লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ May 28, 2011, 10:46 AM, Hits: 22576
কবিতিকা-১
একদিন তার হাসি হঠাৎ দমকা হাওয়ার মত ছুটে গিয়েছিল
সর্ষের খেতের ’পর, নদীর উপর, ঢেউয়ের উথালপাথাল শব্দ হয়েছিল
আমার বুকের ভিতর ঝরেছিল ঝর্ণাধারা হঠাৎ প্রবল,
যেন জ্যোৎস্না ঝরা রাতে অপ্সরা নেমেছিল শুভ্র পোষাক পরা অমল ধবল।
২৬ মার্চ ১৯৯৯
কবিতিকা-২
এইখানে একদিন ব্রহ্মপুত্র তীরে মাতৃশাসন ছিল
তারপর মৃত্তিকার বুক ফালা ফালা করে এসেছিল পিতৃতন্ত্র প্রবল প্রতাপ,
জুম চাষ হটে গেল লাঙ্গলের কাছে, বিদায় নিল
মাতৃতন্ত্র এইখান হ’তে, গারো পাহাড়ে আজ তার সীমিত প্রভাব।
২৮ মার্চ ১৯৯৯
কবিতিকা-৩
নদীটি মরিয়া গিয়াছিল তাই ঘুমায়ে ছিল বালুচরে
হঠাৎ জলস্রোত তাহারে জাগায়ে দিয়ে ফেলিয়া দিল সাগরে।
নদী বুঝিল না কে তাহারে জাগালো অবেলায়, এভাবে, কিসের তরে!
ঘুমভাঙ্গা চোখে নদীটি তোমারে শিয়রে দেখিয়া পড়িল ভুলের সায়রে।
২ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৪
একদা গভীর বনে অঙ্গুলিমালেরও মরিতে ইচ্ছা হল
তাই বুদ্ধকে দেখিয়া সে খাপ হতে তরবারি টানিয়া আনিল।
হঠাৎ জলস্রোত গিরি হতে নামে ভাঙ্গিয়া প্রস্তর বাঁধ,
অঙ্গুলিমাল! তুই-ই মরিলি, শতপূর্তির মিটিল না সাধ।
৩ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৫
মহত্ত্বের সীমানায় যেতে চাও তুমি, আর দুঃখকে পাবে ভয় এ কখনো হয়?
অসংখ্য দুঃখের ছোবল সয়ে যাবে নীরবে, মুখে হাসি মেখে যত বিষ করে যাবে ক্ষয়,
ঘৃণার আগুনে নিশ্চয় পোড়াবে জঞ্জাল নিরন্তর, প্রয়োজনে জ্বালাবে ধ্বংসের চিতা,
কিন্তু সে তো প্রেমকে বাঁচাতে চেয়ে, ন্যায় ও সত্যের কাছে নতজানু হয়ে, অন্তরে রেখে শুদ্ধতা।
৬ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৬
সাগর তাকে ডাকে নি বলে নদী কি ঘুমাবে না কারো বুকে মাথা রেখে?
ধূসর মরুর বুকে ক্লান্ত নদীটি তাই ঘুমায় একদিন বালুতে মুখ ঢেকে।
তবু নদী স্বপ্নের ভিতরে আকাশে ডানা মেলে ফেরে তার সাগরে;
তবে ওটা উৎসে ফেরার স্বপ্ন মাত্র ছিল, আসলে নদী ফেরে মরণ সায়রে।
৮ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৭
অনেক আগের কথা, এখনো কি মনে জাগে মিছিলের দিন?
স্লোগানে উচ্চারিত বোধ, শিহরণ সবই কি হয়েছে বিলীন?
বিপ্লবের স্বপ্ন যারা দেখেছিল তারা আজ সকলে কোথায়?
মানিক! তুমি একা ছিলে সকলের মাঝে, আজিও রয়েছ একাই।
১৫ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৮
তিরিশ বছর ধরে আবদার তুমি কী পেয়েছ বলো তো!
তোমার রক্তের ঋণ এত শুধিবার পরেও সে ঋণ এতটুকু কমে নাতো!
