখ্য রাজা নিজেও বৃহৎ সামন্ত তথা লর্ডদের মতো কিছু ভূমি ভেসালদের মাধ্যমে আবাদ করতেন। এ অর্থে রাজাও একজন সামন্ত প্রভু ছিলেন।
রাজা প্রাথমিকভাবে যাবতীয় ভুসম্পত্তির মালিক হলেও সামন্ত প্রভুরাই ভুমিদাসদের দিয়ে চাষাবাদ ও রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতেন। সামন্ত প্রভুদের সেনাবাহিনী ছিল এবং যুদ্ধ ও সংকটকালীন সময়ে রাজাকে সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন। এভাবে সামন্ত প্রভুরা ছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান এবং রাজার ক্ষমতার বলয় ছিল দুর্বল। রাষ্ট্রের শাসক বলতে প্রজাগণ সামন্ত প্রভু তথা লর্ডদের বুঝত। রাজা যদিও ছিলেন সর্বোচ্চ স্তরে তবুও সামন্ত প্রভুদের বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতা বিভক্ত হওয়ায় রাজার পক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগের খুব বেশি সুযোগ ছিল না।
অবস্থা বিচারে সামন্ততন্ত্রের যুগের কৃষকগণ ৪ ধরনের ছিল, যথা সার্ফ, ভিলেইন, ক্রফটার ও কটার। তবে সামগ্রিকভাবে তারা সার্ফ বা ভুমিদাস নামেই পরিচিত ছিল। এদের শ্রমেরই উপর দাঁড়িয়ে ছিল সামন্ততন্ত্র বা সামন্ত প্রথা। কৃষকগণকে সামন্ত প্রভুদের বিভিন্ন ধরনের কর দিতে হত। এক হিসাবে দেখা যায় যে, কৃষক তার মোট আয়ের ৮০ ভাগেরও বেশি সামন্ত প্রভুদের দিতে বাধ্য হতো। নানাবিধ কর প্রদান ছাড়াও লর্ডের নির্দেশে ও চাহিদা মতো বিভিন্ন কাজে কৃষকগণ বেগার খাটতে বাধ্য ছিল। যেমন লর্ডের খাসজমি চাষাবাদ, রাস্তা তৈরি, সেতু তৈরি বা মেরামত ইত্যাদি কাজ। আর ফসল হোক বা না হোক সামন্তদের কর ঠিকমত পরিশোধে কৃষকেরা বাধ্য ছিল। তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না। জীবন ধারণের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই লর্ডের স্বিদ্ধান্তের উপর তাদেরকে নির্ভর করতে হতো। তবে ভুমিদাসরা পরিবার পরিজন নিয়ে একত্রে বসবাস করতে পারত যা দাসদের পক্ষে সম্ভব হতো না।
সার কথায়, ভূমির দখলি স্বত্ব ছিল সামন্তপ্রভু তথা ব্যক্তির হাতে। এবং সামন্ত প্রভুরাই রাষ্ট্র শাসন করত।
মুঘল আমলেও তৎকালীন ভারতবর্ষে ভূমির মূল মালিক ছিলেন সম্রাট বা বাদশাহ। বৈদেশিক পর্যটক সবাই এক কথায় বাদশাহকে জমির মালিক বলেছেন। ব্রিটিশ আমলাদের বক্তব্যও একইরকম। কিন্তু বিভিন্ন অকাট্য তথ্য প্রমাণ থেকে জানা যায় যে জমিতে ব্যক্তিগতভাবে কৃষকের চিরস্থায়ী ও বংশানুক্রমিক দখলি স্বত্ব ছিল। এমন কি শহুরে বহু প্রজা তাদের ব্যক্তিগত জমি বাদশাহকে বিক্রয় করেছেন, তার স্বত্ব নিয়ে বাদশাহের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন। আসলে সম্রাট বা বাদশাহ কর হিসাবে সামাজিক সম্পদের উদ্বৃত্ত অংশ পেতেন। উচ্চতর সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্যে তিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। তারই মুল্য হচ্ছে কর বা রাজস্ব। কিন্তু জমির মালিকের খাজনা হিসাবে তার কিছু প্রাপ্য ছিল না। অবশ্য কৃষক স্বেচ্ছায় জমি ত্যাগ করতে পারত না। তাই তারও মালিকানা স্বত্ব পূর্ণভাবে বজায় ছিল না। জমি ও তার উৎপন্নের প্রতি সম্রাট, জমিদার-জায়গীরদার বা রায়তের বিভিন্ন ধরনের অধিকার ছিল। একচেটিয়া বা একক মালিকানা-স্বত্ব কারোরই ছিল না। সামন্তপ্রভু হিসাবে যাদের চিহ্নিত করা হয় সেই জায়গীরদার বা জমিদারগণ মোটেও জমির মালিক ছিলেন না।
মুঘল ভারতের সামন্ত ও কৃষকদের সাথে ইউরোপের সামন্ত ও কৃষকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর পার্থক্য বিদ্যমান। উপরে ইউরোপের সামন্ত ও কৃষকদের সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। নিচে মুঘল ভারতের সামন্ত ও কৃষকদের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হলঃ
ক. সামন্ত প্রভু বা ভূস্বামী
মুঘল আমলে যাদেরকে সামন্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তারা হলেন,
১. জায়গীরদার - মুঘল আমলে যে অঞ্চলের রাজস্ব আমলাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হতো তার নাম ছিল জায়গীর। এই জাতীয় রাজস্বের অধিকারীকে বলা হতো জায়গীরদার। জায়গীরদাররা সম্রাটের অধীনস্থ কর্মচারী বা মনসবদার ছিল মাত্র। তাঁরা বেতনের পরিবর্তে উদ্বৃত্ত উৎপাদনের একাংশ ভোগ করতেন কিন্তু জমির ওপরে তাদের কোন মালিকানা স্বত্ব জন্মাত না। বেশিরভাগ জায়গীরদারদের মধ্যে বেতনের পরিবর্তে সাম্রাজ্যের একটি অংশের রাজস্ব বণ্টন করা হতো। তাঁরা সেই অংশের ভূমি রাজস্ব ও সম্রাটের বিভিন্ন করের অধিকারী হতো। তবে ক্ষুদ্র একটি অংশের রাজস্ব সরাসরি সম্রাটের খাস তহবিলে জমা হতো, তাকে বলা হতো খালিসা। জায়গীরের মধ্যে দুটো ভাগ ছিল – তনখা জায়গীর ও ওয়াতন জায়গীর। বেতনের পরিবর্তে যে জায়গীর দেয়া হতো তার নাম তনখা জায়গীর। ওয়াতন জায়গীর ছিল হিন্দু রাজাদের রাজ্য যা মুঘল সাম্রাজ্য গঠনের আগে থেকেই ছিল। এ ধরনের রাজ্যগুলো স্বয়ং শাসিত ছিল, রাজাই রাজস্ব নির্ধারণ করত। সেই আয় উত্তরাধিকার সূত্রে ভোগ করতে পারত।
জায়গীরদাররা যাতে অত্যধিক ক্ষমতাশালী হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য তাদের জায়গীরকে ৩-৪ বছরের মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করা হতো। জায়গীরদাররা আইনত সরকারি নির্দেশের বাইরে এক-পাও যেতে পারতো না। অন্যদিকে শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করে, জাতিগত বৈশিষ্ট্যের ও চেতনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত আয়ের জায়গীর বণ্টন করে একটি বংশানুক্রমিক ‘আমলা’ শ্রেণি মুঘল সামন্ত শ্রেণির অপর একটি ভিত্তি ছিল।
২. জমিদার - জায়গীরদার আর জমিদারদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল জায়গীরদারদের জমিতে কোন প্রকারের মালিকানা স্বত্ব থাকে না। বংশানুক্রমিকভাবে একই জায়গীর ভোগ বা হস্তান্তর করতে পারে না। কিন্তু জমিদাররা বংশানুক্রমিক ভাবে জমিদারি ভোগ করতে পারে। এবং জমিতে উৎপন্ন সম্পদে তাদের বিশেষ ধরনের অধিকার-স্বত্ব আছে। তারা তাদের জমিদারির অধিকার স্বত্ব বা রাজস্ব আদায়ের স্বত্ব বিক্রি করতে পারে। সম্রাট যে কোন জায়গীরদারকে যখন খুশি যেখানে খুশি বদলি করতে পারেন। কিন্তু নির্দিষ্ট ত্রুটি ছাড়া রাষ্ট্র জমিদারের জমিদারি অধিকার কাড়তে পারত না। জমিদাররা রাষ্ট্রকে নির্দিষ্ট রাজস্ব দিয়ে দিত এবং তার নিজের সংগ্রহের সঙ্গে দেয় রাজস্বের পার্থক্যটাই ছিল তার লাভ।
জমিদারদের প্রধান দায়িত্ব ছিল রাজস্ব আদায় করা, তার এলাকায় সব জমি চাষ হচ্ছে কি না তা দেখা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। তবে মুঘল জমিদাররা যা খুশি তা-ই করতে পারত না। উদ্বৃত্ত সম্পদে জমিদারদের অংশ আইন ও প্রথা অনুযায়ী নির্ধারিত ছিল। ইচ্ছামত তার হার জমিদার বাড়াতে কমাতে পারত না।
জমিদার শ্রেণির মধ্যে ৩টি স্তরের অবস্থিতি সুস্পষ্ট। প্রথম দলের মধ্যে ছিল সামন্ত রাজা-মহারাজারা। এরা রাজা, রানা, রায় ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত ছিল। এরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে স্বাধীনই ছিল। আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং মুঘল শাসনের কাছে সামরিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে আনুগত্য স্বীকার করলে নিজেদের জায়গীরের উদ্বৃত্ত সম্পদ বণ্টনের নিরংকুশ অধিকার তাদের ছিল।