কাহাকে বাঁচাতে তুমি কৃষকের মিছিলে শত্রুর বল্লম বুকে গেঁথে নিলে?
আবদার! মিছিল নেই আর, তবু আমি রয়েছি স্বপ্নের মিছিলে।
১৬ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৯
আবদার রহ্মান! বহুকাল আগে মাটিতে শয়ান হলেও আমায় ছাড়িলে না,
সারাক্ষণ সাথে থেকে করিলে নজরদারী, আমায় আর কিছুই করিতে দিলে না।
বিপ্লব কেন হল না, আরো সব সমস্যার তোমাকে খুঁজিতে হল না সমাধান,
তুমি শুধু আমার বুকে হাল চাষ করিতেছ কৃষক আবদার রহমান।
১৬ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১০
কাজী জাফর! ভুলেই গেলে তবে শ্রমিক সুন্দর আলীর রক্তের দাগ!
দৈনিক পাইতেছ এরশাদের বাড়ী হতে কোরবানীর মাংসের নিয়মিত ভাগ!
ডুগডুগি বাজায়ে যে স্বপ্ন দেখালে তা কি ছিল তবে শুধু এক ভেলকি খেলের কারবার?
খেলা শেষ করে তুমি তো ফিরিলে ঘরে, পথের ধূলায় শুধু অনেকের হাড়।
১৭ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১১
আসলে ওটা যুদ্ধের ঘোড়া, স্মৃতির কোষে তার রণহুংকার, দ্রিমিকি দ্রিমিকি বাজনা বাজে,
ঘুমেও স্বপ্ন দেখে যুদ্ধ করিতেছে দেশে দেশে, পিঠেতে সওয়ার আছে যোদ্ধা রণসাজে।
ওটাকে নিয়ে করিও না খেলা যদি না থাকে বুকে ও বাহুতে বল এবং কৌশল জানা,
বিদ্যুৎ ঘোড়া হয়ে ওটা একবার ছুটে গেলে মুহূর্তে হারাতে পারো তোমার সমস্ত ঠিকানা।
১৭ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১২
হোমার! তুমি ট্রয়ের পতনে দেখেছ নারীর স্বাধীন ইচ্ছার চূড়ান্ত পরাজয়,
তারই গাথা রচেছো তুমি যেখানে হয়েছে স্বৈর-পুরুষ দম্ভের উদ্ধত জয়।
হোমার! নবযুগ আসিতেছে জেনো, নারী তার মহিমা লয়ে দাঁড়াবে মনুষ্য মেলায়,
আরেক যুদ্ধ শেষে নারীর বিজয় গাথা রচিতে আসিতেছে কবি এক কালের ভেলায়।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৩
মানিক! বিপ্লব করতে চেয়ে একদিন যারা মিলেছিলে তারা আজ কে কোথায়?
অনেকেই নিহত যারা শত্রুর হাতে তারা আসিবে কি করে?
তারা তো অঘোর ঘুমে মাটির শয্যায়।
যারা বেঁচে আছে আজো চতুর্দিক ছড়ায়ে,
অনেকে ধুঁকিতেছে, অবসাদে ঝিমাতেছে কেউ, মতিচ্ছন্ন অনেকে আবার;
তুমি মানিক হারিলে না,
একাই যুদ্ধ করিয়া আসিলে এতটা পথ বিপ্লবের নূতন অর্থ করিতে উদ্ধার।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৪
শফিক, নজরুল, শান্তি, ওয়াজেদ আরো কত নাম মিছিল করিয়া আসে,
আমি পালাব কোথায়? আবদার! তুমিও তো আছ এইসব নিহত নামের পাশে।
মৃত ও জীবিত সবারে বলি আজ আমি কিন্তু অঙ্গীকার হতে কখনও পালাই নাই,
শুধু খুঁজিয়াছি মুক্তির সঠিক উপায় আর চাহিয়াছি লইতে সবারে মহত্তর ঠিকানায়।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৫
মাতঃ! যত দুঃখ জীবনভর দিয়াছি তোমাকে ওসবই তো তোমার ছিল একান্ত পাওনা,
একদা তুমিই তো শিখায়েছো মোরে মহত্ত্বের পথে যেতে, সত্য সুন্দরের করিতে সাধনা,
যা কিছু করেছি ভাল সবই তো সেই তোমার করা,
আমি তো সেই তোমারই কল্পনা ও স্বপ্নে গড়া;
সেই নিজেকে পুরুষরূপে তুমি নিয়াছ পৃথিবীতে, আমি তো নিমিত্ত মাত্র,
সেই তোমারই কীর্তি মাগো রহিবে পৃথিবী জোড়া।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৬
তোমরা জানো নি কেউ মাতৃঋণ শোধের তরে আমার এই ধনুর্ভঙ্গ পণ,
মায়েরে ফেলিয়া গেছি, সংসার দেখি নাই,
দুঃখ পেয়েছেন পিতা, মাতা, ভ্রাতা ও ভগিনীগণ।
কিন্তু বহু হাজার বছর ধরে নারীর চোখের জল সঞ্চিত হয়েছে বুকে যার
তার পথ কোথায় ফেরার?