দ্বিতীয় শ্রেণি বা মধ্যবর্তী জমিদার হচ্ছে প্রাথমিক জমিদার এবং রাষ্ট্রের মধ্যে যোগসূত্র বিশেষ। রাজস্ব সংগ্রহ, ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় এই জমিদাররা রাষ্ট্রকে সাহায্য করত এবং বিনিময়ে নানারকম সুযোগ সুবিধা পেত ও উদ্বৃত্ত সম্পদের একাংশ ভোগ করত। চৌধুরী, মুখিয়া, মুকদ্দম, কানুনগো, দেশ্মুখ, দেশাই, দেশপাণ্ডে, তালুকদার ইত্যাদি নামে এই শ্রেণিকে অভিহিত করা হতো। বাংলাদেশে তালুকদার রূপটাই বেশি প্রচলিত ছিল। আবার বাংলাদেশের তালুকদাররা অন্য এলাকার তালুকদার থেকে স্বতন্ত্র ছিল। বাংলাদেশের তালুকদার হল সেইসব ভুম্যধিকারী যারা সাধারণত প্রথম শ্রেণীর বা বড় জমিদারদের মাধ্যমে রাজস্ব জমা দিত। সাধারণত, জমিদারী অধিকারের বিভিন্ন ‘হিস্যা’ বা অংশের ব্যাপক ক্রয়-বিক্রয় থেকে এই মধ্যস্বত্বভোগীদের উদ্ভব হয়।
মধ্যবর্তী স্তরের জমিদারদের নিচেই থাকত ‘মাল্গুজারি’ জমিদার। জমির ওপর এদেরই একটি স্বতন্ত্র ধরনের স্বত্ব থাকত। এঁরা শুধুমাত্র নিজেরা বা অন্যের সাহায্যে চাষই করত না, গ্রামের ওপরে ‘মালিকানার’ অধিকারও তাদের ছিল। এদের মাধ্যমেই কৃষকদের ওপর রাজস্ব ধার্য হতো এবং নিজেদের স্বত্বের পরিবর্তে এরা রাজস্বের একটি অংশ লাভ করত।
জমিদার শ্রেণি একটি সশস্ত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিল, প্রধানত প্রথম স্তরের জমিদারগণ। তবে ক্ষুদ্র জমিদাররাও নিজেদের সশস্ত্র দল নিয়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য ছোট ছোট মাটির কেল্লা তৈরি করত এবং তা সম্পূর্ণ আইনসম্মত ছিল।
৩. মুঘল আমলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নিষ্কর জমির ভোক্তাদের একটি অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়। এরা হল, প্রধানত ক. যারা বিদ্যা চর্চা করে, খ. ধর্মীয় লোকেরা। এছাড়া যাদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই, বিশেষ করে উচ্চবংশীয় অভিজাতরা, যারা অন্য কোন উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করে না তারাও নিষ্কর জমির ভোক্তা। সে যুগে এরাই ছিল বুদ্ধিজীবী এবং গ্রামাঞ্চলে এরাই রাজমহিমা কীর্তন করত। যেহেতু এরা রাষ্ট্রের দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল, এদের স্বার্থ ও রাজবংশের স্থায়িত্ব অঙ্গাঙ্গীভাবে ভাবে জড়িত ছিল।
খ. কৃষক
মুঘল আমলে জমির ওপর কৃষকের ভোগ দখল ও অধিকার স্বত্ব স্বীকার করা হতো। এই স্বত্বতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জমিদার বা অন্য কারোরই ছিল না। অপরপক্ষে জমি ছেড়ে চলে যাবার অধিকার বা জমি হাত বদল করার অধিকার কৃষকদের বিশেষ ছিল না।
এসময়ে কয়েক ধরনের কৃষক দেখতে পাওয়া যায়। যে নিজের জমি নিজে চাষ করে তার নাম ‘খুদ-কশথ কৃষক। সে হাল, গরু ইত্যাদি উপকরণেরও মালিক। এদের কেউ কেউ খুব সম্ভব মজুর বা কৃষাণ লাগিয়েও চাষ করত। এরা হল সম্পন্ন কৃষক যারা নিজেদের গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অন্যান্য শ্রেণির কৃষকদের চেয়ে উন্নত ছিল। দ্বিতীয় ধরনের কৃষক হল – পাহি কশথ। এরা এক জমিদারের অধীনে একটি মৌজার রায়ত, কিন্তু অন্য জমিদারিতে চাষ করে। এদের দুটো ভাগ। একদলের কোন উৎপাদনের উপকরণ ছিল না। খুদ-কশথরা তাদের উপকরণ ধার দিত। অন্যদলের নিজস্ব কৃষি উপকরণ ছিল। এদেরও পুরোপুরি দখলি স্বত্ব স্বীকৃত হতো। তৃতীয় ধরনের কৃষকরা অনেকটা ভাড়াটের মতো ছিল। এদেরকে বলা হতো মুজারিয়ান কৃষক। এরা খুদ কশথ কৃষক বা উচ্চতর কৃষকগোষ্ঠী এবং জমিদারদের নানকার জমি চাষ করত এবং জমির ওপরে তাদের কোন স্বত্ব জন্মাত না। যদিও কিছুক্ষেত্রে বংশ পরম্পরায় চাষ করতে পারত। চতুর্থ শ্রেণির কৃষক হচ্ছে ভুমিহীন বা কলজানা কৃষক। এরা সাধারণত নিম্ন বর্ণের বা বিভিন্ন উপজাতির যারা মূলত নিচু কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু এই কাজে তাদের সারা