এক নারীই তো জন্ম দিয়াছিলেন এই প্রবল পুরুষেরে,
সকল নারীর কাছে তাই মাতৃঋণ রয়েছে আমার।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৭
এও এক সময় বৈ কি! হরতাল, অবরোধ, আন্দোলন - তবে সব অন্য রকম,
বোমাবাজী, চাঁদাবাজী, মাস্তানী, শয়তানী পাল্টে দিয়েছে প্রায় সবেরই রকম-সকম।
এই সব দেখে শুনে অনেক দূরে গিয়ে যেখানে তুলেছি ঘর সেটা হল ষাটের দশক,
সারাদিন কাজ সেরে সেখানে ফিরে হই খুশীতে ডগমগে অবাক বালক।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৮
ষাটের দশকের কথা একদিন এক নেতা দিলেন তালিকা এক বইয়ের,
চারটা বই পড়লে বিপ্লব হয়ে যাবে আর লেখাপড়ার দরকার তাই কিয়ের!
‘ছোটদের রাজনীতি’, ‘কম্যুনিস্ট ইশতেহার’, ‘করিতে হইবে কী’, এ ছাড়া আর এক বইয়ের নাম,
মনে এলে হাসি পায় কিন্তু সেদিন হায় এদের হাতে ধরা ছিল বাম রাজনীতির লাগাম।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-১৯
একদিন ভাসানী আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন করিতে চাহিলেন জারী
শুনিয়া নেতারা শংকাতুর হইয়া সভাস্থলে মুখ করিলেন ভারী।
আবদুল হক তখন আমায় কহেন, ‘বুড়ো এবার নিজে ডুবে ডুবাবে মোদের’।
হক-তোহা-আলা-মতিন সবাই ছিল তখন গোপন ভক্ত আইয়ুবের।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২০
পঁয়ষট্টি ছিষট্টির কথা মাঝে মাঝে গোপন নেতা হকের দেখা পেতাম গোপনে,
আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন তারা করায় বর্জন ক্ষোভ মোর জানাতাম খোলা মনে।
শুনে আবদুল হক তারস্বরে একমত, জানাতেন পার্টিতে হবেই এটা উত্থাপন,
অথচ আইয়ুব-প্রীতি সাধনে কৌশলী রাজনীতি মূলত ঐ লোকই করেন বাস্তবায়ন।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২১
বাম নেতা আবদুল হক বিখ্যাত দামী লোক তার শিষ্য বিখ্যাত আনোয়ার জাহিদ,
বলা কঠিন অবশ্য কে গুরু কে শিষ্য তবে একটি লক্ষ্য ঠিক রেখে তার হন সুহৃদ।
বহু ঘাটের জল খেয়ে এরশাদের মন্ত্রী হয়ে জাহিদ পৌঁছিলেন মঞ্জিলে তাহার,
কর্মীরা হকেরে যেখানে নিল ধ’রে সেই গর্ত হইতে তার আর হইল না উদ্ধার।
১৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা- ২২
আটষট্টির ডিসেম্বরে ভীষণ গোস্বাভরে ভাসানী একদিন ডুবাইয়াই ছাড়িলেন হক-তোহা-সুখেন্দু সবারে,
আইয়ুব ভাসিয়া গেল, মুজিবও বাহির হইল, কম্যুনিস্টরা পড়িল সব পাগাড়ে।
এ কী কারবার! বুড়ার কি মাথা খারাপ? কিছুই কি রাখিবে না সে আর আস্ত?