বছরের খাবার জোটে না। ফলে মরশুমের সময় এরা প্রকৃত কৃষকদের কাজে সহায়তা করত এবং দৈনিক ভিত্তিতে কিছু পেত। এইসব বর্ণ বা উপজাতিদের সরাসরি কৃষিকর্ম থেকে সরিয়ে রেখে ভারতীয় বর্ণ প্রথাই গ্রামাঞ্চলে ভুমিহীন চাষিদের সৃষ্টি করেছিল। মুঘল যুগে এইসব ভূমিহীন কৃষকদের সাথে অন্যান্য শ্রেণীর রায়ত বা কৃষকদের তফাৎ ছিল দুটি, প্রথমত – অন্যান্য শ্রেণীর কৃষকদের ভূমির ওপর কোন না কোন স্বত্ব ছিল; এদের তা ছিল না। দ্বিতীয়ত – অন্যরা মূলত কৃষি থেকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করত, সেখানে ভূমিহীন কৃষকেরা অন্যান্য নানারকম কাজও করত।
কৃষিতে ব্যাপকভাবে মূলধন বিনিয়োগ হতো না ধারণা করাই যুক্তিযুক্ত। বরং চাষির দৈহিক শ্রমই প্রধান ভূমিকা রাখতো। তবে খুদ কৃষক বা সম্পন্ন কৃষকেরা সীমিত অর্থে নিজের মূলধন ও সামাজিক ক্ষমতার ভিত্তিতে উৎপাদনী শক্তিকে নতুনভাবে নিয়ন্ত্রিত ও বিকশিত ( সেচ ব্যবস্থার দ্বারা ) করে অন্যদের চেয়ে অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত সম্পদ কৃষি থেকে আহরণ করতে পারত। কৃষকেরা মূলত নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করত। তবে বাজারের জন্য নানা ধরনের শস্য উৎপাদন করাও তাদের পক্ষে একেবারে অসম্ভব ছিল না। কেননা, এই সময় নগরের বিকাশ ও বহির্বাণিজ্যের বিস্তারের জন্য মুঘল রাষ্ট্র ক্রমশ বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদনের দিকে জোর দিতে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, মুঘল রাষ্ট্র চাষের উপযোগী জমি যাতে অকর্ষিত না থাকে এবং কৃষকরা যাতে উৎকৃষ্ট শস্য আবাদ করে সেজন্য উৎসাহ দিত। এর জন্যে ধার দেওয়া, খাজনা মওকুব করা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা দেয়া হতো। বহু সময় রাষ্ট্র এদের লাঙ্গল ধার দিত। আবার বীজ ধান বা গরু কিনতে রাজ কর্মচারীদের থেকে ধার পাওয়া কৃষকদের অন্যতম অধিকার ছিল। এছাড়া দুর্ভিক্ষের সময় কৃষকদের দেয় রাজস্ব থেকে ছাড় দেয়া হতো।
এটা খুব স্পষ্ট, প্রথমে যে বা যারা আবাদ করত, অনেক সময় জমিদারী অধিকার তাদেরই দেয়া হতো, তাদের বলা হতো বনকাটি জমিদার। অন্যদিকে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকা অনেক জমিদারকেই কৃষির প্রসার ঘটাতে উৎসাহিত করেছিল।
মুঘল যুগে কৃষকেরা আইনানুগ রাজস্বের সাথে নানাধরনের আবওয়াব বা বেআইনি কর প্রদানে বাধ্য থাকত, যদিও আবওয়াব সংগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। ফলে এসময় আইনত রাজস্বের পরিমাণ উৎপন্ন শস্যের এক তৃতীয়াংশ হলেও বাস্তব রাজস্ব আদায় হতো উৎপন্ন শস্যের দুই তৃতীয়াংশ।
গ্রামীণ সমাজে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণী হল মহাজন যারা সুদে অর্থ ঋণ দিত। প্রধানত রাজস্ব সংগ্রহের জন্যই কৃষক মহাজনের নিকট হাত পাতত, বিশেষ করে অজন্মার বছরে। মুঘল আমলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থে রাজস্ব আদায় করা হতো। তাছাড়া গৃহপালিত পশু ক্রয়ে, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চালাবার জন্য কৃষক ঋণ করত। আবার জমিদাররা যখনি নিয়মিত রাজস্ব দিতে পারত না, তখনি তাদের মহাজনদের দারস্থ হতে হতো। অন্যদিকে বিরাট ধান চালের কারবার, অর্থকরী ফসলের উৎপাদন এবং দূরদূরান্তের বাজারের জন্য বস্ত্র শিল্পের প্রসার গ্রামীণ অর্থনীতিতে মুদ্রার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তার সঙ্গে মহাজনদের প্রভাবও ক্রমশ প্রসার লাভ করেছিল। ইজারাদারি বা তালুকদারি ব্যবস্থায় মহাজন ইজারাদার বা তালুকদারের পক্ষে সর্বদা মালজামিন থাকত। সাধারণত তালুক বিক্রেতা সব সময় ‘সিক্কা’ টাকায় দাম বুঝে নিত এবং তার ফলে ক্রেতাকে মহাজনের দ্বারস্থ হতেই হত। অর্থাৎ মহাজনদের শক্তির উৎস অর্থ লগ্নিকারক হিসেবে নয়, তাদের শক্তির মুল উৎস গ্রামাঞ্চলে মুদ্রার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ। সম্ভবত এদের অনেকে টাকশালের মালিক ছিল। যেহেতু মুঘল আমলে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ করা সরাফ ও মহাজনদেরই কাজ ছিল, তাই গ্রামাঞ্চলের সকলেই বিনিময়ের জন্যে তাদের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল।
সাধারণত মাসিক সুদের হার ছিল টাকায় দেড়-আনা, অতিরিক্ত আরও কিছু যুক্ত হয়ে টাকায় দু-আনা দাঁড়াত। অর্থাৎ বার্ষিক হার ছিল শতকরা ১৫০ ভাগ। সাধারণত দুই বা তিন মাসের জন্য ঋণ দেয়া হত। সময় মতো শোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি সুদ ধরা হতো। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দিতে গিয়ে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে যেত। অনেক ক্ষেত্রে মহাজন শস্যে মূল্য নিত, এক্ষেত্রে ফসলের দাম নির্ধারণ করত মহাজন, যা সবসময় বাজার দর থেকে কম থাকত।
মুঘল যুগে কোন ধরনের ম্যানরের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায় না। তখন সেরকম কোন সংগঠন ছিল না। বরং মুঘল যুগের কৃষকেরা একক জোতের অধিকারী ছিল। তাদের ভোগদখলি স্বত্ব ছিল। উৎপাদনের উপকরণের মালিকানাও তাদের ছিল। এমন কি কিছু ক্ষেত্রে জমি হস্তান্তরেরও সুযোগ ছিল। এক জমিদারীর কৃষক অন্য জমিদারীতে গিয়ে চাষাবাদ করতে পারত। ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রে এরকম ব্যবস্থা ছিল না। তবে কৃষি কাজই ছিল তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস। জমির সাথে বাঁধা থাকা তাদের ভাগ্য। রাষ্ট্র বা জমিদার কেউ সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত না বা উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা উদ্বৃত্ত সম্পদ আহরণ করত না। তাদের নিয়ন্ত্রণ আসত সমাজ জীবনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে। সেখান থেকেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব প্রসারিত হতো।
ইউরোপের সামন্ত তথা লর্ডের মতো মুঘল সামন্ত তথা জমিদাররা সাধারণত শাসন পরিচালনার অধিকারী ছিলেন না। সংক্ষেপে মুঘল শাসন ব্যবস্থার রূপ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল -
ক) কেন্দ্রীয় শাসন – কেন্দ্রীয় মুঘল শাসন ব্যবস্থায় সম্রাট বা বাদশাহ ছিলেন সর্বোচ্চ স্থানে। তিনি মন্ত্রীদের সহায়তায় শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাজ প্রধান ৪ ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক বিভাগের প্রধান হতেন একজন করে মন্ত্রী। এদের পদবি ছিল নিম্নরুপঃ ১) দিওয়ান ২) মীর বখশী ৩) সদর-উস-সুদুর ৪) মীর-এ-সামা। সবার উপরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে উজির বা উকিল বলা হতো।
খ) প্রান্তীয় শাসন – মুঘল সাম্রাজ্যকে প্রান্তে বিভক্ত করার ব্যবস্থা ছিল। এর সুসংগঠিত রূপ দেখা যায় আকবরের আমল থেকে। বাবর ও হুমায়ুনের আমলে সাম্রাজ্য তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল, যথা – ১) নিয়মিত সরকার তথা জমিদার ২) এমন দলপতিদের রাজ্য বা জমিদার যারা মুঘল সম্রাটের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তাঁরা নিয়মিত কর দিতেন এবং তার বিনিময়ে অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারতেন। ৩) ধর্ম, পুণ্য, ও শিক্ষার ব্যয় নির্বাহের জন্য গঠিত সংস্থা ও ব্যক্তিদের দান স্বরূপ প্রদত্ত ভূমিকে সিয়ারগাল বা মদদ-এ-মাশ বলা হতো।