সবই হল ছারখার, সাধের পাকিস্তানও সাবাড়, একাত্তরেই লাভ করিল তা ভেস্ত।
২০ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২৩
মমতাজ! সম্পর্কে বোন তুমি ছিলে আবার বন্ধুও তো ছিলে,
একটি আঁধার গ্রামে আলো জ্বেলে দিবে বলে দেড়টি বছর অত শ্রম দিলে!
সর্বদা পাশে তোমায় পেয়েছি বন্ধুর ন্যায়, বিমুখতা কোনোদিন এতটুকু দেখি নাই,
তারপর কত কাল কারো দেখা নাই, তুমি তবু আলো জ্বালো স্মৃতির ছায়ায়।
২০ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২৪
মানবেন্দ্র লারমা! তুমি চিরকালই ছিলে বৃহৎ, তবু ছিলে হয়তবা ক্ষুদ্র এক দ্বীপ,
সাগরে জাগিতেছিলে, যেন বসুন্ধরার কপালে হতেছিলে ছোট্ট এক টিপ।
বহুকাল পরে সেই দ্বীপ দেখিতে যেয়ে আমি বিস্ময়ে হতবাক, ‘কোথায় ইহার আছে শেষ?’
অট্টহাসিতে ফেটে লারমা বলেন, ‘সেই আমিই এখন বিশাল ব-দ্বীপ দেশ!’
২০ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২৫
তুমিও ভুলিলে গোলোক, ভুলে গেলে সেইসব আশ্চর্য আলোমাখা দিন!
শৈশব-যৌবনে বিপ্লবের এক স্বপ্ন দুইবার ভেঙ্গে গেল বলে তুমিও ভুলে গেলে রক্তের ঋণ!
এক দু’টি প্রেম ভেঙ্গে যায় বলে কি প্রেমেরই বিসর্জন হবে অন্তর হতে?
বিপ্লব সেই প্রেম; এক বিপ্লব ভেঙ্গে গেল বলে চলে যেতে হবে বিপরীত স্রোতে?
২১ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা- ২৬
তুমি ভুলিলে না, তাই না মানিক তোমার দীর্ঘ গ্রাম্য জীবন?
বড় বেশী কল্পনায় করো বিচরণ, হয়তবা এ ভুল ভীষণ!
তবু আর কীই বা করার আছে তোমার?
বর্তমান হল না পছন্দের, আর ভবিষ্যৎ তো এখনো আঁধার।
২২ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২৭
কোথাও মেলে না আমার, বোঝা যায় বড় বেশী বেখাপ্পা-বেঢপ শরীর,
গোলমাল বেধে যায় আমি গেলে, সবখানে আছে এরই নজির।
রাজনীতি, ব্যবসা, চাকুরী, ভালবাসা সবখানে ব্যর্থতা,
যেখানে হাত দিই বেরিয়ে আসে আমার গোলমেলে ভিন্নতা।
২২ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২৮
ত্রিশ বছর অনেক সময়, সবই বদলায়, আদিতমারীও বদলেছে তাই,
সেইসব মানুষেরা অনেকে আছে, কেউ কেউ নাই, তবে কিছুই আর হুবহু নাই।
ত্রিশ বছর আগে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে ঠিক সেও আর নাই, সবই কেমন অচেনা এখন,
আসলে সে সবই আজ স্মৃতি, তাই উঠে আসে আন্দোলনের দিনগুলো যখন তখন।
২২ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-২৯
হেলেন! পিছনে পড়িয়া রহিল প্রিয় প্যারিস ও বীর হেক্টর
ভষ্মস্তূপে শয়ান ট্রয়ের সহিত মিলাইয়া দেহ,
তুমি ফিরিয়া চলিলে গৃহে! এ কোন্ গৃহ?