আকবর তার সাম্রাজ্যকে ১২টি ভাগে বিভক্ত করেন, যার প্রত্যেকটিকে সুবা বলে অভিহিত করা হয়। এই সুবা সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও আউরঙ্গজেবের আমলে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৫, ১৮ ও ২০টি। সুবার বাইরে কিছু রাজ্য ছিল যাদের মুঘল সাম্রাজ্যে একীভূত করা হয়নি বা সম্ভব হয়নি । এসব রাজ্যের রাজারা মুঘলদের অধীনতা স্বীকার এবং বার্ষিক কর দেয়ার বিনিময়ে নির্বিঘ্নে রাজ্য শাসন করার অধিকার লাভ করে। সম্রাট তথা মুঘল প্রশাসন তাদের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করেনি। মুঘলদের কাগজপত্রে তাদের জমীনদার বলা হয়েছে। আর তাদের রাজ্যগুলোকে মুঘল সুবাসমূহের সরকার বা পরগণা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অধীনতা স্বীকারকারী রাজাকে মনসবদার করে নেয়া হতো এবং তার বেতনের জায়গীরকে ওয়াতন বলা হতো।
গ) স্থানীয় শাসন – মুঘল যুগে স্থানীয় শাসন কয়েকটি স্তরে বিভক্ত ছিল। এগুলো হলঃ ১. সরকার – স্থানীয় শাসনের প্রথম স্তর হল সরকার যাকে আজকের জেলা বলা চলে। সরকারসমূহের প্রধান প্রশাসককে ফৌজদার বলা হতো। ফৌজদার তার কাজের জন্য সুবেদারের নিকট দায়ী থাকত। জেলার সেনা নিয়ন্ত্রণ তার অধীন ছিল। সে মাল্গুজার উসুল করার কাজও দেখাশুনা করত। নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষার দায়-দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত ছিল। প্রধান প্রশাসক ছাড়াও প্রতিটি সরকারে একজন করে কাজী, আমালগুজার, বিতিকিচি ও খাজনাদার নিযুক্ত থাকত। ২. সরকারের পরই পরগণা প্রশাসনের স্থান। পরগণা প্রশাসনে একজন করে শিকদার, আমিল, খাজাঞ্চি ও লিপিক নিযুক্ত থাকত। শিকদার পরগনার প্রধান প্রশাসক ছিল। আমিলের প্রধান কাজ ছিল মাল্গুজারি উসুল করা। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজও দেখাশুনা করত। পরগনায় আমিন পদের একজন কর্মকর্তা ছিল যার কাজ ছিল পরগণার কৃষিভূমির খোঁজখবর নেওয়া, হিসাব রাখা এবং নিয়মানুসারে তার রাজস্ব নিশ্চিত করা।
৩. গ্রাম প্রশাসন - পরগণা গ্রামে বিভক্ত ছিল। মুঘল আমলের গ্রামীণ সমাজকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, ১. দেহাৎ-ই-তালুক, ২. দেহাৎ-ই-রায়তি। দেহাৎ-ই-তালুক হচ্ছে সেই গ্রাম যা বড় জমিদারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে রাজস্ব দিত। অন্যদিকে দেহাৎ-ই-রায়তির কৃষকেরা সরাসরি রাষ্ট্রীয় আমলা বা গ্রাম প্রধানের মাধ্যমে রাজস্ব দিত। দেহাৎ-ই-রায়তি জাতীয় গ্রামে রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ রাখতে গ্রামের লোকেরা প্রতিনিধি নির্বাচন করত।
গ্রামের প্রশাসন সাধারণত স্বায়ত্তশাসিত গ্রাম পঞ্চায়েত বা গ্রাম প্রধান দ্বারা সঞ্চালিত হতো। গ্রাম প্রধান বা পঞ্চায়েত প্রধানকে এলাকাভেদে মুখিয়া, মুকদ্দম, চৌধুরী বা পটল বলা হতো। গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল মূলত নির্বাচিত সংস্থা। তবে গ্রাম প্রধানের পদ বংশানুক্রমিক হতেও দেখা গিয়েছে। গ্রাম প্রশাসনের সাথে যুক্ত অন্যরা হল পাটোয়ারি, চৌকিদার, জলাধার অধীক্ষক, সীমাপাল ইত্যাদি। গ্রামের উৎপাদিত ফসলের একটি অংশ গ্রাম প্রশাসনের সদস্যরা জীবিকা উপার্জনের জন্য লাভ করত।
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোর প্রধান কাজ ছিল ঝগড়া-ফ্যাসাদ নিরসন, পাহারা এবং নজরদারি, শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, নির্ধনদের সাহায্য দান এবং আমোদপ্রমোদ, পালাপার্বণ ও উৎসবাদির ব্যবস্থা করা।
উপরের আলোচনা থেকে ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্র থেকে মুঘল আমলের সামন্ততন্ত্রের বিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ, যথা –