প্রেম ও মর্যাদার সমাধিস্থল, তারো নাম তবে গৃহ?
তুমি কেন করিলে না জহরব্রত রাজপুত নারীদের ন্যায়?
গৌববে ভাস্বর মাথা উঁচু করিয়া ভূমিতে হইতে শয়ান!
তবে পরাজিত মেনেলাস হত, বিজয়ী হতে তুমি ও প্যারিস,
হোমারও করিত না, নিয়তির হাতে প্রেম ও নারীর পতন বয়ান।
২৬ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৩০
সঠিক পরিচর্যা ছাড়া কিছুই টেকে না পৃথিবীতে, না প্রেম না ঘৃণা,
অথচ বিস্ময়ের কথা এই এমন সত্যরেই প্রায় কেউ মনে রাখিতে পারে না।
হয়ত তাই অকালে বার্ধক্য যেমন ধরিতে পারে তেমন প্রেমেও ধরিতে পারে অকালে ক্ষয়,
এ কথা ভুলে যাওয়া হয় কোনো জয় শেষ জয় নয়, জয়কেও অবিরাম করিতে হয় জয়।
২৮ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৩১
ওগো গারো নারী! তুমি রুখেছ প্রেমহীন পুরুষের সভ্যতার আঘাত অনেক হাজার বৎসর,
পৃথিবীর ভয়াল আঁধার রাত্রে তোমার প্রেম আলোকিত রেখেছিল দুরন্ত গারো পুরুষের অন্তর।
জানি কালের গতির আঘাতে আজ তোমার শেষ রাজ্যও হয় ছত্রখান, চারদিকে ভাঙ্গনের শব্দ শোনা যায়,
আজ দাঁড়াও তবে নারীর মুক্তির নবপথ নির্মাণে নূতন বিদ্যা ও শক্তি নিয়ে জগৎ সভায়।
২৯ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৩২
সরস্বতী নামের বহুকাল আগে হারানো নদীটি তুমিও কি হঠাৎ জাগিবে কোনো দিন?
চার হাজার বছর ঘুমাতেছ নদী সিন্ধু মরুর বুকে? নাকি মরণেই হয়ে আছে লীন?
তবু ভাবি যদি জেগে ওঠো, সেই সাথে জাগে রাজধানী নগর হারানো সিন্ধু সভ্যতার,
চূড়ান্ত প্রমাণ মিলিত তবে ন্যায় ও শান্তির পথে সভ্যতা নির্মাণে আর্য-সিন্ধু যোগ্যতার।
৩০ এপ্রিল ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৩
ইতিহাস! কেন তুমি এত নির্দয় হয়ে মানুষের অশ্রু লয়ে করিতেছ খেলা?
সিন্ধু, সুমের, মিসরের পথ পার হয়ে সভ্যতার কাটিলো তো অনেকটা বেলা:
তবু গ্ল্যাডিয়েটরের মরণ নিঃশ্বাস আজো পৃথিবীর অ্যারীনার বুক ভারী করে রাখে,
পৃথিবীর লুণ্ঠিত নারীরা আজো কাঁদিয়া কাঁদিয়া বস্ত্র তুলিয়া আনিয়া দুঃখেরে ঢাকে।
১ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৪
এখন তোমরা অভিযোগ করো, বলো চারদিক এত অরাজক!
নিয়ম, রীতি, নীতি সবই নাকি আজ একেবারে পলাতক!
নিয়ম ভেঙ্গে করেছ সম্পদ আজ বিপদে পড়ে সবারে দোষাও,
পাপের মূল্য দিবে না কি? আজ কৃতকর্মের হিসাব মেলাও!
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৫
চারদিক আজ বড় আঁধার, ঘন হয় দিন দিন, সামনে আঁধার,
ভাঙ্গাচোরা মানুষেরা হতে থাকে আরো বেশী কিম্ভুতকিমাকার।
এ কী সময়! বড় দুঃসময়! সৎ মানুষেরা ক্রমে একা হয়ে যায়,
তবে দাঁড়াবে না কেউ কোথাও? প্রতিরোধের আর নেই উপায়?
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৬
নষ্ট সময় এত গন্ধ ছড়ায় আজ টেকা যে যায় না কোনোখানে,
নষ্ট মানুষের ভিড়ে নষ্টেরা আজ ভাল কথা যত জোর-স্বরে আনে।
ভাল মানুষেরা পরাজিত আজ, কোণঠাসা, বিতাড়িত, স্বদেশ ছাড়া,
মানিক! কী করবে বলো? শোনাবে কথা তুমি একা? তাও শুনবে কারা?
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৭
নষ্ট নারী ও নর দেখো সংখ্যা বাড়িয়ে কেমন ভর্তি করছে ঢাকা নগর,
মাথা শুধু বাড়ে, ভিতরে বাড়ে না আলো, সারা দেশ ও সমাজ আজ হয়েছে জবর!
উদ্ধত যুবকেরা অস্ত্র ধরেছে এখন বয়সী নেতাদের পাপ পথ ধরে,
এই যে সময় এক দুর্বল, অসহায়, একা যারা আজ তারাই মরে।
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৮
আজ নীতি কথা বলো প্রবীণেরা, সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিপতি যারা!
তোমাদের কথার মূল্য কী আছে নিজ জীবনাচরণেই ভিন্ন যারা?
কীভাবে উঠেছ এখানে, কীভাবে করেছ অর্থ, বিত্ত, সম্মান, পদমর্যাদা,
সে সবের হিসাব করো তো একবার, দেখো তো আগে নিজ নোংরার গাদা!
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৩৯
মানুষ বাড়ে দেশে চিংড়ি পোনার ন্যায়, তবু মানুষের চাষ নেই দেশে,
মানুষের ভারে দেশ বুঝি পড়ে, তবু মানুষেরই আকালে বুঝি দেশ যায় শেষে!
নিজেদের শ্রমে করলে না কিছু, শুধু বিদেশের অর্থে করে গেলে যা কিছু,
লুণ্ঠন, চুরি বাকী কিছু নেই, আসবে তো অভিশাপ পাপের পিছু!
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৪০
প্রেমহীন সভ্যতার নিয়ে আশীর্বাদ যারা গড়েছে এ দেশ,
তারা গড়ে নি মানুষ বরং মানুষেরে আগে করেছে শেষ।
ভোগ-সম্ভোগ ছাড়া যারা চেনে নাকো আর কোনো ন্যায়-অন্যায়,
তারাই এ দেশ চালায় আজ, তাদেরই পায়ে সম্পদ গড়াগড়ি যায়।
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৪১
বিনামূল্য পেয়েছ সবই, ত্যাগের মূল্য বুঝবে কী?
প্রতারক এক রাষ্ট্র গড়েছ ভিতরে যার ভয়াল ফাঁকি?
সাধনা জানো নি কাকে বলে, ওসব শেখাবে কারা?
শেখাবার যারা তোমাদেরই হাতে দলে দলে শেষ তারা।
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৪২
পাপেরও শাস্তি আছে; নিষ্কৃতি কতদিন পাবে? ধরা তো খাবে!
একদিন পাপ ধরে বিকট আকার সব কিছু তছনছ করে দিয়ে যাবে।
ধরেছ আলী, জাপা, আরো কত নাম, কখনো বা বিএনপি!
ফাঁকির উপর গড়েছ সবই, এখন ধবংসই তোর বিধিলিপি।
৫ মে ১৯৯৯
কবিতিকা-৪৩
সমাজতন্ত্র তবে নিয়েছে বিদায় বিগত দিনের এক প্রেমের মত?
তবে পাশ্চাত্য দেবতার পায়ে হতে হবে আজ সবারে নত?
নূতন বিধান হল তবে অবাধ বাজার করিবে দলন নারী ও সাধারণ মানবেরে?
এতই সহজ! মরে না সমাজবাদ প্রেমেরই মত, জন্ম যে তার প্রেমের জঠরে।
৫ মে ১৯৯৯