প্রথমত, ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের কৃষকেরা প্রধানত ভুমিদাস ছিল। জমির সাথে বাঁধা ছিল তাদের জীবন। শর্ত সাপেক্ষে বংশপরম্পরায় ভোগ দখলের অধিকার থাকলেও তারা তাদের চাষকৃত জমির মালিক ছিল না। এসব জমি হস্তান্তর বা বিক্রয় করতে পারত না। সামন্তপ্রভু ইচ্ছে করলে তাকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত। অন্যদিকে মুঘল সামন্ততন্ত্রের কৃষকেরাও জীবিকার জন্য ভূমির সাথে বাঁধা থাকলেও তাদের বংশপরম্পরায় কৃষিজমির দখলি স্বত্ব ছিল। রাষ্ট্রের অনুমতি সাপেক্ষে জমি হস্তান্তরের অধিকার তাদের ছিল। জমিদার বা জায়গীরদার ইচ্ছে করলেই জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত না।
ইউরোপের সামন্ত লর্ডগণ ভূমি রাজস্বের হার নির্ধারণ করত। কিন্তু মুঘল যুগের সামন্তরা রাজস্ব নির্ধারণ করার অধিকারী ছিল না, সম্রাট তথা মুঘল কেন্দ্রীয় প্রশাসন সবধরনের রাজস্ব নির্ধারণ করত।
দ্বিতীয়ত, ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের মূল সাংগঠনিক রূপ হল ‘ম্যানর’। ম্যানরের সাধারণত দুটি ভাগ – সামন্তপ্রভুর খাসজমি ও খাজনার বিনিময়ে তার ভুমিদাস কর্তৃক অধিকৃত জমি। এই দুটির পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সামন্ততন্ত্রের বাহ্যিক রূপ বজায় ছিল। এটি ছিল এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা যেখানে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে পশু পালন, কাপড় বুনন, খাদ্য উৎপাদনসহ জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছুই উৎপন্ন হতো। ম্যানরের মধ্যেই ছিল আটাকল, রুটির কারখানা, তাঁত ও বুনন যন্ত্র ইত্যাদি। তবে লবণ ও লোহা জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রাম্য মেলা হতে কেনা হতো। কৃষক তথা ভুমিদাস তার উৎপাদিত দ্রব্যাদি অন্য ম্যানরে নিয়ে যেতে পারত না, অর্থাৎ ম্যানরে উৎপাদিত দ্রব্যাদি ম্যানরবাসীই ভোগ করত। এমন কি লর্ডের বিশেষ নির্দেশ ছাড়া কেউই ম্যানরের বাইরে যেতে বা বাইরে থেকে ম্যানরে প্রবেশ করতে পারত না। মুঘলযুগে ম্যানর বা ম্যানর ধরনের কোন সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। কৃষক একক জোতের অধিকারী ছিল। উৎপাদনের উপকরণের মালিকানাও তাদের ছিল। তারা গ্রামের বাইরে হাটে নিয়ে গিয়ে তাদের ফসল বিক্রয় করতে পারত। রাষ্ট্র বা জমিদার কেউ সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত না। তাছাড়া এক জমিদারের জমিদারীতে বসবাস করে অন্য জমিদারীতে গিয়ে চাষাবাদ করতে পারত। এমনকি দলবেঁধে কৃষকদের এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাওয়ার অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।
তৃতীয়ত, ম্যানর প্রথার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল লর্ড। সে স্বাধীনভাবে প্রশাসন পরিচালনা করত। ভ্যাসালদের উপর করারোপ, নিজস্ব আদালতে তাদের বিচার, যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর, সামরিক সাহায্য প্রদানের জন্য ভ্যাসালদের নির্দেশ দান ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করত। বিশেষ করে ম্যানর প্রশাসন পরিচালনার জন্য স্টুয়ার্ড, বাইলিফ এবং রিভি উপাধিধারী কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হতো। অন্যদিকে মুঘল সামন্ত তথা জমিদারদের প্রশাসন পরিচালনার তেমন কোন সুযোগ ছিল না। উপরে আমরা দেখেছি কেন্দ্র থেকে প্রায় গ্রাম পর্যন্ত মুঘল প্রশাসন জালের মতো বিস্তৃত ছিল। তবে সামন্ত রাজা-মহারাজারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে স্বাধীনই ছিল। আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং মুঘল শাসনের কাছে সামরিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে আনুগত্য স্বীকার করলে নিজেদের জায়গীরের উদ্বৃত্ত সম্পদ বণ্টনের নিরংকুশ অধিকার তাদের ছিল। লর্ডদের মতো তাদেরও নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল। তবে তাদের ক্ষমতা কখনই রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে অতিক্রম করতে পারে নি।
চতুর্থত, সম্পদ তথা জমির ব্যবহার ও প্রশাসন পরিচালনায় ইউরোপে ব্যক্তি ছিল মুখ্য। এখানে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রয়োগের সুযোগ খুব কম ছিল। অন্যদিকে, মুঘল ভারতে সম্রাট তথা রাষ্ট্র নিরুংকুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিল। মূলত আমলাতন্ত্র দ্বারা রাষ্ট্র শাসিত হতো। কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত মুঘল সামন্তরা রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদারও ছিল না।
বস্তুত রাষ্ট্রের ভুমিকার প্রশ্নে / ক্ষমতার প্রশ্নে পশ্চিম ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্র থেকে মুঘল সামন্ততন্ত্রের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের কেন্দ্রে রয়েছে লর্ড। এটা যেমন শাসন ক্ষমতার ক্ষেত্রে, তেমনি উদ্বৃত্ত সম্পদ ভোগের ক্ষেত্রেও। অন্যদিকে ভারতে মূল উদ্বৃত্ত সম্পদ ভোগ করে রাষ্ট্র। জমির ওপর মালিকানা স্বত্ব না থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে রাজস্বই এখানে উদ্বৃত্ত সম্পদের মূলরূপ। রাষ্ট্র জমিদারদের স্বত্ব স্বীকার করে নেয়। কিন্তু তার পরিবর্তে তাকে নানকার ইত্যাদি অংশ নির্দিষ্ট হারে দেয়, বাকিটা রাজকোষে যায়। রাজস্বের এই ব্যাপকতা ও উদ্বৃত্ত সম্পদে খাজনার অংশের স্বল্পতা মুঘল সামন্ততন্ত্রকে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক করেছে। আবার রাষ্ট্রের মূল শাসকশ্রেণী এখানে আমলা বা মনসবদাররা। তারা মূলত একটি সামরিক অভিজাততন্ত্র। এই অভিজাততন্ত্র তাদের শোষণের আইনানুগ সমর্থন আদায় করছে মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে। মুঘল আমলাতান্ত্রিক অভিজাতদের স্বার্থ এবং মুঘল রাষ্ট্রের স্বার্থ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। এই আমলাতান্ত্রিক চরিত্রের জন্যই মুঘল রাষ্ট্রে কেন্দ্রীকরণের ঝোঁক এত বেশি। এই বৈশিষ্ট্যই মুঘল ভারতের সামন্ততন্ত্রকে নিজস্ব লক্ষণে ভূষিত করেছে যার সাথে ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের মিল খুঁজে পাওয়া ভার। বস্তুত মুঘল রাষ্ট্র বিশেষ ধরনের সামন্ত রাষ্ট্র না কি প্রাক পুঁজিতান্ত্রিক সামরিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র তা পর্যালোচনার দাবী রাখে।
সহায়ক গ্রন্থ ও নিবন্ধ
১. সামাজিক ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা – আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মোঃ আঃ কুদ্দুস শিকদার ও দিল আফরোজ বিনতে আছির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা
২. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস – আব্দুল্লাহ ফারুক । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থ সংস্থা।
৩. মুঘল যুগে কৃষি অর্থনীতি ও কৃষক বিদ্রোহ – গৌতম ভদ্র। সুবর্ণরেখা, কলিকাতা।
৪. মুঘল ভারতের কৃষি ব্যবস্থা, ১৫৫৬-১৭০৭ – ইরফান হাবীব ।
৫. ভারতবর্ষ, সামন্তবাদ থেকে উপনিবেশিক পুঁজিবাদে উত্তরণ – মূল হামজা আলাভী, অনুবাদ এনামুল হাবীব । উৎস প্রকাশন, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।
৬. মোগল শাসন ব্যবস্থা – ড. হরিশঙ্কর শ্রীবাস্তব, অনুবাদ মুহাম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস, ঐতিহ্য, বাংলাবাজার, ঢাকা।
৭. ভারতের সামন্ততন্ত্র, রামশরন শর্মা। কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা।
৮. বিভিন্ন নিবন্ধ, সূত্র ইন্টারনেট।